Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey » Page 6

নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey

ওড়নাখানি খুলিয়া দেখিয়া করিমের মা বলিল, ” এ ওড়্না আমাদেরই তৈয়ারী; এ রকম ফুল-লতা-মোড়ের কাজ আর কোথাও হয় না। গোয়েন্দা বাবুর বৌ-এর জন্য এ রকম একখানি ওড়্না চাই না কি? তা’ ইহার অপেক্ষাও যাতে ভাল হয়, তা’ আমি ক’রে দিব। বৌ-এর হুকুমে বুঝি আজ তাড়াতাড়ি এখানে ছুটে এসেছ?”
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, “না, সে রকম হুকুম আপাততঃ আমার উপরে পড়েনি; পড়্লেই তামিল করবার জন্য এখানে ছুটে আসতে হবে, সেজন্য বিশেষ চিন্তা নাই।”
করিমের মা বলিল, “তবে এ ওড়্না সঙ্গে কেন?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, ” কে তোমাকে এই ওড়্নাখানি তৈয়ারী করতে দিয়েছিল, বলিতে পার?”
করিমর মা হাসিয়া বলিল, ” কেন-তাকে আবার কেন? পাছে তোমার কাছে বেশি নিই, তাই কত খরচ পড়েছে, সেটা আগে তার কাছে খবর নিয়ে আস্বে -মনে করেছ? তাতে দরকার নাই, খুব কম খরচে ক’রে দিব, সে তোমার গায়েই লাগ্বে না। কি মুস্কিল ! তোমার কছে কি আমি বেশে নিতে যাব !”
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, “না করিমের মা, তুমি যা’ মনে করেছ, সেটা ঠিক নয়। কার জন্য এই ওড়্নাখানি তৈয়ারী করেছিলে বল দেখি; কাজ আছে-বিশেষ দরকার।”
করিমের মা ওড়্নাখানি ভাঁজ করিতে করিতে বলিল, ” তাকি আর এখনও মনে আছে ! কত লোকের কত রকম ওড়্না ক’রে দিচ্ছি-সে কি আর মনে রাখা যায় ! এ বয়সে সব কথা আর মনে থাকে কি? দেখি, আমার মেয়ের যদি মনে থাকে-সে নিজের হাতেই এই ওড়্নায় রেশমের ফুল তুলেছে।”
এই বলিয়া করিমের মা মেয়েকে ডাকিল। মেয়ে ঘরের ভিতরে জানালার ধারে বসিয়া শিল্পকার্য্যে মনোনিবেশ করিয়াছিল; তখন উঠিয়া আসিল। মেয়ে সেই ওড়্না দেখিয়া তৎক্ষণাৎ চিনিতে পারিল, এবং সে নিজের হাতে সেই ফুল তুলিয়াছে, বলিল।
মেয়ের বয়স ত্রিশ বৎসরের কম নহে। তাহারও মহিমের মা কি জালিমের মা-এই রকমেরই একটা কিছু নাম হইবে। তাহার নামে আমাদিগের বিশেষ কোন প্রয়োজন নাই। করিমের মা মেয়েকে জিজ্ঞাসা করিল, “এই ওড়্নাখানি কে তৈয়ারী করতে দিয়েছিল, মনে আছে কি?”
মেয়ে বলিল, ” সে আজকের কথা কি? প্রায় সাত-আট মাস হ’ল, একজন বাইজী এই ওড়্নাখানি তৈয়ারী করতে দিয়েছিল।”
দেবেন্দ্রবিজয় জিজ্ঞাসা করিলের, ” কে সেই বাইজী, নাম কি?”
“লতিমন বাইজী।”
‘কোথায় থাকে?”
” বামুন-বস্তিতে। সেখানে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে আপনি সবই জানতে পারবেন। আমার ঠিক মনে পড়্ছে এ নিশ্চয় সেই লতিমন বাইজীর ওড়্না।”
“আর তার দেখা পাওয়া যাবে না; সে আর নাই।”
“নাই কি ! কোথায় গেল?”
“যেখানে সকলে যায়-সকলকে যেতে হবে। লতিমন মরিয়াছে।”
“সে কি ! কবে-কি হইয়াছিল?” বলিয়া করিমের মা চকিতে উঠিয়া দাঁড়াইল।
দেবেন্দ্রবিজয় সেই ওড়্খানি পুনরায় নিজের হাতে লইয়া কহিলেন, ” এই ওড়্না যদি লতিমনেরই হয়, তা’ হলে লতিমন আর এ জগতে নাই। তার মৃত্যু হয়েছে।”
“কি সর্ব্বনাশ।” বলিয়া করিমের মা আবার বসিয়া পড়িল।
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, “মেহেদী-বাগানের একটা গলিপথে লতিমনকে কে খুন ক’রে গেছে।”
“কি সর্ব্বনাশ গো ! কে খুন করিল?”বলিয়া করিমের মা বিস্ময়স্থিরনেত্রে দেবেন্দ্রবিজয়ের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল।
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, ” যে খুন করেছে, সে এখনও ধরা পড়ে নাই। যাতে শীঘ্র সন্ধান ক’রে ধরতে পারি, সেইজন্য যে খুন হয়েছে, তার নাম জান্বার চেষ্টায় এখানে এসেছি; আমার সে চেষ্টাও প্রায় সফল হয়েছে, এখন আর একটু চেষ্টা করলেই খুনীকে ধরতে পারব।”
করিমের মা বলিল, “লতিমন বাই যে খুন হয়েছে-তার এখন ঠিক কি? লতিমন এই ওড়্না যদি আর কাকে দিয়ে থাকে-কি আর কারও জন্যে আমাদের এখানে তৈয়ারী করিয়ে থাকে?”
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, “এখন আমাকে সেটা সন্ধান ক’রে ঠিক করতে হবে। যখন একটা নাম পাওয়া গেছে, তখন সহজেই সব কাজই শেষ করতে পারব। এখন চল্লেম, দরকার হয় আবার দেখা করব।” বলিয়া দেবেন্দ্রবিজয় তথা হইতে বাহির হইয়া পড়িলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *