Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পাওয়া না পাওয়া || Satyajit Chowdhury

পাওয়া না পাওয়া || Satyajit Chowdhury

পাওয়া না পাওয়া

বিকেলের এই সময়টায় চা’য়ের সাথে কিছু খেতে মন চায়। ঠিক সময় বুঝে হরিহরকাকা মুড়ির প্যাকেট নিয়ে চলে আসে। চিড়েভাজা, মুড়িভাজা। সঙ্গে চানাচুর, বাদাম। চাইলে কাঁচা লঙ্কাও পাওয়া যায়। হরিহরকাকা বেশ হাসিখুশি। সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলেন। দিনে এভারেডি কোম্পানির ক্যান্টিনে কাজ করেন। বলেন, এই দূর্মূল্যের বাজারে ক্যান্টিনে কাজ করে সামান্য টাকায় সংসার চালানো যায় কি? তাই বিকেলে এই মুড়ির ব্যবসা।এই বহুতলে বেশ কয়েকটি অফিস আছে। সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে। মোটামুটি ভালোই চলে যাচ্ছে। একদিন মুড়ি বিলোতে বিলোতে বলছে, আজ আমার খুব আনন্দের দিন। মেয়েটা সেকেন্ড ডিভিশনে মাধ্যমিক পাশ করেছে। আশীর্বাদ করবেন, মেয়েটিকে যেন কলেজে ভর্তি করাতে পারি। সত্যি আনন্দ মানুষের কাছে কত রকমভাবে ধরা দেয়। গরিবের কাছে কত সহজ, সরল, নির্মল এই আনন্দ. যতটুকু পেয়েছে, তাই নিয়ে সে সন্তুষ্ট। আবার কারো কাছে সব কিছু পেয়েও সুখটা অধরাই থেকে যায়। হটাৎ করে সেই সৌম্যদর্শন মহিলার কথা মনে পরে গেলো।

সে’বার বিকেলের ফ্লাইটে গুয়াহাটি যাবো বলে এয়ারপোর্টের নির্ধারিত প্রস্থান পরিসরে অপেক্ষা করছি। এয়ারলাইন্সের কর্মচারী হুইলচেয়ার করে এক বয়স্কা মহিলাকে নিয়ে এলো। দেখলেই বুঝা যায়, যৌবনে যথেষ্ট রূপবতী ছিলেন। মুখে অপূর্ব স্নিগ্ধতার পরশ। কর্মচারী বুঝিয়ে দিলো, এখন গুয়াহাটির ফ্লাইট, তারপরই আপনার ব্যাঙ্গালোরের। আপনি এখানেই বিশ্রাম নিন। ঠিক সময়ে আমি চলে আসবো। কর্মচারীটি চলে যেতেই আমার সাথে গল্পে মেতে উঠলেন। দেখলাম, ভদ্রমহিলা ভীষণ মিশুকে। অল্প সময়ে বেশ আপন করে নিলেন। আসামের লোক জেনে তিনি বেশ উৎফুল্লভাবে বললেন। আমার মেজমামা রেলওয়েতে দীর্ঘদিন তিনসুকিয়াতে ছিলেন। কিন্তু আমার যাওয়া হয়নি।

আমি উনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে বলতে শুরু করলেন। স্বামীর আদি বাড়ি বর্ধমানে। স্বামী কাস্টমসে উচ্চ পদস্থ অফিসার ছিলেন। ক্যামেক স্ট্রিতে বাড়ি বানিয়ে ছিলেন। বিরাট বাড়ি, কিন্তু থাকার লোক নেই। তিন বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর একাকী হয়ে গেছেন। ছেলে পড়াশোনায় খুব ব্রিলিয়ান্ট ছিলো। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্য মেধাতালিকায় ২০ এর ভিতর রাঙ্ক পেয়েছিল। কম্পিউটার সফটওয়্যার নিয়ে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করার পর আমেরিকান মাল্টিনেশনাল কোম্পানিতে যোগ দিলো। বছর ঘুরতেই আমেরিকা যাওয়ার অফার পেলো। বুঝলে বাবা, প্রথম প্রথমতো আত্মীয়স্বজনদের কাছে গর্ব করে বলতাম, ছেলে আমেরিকায় গেছে। কিন্তু কি হবে, ছেলেতো এখন মহাব্যস্ত। দু’বছর হলো দেশে আসে না। বলে, একদম, ছুটি পায় না। ভদ্র মহিলার চোখে হতাশার সুর। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বর ব্যাঙ্গালোরে কর্মরত। আমিও থাকি ওদের সাথে। তবুও মাঝে মধ্যে এসে বাড়িটা দেখে যেতে হয়। যতদিন বেঁচে আছি। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

আমি নিশ্চুপ। ভাবছি বিচিত্র এই জীবন। কারো কিছু না থেকেও জীবন কেমন পরিপূর্ণ। আবার কারো সবকিছু থেকেও যেন কিছুই নেই।কিছু খেতে মন চায়। ঠিক সময় বুঝে হরিহরকাকা মুড়ির প্যাকেট নিয়ে চলে আসে। চিড়েভাজা, মুড়িভাজা। সঙ্গে চানাচুর, বাদাম। চাইলে কাঁচা লঙ্কাও পাওয়া যায়। হরিহরকাকা বেশ হাসিখুশি। সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলেন। দিনে এভারেডি কোম্পানির ক্যান্টিনে কাজ করেন। বলেন, এই দূর্মূল্যের বাজারে ক্যান্টিনে কাজ করে সামান্য টাকায় সংসার চালানো যায় কি? তাই বিকেলে এই মুড়ির ব্যবসা।এই বহুতলে বেশ কয়েকটি অফিস আছে। সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে। মোটামুটি ভালোই চলে যাচ্ছে। একদিন মুড়ি বিলোতে বিলোতে বলছে, আজ আমার খুব আনন্দের দিন। মেয়েটা সেকেন্ড ডিভিশনে মাধ্যমিক পাশ করেছে। আশীর্বাদ করবেন, মেয়েটিকে যেন কলেজে ভর্তি করাতে পারি। সত্যি আনন্দ মানুষের কাছে কত রকমভাবে ধরা দেয়। গরিবের কাছে কত সহজ, সরল, নির্মল এই আনন্দ. যতটুকু পেয়েছে, তাই নিয়ে সে সন্তুষ্ট। আবার কারো কাছে সব কিছু পেয়েও সুখটা অধরাই থেকে যায়। হটাৎ করে সেই সৌম্যদর্শন মহিলার কথা মনে পরে গেলো।

সে’বার বিকেলের ফ্লাইটে গুয়াহাটি যাবো বলে এয়ারপোর্টের নির্ধারিত প্রস্থান পরিসরে অপেক্ষা করছি। এয়ারলাইন্সের কর্মচারী হুইলচেয়ার করে এক বয়স্কা মহিলাকে নিয়ে এলো। দেখলেই বুঝা যায়, যৌবনে যথেষ্ট রূপবতী ছিলেন। মুখে অপূর্ব স্নিগ্ধতার পরশ। কর্মচারী বুঝিয়ে দিলো, এখন গুয়াহাটির ফ্লাইট, তারপরই আপনার ব্যাঙ্গালোরের। আপনি এখানেই বিশ্রাম নিন। ঠিক সময়ে আমি চলে আসবো। কর্মচারীটি চলে যেতেই আমার সাথে গল্পে মেতে উঠলেন। দেখলাম, ভদ্রমহিলা ভীষণ মিশুকে। অল্প সময়ে বেশ আপন করে নিলেন। আসামের লোক জেনে তিনি বেশ উৎফুল্লভাবে বললেন। আমার মেজমামা রেলওয়েতে দীর্ঘদিন তিনসুকিয়াতে ছিলেন। কিন্তু আমার যাওয়া হয়নি।

আমি উনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে বলতে শুরু করলেন। স্বামীর আদি বাড়ি বর্ধমানে। স্বামী কাস্টমসে উচ্চ পদস্থ অফিসার ছিলেন। ক্যামেক স্ট্রিতে বাড়ি বানিয়ে ছিলেন। বিরাট বাড়ি, কিন্তু থাকার লোক নেই। তিন বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর একাকী হয়ে গেছেন। ছেলে পড়াশোনায় খুব ব্রিলিয়ান্ট ছিলো। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্য মেধাতালিকায় ২০ এর ভিতর রাঙ্ক পেয়েছিল। কম্পিউটার সফটওয়্যার নিয়ে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করার পর আমেরিকান মাল্টিনেশনাল কোম্পানিতে যোগ দিলো। বছর ঘুরতেই আমেরিকা যাওয়ার অফার পেলো। বুঝলে বাবা, প্রথম প্রথমতো আত্মীয়স্বজনদের কাছে গর্ব করে বলতাম, ছেলে আমেরিকায় গেছে। কিন্তু কি হবে, ছেলেতো এখন মহাব্যস্ত। দু’বছর হলো দেশে আসে না। বলে, একদম, ছুটি পায় না। ভদ্র মহিলার চোখে হতাশার সুর। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বর ব্যাঙ্গালোরে কর্মরত। আমিও থাকি ওদের সাথে। তবুও মাঝে মধ্যে এসে বাড়িটা দেখে যেতে হয়। যতদিন বেঁচে আছি। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আমি নিশ্চুপ। ভাবছি বিচিত্র এই জীবন। কারো কিছু না থেকেও জীবন কেমন পরিপূর্ণ। আবার কারো সবকিছু থেকেও যেন কিছুই নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress