পবিত্র সরকার (শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, লেখক)
পবিত্র সরকার মানুষটির বর্ণনা করা খুব সহজ ব্যাপার নয়। ধরুন তাঁর শিক্ষাদীক্ষা ও অধ্যাপনার উজ্জ্বল জীবন-পর্বের কথা।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ও এমএ-তে দু-বার প্রথম হওয়া, ফুলব্রাইট বৃত্তি পেয়ে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাবিজ্ঞানে এমএ ও পিএইচ ডি করেছেন, যাদবপুরে পড়িয়েছেন প্রায় সাতাশ বছর, বিদেশে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে দু-বছর, এবং এখনও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নানা কলেজে এমএ-র ক্লাস নিয়ে অক্লান্ত থাকছেন। রবীন্দ্র-ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন সাত বছর, ছ-বছর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিক্ষা সংসদের সহ-সভাপতি। লেখাতেও অক্লান্তকর্মী ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।
ভাষাবিজ্ঞান ও ব্যাকরণ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব, লোকসংস্কৃতি, ইংরেজি শিক্ষা, রম্যরচনা, শিশুদের জন্য ছড়া গল্প উপন্যাস রবীন্দ্রসংগীত, আত্ম-জীবনকথা—সব মিলিয়ে তার নিজের বইয়ের সংখ্যা সত্তরের উপর, সম্পাদিত বইও পঞ্চান্নটির মতো।
দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার গানে তার গভীর অনুরাগ।
এক সময়ে নান্দীকার গ্রুপে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় অভিনয়ও করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা সরকারের একাধিক ভাষা-বিষয়ক কমিটি ও কমিশনের অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি।
সতেজ এই প্রাণবন্ত মানুষটি, ‘মৃত্যু’ সম্বন্ধে গভীর চিন্তশীল লিখলেও কিন্তু তিনি এখনও দাপটের সঙ্গে বেঁচে থাকার সাধনা করে যাচ্ছেন।
ড.পবিত্র সরকারের জন্ম ২৮শে মার্চ, ১৯৩৭ সালে, ধামরাই ঢাকা (বর্তমানে বাংলাদেশ)।
বর্তমানে কলকাতায় (“সেঁজুতি”, গড়িয়া) থাকেন দাম্পত্যসঙ্গী মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
তাঁর দুই কন্যা – বসুধীতি সরকার, বসুধারা সরকার।
তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম মেধাবী ও সেরা শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর কিছুদিন তিনি কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে শিক্ষকতা করেন। পরে ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর ভাষাবিজ্ঞানের উপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শেষের দুবছর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।
দেশে ফিরে পুনরায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। পদোন্নতির পর তিনি ১৯৯০ সাল থেকে টানা সাত বৎসর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল অফ হায়ার এডুকেশন তথা পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা সংসদের সহ-সভাপতি হন। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। অধ্যাপক সরকার বাংলা ও ইংরেজিতে শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি দেশের বিভিন্ন সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।
তিনি বলেছেন –
“আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি
তার পরে ইংরেজী শেখার পত্তন।”
বাংলা ও ইংরেজিতে শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি দেশের বিভিন্ন সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত আছেন।
তিনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে লিখেছন –
“আমরা যেন কাছাখোলা হয়ে
বাংলাটাকে বাংলার মতো বলার চেষ্টা করি।”
আরও বলেছেন –
“ঠিকঠাক বাংলা বলছেন তো?
আমরা অনেকের মুখে যে বাংলাটা শুনি,
তাকে অনেকে বাংলিশ বলে।”
তিনি একজন বাঙালি ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, সাহিত্যিক, নাট্যসমালোচক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক। বিভিন্ন বিষয়ে মননশীল প্রবন্ধ রচনার খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব। শিশুসাহিত্যিক, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ও নাট্যব্যক্তিত্ব হিসাবেও সুপরিচিত তিনি গদ্য রচনার জন্য ২০০০ সালে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রদত্ত বিদ্যাসাগর পুরস্কার, জাতীয় সংহতির জন্য ইন্দিরা গান্ধী অ্যাওয়ার্ড ফর ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন লাভ করেন। এছাড়াও ২০১৯ সালে জাপানের তৃতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘দ্য অর্ডার অফ দ্য রাইজিং সান’, ‘গোল্ড অ্যান্ড সিলভার রেজ’ শিরোপায় সম্মানিত হন।
পবিত্র সরকারের বই –
১). বাংলা লিখুন, নির্ভুল, নির্ভয়ে
২). বানানের ক্লাস
৩). গল্পে বাংলা উচ্চারণ
৪). বাংলা লেখার সহজ পাঠ
৫). গদ্যরীতি পদ্যরীতি
৬). বাংলা বানান সংস্কার সমস্যা ও সম্ভাবনা
৭). বাংলা বলো
৮). বাংলা-বোধিনী একটি অভিনব বানান অভিধান।
৯). ধ্বনিবিজ্ঞান আইপিএ রোমানিকরণ
১০). বাংলা ব্যকরণ প্রসঙ্গ
১১). আমার রবীন্দ্রনাথ
১২). আমাদের সুভাষচন্দ্র
১৩). শিক্ষা ও চেতনা
১৪). নাতি নাতনিদের গল্প
১৫). নাতি গনেশের ভুঁড়ি
১৬). ঢাকার টুকিটাকি
১৭). কাছের মানুষ দূরের মানুষ
১৮). এত কথা কীসের
১৯). গানের ঝর্না তলায়
২০). পৌষ ফাগুনের মেলা
২১). বাচ্চারা খুব বিচ্ছু হয়
২২). কথা আর কাহিনি – ১
২৩). কথা আর কাহিনি – ২
২৪). স্বচক্ষে স্বরবর্ণ
২৫). বানান বিবেচনা
২৬). চসস্কি ব্যকরণ ও বাংলা বানান
২৭). চলো ভাই ঢাকা যাই
২৮). কিশোর সঞ্চয়ন
২৯). জ্বরের উপকারিতা ও আরো গল্প
৩০). নিজের মধ্যে নিজের বাইরে
৩১). নাট্যমঞ্চ নাট্যরূপ
৩২). প্রথম বই
৩৩). কথকসূত্র
৩৪). লিমেরিকোনা
৩৫). বানান বোধিনী
৩৬). ভাষা দেশ কাল
৩৭). লোক ভাষা সংস্কৃতি নন্দনতত্ব
৩৮). অল্প পুঁজির জীবন – ১
৩৯). অল্প পুঁজির জীবন – ২
৪০). শ্রেষ্ট প্রবন্ধ
—————————————————————-
[ সংগৃহীত ও সম্পাদিত। তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া, রকমারী.কম ও বঙ্গদর্শন।
সূত্র নির্দেশিকা –
শিশির কুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা – ১২৩. আইএসবিএন 978-81-7955-007-9.
“পবিত্র সরকারকে তৃতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান জাপানের”। সংগ্রহের তারিখ – ৪ঠা এপ্রিল ২০২৩ সাল।
“পবিত্র সরকার”। সংগ্রহের তারিখ – ৫ই এপ্রিল ২০২৩ সাল।
“From the desk of the President-About Dr Pabitra Sarkar”। সংগ্রহের তারিখ – ৩১শে মার্চ ২০২৩ সাল।