Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

ছোট্ট চিরকুট,লেখা-অফিসের পরে লালবাজারের পেছনে দামুর রেস্টুরেন্টে দেখা করুন। চিরকুট পড়ে নেপালের কি স্ফূর্তি,পারলে তখনই গিয়ে মিস মিত্রকে থ্যাঙ্কস জানায়। অফিস ছুটির পরে নেপাল একটু হেঁটে গেল লালবাজারের কাছে। একে তাকে জিজ্ঞেস করে ‘দামুর’ খুঁজে পেল। দেখলো ঘড়ি পট্টির মধ্যে একটা রেস্টুরেন্ট। এদিক ওদিক দেখতে দেখতে মিলির আগমন। একগাল হেসে বলল – স্যরি,দেরি করে ফেললাম। চলো। নেপাল তো হাঁ। আজ পর্যন্ত মিস মিত্র তাকে তুমি করে কথা বলেননি,আজ কি হ’ল ? যাই হোক মিস মিত্রের কথা মেনে দু জনে ঐ রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। প্রথম কথা বলল মিলি,একটু মিষ্টি হেসে – বলো কি বলতে চাও। আর হ্যাঁ আজকের বিলটা আমিই দেবো পরেরটা তোমার।এবার বলো। নেপালের তখন তো আত্মারাম খাঁচাছাড়া,এ কি হচ্ছে,মিস মিত্র কেন তাকে আপনি ছেড়ে তুমি করে বলছে। কিছুই মাথায় ঢুকছে না।বেশ কয়েকবার ঠোঁট চেটে নেপাল নেপোলিয়নের মত বুকে জোড় এনে ওর সমস্যার কথাটা বলল। শুনে মিলির সে কি হাসি।নেপাল বাবু মিস মিত্রের এই রূপ আগে কখনো দেখেনি।অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো সে।হাসি থামিয়ে মিলি নেপাল বাবুকে আশ্বাস দি’ল এই ব্যাপারে।মিলিকে দেখতে আর পাঁচটা বাঙালি মেয়েদের মতই।বয়স আনুমানিক পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ হবে। হাসলে গালে টোল পরে।এক কথায় সুশ্রী। বেশ কিছুক্ষণ ওখানে কাটিয়ে,চীনে খাবার খেয়ে দুজনে যখন বাইরে এলো তখন সন্ধ্যের শেষ লগ্ন। ডালহৌসি পাড়া ঘুমের তোড়জোড় করছে। মিলি থাকে দক্ষিণ কলকাতায়,নেপালকে ট্রেন ধরতে হবে তাই মিলিকে বাসে তুলে দিয়ে নেপাল শিয়ালদা স্টেশনের দিকে যাত্রা করলো।আজ বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে গেল। সন্ধ্যেবেলায় যা খেয়েছে তা’তে পেট পুরো জ্যাম। রাতে আর রান্না করবে না।চায়ের দোকানও বন্ধ। সোজা বাড়ি চলে এলো নেপাল। ভাবতে লাগলো আজকের সন্ধ্যেবেলার ঘটনাগুলো ,মিলির উচ্ছাস,কথা বলার ধরন,আশ্বস্ত করা সব মিলিয়ে নেপালের রাতটা পুরো মিলিময় হয়ে থাকলো।পরের দিন অফিসে আবার যে কে সেই,কেউ কাউকেই তেমন চেনে’না ভাব। দুপুরে লাঞ্চ খেয়ে ফেরার সময় ভোম্বলের সঙ্গে দেখা। নেপাল বাবু ভোম্বলকে সব খুলে বলতে ভোম্বল প্রতিক্রিয়াতে শুধু ভালো বলে নিজের অফিসে চলে গেল। সপ্তাহ শেষ হয়ে আসছে ,শনিবার নেপাল বাবু একটা ফাইল মিলিকে যখন দিতে যাবে তখন সাহস করে একটা চিরকুটে পরের দিন অর্থাৎ রবিবার মিলির সাক্ষাৎ পাবে কি’না জানতে চাইলো। ফাইল ফেরত এলো মিলির উত্তর নিয়ে বিকেল চারটেতে মেট্রো সিনেমার কাছে সে চলে আসবে। যথারীতি নেপাল বাবু হাজিরা দিলেন ,মিলিও এলো কেটে গেল বেশ কিছু সুন্দর সময়। এরপর থেকেই প্রায় রবিবার দুজনের বাইরে দেখা করা রুটিন কাজ হয়ে গেল। এর মধ্যে কত্তাকে বলে নেপালের রেহাই ঠিক করেছে মিলি। দিন গড়াচ্ছে, একটা সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। নেপাল বাবু মিলিকে নিয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছেন। একদিন ভোম্বলকে খুলে বলতেই সে খুব খুশি হলো। নেপালের অফিসে এসে মিলিকে দেখে গিয়ে কাকাকে গ্রীন সিগন্যাল দিলো ,তবে কাকার অনুরোধে বাড়িতে কাউকেই বললো না। দিন কাটছে গড়গড়িয়ে। মিলিও ক্রমশ নেপালের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ছে। এমনই একদিন দুজনে একটা ওয়াটার পার্কে বেড়াতে গেছে যেমন যায়। প্যাডেল বোটে চেপে জলবিহার করছে। মিলির সঙ্গে থেকে ,মিলির কথা শুনে নেপাল সাজ পোষাকে পরিবর্তন হয়েছে। সেদিনও দুজনে নৌকা ভাড়া করে ঘুরছিল বড় ঝিলটাতে। আশেপাশে আরও অনেকেই নৌকা নিয়ে আনন্দ করছে। অনেকে পরিবার নিয়ে তো অনেকে বন্ধু বান্ধবের সাথে। এইরকমই কিছু চ্যাংড়া ছেলে, ওরা দলে বেশ ভারি গোটা পাঁচেক নৌকা নিয়ে তুমুল ফূর্তিতে মেতেছে। নিজেদের মধ্যে কখনও নৌকা দিয়ে ধাক্কা মারছে আবার কখনও অন্যদের নৌকায় ধাক্কা দিয়ে স্যরি বলছে ,নিজেদের ভেতর তুমুল মুখ খারাপ করে হেসে একে অপরের ওপর গড়িয়ে পড়ছে। নেপাল মনে মনে খুব বিরক্ত হচ্ছে। এতক্ষণ বেশ চলছিল। ঝিলের পাড়ে লুকোনো সাউন্ড সিস্টেমে রোমান্টিক গান চলছে। মিলি ঐ গান শুনে গুনগুন করছে। মাঝে মাঝে ঝিলের জলে হাত দিয়ে জল তুলে নেপালের ওপর ছিটিযে দিচ্ছে। বেশ একটা রোমাঞ্চিত হওয়ার পরিবেশ ছিল,এই ছেলেগুলো এসে তাল কেটে দিল। এক দু’বার ওদের নৌকার পাশ দিয়ে যাওযার সময় ওদের দিকে তাকিয়ে টোন টিটকারি কেটেছে , নৌকাতে ধাক্কা দিয়েছে,মিলির কথা শুনে নেপাল প্রতিবাদ করেনি। কিন্ত এইবার নেপালদের নৌকাতে এসে সজোরে ধাক্কা দিল। সেই অফিসে যা হয়েছিল সেই এক ব্যাপার,নেপাল তুমুল চিৎকার চেঁচামেচি করা শুরু করলো। সঙ্গে কিছু বাছা বাছা বিশেষণ। ছেলেগুলোও কম যায় না। ওরা দলে ভারি। সবাই একযোগে এসে নেপালদের নৌকা ঘিরে ধরলো। হৈ হট্টগোল চরমে,কথা কাটাকাটি মায় গালিগালাজ শুরু হলো। মিলি প্রচুর চেষ্টা করেও নেপালকে থামাতে পারছে না। তখনই ঘটে গেল ঘটনাটা । ওদের একটা নৌকা এসে সজোরে ধাক্কা দিল নেপালদের নৌকাতে আর নেপাল টাল সামলাতে না পেরে সোজা জলে। কিন্ত জলে পড়লে এত ব্যাথা লাগে না’কি ? চোখ মেলে নেপাল দেখলো ভাইপো ভোম্বল। হাতে জলের মগ। নেপালকে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিয়েছে। জল ছিটিয়েছে বলে নেপালের চোখেমুখে জল। হতভম্ব কাকা’কে বলল- ন’টা বেজে গেছে,অফিস যাবি না।

Pages: 1 2 3

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress