নিয়তি
গত সোমবার ঝড় বৃষ্টির সঙ্গে ঘন ঘন বাজ পড়ার খবর শুনছিলাম। রাজ্যের বহু জায়গায় বাজ পড়ে মৃত্যুও হয়েছে বেশ কয়েক জনের।সেদিন সবে সন্ধ্যা ঘনিয়ে বৃষ্টি নেমেছিল। এই সময় ভাই মাঠে থাকে জানি।বুক কেঁপে ওঠে বাজের আওয়াজে। তাই গ্রামের বাড়িতে ফোন করে জানলাম সে মাঠে যায়নি ঘরেই আছে। তবে গ্রামের কেউ কেউ গিয়েছিল মাঠে। পাড়ার নমিতা ও তার স্বামী সুকেশ গিয়েছিল তাদের পটলক্ষেতের গাছ ঠিক করতে।পাশেই লাগোয়া আমাদের জমি ভাই তাকেই বলেছিল যদি ছাগল নামে জমিতে খবর দিতে।সঙ্গে মোবাইল থকায় এখন খবরাখবরের অসুবিধা হয় না।কিন্তু বৃষ্টি আর বজ্রপাত
এতো ঘনঘন হওয়ায় কোন খবর পায়নি ভাই সেদিন। পরের দিন ভাই নিজেই ফোনে জানায় আমাকে, সকালে জমিতে যাওয়ার সময় খবর পেলাম নমিতা দেখেছিল গাছটা দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে এতো আলোয় সে চোখ বুঁজিয়ে ফেলেছিল। শব্দে দুই কান চেপে ধরে চিৎকার করে সুকেশকে বলেছিল ঘরে ফিরে চল। কিন্তু গাছতলায় আশ্রয় নিতেই সুকেশ ছুটে যায়। নমিতা ভিজে কাপড়ে জড়িয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর গাছতলায় গিয়ে দেখে উপুড় হয়ে পড়ে আছে সুকেশ। শরীরটা তার ঝলসে গেছে। ওহ একেই বলে নিয়তি।
পাশেই একটি জমিতে বেগুন চাষের কাজ করছিল পাঁচু ও আরও অনেকে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি শুরু হলে পাম্প হাউসে আশ্রয় নেয় পাঁচু। সেই পাম্প হাউসের ওপরেই বজ্রপাতের ফলে পাঁচু মারা যায়।
বাড়ির পাশে বন্ধুদের সঙ্গে খেলছিল বারো বছরের রিয়া। হঠাৎ বাজ পড়ার আওয়াজে বাড়ির লোকজন সেখানে গিয়ে দেখে রিয়ার মুখ সহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে।
গ্রাম পঞ্চায়েতে খবর দেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত ও আহত পরিবারের হাতে রাজ্য ও কেন্দ্রসরকার লক্ষ্যধিক আর্থিক সাহায্য তুলে দেবে বলেছে। শোকের ছায়ায় নামল অশ্রুধারা।
চেনা মুখগুলোর ভাগ্যের পরিহাসে আমি বাকরুদ্ধ। সাবধানে থাকিস ভাই বলে ফোন কেটে দিলাম।