সূর্য গেল অস্তপারে—
লাগল গ্রামের ঘাটে
আমার জীর্ণ তরী ।
শেষ বসন্তের সন্ধ্যা – হাওয়া
শস্যশূন্য মাঠে
উঠল হাহা করি ।
আর কি হবে নূতন যাত্রা
নূতন রাণীর দেশে
নূতন সাজে সেজে ?
এবার যদি বাতাস উঠে
তুফান জাগে শেষে ,
ফিরে আসবি নে যে ।
অনেক বার তো হাল ভেঙেছে ,
পাল গিয়েছে ছিঁড়ে
ওরে দুঃসাহসী ।
সিন্ধুপানে গেছিস ভেসে
অকূল কালো নীরে
ছিন্ন – রশারশি ।
এখন কি আর আছে সে বল ?
বুকের তলা তোর
ভরে উঠছে জলে ।
অশ্রু সেঁচে চলবি কত—
আপন ভারে ভোর
তলিয়ে যাবি তলে ।
এবার তবে ক্ষান্ত হ রে
ওরে শ্রান্ত তরী ,
রাখ্ রে আনাগোনা ।
বর্ষশেষের বাঁশি বাজে
সন্ধ্যা – গগন ভরি ,
ওই যেতেছে শোনা ।
এবার ঘুমো কূলের কোলে
বটের ছায়াতলে
ঘাটের পাশে রহি ,
ঘটের ঘায়ে যেটুকু ঢেউ
উঠে তটের জলে
তারি আঘাত সহি ।
ইচ্ছা যদি করিস তবে
এ পার হতে পারে
যাস রে খেয়া বেয়ে ।
আনবে বহি গ্রামের বোঝা
ক্ষুদ্র ভারে ভারে
পাড়ার ছেলেমেয়ে ।
ও পারেতে ধানের খোলা
এই পারেতে হাট ,
মাঝে শীর্ণ নদী—
সন্ধ্যা সকাল করবি শুধু
এ – ঘাট ও – ঘাট
ইচ্ছা করিস যদি ।
হায় রে মিছে প্রবোধ দেওয়া ,
অবোধ তরী মম
আবার যাবে ভেসে ।
কর্ণ ধরে বসেছে তার
যমদূতের সম
স্বভাব সর্বনেশে ।
ঝড়ের নেশা ঢেউয়ের নেশা
ছাড়বে নাকো আর ,
হায় রে মরণলুভী !
ঘাটে সে কি রইবে বাঁধা ,
অদৃষ্টে যাহার
আছে নৌকাডুবি !