Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পারাপার (১৯৯৩) || Humayun Ahmed » Page 11

পারাপার (১৯৯৩) || Humayun Ahmed

পারাপার – ১১

ইয়াকুব সাহেবের অবস্থা শোচনীয়। তাঁর চোখ বন্ধ। হাত থরথর করে কাঁপছে। ঠোঁটে ফেনা জমছে। একজন নার্স রুমাল দিয়ে ঠোঁট মুছিয়ে দিচ্ছে। নার্স মেয়েটি খুব ভয় পেয়েছে। তবে যে দুজন ডাক্তার উনার দুপাশে দাঁড়িয়ে তারা শান্ত। তাঁদের চোখেমুখে উদ্বেগের ছাপ নেই।
মিতু বাবার হাত ধরে বসে আছে।কী শান্ত, কী পবিত্র দেখাচ্ছে মেয়েটাকে! আজ তার মাথায় ‘উইগ’ নেই। এই প্রথম দেখলাম তার মাথার চুল ছেলেদের মতো ছোট ছোট করে কাটা। ছোট চুলের জন্যে মিতুর চেহারায় কিশোর কিশোর ভাব চলে এসেছে। সে পূর্ণ দৃষ্টিতে আমাকে দেখল। কোমল গলায় বলল, বাবা, হিমু এসেছেন। তাকাও , তাকিয়ে দেখ।
ইয়াকুব সাহেব অনেক কষ্টে তাকালেন। অস্পষ্ট গলায় বললেন,এনেছ?
জি স্যার।
তুমি নিশ্চিত যাকে এনেছ সে কোনো পাপ করে নি?
জি নিশ্চিত।
কোথায় সে?
গাড়িতে বসে আছে।
গাড়িতে কেন? নিয়ে আসো।
নিয়ে আসা যাবে না। নিয়ে আসার আগে আপনার সঙ্গে টার্মস এন্ড কন্ডিশানস সেটল করতে হবে।
ইয়াকুব সাহেব অবাক হয়ে বললেন, কিসের কথা বলছ?
আমি শান্তস্বরে বললাম, স্যার ব্যাপারটা হচ্ছে কী পবিত্র রক্ত যে পাত্রে ধারণ করবেন সেই পাত্রটাও পবিত্র হতে হবে। নয়তো এই রক্ত কাজ করবে না।
আমাকে কী করতে হবে?
আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বললাম, এই জীবনে আপনি যা কিছু সঞ্চয় করেছেন—বাড়ি-গাড়ি, বিষয়-সম্পত্তি, টাকা-পয়সা সব দান করে নিঃস্ব হয়ে যেতে হবে। পৃথিবীতে আসার সময় যেমন নিঃস্ব অবস্থায় এসেছিলেন ঠিক সে রকম নিঃস্ব হবার পরই পবিত্র রক্ত আপনার শরীরে কাজ করবে। তার আগে নয়।
এসব তুমি কী বলছ?
যা সত্যি তাই বলছি। স্যার আপনাকে চিন্তা করার সময় দিচ্ছি। আজ সারারাত ভাবুন। যদি মনে করেন হ্যাঁ রক্ত আপনি নেবেন তাহলে উকিল ব্যারিস্টার ডেকে দলিল তৈরি করে আমাকে খবর দেবেন। আমি জয়দেবপুরে আপনার ডাকের জন্যে অপেক্ষা করব। আমি ঠিকানা দিয়ে যাচ্ছি।
ইয়াকুব সাহেব স্থিরচোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি তাঁকে অভয় দেয়ার মতো করে হাসলাম। শান্তস্বরে বললাম, আপনার জন্যে কঠিন কাজটা করা হয়েছে। পবিত্র মানুষ যোগাড় হয়েছে। আমার ধারণা বাকি কাজটা খুব সহজ।
ইয়াকুব সাহেব এখনো আগের ভঙ্গিতেই তাকিয়ে আছেন। তাঁর চোখে পলক পড়ছে না। অবিকল পলকহীন পাখিদের চোখ।
স্যার,এখন আমি যাই?
ইয়াকুব সাহেব কিছু বললেন না। মনে হচ্ছে তাঁর চিন্তার শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। মিতু বলল, আপনি যাবেন না। আপনি এখানে অপেক্ষা করবেন। আমি উকিল আনাচ্ছি। দলিল তৈরি হবে।
ইয়াকুব সাহেব বললেন, না। দরকার নেই।
মিতু বলল, তুমি চুপ করে থাক বাবা। যে খেলা তুমি শুরু করেছ, তোমাকেই তা শেষ করতে হবে। পবিত্র রক্তের ক্ষমতা আমি পরীক্ষা করব।
না মিতু, না। আমি সবকিছু বিলিয়ে দেব? এটা কোনো কথা হলো?
আমার জন্যে তুমি কিছু চিন্তা করবে না। এই পৃথিবীতে আমার কোনো কিছুই চাইবার নেই। ডাক্তার সাহেব, আপনারা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকবেন না। ব্লাড ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করুন।

গাড়ি ছুটে চলেছে। বাইরে বেশ ঠাণ্ডা। রূপা জানালা খুলে রেখেছে। হু-হু করে গাড়িতে ঠাণ্ডা হাওয়া ঢুকছে। রূপা গাড়ির জানালায় মুখ রেখে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে।
আমার ক্ষীণ সন্দেহ হলো—সে বোধহয় কাঁদছে।
আমি বললাম, রূপা তুমি কাঁদছ নাকি?
রূপা বলল, হ্যাঁ।
কাঁদছ কেন?
রূপা ফোঁপাতে ফুঁপাতে বলল, জানি না কেন কাঁদছি।
গাড়ির জানালার ফাক দিয়ে এক টুকরো জোছনা এসে পড়েছে রূপার কোলে। মনে হচ্ছে শাড়ির আঁচলে জোছনা বেঁধে যেন অনেক দূরের কোনো দেশে যাচ্ছে। এই সময় আমার মধ্যে এক ধরনের বিভ্রম তৈরি হলো—আমার মনে হলো রূপা নয়, আমার পাশে মিতু বসে আছে। রূপা কাঁদছে না, কাঁদছে মিতু। জোছনার এই হলো সমস্যা—শুধু বিভ্রম তৈরি করে। কিংবা কে জানে এটা হয়তো বিভ্রম নয়। এটাই সত্যি। পৃথিবীর সব নারীই রূপা এবং সব পুরুষই হিমু।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
Pages ( 11 of 11 ): « পূর্ববর্তী1 ... 910 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *