Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নিউটনের ভুল সূত্ৰ || Humayun Ahmed

নিউটনের ভুল সূত্ৰ || Humayun Ahmed

মতিনউদ্দিন সাহেবকে কেউ পছন্দ করে না

মতিনউদ্দিন সাহেবকে কেন জানি কেউ পছন্দ করে না। অফিসের লোকজন করে না, বাড়ির লোকজনও না। এর কী কারণ মতিন সাহেব জানেন না। প্রায়ই তাঁর ইচ্ছা করে পরিচিত কাউকে জিজ্ঞেস করেন— আচ্ছা আপনি আমাকে পছন্দ করেন না কেন? জিজ্ঞেস করা হয় না। তাঁর লজ্জা লাগে। মনে মনে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলেন—থাক, কী হবে জিজ্ঞেস করে?

তাঁর স্ত্রীকে অবশ্যি একদিন ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন। নাশতা খেতে খেতে অন্য দিকে তাকিয়ে বললেন, একটা কথা, তুমি আমাকে পছন্দ করো না কেন?

মতিন সাহেবের স্ত্রী রাহেলা বেগম তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, তুমি কী বললে?

না—কিছু বলিনি।

পছন্দের কথা কী যেন বললে?

মানে জানতে চাচ্ছিলাম তুমি আমাকে পছন্দ কর কি না।

তোমার কি ভীমরতি হয়ে গেল না কি, আজেবাজে কথা জিজ্ঞেস করছ।

আর করব না।

তাঁর স্ত্রী যে তাকে দুচোখে দেখতে পারেন না তা মতিন সাহেব জানেন। তিনি থাকেন একা একটা ঘরে। সেই ঘরটাও বাড়ির সবচে খারাপ ঘর। আলো-বাতাস ঢােকে না বললেই হয়। দিনের বেলায় বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হয়। হঠাৎ দেশের বাড়ি থেকে কোন মেহমান চলে এলে এই ঘরও তাঁকে ছেড়ে দিতে হয়। তখন কোথায় শোবেন তাই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বড় ছেলের ঘরটা সুন্দর। খাটটাও বড়। অনায়াসে দুজন শোয়া যায়। কিন্তু শোয়া সম্ভব না বড় ছেলে বিরক্ত হয়। ছোট দুই মেয়ে এক ঘরে শোয়, সেখানে জায়গা নেই। তিনি খানিকক্ষণ এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করে শেষ পর্যন্ত বসার ঘরের সোফায় ঘুমুতে যান। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে।

গত পূজার ছুটিতে বাসার সবাই ঠিক করল দল বেঁধে কক্সবাজার যাবে। তাঁকে অবশ্যি কেউ বলল না। তিনি খাবার টেবিলে আলোচনা শুনলেন। সব খরচ দিচ্ছে তার বড় ছেলে। ব্যবসায় তার ভাল লাভ হয়েছে। কিছু টাকা খরচ করতে চায়। সে হাসি মুখে বলল, এখান থেকে একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে, মাইক্রবাসে যাব। নিজেদের কনট্রোলে একটা গাড়ি থাকার খুব সুবিধা। ধরো, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে ইচ্ছা করল, হুট করে চলে গেলাম।

মেজো মেয়ে নীতু বলল, কিন্তু ভাইয়া ট্রেন জার্নির আলাদা মজা। একটা পুরা কামরা রিজার্ভ করে যদি যাই…গাড়ি তুমি কক্সবাজরে ভাড়া করো। ওখানে ভাড়া পাওয়া যায় না?

ছোট মেয়ে বলল, আমার প্লেনে যেতে ইচ্ছা করছে ভাইয়া। ঢাকা থেকে চিটাগাং পর্যন্ত ট্রেনে, সেখান থেকে প্লেনে কক্সবাজার।

এই সব আলোচনা শুনতে তাঁর খুব আনন্দ হচ্ছিল। অবশ্যি তিনি আলোচনায় অংশগ্রহণ করলেন না। কারণ তিনি জানেন কিছু বলতে গেলেই রাহেলা বলবেন, চুপ করে তো, তুমি জানো কী?

মতিন সাহেব কিছু বললেন না ঠিকই কিন্তু জোগাড়-যন্ত্র করে রাখলেন। কাপড়-চোপড় ধুয়ে ইস্ত্ৰি করিয়ে রাখলেন। অফিসে বড় সাহেবকে বললেন, আমার কয়েকদিন ছুটি লাগবে স্যার। পরিবারের সবাই কক্সবাজার যাচ্ছি।

বড় সাহেব বললেন, হঠাৎ কক্সবাজার। ব্যাপার কী?

বাচ্চারা ধরল—বেড়াতে যাবে। আমি বললাম, ঠিক আছে চলো। ওদের আনন্দের জন্য যাওয়া। অবশ্যি আমি নিজেও কোনদিন সমুদ্র দেখিনি। ভাবলাম দেখেই আসি…

বলতে বলতে আনন্দে তার চোখে পানি এসে গেল। বড় সাহেব সাতদিনের ছুটি মঞ্জুর করলেন।

কক্সবাজার রওনা হবার আগের দিন রাহেলা এসে বললেন, আমরা সবাই কক্সবাজার যাচ্ছি জানো তো? তোমার তো আবার কোন উঁশ থাকে না। ঘরে কী আলোচনা হয় তাও জানো না। কাল রওনা হচ্ছি। মাইক্রোবাসে যাচ্ছি। বাস চলে আসবে তোর ছটায়।

মতিন সাহেব হাসি মুখে বললেন, জানি। আমি ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি। অফিস থেকে সাতদিনের ছুটি নিয়েছি। আর্নড লিভ।

রাহেলা অবাক হয়ে বললেন, তোমাকে ছুটি নিতে কে বলল? আগ বাড়িয়ে যে এক একটা কাজ করো রাগে গা জ্বলে যায়। আমি কি বাসা খালি রেখে যাব না কি? রোজ চুরি হচ্ছে। তুমি থাকবে এখানে।

আচ্ছা।

ফ্রিজে এক সপ্তাহের মত গোশত রান্না করে রাখা হয়েছে। চারটা চাল ফুটিয়ে খেয়ে নেবে। পারবে না?

পারব।

শোবার আগে সব ঘর বন্ধ হয়েছে কি না ভাল করে দেখবে। তোমার উপর কোন দায়িত্ব দিয়েও তো নিশ্চিন্ত হতে পারি না।

এ জাতীয় ব্যাপার যে শুধু বাড়িতে ঘটে তাই না। অফিসেও নিয়মিত ঘটে। তাদের অফিসের এক সহকর্মী কোন-এক সিনেমায় ডাক্তারের ভূমিকায় অভিনয় করেছে। নায়িকার খুব জ্বর। ডাক্তার জ্বর দেখে বললেন-হু, জ্বর একশ তিন। পেসেন্টকে এক্ষুণি হাসপাতালে নিতে হবে। নায়িকা তখন কাতর গলায় বলে, আমি বাঁচতে চাই না ডাক্তার। মৃত্যুই আমার জন্যে ভাল। পৃথিবীর এ আলো হাওয়া, এ আনন্দ আমি সহ্য করতে পারছি না। ডাক্তার তখন বলেন, ছিঃ এমন কথা বলবেন না।

এইটুকুই পার্ট। তবু তো সিনেমার পার্ট। পরিচিত একজন সিনেমায় পার্ট করছে এটা দেখায়ও আনন্দ। যে পার্ট করছে সে বলল, বৃহস্পতিবার সে সবার জন্য পাস নিয়ে আসবে। অফিসের শেষে সবাই তার বাসায় চা-টা খেয়ে সন্ধ্যাবেলা এক সঙ্গে ছবি দেখতে যাবে।

মতিন সাহেব খুব আগ্রহ নিয়ে বৃহস্পতিবারের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। ছবিঘরে অনেকদিন ছবি দেখা হয় না। ছবি দেখা হবে। তাছাড়া দলবল নিয়ে ছবি দেখার আনন্দও আছে। উত্তেজনায় বৃহস্পতিবারে তিনি অফিসের কাজও ঠিকমত করতে পারলেন না। ছুটির পর সবাই এক সঙ্গে বেরুচ্ছেন, সিনেমার ডাক্তার অভিনেতা মতিন সাহেবকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন, একটা ভুল হয়ে গেছে। তেরটা পাস এনেছি, এখন দেখি মানুষ চৌদ্দজন। কী করা যায় বলুন তো?

মতিন সাহেব কিছু বললেন না। তাঁর খুব যেতে ইচ্ছা করছে। নিজ থেকে বলতে ইচ্ছা করছে না, আপনারা যান। আমি থাকি।

শুনুন মতিন সাহেব, আপনি বরং থাকুন। আপনাকে পরে পাস এনে দেব। আর ছবিও খুব আজেবাজে। পুরা ছবি দেখলে হলের মধ্যে বমি করে দেবেন। না দেখাই ভাল।

মতিন সাহেব বললেন, আচ্ছা।

মনে কিছু করলেন না তো আবার?

জ্বি না।

বাসা পর্যন্ত চলুন। এক সঙ্গে চা খাই। অসুবিধা নেই তো?

জ্বি না।

শেষ পর্যন্ত বাসায় যাওয়া হল না। একটা জিপ জোগাড় হয়েছিল, সেই জিপে সবার জায়গা হল মতিন সাহেবের হল না।

মতিন সাহেব, আপনি রবং একটা রিকশা নিয়ে চলে আসুন। ঠিকানা লিখে দিচ্ছি। মালিবাগ চৌধুরী পাড়া। অসুবিধা হবে না তো?

জ্বি না।

ঠিকানা নিয়ে তিনি রিকশা করে মালিবাগে নামলেন। বাসা খুঁজে পেলেন না কারণ ঠিকানায় সবই দেয়া আছে বাসার নাম্বার দেয়া নেই। মতিন সাহেবের একবার ক্ষীণ সন্দেহ হল-ইচ্ছা করেই বাসার নাম্বার দেয়নি। পর মুহূর্তেই সেই সন্দেহ তিনি ঝেড়ে ফেলে দিলেন। তা কী করে হয়। সন্ধ্যা না মেলানো পর্যন্ত তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করলেন বাড়ি খুঁজে বের করবার। পারলেন না।

Pages: 1 2 3 4 5 6
Pages ( 1 of 6 ): 1 23 ... 6পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *