নীলবসনা সুন্দরী : প্রথম খণ্ড – চতুর্থ পরিচ্ছেদ – সংবাদ-পত্রের মন্তব্য
যখনকার কথা বলিতেছি, তখন সম্পাদক এবং সংবাদপত্রের এত ছড়াছড়ি ছিল না। দুই-একখানির সাপ্তাহিক সংবাদপত্র বাহির হইত। তাহারই একখানিতে এই হত্যাকাহিনী ছাপার অক্ষরে গ্রথিত হইয়া বাহির হইল, –
“অত্যাশ্চর্য নারীহ্ত্যা!”
“মেহেদী-বাগানের হত্যাকাণ্ডের ন্যায় অদ্ভুত হ্ত্যাকাণ্ড আর কখনও ঘটে নাই। রাত তিনটার সময়ে মোবারক-উদ্দীন, বিখ্যাত ধনী রাজাব-আলির বাটী হইতে মেহেদী-বাগানের ভিতর দিয়া নিজের বাসায় ফিরিতেছিলেন। তিনি সেইখানকার একটা নির্জ্জন গলিপথে একটি স্ত্রীলোকের মৃতদেহ দেখিতে পান। এবং তখনই তিনি নিকটবর্ত্তী ঘাটির পাহারাওয়ালাদিগকে ডাকিয়া সেই মৃতদেহ হাসপাতালে পাঠাইবার বন্দোবস্ত করেন। হাঁসপাতালে সেই লাস্ পরীক্ষা করা হইয়াছে। রমণীর প্রতি যে কোনরূপ বলপ্রয়োগ করা হইয়াছে, এরূপ কোন চিহ্ণ দেখিতে পাওয়া যায় নাই। গলদেশের একপার্শ্বে সামান্য একটু ক্ষত্চিহ্ণ, তাহাতে মৃত্যু ঘটিতে পারে না। দেখিয়া বোধ হয়, হত্যাকারী রমণীর কণ্ঠভূষা জোর করিয়া ছিনাইয়া লইয়াছে ! তাহা ছাড়া কোনপ্রকার সাঙ্ঘাতিক আঘাতের চিহ্ণ নাই।
“কিন্তু ডাক্তারী পরীক্ষায় স্থির হইয়াছে, রক্ত বিষাক্ত হওয়ায় রমণীর মৃত্যু হইয়াছে। রমণীর দেহ বিবর্ণ, স্থানে স্থানে ফুলিয়া উঠিয়াছে, জিহ্বাও বক্রভাবে মুখের বাহিরে আসিয়া পড়িয়াছে – মুখমণ্ডল কালিমাঙ্কিত – এ সকলে বিষ প্রয়োগেরই লক্ষণ। রমণীর গলদেশে যে সামান্য একটু ক্ষতচিহ্ণ দেখিতে পাওয়া গিয়াছে, তাহা বিষাক্ত ছুরি বা অন্য কোন অস্ত্র-প্রয়োগেরই চিহ্ণ।
“স্থানীয় থানার ইন্স্পেক্টর রমণীর আকৃতি ও বেশভূষা বর্ণনা করিয়া এই হত্যাকাহিনীর একখানি বিজ্ঞাপন শহরের সর্ব্ব্ত্র প্রচার করিয়া দিয়াছেন। সকল রাজপথের গৃহ-প্রাচীরে সেই বিজ্ঞাপন সংলগ্ন করিয়া দেওয়া হইয়াছে; তথাপি এখনও মৃতার কোন পরিচয় পাওয়া যায় নাই।
“সুযোগ্য ডিটেক্টিভ দেবেন্দ্রবিজয়ের উপরে এই মোকদ্দমার তদন্তের ভার পড়িয়াছে; সুতরাং আশা করা যায়, প্রকৃত হত্যাকারী শীঘ্র ধরা পড়িবে; এবং সেই মৃতা স্ত্রীলোকটি যে কে, তাহাও জানিতে পারা যাইবে। দুর্ভেদ্য রহস্যের ভিতর হইতে হত্যাকারীকে চিনিয়া বাহির করিবার তাঁহার কত বড় ক্ষমতা, তাহা আমরা সবিশেষে অবগত আছি। তাঁহার তীক্ষ্ণদৃষ্টি হইতে এ পর্য্যন্ত আমরা কখনও কোন অপরাধীকে নিষ্কৃতিলাভ করিতে দেখি নাই।”