Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নাম মাহাত্ম্য || Abhijit Chatterjee

নাম মাহাত্ম্য || Abhijit Chatterjee

ঘোঁতনা — একটা নাম হলো ? অথচ ড্যাম স্মার্ট , ঝকঝকে চেহারা , নামি চাকরি , মানিব্যাগ ফোলা মাইনে , সব ঠিক আছে , শুধু ঐ “ঘোঁতনা “। ভাল নামে যে ডাকবে সে আরেক ঝামেলা। “ব্রহ্মমায়ানন্দ”, নামের কি ছিরি। ব্রহ্ম বলে ডাকলে কেমন যেন ঠাকুর দেবতা মার্কা ভাব ,”মায়া” – ইসস্ ও তো মেয়েদের নাম। থাকলো তবে “নন্দ”। ওয়াক , কেমন যেন গোয়ালা গোয়ালা ডাক আর ঐ তালের বড়া ভাজার সময় ঠাকুমা বলতো -তালের বড়া খেয়ে নন্দ নাচিতে লাগিল। তিতলির কান্না পেতে শুরু করলো। একই বাসে , একই সময়ে , একই স্টপেজে ওঠা , একই স্টপেজে নাবা , একই বাড়িতে অফিস করতে যাওয়া , যদিও অফিস আলাদা। রোজ যেতে যেতে তিতলি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েছিল। একদৃষ্টে দেখত , একদিন চোখে চোখ । ধরা পড়া । বাস থেকে নাবতেই তার দিকে একটা হাত এগিয়ে এসে বলা – হ্যালো, আমি ব্রহ্মমায়ানন্দ ,আপনি ? আত্মহারা তিতলি উৎসাহের সঙ্গে হাতটা ধরতে গিয়েও চৌকাঠে হোঁচট খেল। কি বিদঘুটে নাম রে বাবা। তবুও সুপ্ত ইচ্ছেটা সাকার হচ্ছে দেখে হাতটা ধরে বলেছিল – হাই ,আমি প্রজ্ঞাপারমিতা। শুরু হলো আলাপ। এরপরে চালাও পানসি বেলঘরিয়া। আজ তৃতীয় দিন একান্তে দুজনের ঘুরে বেড়ানোর। সেখানেই তিতলি তার ডাকনাম জানতে চেয়েছিল ওনার ডাকনাম -ঘোঁতনা , শুনেই ভিরমি খাচ্ছিল আর কি। কেশে, হেঁচে, চোখের জলে , নাকের জলে মেকাপের সাড়ে বারোটা । সবার মূলে ঐ ঘোঁতনা।একটু থিতু হয়ে তিতলি জানতে চেয়ছিল আর কোন নাম আছে কি না। উত্তর ছিল , সদ্য প্রয়াত দাদু ” পচা আলু ” বলে ডাকতো। তিতলির এইবার অজ্ঞান হবার উপক্রম। থুতু গিলে একটু থেমে ঠাকুমার কথা জানতে চেয়ে শুনেছিল তার জন্মের আগেই স্বর্গবাসী। মামার বাড়ি — মামা কেউ নেই, মা একমাত্র সন্তান। দাদু দিদার সে “ঘোঁতনা”। তিতলির শেষ আশাটার অকাল প্রয়াণ হলো । মায়া এক ভীষণ বস্তু , তার সঙ্গে ঐ রকম হিরো হিরো লুকস, পকেট ভর্তি টাকা , অগত্যা ঘোঁতনা মায়াতে এখন বন্দি আমাদের তিতলি। ভাববাচ্যে কথা বলে যা’তে নাম না বলতে হয়। এখন থেকেই – এই , ওই যে , হ্যাঁ গো , শুনছো , দুষ্টু ,এইসব বিবাহ পরবর্তী নামেই কাজ চলছে। দিন কাটছে তরতরিয়ে । তিতলির পাত্র দেখা শুরু হবে যখন তিতলি বাড়িতে বলে দিল ঘোঁতনার নাম। বাবা মা কৌতুহলী । ঘোঁতনার নিমন্ত্রণ এলো তিতলির বাড়ি থেকে। নির্দিষ্ট দিনে বাবু হাজির । তিতলি ভেতরে নিয়ে এলো । ড্রইং রুমে মা-বাবার সঙ্গে পরিচয় করানোর সাথে সাথে বাবা যেই ডাকনাম শুনতে চাইলেন প্রমাদ গুনলো তিতলি । “ঘোঁতনা” শুনেই মা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে চা আনতে গেল তো বাবার হটাৎ বাথরুম পেলো । তিতলি খুব অপমানিত বোধ করলো মা বাবার এ হেন আচরণে । কিন্তু বিয়ের পারমিশন চাই ,অগত্যা চুপ । বাড়ি থেকে সবুজ পতাকার আন্দোলনে মনে হিল্লোল তুলে দুজনে দুরন্ত এক্সপ্রেস হয়ে চুটিয়ে প্রেম করতে লাগলো । ফের ধাক্কা , যাকে বলে রামধাক্কা । একদিন দুজনে CCD – বসে আছে , হটাৎ সেখানে এক দঙ্গল বন্ধু নিয়ে হাজির মৌ । মৌ , তিতলির কলেজের বান্ধবী হলেও কলেজ জীবনে অত দহরম মহরম ছিল না । মৌ ছিল অতি আধুনিকা, তিতলি সেখানে একটু হলেও রক্ষণশীল । মৌ-এর সাজ পোষাক তার ভাল লাগতো না । পয়সাওয়ালা ঘরের একমাত্র মেয়ে, দেখতেও বেশ সেক্সি সেক্সি , দুহাতে খোলামকুচির মত টাকা উড়িয়ে মৌ কলেজের মক্ষীরাণী ছিল । কলেজ জীবন শেষে আর দেখা হয়নি । আজ এই কুক্ষণে CCD-তে দেখা । তিতলিকে দেখেই – হাই সুইটি বলেই ছুটে এসে তিতলির গালে লিপস্টিকের দাগ লাগিয়ে দিল, তারপরেই ঘোঁতনার দিকে তাকিয়ে বলল – হাউ সুইট, প্রেম করছিস ? জিও পাগলা । বলেই হাত মেলে দিলো আমাদের ঘোঁতনার দিকে – হাই হ্যান্ডসাম, আমি মৌ, ওর কলেজ ফ্রেন্ড । তুমি ? বাই দ্য ওয়ে ডাকনাম বলবে , আমরা কাগুজে নাম পছন্দ করি না । হাতটা ধরে স্মার্ট ছেলে বলে উঠলো – ও সিওর । আমিও কাগুজে নাম পছন্দ করি না । তোমার নামটা খুব সুন্দর। আমার নাম — ইষ্টমন্ত্র জপ শুরু করলো তিতলি। পরবর্তী ঘটনা যে কি হতে পারে – না ভাবতে পারছে না — আমি ঘোঁতনা। – হোয়াট ? সুনামি আছড়ে পড়লো মৌ-এর গলায় । বেয়ারা কফি আনছিল তিতলিদের জন্য । আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে মৌ আর্তনাদ করে উঠলো – তোমার নাম ঘোঁতনা । সমবেত হাসির হ্যারিকেনে বেয়ারার হাত থেকে ট্রে পপাত ধরণীতলে । ঘাড় ঘুরিয়ে তিতলি দেখলো সে ব্যাটাও হাসছে । কান লাল , চোখে জল, নাক টানতে টানতে তিতলি বলল – চলি রে মৌ, আমরা একটা জায়গায় যাবো । উঠে দাঁড়ালো , ঘোঁতনাও। যখন বেরিয়ে আসছে দোকান থেকে পেছন থেকে কোরাস ভেসে এলো — বাই ঘোঁতনা । আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে তিতলি । বড় ময়দানে এসে অত্যন্ত উত্তেজিত গলায় সে পরিস্কার জানিয়ে দিল এফিডেবিট করে নাম বদল করতেই হবে । ফুটনোট – এইরকম নাম তোমাদের বাড়িতে কারুর ছিল ? তিতলিকে চমকে দিয়ে স্মার্ট বয় বলে উঠলো – তার নামটা খারাপ কেন ? ওর বাবার নাম নেড়ি , ঠাকুরদার নাম কাঙালি। বলেই প্রশ্ন -নামগুলো কি খারাপ ? এইবার তিতলি সত্যি করেই অজ্ঞান হয়ে গেল । ওর জ্ঞান এখনও ফেরেনি ।ঘোঁতনা খাবি খাচ্ছে । আমি ডাক্তার ডাকতে চললাম । তোমরা কি করবে জানিও ! বেচারা ঘোঁতনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *