Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

চন্দ্রানীর বাবা দীননাথ বাবু বাড়িতে দু’এক জন ছাত্র পড়াতেন। মলয় সেখানে পড়ত। সেই সূত্রেই চন্দ্রানীর সঙ্গে তার পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা। মলয়ের বয়স তখন ষোল। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। সে কারণেই দীননাথ বাবুর কাছে তার অঙ্ক শিখতে যাওয়া। চন্দ্রানীর বয়স তখন চোদ্দ, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। মুখখানা সুন্দর, কথাবার্তাও মিষ্টি।
সেকারণেই চন্দ্রানীকে মলয়ের ভাল লেগে যায়। তার প্রতি আকর্ষণ বোধ করে।
তাদের বাড়িতে পড়তে গিয়ে মাঝেমাঝেই চন্দ্রনীর সঙ্গে তার কথা হয়, গল্প করে। চন্দ্রানীর হাসিটা খুব সুন্দর। গল্প শুনে, হাসলে পরে উপরের গজ দাঁতটা তার আপনা আপনি বেরিয়ে পড়ে। সেটা হাসিতে একটা বিশেষ মাত্রা যোগ করে, যা চোখের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তারপর তখন আর অন্য দিকে চোখ ফেরানো যায় না।
মলয়ের বাবা টালা পোষ্ট অফিসে ক্লার্কের কাজ করতেন। হেড অপিসে চিঠিপত্র লেখা, কর্মচারীদে মাইনর বিল করা, তাদের
ছুটির হিসাব রাখা। এইসব লেখালেখির কাজ।মলয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার পর, তার বাবা যাদবপুর পোষ্ট অফিসে ট্রাস্মফার হয়ে যায়। বাবা টালা পোষ্ট অফিসে কাজ করার সময় তারা ওলাইচন্ডী লেনের একটা বাড়িতে ভাড়া থাকত।
যাদবপুর পোষ্ট অফিসে ট্রাস্মফার হয়ে আসার পর, তারা চিত্তরঞ্জন কলোনিতে চলে আসেন ভাড়া বাড়িতে। সেখান থেকেই মলয় সাউথ-সিটি কলেজে পড়াশুনা শেষ করে, কলকাতা কর্পোরেশনে একটা ক্লার্কের কাজ পেযে যায়।
তারপর দু-তিন বছর পেরোতে না পেরোতেই, বাবার অফিস কলিগের এক বন্ধুর মেয়ের সাথে তার বিয়ে দিয়ে দেয়। মলয়ের তখন বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না। কিছুদিন স্বাধীনভাবে ওড়ার ইচ্ছে ছিল তার। নাইট শো সিনেমা দেখে বাড়ি ফেরা। বন্ধুদের সঙ্গে কোনদিন বারে যাওয়া। অফিস ছুটি নিয়ে, কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে দু’তিন দিনের জন্য বাইরে ঘুরতে যাওয়া। দিঘা পুরী নয়। কেদলী মেলা, দুবরাজপুর, ধলভূমগড়, জঙ্গলমহল। এরকম সব জায়গায়। বাবা সেটা কিভাবে যেন টের পেয়ে যান। তাই মলয়কে আর বেশি উড়তে না দিয়ে, তাকে সংসারের বন্ধনে আবদ্ধ করে, মলযের বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলেন, বন্ধুর মেয়ে নীলিমার সঙ্গে। নীলিমা একটু উচ্ছল, বহির্মুখ স্বভাবের। মলয় ঠিক তার বিপরীত অন্তর্মুখী স্বভাবের। তাই প্রথম প্রথম একটু বিরক্ত লাগলেও, এখন মানিয়ে নিয়েছে মলয়। নীলিমা খানিকটা আগ্রাসী। মলয়কে গ্রাস করে ফেলতে চায় মনে মনে, পুরোপুরি করতে পারে না বলে মনোকষ্ট রোগে মাঝে মাঝেই ভোগে।
নীলিমার আবদার, অফিস থেকে ফিরে চা খেতে খেতে মলয়কে বলতে হবে, অফিসে আজ কি কি ঘটেছে? কার সঙ্গে দেখা হয়েছে? কার সঙ্গে কথা হয়েছে? কি কি কথা হয়েছে। প্রথম প্রথম এইসব উত্তর দিতে বিরক্ত বোধ করত সে। মাঝে মাঝে রেগেও যেত।
আজকাল তার প্রশ্ন শুনে আর রাগে না। মানিয়ে নিয়েছে। যা মনে আসে তাই উত্তর দিয়ে দেয়। উত্তর শুনেই নীলিমা খুশি। কখনও ক্রসচেক করে দেখে না সেটা সত্যি কিনা। নীলিমা মনে খুব স্ফূর্তিবাজ। আনন্দ অনুষ্ঠান বা উৎসব বাড়িতে যেতে সে খুব আনন্দ পায়। তাকে সেখানে নিয়ে যেতেই হয় মলয়কে। না নিয়ে গেলে সে রাগারাগি করে, কান্নাকাটি করে বাচ্চাদর মতোই। তাই মলয়কে শেষপর্যন্ত নিয়ে যেতেই হয়।
মলয়ের এক অফিস কলিগের ছেলের বিয়ে ১৭ই জৈষ্ঠ। বিয়ে বাড়ি শ্যামবাজার। মেয়ের বাড়ি আহিড়িটোলা। বিয়ে বাড়িতে তাদের দুজনকে যাওযার জন্য নিমন্ত্রণ করে তাদের দু’জনের নাম লিখে কার্ড দিয়েছে সে। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে, নীলিমার হাতে সে কার্ড দিতেই, নীলিমা আনন্দে লাফাতে শুরু করে।

Pages: 1 2 3 4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *