Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পকেটমারি || Sanjib Chattopadhyay

পকেটমারি || Sanjib Chattopadhyay

পকেটমারি

আমার প্রচুর টাকা। বীভৎস রকমের টাকার মালিক। বাড়িখানা যেন ইন্দ্রপুরী। বাড়িতে ঢোকার সময় নিজেই অবাক হয়ে যাই। কী ছোটলোকের মতো ব্যাপার! এপাশে, ওপাশে মানুষ অনাহারে, অর্ধাহারে ধুকছে, মরে যাচ্ছে বলব না। অনর্থক বিতর্কের সৃষ্টি হবে। আমার ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। গুড বুক থেকে ব্যাড বুক-এ চলে যেতে কতক্ষণ। বাড়িটার পিছনে লোকটা লাখ পঞ্চাশ টাকা ঢুকিয়ে দিয়েছে ইতরের মতো। অর্থের অসভ্য নির্লজ্জ প্রদর্শনী।

আরে লোকটা তো তুমি!

তা-ও তো বটে।

অ্যায় দেখো, ভাবপ্রবণ হয়ে পড়েছে। নিষ্ঠুর। দৈত্য না হলে পৃথিবীতে এসে ভোগ করা যায় না। চোখ-কান বুজিয়ে মজা লুটে যাও। তুমি গরিব বলে আমি বড়লোক হব না!

কিন্তু!

আবার কিন্তু কীসের?

সেদিন একটা কথা কানে উড়ে এল। একজন বলছে, বড়লোক মানে, জ্ঞানী লোক, গুণী লোক। যেমন রামমোহন, বিদ্যাসাগর, সুভাষচন্দ্র, এইরকম।

রামমোহন রায় সেই কোনকালে মেয়েদের মুখ চেয়ে সতীদাহ রদ করালেন, বিলেতে গিয়ে অর্থাভাবে প্রাণ হারালেন। এখন ঘরে ঘরে বধূ নির্য্যাতন। ঝুলিয়ে মারা, পুড়িয়ে মারা। এখন। আবার শুরুতেই শেষ করার পদ্ধতি চালু হয়েছে। কন্যাসন্তান জন্মানো মাত্রই খুব ভালো করে। কাগজ-টাগজ মুড়ে রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে আসছে। দ্বাপরে শ্রীকৃষ্ণ একটা কংস মেরেছিলেন, এখন দিকে দিকে কংস। আইসিএস সুভাষচন্দ্র দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে চিরতরে হারিয়ে। গেলেন লস্ট ফর এভার। গদিতে বসে পড়লেন যাদব, মাধব। মুখের মেশিনগান থেকে গুলির বদলে বুলি। আর দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর লোকান্তরিত হওয়ার পর দু-বেলা দুটি আহারের জন্য তাঁর কন্যাকে ভিক্ষা করতে হল।

এই তো মরাল সাপোর্ট এসে গেল। আমার টাকা আছে। মোটা টাকা, ডোনেশন দিয়ে ছেলেকে নামী স্কুলে ভরতি করেছি, ব্যাটা মাস্টারের এত বড় আস্পর্ধা, আমার সোনার চাঁদের গায়ে হাত তুলেছে। দেখাচ্ছি মজা! এই কে আছিস?

ইয়েস স্যার।

আমার উকিল ভোলাকে ডাক।

আবার কী হল?

একটা ফাইভ ফিফটি ফাইভ, ফৌজদারি ঠুকে দাও।

কেসটা কী?

আমার ছেলের গায়ে হাত তুলেছে এক ব্যাটা পাতি মাস্টার। আমার ছেলে সিগারেট খাক, বিস্কুট খাক, মদ খাক, জুয়া খেলুক, তাতে মাস্টার নাক গলায় কোন সাহসে।

ঠিকই তো, ঠিকই তো। আগে একটা এফআইআর মেরে আসি।

ছেলেকে স্কুলে পাঠালেন, মাস্টারমশাই শিক্ষা দেবেন না?

না।

তাহলে তাঁরা কী করবেন?

মাস্টাররা মাস্টারদের দিকে মাস্টারদের মতো থাকবে, ছেলেরা ছেলেদের দিকে। কোনওরকম হস্তপ্রয়োগ চলবে না। গুন্ডা দিয়ে মেরে ঝাণ্ডা উড়িয়ে সব শেষ করে দেব। পাঠশালার যুগ শেষ।

ছেলের ডিগ্রি, ডিপ্লোমার কী হবে?

কিনে আনব। টাকা ফেললে তিনদিনের মধ্যে মাল এসে যাবে। আজকাল নোবেল প্রাইজও কিনতে পাওয়া যায়।

হাজত দৃশ্য

পকেটমার : কী করেছিলে গুরু? চেহারা দেখে তো ভদ্দরলোক বলেই মনে হচ্ছে?

শিক্ষক : আমি শিক্ষক।

পকেটমার : ও বাবা! সে তো গুরুর গুরু। শিক্ষাগুরুরা তো আমার গুরুর চেয়েও বড়। জাল মার্কশিট, জাল ডিগ্রি, প্রশ্নপত্র ফাঁস, পদক, পাণ্ডুলিপি চুরি, স্কুল তহবিল হাপিস, ছাত্রীকে রেপ। গুরু, গুরু। তা তোমার ডিগ্রি কোত্থেকে কিনেছিলে? শিকাগো? দেখো আমি পকেট মেরে হাজতে আর তুমি ডিগ্রি কেঁপে আমার পাশে! লাও একটা বিড়ি ধরো।

শিক্ষক : বিড়ি খাই না।

পকেটমার : আরও ওপরে উঠে গেছ? গাঁজায় আছ বুঝি?

শিক্ষক : না গোঁজায় আছি।

পকেটমার : আহা। গোঁসা করছ কেন? কেসটা কী?

শিক্ষক: ক্লাস সেভেনের ছেলে তাসের জুয়া খেলছিল, ধরে ঠাস করে এক চড়, হাজতে।

পকেটমার : অমানুষের দেশে মানুষ তৈরি করতে গেছ। হা, হা, তুমি কেমন অমানুষ হে?

শিক্ষক : তোমার মতে আমার কী করা উচিত?

পকেটমার : আমি আর কী বলব স্যার, আপনি শেয়াল পণ্ডিতের কাছে যান। গুরুর গুরু মহাগুরু। স্যার, একটা অ্যাডভাইস। শুধু মানিব্যাগই পকেটমার হয় না, ইজ্জতও মার হয়ে যায়। সামালকে। যেরা দেখকে চলো, আগে ভি দেখো, পিছে ভি দেখো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress