পুঁটি রাণীর কড়চা
বেলা সাতটা ।পুঁটি রাণীর বাজখাঁই গলার খোলতাই আওয়াজে হরিহর বাবু ঘুম থেকে জেগে গেলেন । পুঁটিরানী ডন বৈঠক দিচ্ছেন শিলনোড়া দিয়ে মটর মটর আওয়াজ তুলে । আবার ও গলা তুললেন পুঁটি রাণী, খ্যানখ্যানে গলার ঝনঝনে আওয়াজ । হরিহর বাবু মুখ চোখ সাফ করার সময় পেলেন না । তাই কোঁচরে পুঁটি রাণীর ছুড়ে ফেলা বাজারের ঝোলাটা দিয়ে ই মুখ ঘসে নিলেন এক ফাঁকে । ফটাৎ করে লুংগী ভাঁজ করে ফেটি দিলেন কোমরে। নামলেন রাস্তায় । রাস্তায় কাদা তার পর জায়গায় জায়গায় কুকুরেরা ভুর করে রেখেছে।তাতে পা পড়লে হরিহর বাবু হরকে যাবেন। তার লুংগী ও কুকুরের ইয়ে তে ভরে যাবে । আরে বাবা কুকুর যদি পুষবে তবে ঘরের পায়খানায় কুকুরের ইয়ে করাও না কেন বাবা ,লোকের দোরে দোরে কেন বাবা ইয়ে করাও ।
ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেলেন বাজারে। বাজার থেকে থলে ভরে নিলেন পুঁটি রাণীর তরে গুচ্ছের সরপুঁটি ও চুনোপুঁটি এককাড়ি । থলে তে ভরতে ভরতে পুঁটি রাণীর গজদন্ত পোরা মুখের বাক্যবাণ যেন শুনতে পেলেন।মনে ভাবলেন, একটা দিন বৈ তো নয়! বর্ষার দিন বাজারে অনেক এসেছে । হয়তো নালা থেকে তুলেছে।চটি ফটফটিয়ে কুকুরের ইয়ে বাঁচিয়ে হরিহর বাবু সেলুকাস এর মতো নিজেকে বীর মনে করতে করতে ঘরে পৌঁছলেন । পুঁটি রাণী বাজারের ব্যাগ খোলার আগেই হরিহর বাবু হনহনিয়ে বাথরুমে ঢুকে পুঁটি রাণীর গজদন্তের ফরফরে বাক্যবাণ থেকে নিজেকে বাঁচালেন। রান্না শালে ঢুকে বড়ো বড়ো সরপুঁটি দিয়ে বেশ রসালো করে পুঁটিরানী ঝাল রাধলেন। আর চুনো পুঁটি মাছ মুচমুচে করে ভেজে রেখেছেন হরিহর বাবুর জন্য ।সোয়ামী বলে কথা। তাছাড়া পুঁটি মাছের টক,সরপুঁটি মাছের ডিম দিয়ে বড়া না হলে আবার হরিহর বাবু হরবোলার মতো বোল তুলে পাড়া মাত করবেন। পুঁটি রাণীর শরীরে অসীম শক্তি । পটাপট পটাপট করে কাঠ ভাঙেন হাঁটু দিয়ে । তারপর নুড়োটায় আগুন দিয়ে উনুনে ঢুকিয়ে দেন । ঝটাপট ঝটাপট করে ঝাটদেন ঘর। কাজ সাড়তে সাড়তে কচাকচ কচাকচ করে মূলো গাজর খান। তাই দাঁতগুলো একবারে ছোট্ট গজদন্তের মতো। মুখে রা টি কারেন্ না। শুধু ছেলে পটলা প্যান পেনিয়ে কাঁদলে তবলার বোল তোলেন। তিরকিট ধা ।তিরকিট ধা । বোল তোলেন ওর চামড়ায় ।
পটলার জন্মের পর থেকেই ভারি পেটের ব্যামো । তাই ডাক্তারের নির্দেশে, নিদেন পক্ষে পাঁচ টা করে পটল, পটলা প্রতিদিন পটাপট পটাপট করে খেয়ে ফেলে ।তাছাড়া হলুদ পাতা, পলতা পাতা, পুদিনা পাতার রস পান করে । হিরিম্বের মতো কুড়ি বছরের ছেলে টা কেমন যেন চোয়ারে হয়ে গেল । ওর জীবনের কুড়ি টা বসন্তে কুড়ি বার বসন্ত হয়ে মুখটা হয়ে গেছে কুদোনো শিল এর মতো। তাই বাগদি বৌ বলেছে পানকৌড়ির ঠ্যাং এর জুস এর সাথে এক চিমটি হলুদ আর শঠির পালো বেশ আঁট করে পটলার মুখে লাগাতে । মেয়েরা বিউটি পার্লার এ যেমন ফেসপ্যাক লাগিয়ে শুয়ে থাকে। তেমনি পটলা ঐ বাগদি বৌ এর বলা ঐ ইয়ে টা মুখে লাগিয়ে শুয়ে থাকে । পুঁটি রাণীর হাড় পিত্তি জ্বলে যায় পটলার মুখে ঐ পিটুলির দলা গুলো দেখে তখন ই খ্যাংরা নিয়ে ঠ্যাংঙারের মতো পটলা কে সপাং সপাং করে মারতে থাকেন পুঁটি রাণী। পটলা শাকচুন্নির মতো নাঁকি সুরে কাঁদতে থাকে । তখন হরিহর বাবু হরিনামের জপ করতে করতে হরিনামের থলে নিয়ে আবার সেই হরবোলার স্বরে চিৎকার করতে থাকেন । পটলা কে বাঁচাতে হরিহর বাবু তাঁর হাড় মাংসে জড়িত শরীর দিয়ে পটলাকে আড়াল করেন।তাতে ঠ্যাঙারের শেষ ঘাঁটা হরিহর বাবুর ঘাড়ে পড়ে ।”ওরে বাবা গো মরে গেলুম গো”বলতে বলতে হরিহর বাবুর ওপর পাটির দাঁত খুলে টকাশ করে গজদন্তিনি পুঁটি রাণীর দাঁতে ঠোক্কর খেয়ে মেঝেতে পড়লো । আর এক পাটি দাঁত মুখ থেকে খলবল করতে করতে টপাৎ করে পটলার গালে মাখা পিটুলির দলায় পড়ে অপূর্ব সেটিং হয়ে গেল । খ্যাংড়া ফেলে পুঁটি রাণী লজ্জায় জিভে কামড় দিয়ে এক হাত ঘোমটা দিয়ে টুক করে ফড়িং এর মতো শরীর নাড়িয়ে রান্না শালে শালিধানের চিড়া ভাজতে যায়। শালিধানের চিড়া অবশ্য আজ আর খাওয়া আর হবে কিনা হরিহর বাবুর তা সন্দেহ । কারণ এক পাটি তো ছয় টুকরো হয়ে গেছে । আর এক পাটি তো পান কৌড়ির ঠ্যাং এর জুস আর ইয়ের মাখা পিটুলিতে, সিদোলে পড়ে যাবার মতো হয়েছে । আর এক পাটি তো গজ দন্তিনি পুঁটি রাণীর দাঁতে ঠোক্কর খেয়ে ছয় টুকরো হয়ে গেছে । সুতরাং আজ বোধহয় রাতে খাওয়ার উপায় নেই । পুঁটি মাছের স্বাদ আর নোলায় যাবে না হয়তো ছাগলের দুধ বা মিনি পুষির দুধ খেয়ে থাকতে হবে । রাতে বাগদি বৌ কোথা থেকে রবার গাছের আঠা এনে দিয়েছে দাঁত জুড়বার তরে । দাঁত তো জোড়া লেগে গেল । পুঁটি রাণী ইশারায় বললেন কথা না বলে চুপ করে থাকতে । যাতে অতো সাধের পুঁটি মাছের নামতা টায় নোলায় আরাম হয়। হরিহর অনেক পুঁটি মাছ নিয়ে বেশ কাদা কাদা করে মুখে চালান করে দিলেন । কৎ করে শব্দ আবার চালান। হঠাৎ ই কৎ করে শব্দ হয়ে চক্ষু ট্যারা হয়ে গেল হরিহর বাবু র । পুঁটি রাণী কাঁদতে থাকে- ওরে আমার কি হলো রে,। হরিহর বাবুর নিথর শরীর । চক্ষু ট্যারা । বাগদি বৌ ছুটে এলো । একটুখানি পান কৌড়ির ইয়ে, মগে করে মুখে ঢেলে দিতে ই হরিহর বাবু হরহর করে বমি করে ফেললেন । সঙ্গে ছয় টুকরো দাঁত । ট্যারা চোখ সোজা হয়ে গেল ।
রাত প্রায় দুটো । সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। কে যেন কড়া নাড়ছে । পুঁটি রাণী উঠলেন । নির্ঘাত চোর । রান্না ঘরে শব্দ । চোর যেন কি খেতে খেতে যাচ্ছে । কুয়ো তলায় চোর । ত্বার স্বরে চিৎকার পুঁটি রাণীর । সপাং করে খ্যাংরা পড়লো চোরের পিঠে। এতো ক্ষনে চোরের মুখ দেখা গেল । পুঁটি রাণী বলেন- একি তুমি?এই রাতে! হরিহর বাবু বলেন কাতর স্বরে- ডিম ভাজাটা ।