১
যেখানে আকাশ চিকন শাখায় চেরা
চলো না উধাও কালেরে সেখানে ডাকি,
হা ! হতোস্মি-সড়কে বেঁধেছি ডেরা
মরীচিকা চায় বালুচারী আত্মা কি ?
লাল মেঘ গুহা পাবে না হয়তো খুঁজে
নিজেরে নিখিল মিছিলে মেলাও যদি,
চলো তার চেয়ে মরা খড়ে ঘাড় গুঁজে
হব অপরূপ অপরাহ্নের নদী |
হরিণ সময় লাগামে বাঁধতে পার ?
বিশ শতকেও ফুলের বেসাতি করি,
অতল হ্রদের মিতালি হৃদয়ে গাঢ়
হিংসুক হাওয়া দেহে আঁকে চক্ খড়ি |
প্রতিবেশী চাঁদ নয় তো অনাত্মীয়
রামধনু-রং দেশেও জমাব পাড়ি,
মাঠের শিশির ঝরবে না একটিও
ক্রীতদাস ছায়া গোটাবে না পাত্ তাড়ি |
২
জানি ; পলাতক পাখায় নভশ্চারী
খোঁজা নিষ্ফল নক্ষত্রের ঘাঁটি ;
ফাঁকা ভাঁড়ারের ওস্তাদ সংসারী—
আর কতদিন ঢাকবে ধোঁকার টাটি ?
পিরামিডে থাক পিরীতি কফিন-ঢাকা,
অহল্যা হোক পিচ্ছিল হাতছানি,
প্রগল্ ভ যুঁই মেলুক বন্ধ্যা শাখা,
চাঁদের চোখেতে পড়ুক অন্ধ ছানি |
উপবাসী রাত অক্ষম অভিনেতা |
হৃদয়ে হাঙর-যক্ষ্মাই ঠোকরাবে |
ফসলের দিন সামনে, কঠিনচেতা—
অবৈতনিক বেডেই তা টের পাবে |
বুঝেছি, ব্যর্থ পৃথিবীর পাড় বোনা ;
স্বপ্নের ভাঁড় সামনেই ওলটানো |
তামাসা তো শেষ ; পারের কড়িও গোনা—
কঙ্কালখানা কালের স্কন্ধে টানো |
৩
শ্রীমতী, আমার অরণ্য-স্বাদ
মেটে এখানেই | লেকে সন্ধ্যায়
গোচারণ ঘাসে প্রার্থী যুবক |
কমণ্ডলুতে কারণ, তাইতো
ওঁ তৎসৎ,— প্রলাপ মানেই |
ফরাসি রাজ্য ভাল লাগে, তাই
সংসার-ত্যাগ | লাল ত্রাসে কাঁপে
গ্লেসিয়ার দিন | পেশোয়ারিদের
করকমলেই ভবলীলা শেষ |
৪
( উঞ্ছজীবী ডাস্টবিন নির্জন বলেই )
অনেক আগ্নেয় রাত্রে নিষিদ্ধ আমারা
দেখেছি বৈষ্ণব বেনে অকৃপণ হাত দেয় পণ্য যুবতীকে |
অবশ্য নেপথ্যে চলে নিরামিষ নাচ আর গান |
কখনো নিষ্ঠুর হাতে তারা কিন্তু মারে না কো মশা একটিও |
( আমরা কয়েকটি প্রাণী, — দু-চোখে ঘুমের হরতাল | )
মাঝে মাঝে শোনা যায়, ভবঘুরে কুকুরের ঠোঁটে
নতুন শিশুর টাটকা রক্তিম খবর !
( তন্বী চাঁদ ক্রোড়পতি ছাদের সোফায় ! )
চীনা লাবলসৈনিকের শরীরে এখন
নিবিড় নির্বাণ-বিদ্যা বীক্ষণ করে কি বেয়নেট ?
বোমাত্মক এরোপ্লেন গান গায় দক্ষিণ সমীরে—
মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান |
সুপুষ্ট ঈশ্বর সুনি উষ্ণীষ আকাশে
পুঁজি রাখে আমাদের অর্জনের রুটি—
( সাদা মেঘ তারি কি স্বাক্ষর )
মৌমাছির মতো বসে কতিপয় নক্ষত্র নাগর
নিশাচর ফুর্তির চূড়ায় |
উচ্চারিত ক্ষোভে তাই বিস্ফোরক দিন
ছাত্র আর মজুরের উজ্জ্বল মিছিলে
বিপ্লব ঘোষণা করে গেছে |
তবুও আড্ডায় চলে মন-দেয়া-নেয়ার হেঁয়ালি |
প্রতিদ্বন্দ্বী সব্যসাচী ডবল-ডেকারে
( চাক্ষুষ আমার দেখা ) ফাল্গুনী কবিরা
অর্ধেক চাঁদের মতো কী করুণ চ্যাপ্টা হয়ে গেছে |
অহিংসা পরমো ধর্ম নীলবর্ণ শৃগালের দলে |
টাকার টঙ্করে শুনি : মায়া এ পৃথিবী |
জীবের সুলভ মুক্তি একমাত্র স্বস্তিকার নীচে |
সংগ্রাম সন্ধিতে আজ কী চক্রান্ত চৌদিকে ফেঁদেছে !
আজকে এপ্রিল মাস, — ( চৈত্র না ফাল্গুন ? )
ভ্রষ্ট নোগুচির নিন্দা চড়াইয়েরা ভণে |
৫
অগ্নিবর্ণ সংগ্রামের পথে প্রতীক্ষায়
এক দ্বিতীয় বসন্ত | আর
গলিতনখ পৃথিবীতে আমরা রেখে যাব
সংক্রামক স্বাস্থ্যের উল্লাস |
ততদিন আত্মরক্ষার প্রাচীর হোক
প্রত্যেক শরীরের ভগ্নাংশ |
জীবনকে পেয়েছি আমরা, বিদ্যুৎ জীবনকে |
উজ্জ্বল রৌদ্রের দিন কাটুক যৌথ কর্ষণায়
দুর্ঘটনাকে বেঁধে দেবে কর্মঠ যুবক
নিখুঁত যন্ত্রের মধ্যতায় |
অরণ্যকে ছেঁটে দেবার দিন এসেছে আজ |
তবে, যুদ্ধ আজ |
রাজন্যের অনুকম্পা নেই,
প্রজাপুঞ্জের স্বপ্ন-ভঙ্গ |
বণিকপ্রভু চোখ রাঙায়,
কারখানায় বন্ধ কাজ |
( ইতিহাস আমাদের দিক নেয় | )
উদাসীন ঈশ্বর কেঁপে উঠবে না কি
আমাদের পদাতিক পদক্ষেপে ?