Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey » Page 8

নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey

লতিমন মলিল, “হাঁ, ওড়্না আমারই বটে, আপনি কিরূপে ইহা জানিতে পারিলেন ?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, ” আমি এই ওড়না লইয়া করিমের মার কাছে গিয়াছিলাম । তাহারই মুখে শুনিলাম, আপনি তাহার নিকট হইতে এই ওড়্না তৈয়ারী করিয়া লইয়াছেন । এই ওড়না যদি আপনার-আপনারই নাম লতিমন বাই-তবে মেহেদী-বাগানে যে স্ত্রীলোকটি খুন হইয়াছে, সে কে ?”
এবার লতিমন বাই আকুলভাবে কাঁদিয়া ফেলিল । দেবেন্দ্রবিজয় কারণ বুঝিতে না পারিয়া আরও বিস্মিত হইলেন ।
লতিমন কাঁদিতে কাঁদিতে বলিল, “হায় ! হায় ! কি সর্ব্বনাশ হ’ল গো-আমাদেরই সর্ব্বনাশ হয়েছে ! মেহেদী-বাগানে যে মেয়েমানুষটি খুন হয়েছে-তার কাপড়-চোপড় কি রকম ?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, ” সকলই নীলরঙের সিল্কের তৈয়ারী । সাঁচ্চার কাজ করা ।”
লতিমন বাই হতাশভাবে বলিল, “তবেই ঠিক হয়েছে ।
“ঠিক হয়েছে কি?”
“আমাদের দিলজানই খুন হয়েছে ।” বলিয়া লতিমন দুই হাতে মুখ ঢাকিল ।
দেবেন্দ্রবিজয় দেখিলেন রহস্য ক্রমশঃ নিবিড় হইতেছে-এই রহস্যের মর্ম্মভেদ বড় সহজে হইবে না । তিনি একখানি ফটোগ্রাফ বাহির করিয়া লতিমনকে দিয়া কহিলেন, “চিনিতে পারো কি ?”
লতিমন বাই দেখিবামাত্র কহিল, ” এ দিলজান বাইএর চেহারা; কিন্তু মুখখান যেন কেমন-এক-রকম ফুলো ফুলো দেখাইতেছে ।”
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, ” দিলজানের মৃত্যুর পর এই ফোটো লওয়া হইয়াছে-বিষে মুখখানা ফুলিয়া উঠিয়াছে ।”
“বিষে?”
“হাঁ, গত বুধবার রাত্রে কেহ বিষাক্ত ছুরিতে তাহাকে হত্যা করিয়াছে ।”
“গত বুধবার রাত্রে ! সেইদিনেই সে আমার নিকট হইতে এই ওড়্না লইয়া বাহির হইয়াছিল,” বলিয়া লতিমন বাই পুনরায় ক্রন্দনের উপক্রম করিল ।
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, ” দেখুন, এখন কান্নাকাটি করিলে সকল দিক নষ্ট হইবে । দিলজান সম্বন্ধে আপনি যাহা কিছু জানেন, আমাকে বলুন । দিলজানের হত্যাকারীর অনুসন্ধানে আমি নিযুক্ত হইয়াছি-যাহাতে হত্যাকারী ধরা পড়ে, সেজন্য আপনার সর্ব্বতোভাবে চেষ্টা করা উচিৎ । বোধ হয়, আপনার সাহায্যে আমি প্রকৃত হত্যাকারীকে সহজে গ্রেপ্তার করিতে পারিব ।”
লতিমন বাই চোখের জল মুছিয়া ভাল হইয়া বসিল । বলিল, “যাহাতে হত্যাকারী ধরা পড়ে সেজন্য যতদূর সাহায্য আমার দ্বারা হইতে পারে, তাহা আমি করিব । দিলজানকে আমি সহোদরা ভগ্নী অপেক্ষাও স্নেহ করিতাম । আমি যাহা কিছু জানি, সমুদয় আপনাকে এখনই বলিতেছি; কিন্তু কে তাহাকে হত্যা করিল-আমি ভাবিয়া কিছুই ঠিক করিতে পারিতেছি না । কে জানে, কে তাহার এমন ভয়ানক শত্রু ! সে কাহারও সঙ্গে মিশিত না-কাহারও সঙ্গে সঙ্গে তাহার বাদ-বিসংবাদ ছিল না-একমাত্র মনিরুদ্দীনকে সে খুব ভালবাসিত । মনিরুদ্দীন তাহাকে কোথা হইতে আনিয়া আমার এখানে রাখিয়াছিলেন । মনিরুদ্দীন তাহাকে বিবাহ করিবে বলিয়া মধ্যে মধ্যে আশা দিতেন । দিলজানও সেজন্য তাঁহাকে যখন-তখন পীড়াপীড়ি করিত । ইদানীং মনিরুদ্দীন বড় একটা এদিকে আসিতেন না-আসিলে তখনই চলিয়া যাইতেন । তিনি ইদানীং আর একজন সুন্দরীর রূপ-ফাঁদে পড়িয়াছিলেন ।”
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, ” আমি তাহাকে জানি-সে সুন্দরীর নাম সৃজান নয় কি ?”
লতিমন সবিস্ময়ে কহিলেন, “হাঁ, সৃজান । আপনি কিরূপে নাম জানিলেন ? এই সৃজান বিবিকে লইয়া দিলজানের সহিত মনিরুদ্দীনের প্রায় বচসা হইত । সপ্তাহ-দুই হইবে, আমি মজ্রো করিতে বিদেশে যাই । যখন ফিরিয়া আসিলাম-দেখি, দিলজানের সে ভাব আর নাই-মনিরুদ্দীনের উপরে সে একবারে মরিয়া হইয়া উঠিয়াছে । শুনিলাম, দিলজান কিরূপে জানিতে পারিয়াছে-মনিরুদ্দীন সৃজানকে কুলের বাহির করিবার মতলব ঠিক করিয়াছে । দিলজানকে আমি অনেক করিয়া বুঝাইতে লাগিলাম; আমার একটা কথাও তাহার কানে গেল না । সে বলিল, যদি তাহাই হয়-তাহা হইলে সে দুইজনকে খুন না করিয়া ছাড়িবে না । গত বুধবার রাত্রে মনিরুদ্দীন সৃজানকে লইয়া সরিয়া পড়িবার বন্দোবস্ত করিয়াছিল । সেইদিনেই দিলজান একটা মতলব ঠিক করিল-চতুরের সহিত চাতুরী করিতে হইবে । সৃজানকে কোন রকমে আটক করিয়া নিজেই মনিরুদ্দীনের সঙ্গ গ্রহণ করিবে ।”
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, ” তাহা হইলে মেহেদী-বাগানের খুনের রাত্রেই এখানে এই ঘটনা হয় ।”
লতিমন বলিতে লাগিল, ” সেইদিন অপরাহ্ণে দিলজান যখন মনিরুদ্দীনের বাড়ীতে যায়, তখন মনিরুদ্দীন বাড়ীতে ছিলেন না । যে বাঁদী মাগী ইহার ভিতরে ছিল, তাহাকে কিছু ইনাম্ দিয়া দিলজান তাহার নিকট হইতে বেবাক্ খবর বাহির করে । কখন কোন্ সময়ে ঘটনাটা ঘটিবে-কোথায় গাড়ী ঠিক থাকিবে, তামাম খবর লইয়া সে সন্ধ্যার পর আবার এখানে ফিরিয়া আসে । তাহার পর রাত দশটার সময়ে নিজে সাজিয়া-গুজিয়া বাহির হইয়া যায়; যাইবার সময়ে আমার ওড়্নাখানি চাহিয়া লইয়াছিল । তাহার পর আমি আর তাহার কোন খবর পাই নাই । মনে করিয়াছিলাম, সে তাহার মতলব ঠিক হাসিল্ করিয়াছে-সৃজানকে ফাঁকি দিয়া সে নিজেই মনিরুদ্দীনের সঙ্গে চলিয়া গিয়াছে ।”
দেবেন্দ্রবিজয় জিজ্ঞাসা করিলেন, ” আপনি কি ইতিপূর্ব্বে মেহেদী-বাগানের খুনের কথা কিছুই শোনেন নাই ?”
লতিমন বাই কহিল, “শুনিয়াছিলাম, কিন্তু ঐ খুনের সঙ্গে আমাদের দিলজানের যে কোন সংশ্রব আছে, এ কথা আমার বুদ্ধিতে আসে নাই ।”
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, “মেহেদী-বাগানের নিকটে মনিরুদ্দীনের বাড়ী । বুধবার রাত্রে দিলজান মেহেদী-বাগানে গিয়া যে খুন হইয়াছে, সে সম্বন্ধে আর কোন সন্দেহ নাই । এখন দেখিতে হইবে খুনী কে ? আপনি জানেন কি দিলজানের প্রতি কাহারও কখন কোন বিদ্বেষ ছিল কি না ?”
” না, কই এমন কাহাকেও দেখি না।”
দেবেন্দ্রবিজয় চেয়ার ছাড়িয়া দাঁড়াইয়া উঠিলেন । বলিলেন, আচ্ছা, আমি সময়ে আবার আপনার সহিত দেখা করিব । আর একটা কথা জিজ্ঞাস্য আছে; ইহার ভিতরে কি ছিল বলিতে পারেন ?” বলিয়া সেই ছুরির বাক্স দুইটি লতিমনের হাতে দিলেন ।
লতিমন কহিল, “কি সর্ব্বনাশ ! দুইখানি ছুরি যে নাই, দেখ্ছি ।”
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, “একখানি আমার কাছে আছে-আর একখানি কোথায় গেল ?”
লতিমন কহিল, “বুধবার রাত্রে দিলজান যাইবার সময়ে একখানা ছুরি সঙ্গে করিয়া লইয়া গিয়াছিল । যদি কৌশলে তাহার সঙ্কল্প সিদ্ধ না হয়, সেই ছুরি দ্বারা সে নিজের সঙ্কল্প সিদ্ধ করিবে স্থির করিয়াছিল । আমি ত পূর্ব্বেই আপনাকে বলিয়াছি, মনিরুদ্দীনের উপরে সে একবারে এমন মরিয়া হইয়া উঠিয়াছিল যে যদি মনিরুদ্দীন তাহাকে নিরাশ করেন, মনিরুদ্দীনকেও সে হত্যা করিতে কুণ্ঠিত নহে । সেই অভিপ্রায়েই দিলজান ছুরিখানা সঙ্গে লইয়াছিল ।”
দেবেন্দ্রবিজয় জিজ্ঞাসা করিলেন, “তাহা হইলে প্রয়োজনমত মনিরুদ্দীনকেই হত্যা করিবার উদ্দেশ্যে দিলজান ছুরিখানি সঙ্গে লইয়াছিল, নিজেকে নিজে খুন করে, এমন অভিপ্রায় তাহার ছিল না ?”
লতিমন কহিল, “না, আত্মহত্যা করিবার কথা তাহার মুখে একবারও শুনি নাই-সে অভিপ্রায় তাহার আদৌ ছিল না । দিলজানের এদিকে সব ভাল ছিল-কিন্তু রাগলেই মুস্কিল-একেবারে মরিয়া । সে কথা যাক্, আপনি এখন এ ছুরিখানা লইয়া কি করিবেন ?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, ” এখানা আমার অনেক কাজে লাগিবে বলিয়া, আমি ছুরিখানি লইয়াছি । প্রথমতঃ পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে, এই ছুরি বিষাক্ত কিনা । যদি বিষাক্ত হয়-দিলজান যে ছুরিখানি লইয়া গিয়াছে-সেখানিও বিষাক্ত হওয়া ষোল আনা সম্ভব । বাক্স দেখিয়া বুঝিতে পারিতেছি, দুইখানি একই প্রকার । তাহার পর এই ছুরি কোন একটা বিড়াল বা কুকুরের গায়ে বিদ্ধ করিলেই বুঝিতে পারিব-ইহার বিষে কতক্ষণে কিরূপভাবে মৃত্যু ঘটে, মৃত্যুর পরের লক্ষণই বা কিরূপ হয় । যদি লক্ষণগুলি দিলজানের সহিত ঠিক মিলিয়া যায়-তবে বুঝিতে পারিব, এই একজোড়া ছুরির অপরখানিতেই দিলজানের মৃত্যু ঘটিয়াছে ।”
লতিমন শিহরিত হইয়া কহিল, “দিলজানের ছুরি লইয়া দিলজানকেই খুন করিয়াছে, কে এমন লোক ?”
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, “এখন তাহার সন্ধান করিয়া দেখিতে হইবে ।”
লতিমন কহিল, ” হতভাগী আত্মহত্যা করে নাই ত ?”
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, “আত্মহত্যা করিয়াছে বলিয়া বোধ হয় না ; আর স্ত্রীলোকে পথে-ঘাটে এইরূপে কখনও আত্মহত্যা করে না । খুবই সম্ভব, দিলজানের কোন শত্রু তাহাকে রাত্রে নির্জন গলিমধ্যে একা পাইয়া খুন করিয়াছে ! যাহা হউক, সময়ে সকলেই প্রকাশ পাইবে-এখন উঠিলাম ।”
লতিমন জিজ্ঞাসা করিল, ” আবার কখন আপনার দেখা পাইব ?”
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, “দুই-একদিনের মধ্যে আবার আমি আসিতেছি ।” এখন একবার সন্ধান লইতে হইবে, খুনের রাত্রে মনিরুদ্দীনের বাড়ীতে কি ব্যাপার ঘটিয়াছিল ।”
উপস্থিত অনুসন্ধান অনেকাংশে সফল হইয়াছে মনে করিয়া, দেবেন্দ্রবিজয় প্রসন্নমনে লতিমনের গৃহত্যাগ করিয়া বাহিরে আসিলেন ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *