Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পদ্মশ্রী সম্মান’ প্রত্যাখান করা লেখক ফণীশ্বরনাথ রেণু || Sankar Brahma

পদ্মশ্রী সম্মান’ প্রত্যাখান করা লেখক ফণীশ্বরনাথ রেণু || Sankar Brahma

পদ্মশ্রী সম্মান’ প্রত্যাখান করা লেখক ফণীশ্বরনাথ রেণু

প্রগতিশীল হিন্দি সাহিত্যের একজন অবিস্মরণীয় রূপকার ফণীশ্বরনাথ রেণু। তাঁর জন্ম হয় ১৯২১সালে বিহারের পূর্নিয়া জেলার ওরাহিতে ।
ফণীশ্বরের প্রকৃত নাম ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। গ্রামের শীলানাথ মণ্ডলের স্নেহ-যত্নে লালিত পালিত হন তিনি। শীলানাথ মন্ডলের কাছেই তিনি প্রাথমিকভাবে লেখাপড়া শেখেন।
তারপর নেপালের কৈরালা পরিবারে থাকাকালীন সে দেশের বিরাটনগর থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর কাশী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে যোগ দেন।

সাহিত্য-সাধনার ক্ষেত্রে ফণীশ্বরনাথ রেণুর উপস্থিতি ১৯৪৪ সাল থেকে। ১৯৪৪ সালে কলকাতায় ‘বিশ্বামিত্র’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম ছোটগল্প ‘বটবাবা’ প্রকাশিত হয়। তবে রেণু-র নাম হিন্দী সাহিত্যে স্থায়ীভাবে মুদ্রিত হয়ে গেছে যে উপন্যাসটির জন্য সেটি হলো ‘মৈলা আঁচল’। ‘মৈলা আঁচল’ প্রকাশিত হয়েছিল ‘বটবাবা’ গল্প প্রকাশের দশ বছর পরে ১৯৫৪ সালে। এই সাহিত্য-কাজটি (‘মৈলা আঁচল’) তাকে সকলের কাছে পরিচিতি এনে দেয়। ‘ময়লি আঁচল’ বাংলায় (ময়লা আঁচল) ছাড়াও আরও অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এই কাহিনীর পরবর্তী অংশ ‘পরতী পরিকথা’।
ফণীশ্বরনাথ রেণুর উপন্যাসগুলির মধ্যে ‘মৈলা আঁচল’ এবং ‘পরতী-পরিকথা’ সর্বাধিক আলোচিত। এ ছাড়াও রয়েছে ‘জুলুম’, ‘দীর্ঘতপা’ এবং ‘পল্টুবাবু রোড’ নামক উপন্যাসগুলি। উপন্যাস ছাড়াও রেণু অসংখ্য অসাধারণ ছোটগল্পও রচনা করেছেন। উপন্যাস ও ছোটগল্প উভয়তেই ভারতের বিশেষ সমাজ-অর্থনীতি-রাজনীতি, সংস্কার-কুসংস্কার, রীতি-নীতি এবং ক্রমপরিবর্তন জীবনধারার জীবন্ত দলিল হয়ে উঠেছে।
মৈলা আঁচল’- উপন্যাসের ভূমিকায় স্বয়ং গ্রন্থকার এটিকে ‘আঞ্চলিক উপন্যাস’ বলে অভিহিত করেছেন। বিহারের পূর্ণিয়া অঞ্চলের মেরীগঞ্জ নামক একটি গ্রাম এই উপন্যাসের পটভূমি। মেরীগঞ্জ গ্রামটিকে লেখক কিন্তু কোনও আঞ্চলিক গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ রাখেননি। মেরীগঞ্জ উপস্থিত হয়েছে ভারতের সমস্ত অনগ্রসর গ্রামের প্রতীক হিসাবে। সে কথা উপন্যাসের ভূমিকাতেই বলেছেন ঔপন্যাসিক। যেহেতু ভারতের সমগ্র গ্রামজীবনই স্বাধীনতা উত্তরকালেও অনগ্রসর, সেহেতু মেরীগঞ্জের সমস্ত দলাদলি, কুসংস্কার, প্রতিপত্তি অর্জনের জন্য কুৎসিত প্রতিযোগিতা, প্রভুকে তোষণের জন্য অত্যাধিক আগ্রহ, বর্ণভেদ, জাতিভেদ, ক্ষত্রিয়ত্বের অন্তঃসারশূন্য অহমিকা ইত্যাদি সবকিছুই আসলে সাধারণভাবে ভারতের যে কোনো গ্রামীণ জীবনেরই প্রতিবিম্ব। আবার সেই গ্রামেই যখন উন্নতির তথা সভ্যতার কোনও ন্যূনতম অগ্রগতির হাওয়া বয়, তখন সেটাও গ্রামজীবনে অস্বাভাবিক উত্তেজনাময় অবস্থার সৃষ্টি করে। ম্যালেরিয়া-ওলাওঠা বিপর্যস্ত গ্রামে যখন হেল্থ সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন তাকে কেন্দ্র করে মেরীগঞ্জের মানুষদের পারস্পরিক সম্পর্ক, সামাজিক অবস্থান, প্রভাব ও প্রতিষ্ঠার পুরোনো ছক বদলে যেতে থাকে।
বিশেষভাবে ‘মৈলা আঁচল’-এর ভাষায় মৈথিলী উপভাষা তথা দেহাতী ভাষার অনিবার্য ব্যবহার যেন ঘটনা ও চরিত্রগুলিকে অনেক বেশি জীবন্ত করে তুলেছে।
ফণীশ্বরনাথ রেণুর ‘মৈলা আঁচলে’র সাফল্য সমালোচকদের মনে একটি আশঙ্কার সৃষ্টি করেছিল যে, প্রথম উপন্যাসেই প্রতিভার শিখর স্পর্শ করার পর রেণু সম্ভবত আর পরবর্তী ক্ষেত্রে নিজেকেই অতিক্রম করতে পারবেন না। কিন্তু সমালোচকদের আশঙ্কা অমূলক প্রমাণিত করে দু’বছর পরে রেণুর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘পরতী পরিকথা’ যখন প্রকাশ পেল, তখন দেখা গেল আঞ্চলিক গণ্ডির মধ্য থেকেই এই উপন্যাসেও বৃহৎ ভারতের গভীর ব্যঞ্ছনা, সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণশক্তি, গ্রামীণ জীবনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ, কাহিনী ও চরিত্র অসাধারণ দক্ষতায় উপস্থিত করেছেন ঔপন্যাসিক। ‘পরতী পরিকথা’ উপন্যাসও হিন্দী সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীর উপন্যাস হিসাবে গ্রাহ্য।
ফণীশ্বরনাথ রেণুর ছোটোগল্পগুলিও গ্রামীণ জীবনের বাস্তবমুখী চিত্রণের অনবদ্য প্রকাশ। শুধু জীবনচিত্রণই নয়, রেণুর প্রতিভাস্পর্শে লিখন-শৈলীগত অসাধারণত্বও সংযোজিত হয়েছে তাঁর গল্প ও উপন্যাসগুলির মধ্যে। উপন্যাস রচনার ফাঁকে ফাঁকেও তিনি অসংখ্য ছোটগল্প রচনা করেছেন।

পাঁচের দশকে হিন্দী সাহিত্য ক্ষেত্রে ছোটগল্পের যে নব-আন্দোলন হয়েছিল, তা ছিল মূলতঃ ছিল নগর-পল্লীর দ্বন্দ্ব থেকে জাত। রেণু কখনও এইসব সাহিত্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ফলে প্রচারের আলো সেই সময় তাঁর উপর পড়েনি। কিন্তু আঞ্চলিক জনজীবনের উপাদান এত জীবন্তভাবে তাঁর রচনায় এসেছে যে পরবর্তীকালের আলোচকগণ ফণীশ্বরনাথের শক্তি ও সাহিত্যপ্রতিভাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেন।
রেণুর গল্পগুলি ঐতিহ্যবাহী হিন্দী সাহিত্যের প্রচলিত ধারা থেকে অনেকটাই আলাদা। স্বাদ-রুচি-বাচনভঙ্গি সবদিক থেকেই। তাঁর এক দশক আগেই সাহিত্য চর্চায় আত্মনিয়োগ করেছেন এমন দু’জন লেখক যশপাল ও অজ্ঞেয়, তাঁরাও ফণীশ্বরনাথ রেণুর সাহিত্য প্রতিভার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন।

পরিচিত পটভূমি থেকেই ফণীশ্বরনাথ রেণু তাঁর গল্পের উপাদান সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু নিছক মামুলী ঘটনা ও চরিত্রও তাঁর গল্পে শেষ পর্যন্ত এক অপ্রত্যাশিত বাঁক নেয়। প্রথমতঃ আঞ্চলিক পটভূমি, দ্বিতীয়তঃ লোকসংস্কৃতির‌ নিবিড় গন্ধ ফণীশ্বরনাথ রেণুর গল্প এক নতুন আবহ সৃষ্টি করে। যা তাঁর লেখার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।

‘পালোয়ানের ঢোলক’ গল্পে ম্যালেরিয়া ও কলেরায় পীড়িত পল্লীতে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দরিদ্র মানুষের যে অসহায়তা সেটি অনবদ্য ভঙ্গিতে ফুটলেও ফণীশ্বরনাথ রেণু তাঁর এই গল্পে সেই অসহায়তার মাঝখানেও অপূর্ব শিল্প কৌশলে এক সঞ্জীবনীমন্ত্র সঞ্চার করেছেন। গ্রামের পালোয়ান লুট্রন সিং কুস্তির লড়াইয়ে সর্বদা জয়ের প্রেরণা লাভ করে ঢোলের বোলের মধ্য দিয়ে। সেই ঢোলের বোলে শক্তি সঞ্চার হয় পালোয়ানের মনে সেই শক্তিতেই সে পরাজিত করে দাম্ভিক কুস্তিগীর চাঁদ সিংকেও। চাঁদ সিংকে পরাজিত করার গৌরব অর্জন করে লুট্রন সিং রাজাসাহেবের সভাতেও স্থান পায়। কিন্তু আধুনিক যুগের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এবং রাজাসাহেবের মৃত্যুতে রাজসভা এবং সভায় পালোয়ানের অস্তিত্ব অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। ফলে রাজাসাহেবের পুত্রের আদেশে লুট্রনের চাকরি যায়। তারপর লুট্রন পুত্রসহ গ্রামে ফিরে আসে। সেখানে সমস্ত অভাবের মধ্যেও সে যেন ঢোলক বাজিয়ে বাঁচার মন্ত্র জাগায় সকলের মনে। কলেরায় আক্রান্ত গোটা গ্রামে যখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে , তখন এই মৃত্যুশীতলতার মধ্যেও সংগ্রামের প্রেরণা জাগায় লুট্রনের ঢোলের শব্দ। শেষে লুট্রন পালোয়ানের পুত্র কলেরায় মারা যায়। তাঁর শেষকৃত্য সেরে এসে সারারাত লুট্রন ঢোল বাজায়। অবশেষে সকালে এসে গ্রামবাসীরা আবিষ্কার করে লুট্রন পালোয়ান ঢোলের পাশে মরে পড়ে আছে।

ফণীশ্বরনাথ রেণুর আর একটি গল্প ‘রসুল মিস্ত্রী’। সদর রোডে যন্ত্রপাতি সারানোর দোকান রসুল মিস্ত্রীর। তার কাজের খ্যাতি প্রচুর। নিখুঁত তার কাজ। তাই লোকে রসুল মিস্ত্রীর কাছেই পুরোনো জিনিষ-পত্র সারানোর জন্যে নিয়ে এসে লোকে ভিড় করে। ধীরে ধীরে যুগ পাল্টে যেতে থাকে। আশে পাশে নতুন নতুন দোকান গড়ে ওঠে, সাইনবোর্ড আর আলোর জেল্লায় দোকানগুলি লোকের নজর কাড়ে। কিন্তু রসুল মিস্ত্রীর দোকান সেই আগের মতোই। গাছের গায়ে রংচটা আঁকাবাঁকা হরফে লেখা ছোটো ‘সাইনবোর্ডে’। তাতে ছেলে-ছোকরাদের মন্তব্যটুকু মুছে দেবারও প্রয়োজন বোধ করে না রসুল।
কাজের চাপ থাকলেও এবং তার কাজ নিখুঁত হলেও মানুষের অভিযোগ হল, রসুলকে কাছে কাজ পাওয়াই দায়। একটা জিনিষ সারাতে দিয়ে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়।
কেননা মানুষের সাহায্যের জন্য যেন তার জীবন উৎসর্গীকৃত। কার ছেলের শরীর খারাপ, কোন্ শ্রমজীবী নারী কার দ্বারা অপমানিত হয়েছে, কার জমি নিয়ে ঝামেলা, সবেতেই রসুল মিস্ত্রী গিয়ে পাশে দাঁড়ায়। গ্রামে ম্যালেরিয়া ছড়ালে জড়িবুটির পাঁচন বানিয়ে রসুল একা গোটা গ্রামে বিলি করে। চরিত্রপ্রধান এই গল্পটিতেও অবক্ষয়ের মাঝখানে যেন একটা আশাবাদের আলো প্রজ্জ্বলিত করে তোলেন ফণীশ্বরনাথ রেণু।
চাকরিজীবী মহিলাদের নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘দীর্ঘতপা’ একসময় পাটনায় বিতর্কের সৃষ্টি করে। গ্রামীণ মানুষের বঞ্চনা ও শোষণ ছিল তাঁর কাহিনীর উপজীব্য বিষয়। তার ছোটগল্প ছোট ও বড় পর্দায় চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে।
প্রথম জীবনে কবিতা লিখতেন। স্মৃতিকথা, রিপোর্টাজ ইত্যাদিও লিখেছেন একসময়।

‘আদিম রাত্রি কি মহক’ ও ‘ঠুমরী’ হল তার ছোটগল্প সংকলন।

সাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ীর সাথে হৃদ্যতার সম্পর্ক ছিল। তিনি সতীনাথ ভাদুড়ীকে নিয়ে বাংলায় ‘ভাদুড়ীজি’ নামে একটি দীর্ঘ স্মৃতিকথা রচনা করেছেন। বাংলার “হাংরি সাহিত্য আন্দোলনকে’ তিনি স্বাগত জানিয়েছিলেন ।
১৯৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তিনি যোগদান করেন এবং কারাবাস ভোগ করেন। ভাগলপুর সেন্ট্রাল জেলে তাঁর সহ রাজবন্দী ছিলেন সতীনাথ ভাদুড়ী। নেপালের রানাশাহীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনেও অংশ নিয়েছেন ১৯৫০ সালে। বিহারের প্রগতিশীল লেখক সংঘে জড়িত ছিলেন। জীবনের শেষ লগ্নে জরুরী অবস্থানকালীন জয়প্রকাশ নারায়নের আন্দোলনের সাথেও যুক্ত হন তিনি এবং জেলে যান। জরুরী অবস্থা ও শিল্পী সাহিত্যিকদের কন্ঠরোধের প্রতিবাদস্বরূপ তার প্রাপ্ত ‘পদ্মশ্রী সম্মান’ ফিরিয়ে দেন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী ভাতা প্রত্যাখ্যান করেন ফণীশ্বরনাথ রেণু।
ভারতীয় ডাক বিভাগ থেকে তাঁর নামে (ছবি সহ) স্ট্যাম্প প্রকাশিত হয়েছে ২০১৬ সালে।

১১ই এপ্রিল, ১৯৭৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন এই বরেন্য সাহিত্যিক।

————————————————-
[তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress