Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নিরুক্ত || Kazi Nazrul Islam

নিরুক্ত || Kazi Nazrul Islam

আর কতদিন রবে নিরুক্ত তোমার মনের কথা?

কথা কও প্রিয়া, সহিতে নারি এ নিদারুণ নীরবতা।

কেবলই আড়াল টানিতে চাহ গো তোমার আমার মাঝে

সে কি লজ্জায়? তবে কেন তাহা অবহেলা সম বাজে?

হেরো গো আমার তৃষিত আকাশ তব অধরের কাছে

যে কথা শোনার তরে শত যুগ আনত হইয়া আছে,

বলো বলো প্রিয়া, সে কথা বলিবে কবে?

সে কথা শুনিয়া মাতিয়া উঠিবে আকাশ মহোৎসবে!

যে কথা কারেও বলনি জীবনে আমারেও নাহি বল,

যে কথার ভারে অসহ ব্যথায় টলিতেছে টলমল,

তোমার অধর-পল্লব ফাঁকে সেই নিরুক্ত বাণী –

ফুলের মতন ফুটিয়া উঠিবে কোন শুভক্ষণে, রানি?

না-বলা তোমার সে কথা শোনার লাগি

শত সে জনম কত গ্রহ তারা আড়ি পেতে আছে জাগি!

সে কথা না শুনে তিথি গুনে গুনে চাঁদ হয়ে যায় ক্ষয়,

শুনিবে আশায় লয় হয়ে চাঁদ আবার জনম লয়!

আমার মনের আঁধার বনের মৌনা শকুন্তলা,

কোন লজ্জায় কোন শঙ্কায়, যায় না সে কথা বলা?

তুমি না কহিলে কথা

মনে হয়, তুমি পুষ্পবিহীন কুন্ঠিতা বনলতা!

সে কথা কহিতে পার না বলিয়া বেদনায় অনুরাগে

তব অঙ্গের প্রতি পল্লবে ঘন শিহরন জাগে।

তোমার তনুর শিরায় শিরায় সে কথা কাঁদিয়ে ফিরে,

না-বলা সে কথা ঝরে ঝরে পড়ে তোমার অশ্রু-নীরে!

হে আমার চির-লজ্জিত বধূ, হেরো গো বাসরঘরে

প্রতীক্ষারত নিশি জেগে আছি সে কথা শোনার তরে।

হাত ধরে মোর রাত কেটে যায়, চরণ ধরিয়া সাধি,

অভিমানে কভু চলে যাই দূরে, কভু কাছে এসে কাঁদি।

তোমার বুকের পিঞ্জরে কাঁদে যে কথার কুহু-কেকা,

অধর-দুয়ার খুলিয়া কি তারা বাহিরে দেবে না দেখা?

আমার ভুবনে যত ফুল ফোটে রেখে তব রাঙা পায়

ফাগুনের হাওয়া উত্তর নাহি পেয়ে কেঁদে চলে যায়।

হে প্রিয় মোর নয়নের জ্যোতি নিষ্প্রভ হয়ে আসে,

ঘুম আসে না গো, বসে থাকি রাতে নিরুদ্ধ নিশ্বাসে।

বুঝি বলিতে পার না লাজে

মোর ভালোবাসা ভালো লাগে নাকো বেদনার মতো বাজে!
কহো সেই কথা কহো,

কেন বেদনার বোঝা বহ তুমি কেন আপনারে দহ?

আমি জানি মোর নিয়তির লেখা, – তবু সেই কথা বলো

‘ভিখারি, ভিক্ষা পেয়েছ, তোমার যাবার সময় হল!’

মুষ্টি-ভিক্ষা চাহিয়া ভিখারি দৃষ্টি-প্রসাদ পায়,

উৎপাত-সম তবু আসে, তারে ক্ষমা করো করুণায়!

কেন অপমান সহি নেমে আসি বিরহ যমুনাতীরে।

– রাগ করিয়ো না, হয়তো চিনিতে পারনি এ ভিখারিরে!

কী চেয়েছিনু, হয়তো বুঝিতে পারনিকো তুমি হায়,

তোমারে চাহিতে আসিনি, আমারে দিতে এসেছিনু পায়!

আমি বলেছিনু, ‘আমারে ভিক্ষা লইয়া বাঁচাও মোরে,

তুমি তা জান না, কত কাল আছি ভিক্ষা-পাত্র ধরে।’

আমি বলেছিনু, ‘ধরায় যখন চলিবে যে পথ দিয়া,

চরণ রেখো গো, সেই পথে আমি বুক পেতে দেব প্রিয়া!

তোমার চরণে দেখেছি যে বেদ-গানের নূপুর-পরা,

কত কাঁটা কত ধূলি ও পঙ্কে পৃথিবীর পথ ভরা

তাই শিবসম, হে শক্তি মম, তব পথে পড়ে থাকি,

তাই সাধ যায় গঙ্গার মতো জটায় লুকায়ে রাখি!’

চির-পবিত্রা অমৃতময়ী, বলো কোন অভিমানে

তোমার পরম-সুন্দরে ফেলি যাও শ্মশানের পানে?

আপন মায়ায় পরম শ্রীমতী চেন নাকো আপনারে,

কহিলে না কথা, নামায়ে আমার প্রেম-যমুনার পারে।

আমি যা জানি না, তুমি তাহা জান ভালো,

তুমি না কহিলে কথা, নিভে যায় বৃন্দাবনের আলো!

বক্ষ হইতে চরণ টানিয়া লইলে, ভিক্ষু শিব

মহারুদ্রের রূপে সংহার করিবে এ ত্রিদিব।

রহিবে না আর প্রিয়-ঘন মোর নওলকিশোর রূপ,

মহাভারতের কুরুক্ষত্রে দেখিবে শ্মশান-স্তূপ!

হে নিরুক্তা, সেদিন হয়তো শূন্য পরম ব্যোমে

শুনাতে চাহিবে তোমার না-বলা কথা তব প্রিয়তমে।

আসিবে কি তুমি বেণুকা হইয়া সেদিন অধরে মম?

এই বিরহের প্রলয়ের পারে

কোন অনাগত আরেক দ্বাপরে

লজ্জা ভুলিয়া কন্ঠ জড়ায়ে কহিবে কি – ‘প্রিয়তম!’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress