Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নিরুদ্দিষ্ট নাকফুল || Musharraf Khan

নিরুদ্দিষ্ট নাকফুল || Musharraf Khan

বুলা বাসায় নেই। বন্ধুদের দলে ভিড়ে গেছে সেই কোন্ দুপুরে। উইক এন্ডে ফান ডে। সারাদিন টই টই করে মলে ঘুরবে। মুভি দেখবে। কেএফসিতে অল ইউ ক্যান ইট অথবা পিৎজা ইনের বিগ ফুট দিয়ে লাঞ্চ। সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরবে। জামা কাপড় না ছেড়েই বিছানায় পড়ে ঘুমিয়ে যাবে।এই সময়টা শর্মির একেবারে ফাঁকা। মধ্য অক্টোবরের মোম রোদের আদর মাখা আহ্লাদি বিকেল। শর্মি ওদের বাগানে বসে প্রতিবেশী টেরেসার সাথে কফি খাচ্ছিল। পাশাপাশি দুই বাড়িতে দীর্ঘদিনের বসবাস। টেরেসারা হিসপ্যানিক অরিজিন। ভীষণ মিষ্টি চটপটে হাসিখুশি আমুদে মেয়ে। মেক্সিকান আর বাঙালীদের মাঝে জাতপাতে অনেক মিল। দুজনের মাঝে বয়সের চওড়া পার্থক্য আছে। একটা নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে তা কোনই বাধার কারন হয়নি।
কফির মগে চুমুক দিতে দিতে টেরেসা জানতে চাইল-
– নাকফুল খুঁজে পেলি ?
– নাহ্!
– হারিয়েই ফেললি শেষ পর্যন্ত ?
– কখনোই তো হারাইনি। এতগুলো বছর ধরে কাছে কাছে রেখেছি। কত জায়গায় লুকোই। ঘর বদল হয়। বাড়ি বদল হয়। দেশ বদল হয়। আমীর ভাইয়ের নাকফুলতো আমার সঙ্গী হয়েই ঘুরে বেড়ায়।
– আচ্ছা খুব খেয়াল করে মনে করার চেষ্টা কর দেখি লাস্ট টাইম কোথায় রেখেছিলি। টেরেসা পরামর্শ এগিয়ে দেয়।
– মনে নেই টেরেসা!
– চল দু’জনে মিলে আবার খুঁজে দেখি।
– অনেক খুঁজেছিরে। সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। কোথাও নেই।
– শিট!
টেরেসা মন খারাপ করে ফেলে। নাকফুল হারানোর অস্বস্তিটা যেন শর্মির চেয়ে টেরেসারই বেশি।সবার দৃষ্টি এড়িয়ে প্রায়ই ঘরের এখানে সেখানে নাকফুলটি খুঁজে শর্মি। বুলা সম্ভবত কখনো লক্ষ্য করেছে সেটা। একদিন এসে জিজ্ঞেস করল-
– আম্মুনি তোমার কি কিছু হারিয়েছে?
– কই, না তো! একথা বলছিস কেন ?
মেয়েকে এড়াতে চায় শর্মি।
– সামহাউ আই ফিল তুমি প্রায়ই ঘরের ভেতরে কী যেন একটা খুঁজে বেড়াও আম্মুনি।কী জানি! আই মাইট বি রং।
বুলা ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁধ ঝাঁকায়।
– না, কিছু না, যা।
মেয়েকে পাশ কাটায় শর্মি। বুলা ঘাড় বাঁকিয়ে একটা চোখ সরু করে শর্মির দিকে তাকিয়ে থাকে।
– কী হলো ? শর্মি চোখ রাঙায়।
কোন কাজ হয় না।
– ইউ কুড টেল মি মম। মে বি আই কুড বি অব হেল্প্।
বুলা চোখেমুখে একটা জানি জানি সব জানির সন্দেহ ঝুলিয়ে বারান্দা দিয়ে হেঁটে চলে যায়।
বুলাটাকে ঠিক বুঝে না শর্মি। দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেল মেয়েটা। এই সে দিন জোড়াবেণী দুলিয়ে কিন্ডারগার্টেনে গেল। এখন কলেজে পড়ে। এখনো ছেলেমানুষি পিছু লেগে আছে। এক গাদা বন্ধু বান্ধব নিয়ে সারাদিন হৈ চৈ করে। কোথায় কী করে বেড়াচ্ছে কে জানে। ভেতরের এই চিন্তা একদিন কৌতূহলী করে দিল শর্মিকে।
– তোর কোন ছেলে বন্ধু নেই রে বুলা ?
বুলা ঘুরে দাঁড়ায়। আস্তে আস্তে হেঁটে শর্মির কাছে চলে আসে।
– আমার তো অনেক বন্ধু আম্মু। ছেলে বন্ধু বলতে তুমি যা বুঝাতে চাইছ তা আমার নেই। আমার বন্ধুদের দু’তিনটে করে বয়ফ্রেন্ড। ওরা কী কী করে আমি সব জানি!
ক্ষেপে গেছে মেয়ে। তবু মনে মনে খুশি হয় শর্মি। নিজের টিন এজের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। এই বয়সে ছেলেদের প্রতি একটা লুকানো টান থাকবেনা এটা কেমন কথা । নিশ্চিত হতে মেয়েকে আরো একটু বাজিয়ে নিতে চায়।
– এক-আধটু ফান তো হতেই পারে। তেমন কেউ থাকলে থাকলোই বা। ওয়ার্ড্রোবের কাপড় গোছাতে গোছাতে চোখ ঘুরিয়ে ফিরে চাইল মেয়ে।
– ট্র্যাপ করা হচ্ছে, না?
শর্মি লজ্জা পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। মেয়েটা ওর ভীষণ চালাক। পায়ে পায়ে সামনে এগিয়ে আসে বুলা। দুই হাতে শর্মিকে পেঁচিয়ে মুখোমুখি দাঁড়ায়।
– শোন আম্মুনি। আমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই। হলো ?
ফিরে যাচ্ছিল। হঠাৎ ঘুরে আবার ফিরে আসে। মায়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলে,
– আম্মুনি তুমি বাংলাদেশ থেকে আমার জন্য ভীষণ হ্যান্ডসাম আর দারুন ইন্টেলিজেন্ট দেখে একটা বর এনে দিয়ো, ওকে ?
– পাকামো হচ্ছে, না ? যা ভাগ দুষ্টু।
শীষ দিতে দিতে নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকে বুলা। মেয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতায় দু’চোখ টলোমলো হয়ে যায় শর্মির।
– দেবো রে। তোর জন্য ভীষণ সুন্দর একটা বর এনে দেবো আমি।
শর্মির স্বগতোক্তিটা শুনতে পায়না বুলা।

Pages: 1 2 3 4
Pages ( 1 of 4 ): 1 234পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress