Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নৃসিংহ রহস্য || Shirshendu Mukhopadhyay

নৃসিংহ রহস্য || Shirshendu Mukhopadhyay

সকালবেলায় দুধ দিতে এসে

সকালবেলায় দুধ দিতে এসে রামরিখ বলল, “এরাজ্যিতে আর থাকা যাবে না। কাল রাতে গয়েশবাবু খুন হয়েছে। লাশটা নদীতে ভাসছে। মুণ্ডুটা ঝুলছে সতুবাবুদের পোড়োবাড়ির পিছনে একটা শিমুলগাছে। সেই গাছটা থেকেই রোজ গহিন রাতে দুটো সাদা ভূত নেমে এসে আমার ছেলে রামকিশোরকে ভয় দেখায়। সেই দুটো ভূতই রোজ আমার দুটো গরু আর একটা মোষের দুধ আধাআধি দুয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলে। রোজ আজকাল তাই দুধ কম হচ্ছে। গাহেক ঠিক রাখতে তাই কিছু-কিছু জল মিশাতে হয় দুধে। দোষ ধরবেন না। তা ছিল দুটো ভূত। গয়েশবাবুকে নিয়ে হবে তিনটে। কাল থেকে দুধ আরও কমে যাবে। আরও জল মিশাতে হবে। তার চেয়ে আমি ভাবছি, গরু-মোষ বেচে দিয়ে দেশে চলে যাব।”

রামরিখের কথাটা খুব মিথ্যেও নয়। আবার পুরোপুরি সত্যিও নয়। সাটুর মা কুমুদিনী দেবী দুধ জ্বাল দিতে গিয়ে দেখলেন, দুধে আজ জলটা কিছু বেশিই। গয়েশবাবুর ভূত এখনও দুধ খেতে শুরু করেনি বোধহয়। কিন্তু রামরিখ আগাম সাবধান হচ্ছে।

দুধ জ্বালে বসিয়ে কুমুদিনী দেবী বাড়ির সবাইকে ঠেলে তুললেন। “ওরে ওঠ তোরা, তুমিও ওঠো গো! কী সব্বোনেশে কাণ্ড শোনো। গয়েশবাবু নাকি খুন হয়েছেন।”

বাড়িতে হুলুস্থুল পড়ে গেল। সাটুর বাবা সুমন্তবাবু খুন শুনে বিছানা থেকে নামার সময় মশারিটা তুলতে ভুলে গেছেন। মশারিসুদ্ধ যখন নামলেন তখন তাঁর জালে-পড়া বোয়ালমাছের মতো অবস্থা। মশারি জড়িয়ে কুমড়ো-গড়াগড়ি খাচ্ছেন মেঝেয়।

সাটুর দিদি কমলা “ওরে মা রে” বলে ভাল করে লেপে মুখ ঢেকে চোখ বুজে রইল।

ঠাকুমা ঠাকুরঘরে জপের মালা ঘোরাচ্ছিলেন। তিনিই শুধু শান্তভাবে বললেন, “গণেশ চুন খেয়েছে, এটা আর এমন কী একটা খবর! সাতসকালে চেঁচামেচি করে বউমা আমার জপটাই নষ্ট করলে।”

সান্টু বাবা আর মায়ের মাঝখানে শোয়। ঘুম ভেঙে সে দেখল, বাবা পুরো মশারিটা টেনে নিয়ে মেঝেয় পড়ে কাতরাচ্ছে। দৃশ্যটা তার খুব খারাপ লাগল না। খবরটাও নয়। আজ সকালে বাবা তার জ্যামিতির পরীক্ষা নেবেন বলে কথা আছে। গোলমালে যদি সেটা হরিবোল হয়ে যায়।

বাইরের দিকের ঘরে সান্টুর জ্যাঠতুতো দাদা মঙ্গল ঘুমোয়। সে কলেজে পড়ে, ব্যায়াম করে, আর দেশের কাজ করতে সন্ন্যাসী হয়ে চলে যাবে বলে বাড়ির সবাইকে মাঝে-মাঝে শাসায়। সে সেখান থেকেই চেঁচিয়ে বলল, “বড়কাকা, যদি ভাল চাও তো এ-শহর ছেড়ে কলকাতায় চলো। এখানে একে-একে সবাই খুন হবে। তুমি আমি সবাই। গয়েশবাবু তিন নম্বর ভিকটিম।”

মশারির জাল থেকে বেরিয়ে সুমন্তবাবু গোটাকয় বুকডন আর বৈঠক দিয়ে নিলেন। এক কালে ব্যায়াম করতেন। বহুকাল

ছেড়ে দিয়েছেন। খুন শুনে হঠাৎ ঠিক করলেন, শরীরটাকে মজবুত রাখা চাই। সাটুকেও তুলে দিলেন, “ওঠ, ওঠ। ব্যায়ামে শরীর শক্তিশালী হয়, শয়তান বদমাশদের ঢিট রাখা যায়। ওঠ, ব্যায়াম কর।”

জ্যামিতির বদলে ব্যায়াম সান্টুর তেমন খারাপ বলে মনে হল না। সে উঠে পড়ল।

বাড়িতে খবরটা দিয়ে কুমুদিনী বেরোলেন পাড়ায় খবরটা প্রচার করতে। দারুণ খবর। সকলেই অবাক হয়ে যাবে।

পাশের বাড়ির আগড় ঠেলে ঢুকতেই দেখেন মুখুজ্যেবাড়ির বুড়ি ঠাকুমা রোদে বসে নাতির কাঁথা সেলাই করতে করতে বকবক করছেন আপনমনে।

কুমুদিনী ডাকলেন, “ও ঠাকুমা, খবর শুনেছেন।”

ঠাকুমা মুখ তুলে একগাল হেসে বলেন, “গয়েশের খবর তো! সে-খবর বাছা সেই কাকভোরেই খুঁটেকুড়নি মেয়েটা এসে বলে গেছে। কী কাণ্ড! গয়েশের মুণ্ডুটা নাকি”

“হ্যাঁ, সতুবাবুদের পোড়োবাড়ির শিমুলগাছে।”

“আর ধড়টা।”

“নদীতে ভাসছে।”

মুখুজ্যে-ঠাকুমা বিরক্ত হয়ে বলেন, “আঃ, আজকালকার মেয়ে তোমরা বড্ড কথার পিঠে কথা বলল। বুড়ো মানুষের একটা সম্মান নেই? কথাটা শেষ করতে দেবে তো।”

কুমুদিনী দেবীর মনটা খারাপ হয়ে গেল। খবরটা তাহলে সবাই পেয়ে গেছে!

বাড়িতে ফিরে এসে কুমুদিনী দেখেন, দুধ পুড়ে ঝামা। সুমন্তবাবু আর সান্টু বুকডন আর বৈঠকির পর এখন মশারির পড়ি খুলে নিয়ে স্কিপিং করছে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তত্ত্বাবধান করছে

মঙ্গল। কমলা লেপ মুড়ি দিয়ে বসে হপুস নয়নে কাঁদছে। রেগে গিয়ে ভারী চেঁচামেচি করতে লাগলেন কুমুদিনী দেবী। “একটা মিনিট চোখের আড়ালে গেছি কি দুধ পুড়ে ঝামা হয়ে গেল! বলি এতগুলো লোক বাড়িতে, কারও কি চোখ নেই, নাকি নাকে পোড়া গন্ধটাও যায় না কারও।”

এই সময়ে ঝি পদ্ম কাজ করতে আসায় কুমুদিনী থেমে গেলেন। পদ্ম চোখ কপালে তুলে বলল, “ও বউদি, শুনেছ?”

কুমুদিনী একগাল হেসে বললেন, “শুনিনি আবার! গয়েশবাবুর

মুণ্ডুটা–”

“হ্যাঁ গো, সতুবাবুদের শিমুল গাছে ঝুলছে।”

“আর ধড়টা–”। “হ্যাঁ গো, নদীতে ভাসছে।”

কুমুদিনী বিরক্ত হয়ে বলেন, “তোমাদের জ্বালায় বাপু কথাটা শেষ করার উপায় নেই। ‘ক’ বলতেই কেষ্ট বোঝে। নাও তো, মেলা বেলা হয়েছে, কাজে হাত দাও।”

সুমন্তবাবু সান্টু আর মঙ্গলকে নিয়ে সরেজমিনে ঘটনাটা দেখতে বেরোলেন। রাস্তায় বেরিয়েই বললেন, “হাঁটবে না। দৌড়োও। দৌড়োলে একসারসাইজ হয়, তাড়াতাড়ি পৌঁছনোও যায়। কুইক! রান!”

তিনজন দৌড়োতে থাকে। মাঝে-মাঝে থেমে সুমন্তবাবু দুহাত চোঙার মতো মুখের কাছে ধরে টারজানের কায়দায় হাঁক মারেন, “গয়েশবাবু খু-উ-ন!” খবরটা প্রচারও তো করা চাই।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9
Pages ( 1 of 9 ): 1 23 ... 9পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress