Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নিরপেক্ষ হওয়া বাঞ্ছনীয় || Rana Chatterjee

নিরপেক্ষ হওয়া বাঞ্ছনীয় || Rana Chatterjee

নিরপেক্ষ হওয়া বাঞ্ছনীয়

“একদিন আফসোস করতে হবে দেখবি “প্রায়শই বাবার এই উক্তিকে নস্যাৎ করে মুখ খুলল বুম্বা।”না বাবা ,আফসোস তো হয় এই জন্য যে দুই ছেলেকে দুই রকম ভাবে দেখে মস্ত ফাটল ধরিয়েছো সংসারে ,বিভাজন ঘটানোর মূল কান্ডারী তুমি এটা ভেবে কষ্ট হয় কিন্তু তোমার এখনো কোনো বিকার নেই বাবা! অন্যায় দেখেও কেবল টাকা পয়সা আছে ওদের এই ভয়ে সমীহ, তোয়াজ করে চললে,এটাই মস্ত ভুল।দুঃখিত বাবা তোমায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর জন্য”-বলে থামলো সে।

দুই ছেলের আর্থিক সংস্থান দুই রকম হতেই পারে কিন্তু গার্জেন যদি একজনের পক্ষপাত হয়ে গলা ফাটায়, সে যা বলছে,করছে তাতে হাঁ মেলায় সেটা ভুল হলেও এবং অন্যজনকে হেয় প্রতিপন্ন করে তাতে অশান্তি অবশ্যম্ভাবী।আজ রায় বাবু বৃদ্ধ হলেও বাইরে থাকা অহংবোধে মত্ত বড় ছেলে বৌমার স্বরূপ,ঔদ্ধত্ব কমার বিন্দুমাত্র লক্ষণ নেই।বরং এখনো ফোনে ফোনে শেখানো বুলিতে ওদের হিংসা আর শুধুই অন্যের খুঁত ধরা আচরণে প্রভাবিত হয়ে বুম্বাদের নানা অকথা কুকথা বলেই চলেছেন।বুম্বা এটাই বোঝে সময়ের মূল্য দিতে হয়,যখন যেমন আচরণ করা উচিত সেটা কঠোর ভাবে পালন করা অভিভাবকদের দায়িত্ব নৈলে সময় পেরিয়ে গেলে কিছুই করার থাকে না,কেবল সমস্যা বাড়ে।

অসুস্থ সহধর্মিণীকে নিয়ে বরাবর এই বাড়িতে থাকেন রায় বাবু সঙ্গে ছোট ছেলে,বৌমা ও নাতনি। এক ছেলের বেশি টাকা থাকতেই পারে দুজনের আর্থিক সংস্থান আলাদা হবার সুবাদে। গার্জেন তাবলে দু রকম আচরণ করবে এটা কাম্য নয়।এর গভীর ইম্প্যাক্ট কিন্তু ভবিষ্যতে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে ভালো সম্পর্কের ওপর আছড়ে। রায় গিন্নি মারা যাবার পর হলোও তাই,যারা শুধরাবার নয় একই রকম বরং রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলোকে আক্রমণের বর্শা ফলক আরো তীক্ষ্ণ করেছে।সত্যি কি আশ্চর্য্য দুনিয়া তাই না! এত কিছু থাকতে যেখানে এই সামান্য কজন মেম্বার বাড়িতে,সময় সুযোগে আসবে যাবে হৈ হুল্লোড় করে কাটাবে সম্মান পাবে তা নয়,এ যেন এক অতি নিম্ন মানসিকতার পরিচয়।যদি বা বাবার বিরাট অগাধ সম্পত্তি থাকতো তাও একটা কারণ হতো,সেদিকেও তো সম্পূর্ণ ভাবে ঘড়া খালি স্ত্রীর চিকিৎসায়।এ এক মানসিক দেউলিয়াপনা,কানের কাছে বিষ ঢালা অভ্যাস। এই জন্যই বোধ হয় মানুষ বিয়ের সম্পর্ক স্থাপনের আগে পরিবার,রুচি কালচার এসব গুলো দেখে!

বাড়িতে অসুস্থ শয্যাশায়ী মানুষ থাকলে সামনে থেকে দেখভাল ,যাবতীয় ঝড় ঝাপটা প্রতিকূলতা, ডাক্তার ওষুধ ,যা কিছু খেতে ইচ্ছা বানানো, প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো কাছের মানুষেরাই বোঝে কিভাবে সামলাতে হয় ।বাইরে থেকে জ্ঞান বর্ষণ কটাক্ষ,বুলি এসব খুব সোজা কারণ তাদের সামনে থেকে দায়িত্ব সেবা এসব করতে হয় না ।করতে দিলে ল্যাজেগোবরে অবস্থা হয়ে যায়,দশ দিনের জন্য এসে মায়ের কোনো সেবা তো দূর শুধুই বড়লোকী চাল দেখনদারি আর অন্যদের শুনিয়ে বাতেল্লাবাজি তেই দিন গুজরান!বহুবার মা এলার্ট করা সত্ত্বেও পাল্টায় নি,নিজেদের হাম বড়াই ভাব।বাবার একাউন্টে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া এ এক অন্য রাজনীতি। বাড়ির সবাই কে কি করছে সব খবর আড়ালে নেওয়া আর কাঠি করা এ যে কি ক্ষতিকর,যে বাড়িতে এমন স্যাম্পেল থাকে তারাই বোঝে এর ক্ষতিকর প্রভাবের গভীরতা।

ভগবানের অশেষ কৃপা বাড়ির কাছে একমাত্র কন্যার বাড়ি, আদর্শ দায়িত্ববান জামাই ,ছোট ছেলের বিবাহিত স্ত্রীর মধ্যেও মানুষকে সম্মান,সেবা করার মানসিকতা পরিলক্ষিত আর এগুলো সত্যিই ঈশ্বরের বর দান যা চরম দুর্দিনে সাথ দিয়েছিল। বড় ছেলে বউ বাড়ির চরম সংকটে মায়ের অসুস্থতায়ও পাল্টায় নি।ভেবেছে কিছু টাকা দিয়েই বুঝি যা কিছু বলা যায় এমনকি মায়ের কানে তার সকল আত্মীয়-স্বজন খারাপ কেবল তারা ভালো ,তার শ্বশুরবাড়ি ভালো এসব বীজমন্ত্র আউড়ে গেছে।

স্রেফ কিছু টাকা যে মানুষকে পাল্টে দেয়, আপনজনকে যা কিছু কথা বলার অস্ত্র হিসেবে কোন কিছু বলতে মুখে বাধেনা এটা কষ্ট দেয় যারা সেই ছোট থেকে ছেলেটাকে চিনতো। অথচ সত্যি এমন তো ওরা ছিল না একথা এক বাক্যে স্বীকার করতে হয়। রায় গিন্নি বহুবার স্বামীকে বারণ করেছে,”ওদের পাতা ফাঁদে পা দিও না ওরা তোমার মন বুম্বাদের সম্পর্কে বিষিয়ে দিচ্ছে” ।তবু একথাই অসংলগ্ন মুহূর্তে ছেলেকে বলে রায় বাবু নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন আর অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের মত শুধু সমর্থন করে গেছে ওদের।ওরা আরো বিষাক্ত ছোবলে মা, ভাই ,দিদি, জামাইবাবু,মামা,মাসি কাউকে বাদ রাখেনি আক্রমণ করা থেকে। এমনকি প্রকাশ্যে ফেসবুকে কেউ কিছু পোস্ট করলে এই বুঝি তাদের ইঙ্গিত করছে বলে আক্রমন।হায়রে কি পরিণতি!

আজ এক বছর হল রায় গিন্নি মারা গেছে। ডেথ সার্টিফিকেটে মানসিক যন্ত্রণার উল্লেখ দেখে মোটেও বুম্বা অবাক হয়ে নি।রায় বাবু বহাল তবিয়তে ছোট ছেলে বৌমা,নাতনির সঙ্গে থাকেন কিন্তু কখনো বড্ড চুপ হয়ে যায় যখনই বাইরে থেকে ফোন,মায়ের চিকিৎসায় টাকা পয়সা দেওয়া ,ফেরৎ পাওয়া নিয়ে আরো নানা কৌতূহলী প্রশ্নে মনভারি হয়।এ এক সত্যি নোংরা মানসিকতা,নিজেরা ভালো থাকবো অন্যদের মধ্যে অশান্তি ছড়িয়ে যাবো কিন্তু এতে সত্যিই ভাল হয় না,ভাল কিছু হতে পারে না।

যে বাড়িতে মানুষ থাকবে কিছু প্রয়োজনে সারিয়ে নিতে হয় আর যারা বাস করে তারাই বোঝে কখন কোনটা প্রয়োজন কিন্তু রায়বাবু এতদিন ধরে বড় ছেলের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে এসে হম্বিতম্বি করে এসেছে এদের ওপর।আজও মুখ ফস্কে কিছু কটু কথা বলে দিলো।” বাবা তুমি মনে পড়ে সেবার ওরা যেদিন আসবে গরমে কষ্ট হবে বলে কার বাড়ি থেকে এয়ার কুলার এনেছিলে, একবারও মনে পড়েনি তোমার ছোট দু বছরের নাতনি টার শরীর ঘামাচি,গরমে কেমন গলে গেছে,একবারও দুঃখ প্রকাশ করতেও দেখিনি। আজ এখনো ওদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অশান্তি করছো বাবা!তুমি কিন্তু শুধরাতে পারতে কিন্তু সেটা করোনি ।ওদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে সময়ের মূল্য বোঝোনি কাকে কখন কি বলা উচিত। এটাই খারাপ লাগে বাবা তোমাকে কাঠ পুতুলের মত ব্যবহার হতে দেখেছি আজ কিছু বললে তোমাকেও বিঁধছে অথচ দায়িত্ব নিয়ে ভালো রাখার ক্ষমতা টুকু ওদের নেই সেটাও নিয়ে গিয়ে প্রমান করেছে বাবা”-বলে থামলো বুম্বা।

সত্যিই সকলকে খারাপ প্রতিপন্ন করে,কথা শুনিয়ে একের পর এক আত্মীয় স্বজন থেকে দূরে সরে বড্ড একা হয়ে যাচ্ছে তার আপন জন দুজন।আঁকড়ে ধরছে গুটিকয় সমমনোভাবাপন্ন আত্মীয়দের। মতের মিল হলেই কাট্টি আর চোখা চোখা বাক্য বিনিময় তার আগে এত মাখামাখি এটাই এত কালের রেওয়াজ ওদের যা আর কারুর কাছেই অজানা নয়।”বাবা তুমি ভালো থাকো সুস্থ থাকো যতদিন বাঁচো পারলে এবার অন্তত বুঝতে শেখো কিচ্ছু নিতে আসি নি আমরা,মায়ের শিক্ষায় আমরা গর্বিত বলে চোখ মুছলো বুম্বা”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *