পণবলি
উমার বাবা কাঠের দোকানে কাজ করত—-একদিন কাজ থেকে ফেরার সময়— গাড়ি চাপা পড়ে—–প্রাণে বাঁচলেও— একটি হাত চলে যায়।
সংসারের বেহাল অবস্থা দেখে বৌ লোকের বাড়ি কাজ ধরে—উমার বাবা এক হাতে ঠেলায় করে মহাজনের মাল দেয়—মেয়ের বয়স আঠারো হয়েছে—-বিয়ে দিতে হবে—এইজন্য উদয়াস্ত কাজ করে ঐ একটা হাতে—-আজকাল হাতে যন্ত্রণা ও হয়—কিন্তু মেয়েকে বিয়ে দিতে গেলে পণ্যসামগ্রী লাগবে।ওদিকে আত্মীয়রা বলে মেয়ে যত ধিঙ্গি করবে ততো কিন্তু পণ বাড়বে।
তাই একমাত্র মেয়েকে শীঘ্র বিয়ে দিতে হবে।
বলি দেবার পাঁঠাকে যেমন দেখেশুনে নিতে হয়,নিখুঁত চাই,তেমনি কাজেরমাসি যমুনার মেয়েকে দেখতে এসে নেড়েচেড়ে দেখছিল পাত্রপক্ষ।উমা বেশ পাউডার মেখে সাতবাড়ির গতরখাঁটা চেহারায় প্রলেপ দিয়েছিল।উমা ভাবে
“বল্লি ছাগ্গল কিনতি এয়েচ , না কন্নে দেকতি এয়েচ?ত্যাখন থেইকে এম্মন নেইড়ি দেখতিচ,যে বে করবে।”
ছেলে বাড়ির প্রশ্ন চলছে—আচ্ছা তুমি কি কাজ জানো ?
উমা ভাবে পাশ করে গেলে–বাবা,মায়ের গতরখেঁটে যে মিষ্টি খাওয়ায়— বেঁচে যাবে।
আমি ঘরের সব কাজ,গরুর দুধ দোয়ানো,ঘুঁটে দিতে,পড়তে,বিরিয়ানী,কষা চিকেন ,সব পারি।
ছেলের বাবা বলে —ঠিক আছে উমাকে আমাদের পছন্দ হয়েছে।
ছেলের ঘুড়ির দোকান।উভয়পক্ষ রাজি।
শুনুন আপনারা মেয়েকে যা দেবেন—মেয়ের থাকবে— কুটুমের মান রাখবেন।
বিয়েরদিন পাত্রের বাপের খুব রাগ।তারপর দশহাজার টাকা—মেয়ের হাতের,গলায় আসল সোনা পরীক্ষার পর বিয়ে হয়।
উমা ঠিক বলির পাঁঠার মত— কাঁঠালপাতা চিবাতে চিবাতে মন্দিরে নয়—শ্বশুরবাড়ি চলেছে।
বিয়ের রেশ কাটতেই— বর উমাকে বাপের ঘর থেকে সাইকেল না আনলে জ্বালিয়ে দেবার হুমকি দেয়–প্রতিদিন খাবার নয়—-পেটপুরে মার জোটে।
উমা বলে—বাবার তো একটা হাত—কাজ করতে কষ্ট হয়—-তোমার তো দুটি হাত আছে—-একটু কষ্ট করে নিজে কেন না—-না হলে আমাকে বাবুদের বাড়ির রান্নার কাজ খুঁজে দাও—-আমি কিনে দেব।
তাছাড়া বাবা বলেছেন ছয়মাস বাদে দেবে।
ওদের যে বড্ড তাড়া—-এক্ষুনি লাগবে—ঐ জ্বলন্ত উমার চিৎকার শোনা যায়—বাবা আমি বাঁচতে চাই—-বাবা কাঁধে করে সাইকেল আনছে—-উমা তার আগেই কবেই পণবলি হয়ে গেছে।উমার জায়গায় আরেকটি উমা বলি হতে এসেছে।