নিখোঁজের পরবর্তী নাটক
বেশীদিন আগের ঘটনা নয়। পরিবারের লোকজন খেয়েদেয়ে দ্বিপ্রাহরিক বিশ্রামে আয়েশ করতে উদ্যেগী। কিন্তু বাড়ির ছোট মেয়েটি কলেজে গেছে। ও পাঁচ ক্রোশ দূরে এক কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। সুতরাং তার অনুপস্থিতি এখন বাড়ীতে অনুভূত হচ্ছে। কিন্তু আজ বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হলেও মেয়েটা বাড়ি ফিরল না।আরো কিছু সময় গড়িয়ে রাত্রি নটার সময় পরিবারের লোকজন শঙ্কিত হলো।
সুখোদ বাবু ছেলেকে বললেন, যা তো বাবু, এদিক-ওদিক খোঁজ নিয়ে আয়। ওর যেসব বন্ধু আছে আশেপাশের পাড়াতে, সেদিকেও একবার ঢুঁ মেরে আয়।
বনা পিত্রাদেশ পালনে তৎপর হয়। সত্যি তো, ছোট বোনটার এমনতর গতিবিধি আগে লক্ষিত হয় নি! তালে কি কোনো অশুভ বার্তা আছে এর পশ্চাতে? এমন সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সে বোনের কিছূ বান্ধবীর বাড়ি ঘুরে আসে। আরো কিছুজনাকে নানা জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। কিন্তু সুখবর যোগাড় করতে পারে নি।
ব্যর্থ মনোরথ হয়ে বাড়িতে ফিরে এলো।আসা মাত্রই মা ত্রিনার প্রশ্নের সম্মুখীন, কি রে? কিছু খবর পেলি?
– না না না।
সুখোদবাবু তা শুনে আরো বিমর্ষ হলেন। এবার তবে লোকাল থানায় একটা মিসিং ডায়রী করা প্রয়োজন। কিন্তু এত রাত্রে পুলিশ কি ব্যবস্থা নেবে? নানা আশঙ্কায় ছেলেকে নিয়ে উনি রাত এগারোটায় থানাতে এলেন। থানার বড়বাবু ছাড়া আর কেউই নেই। তবে উনি পূর্ণ সহযোগিতা করলেন।ডায়রী ছাড়াও নীতির একটা ছবিও চেয়ে নিলেন।
আরো দুদিন কেটে গেলো এরপর। পুলিশ যথারীতি আশেপাশে তল্লাটে হন্যে হয়ে খুঁজছে। কিন্তু কোনো সন্ধান না পাওয়ায় সংসারের মাথার ওপর কালো মেঘ উড়তে থাকে।
আরো দু দিন বাদে বাড়ির সন্নিকটে শ্রীরামপুরের চাঁপাতলা ঘাটে একটা নিষ্প্রাণ দেহ ভেসে ওঠে। এলাকার লোকজন জমে যায়। কার দেহ? নীতির নয়তো। বেশ ফুলে উঠেছে। এবং কিছুটা বিকৃতও বটে। তবুও আদলটি দেখে আন্দাজে ওই মেয়েটির মনে হচ্ছে।
তৎক্ষণাৎ কিছু লোক বনাদের বাড়ি ছুটে যায়। নদীর পাড়ে ঐ বডিটার কথা জানায়। সুখোদবাবু সঙ্গে সঙ্গেই ছেলেকে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছোটে অকুস্থলের দিকে। সংবাদটা শুনেই মনে সন্দেহ জেগেছিল। এখন মেয়ের ছিন্নভিন্ন শাড়িটা দেখে একেবারে নিঃসন্দেহ হলেন। ঐ ঐ নীতি। জ্ঞান হারিয়ে তিনি সেখানেই পড়ে গেলেন।