নাম মাহাত্ম্য
ঘোঁতনা — একটা নাম হলো ? অথচ ড্যাম স্মার্ট , ঝকঝকে চেহারা , নামি চাকরি , মানিব্যাগ ফোলা মাইনে , সব ঠিক আছে , শুধু ঐ “ঘোঁতনা “। ভাল নামে যে ডাকবে সে আরেক ঝামেলা। “ব্রহ্মমায়ানন্দ”, নামের কি ছিরি। ব্রহ্ম বলে ডাকলে কেমন যেন ঠাকুর দেবতা মার্কা ভাব ,”মায়া” – ইসস্ ও তো মেয়েদের নাম। থাকলো তবে “নন্দ”। ওয়াক , কেমন যেন গোয়ালা গোয়ালা ডাক আর ঐ তালের বড়া ভাজার সময় ঠাকুমা বলতো -তালের বড়া খেয়ে নন্দ নাচিতে লাগিল। তিতলির কান্না পেতে শুরু করলো। একই বাসে , একই সময়ে , একই স্টপেজে ওঠা , একই স্টপেজে নাবা , একই বাড়িতে অফিস করতে যাওয়া , যদিও অফিস আলাদা। রোজ যেতে যেতে তিতলি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েছিল। একদৃষ্টে দেখত , একদিন চোখে চোখ । ধরা পড়া । বাস থেকে নাবতেই তার দিকে একটা হাত এগিয়ে এসে বলা – হ্যালো, আমি ব্রহ্মমায়ানন্দ ,আপনি ? আত্মহারা তিতলি উৎসাহের সঙ্গে হাতটা ধরতে গিয়েও চৌকাঠে হোঁচট খেল। কি বিদঘুটে নাম রে বাবা। তবুও সুপ্ত ইচ্ছেটা সাকার হচ্ছে দেখে হাতটা ধরে বলেছিল – হাই ,আমি প্রজ্ঞাপারমিতা। শুরু হলো আলাপ। এরপরে চালাও পানসি বেলঘরিয়া। আজ তৃতীয় দিন একান্তে দুজনের ঘুরে বেড়ানোর। সেখানেই তিতলি তার ডাকনাম জানতে চেয়েছিল ওনার ডাকনাম -ঘোঁতনা , শুনেই ভিরমি খাচ্ছিল আর কি। কেশে, হেঁচে, চোখের জলে , নাকের জলে মেকাপের সাড়ে বারোটা । সবার মূলে ঐ ঘোঁতনা।একটু থিতু হয়ে তিতলি জানতে চেয়ছিল আর কোন নাম আছে কি না। উত্তর ছিল , সদ্য প্রয়াত দাদু ” পচা আলু ” বলে ডাকতো। তিতলির এইবার অজ্ঞান হবার উপক্রম। থুতু গিলে একটু থেমে ঠাকুমার কথা জানতে চেয়ে শুনেছিল তার জন্মের আগেই স্বর্গবাসী। মামার বাড়ি — মামা কেউ নেই, মা একমাত্র সন্তান। দাদু দিদার সে “ঘোঁতনা”। তিতলির শেষ আশাটার অকাল প্রয়াণ হলো । মায়া এক ভীষণ বস্তু , তার সঙ্গে ঐ রকম হিরো হিরো লুকস, পকেট ভর্তি টাকা , অগত্যা ঘোঁতনা মায়াতে এখন বন্দি আমাদের তিতলি। ভাববাচ্যে কথা বলে যা’তে নাম না বলতে হয়। এখন থেকেই – এই , ওই যে , হ্যাঁ গো , শুনছো , দুষ্টু ,এইসব বিবাহ পরবর্তী নামেই কাজ চলছে। দিন কাটছে তরতরিয়ে । তিতলির পাত্র দেখা শুরু হবে যখন তিতলি বাড়িতে বলে দিল ঘোঁতনার নাম। বাবা মা কৌতুহলী । ঘোঁতনার নিমন্ত্রণ এলো তিতলির বাড়ি থেকে। নির্দিষ্ট দিনে বাবু হাজির । তিতলি ভেতরে নিয়ে এলো । ড্রইং রুমে মা-বাবার সঙ্গে পরিচয় করানোর সাথে সাথে বাবা যেই ডাকনাম শুনতে চাইলেন প্রমাদ গুনলো তিতলি । “ঘোঁতনা” শুনেই মা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে চা আনতে গেল তো বাবার হটাৎ বাথরুম পেলো । তিতলি খুব অপমানিত বোধ করলো মা বাবার এ হেন আচরণে । কিন্তু বিয়ের পারমিশন চাই ,অগত্যা চুপ । বাড়ি থেকে সবুজ পতাকার আন্দোলনে মনে হিল্লোল তুলে দুজনে দুরন্ত এক্সপ্রেস হয়ে চুটিয়ে প্রেম করতে লাগলো । ফের ধাক্কা , যাকে বলে রামধাক্কা । একদিন দুজনে CCD – বসে আছে , হটাৎ সেখানে এক দঙ্গল বন্ধু নিয়ে হাজির মৌ । মৌ , তিতলির কলেজের বান্ধবী হলেও কলেজ জীবনে অত দহরম মহরম ছিল না । মৌ ছিল অতি আধুনিকা, তিতলি সেখানে একটু হলেও রক্ষণশীল । মৌ-এর সাজ পোষাক তার ভাল লাগতো না । পয়সাওয়ালা ঘরের একমাত্র মেয়ে, দেখতেও বেশ সেক্সি সেক্সি , দুহাতে খোলামকুচির মত টাকা উড়িয়ে মৌ কলেজের মক্ষীরাণী ছিল । কলেজ জীবন শেষে আর দেখা হয়নি । আজ এই কুক্ষণে CCD-তে দেখা । তিতলিকে দেখেই – হাই সুইটি বলেই ছুটে এসে তিতলির গালে লিপস্টিকের দাগ লাগিয়ে দিল, তারপরেই ঘোঁতনার দিকে তাকিয়ে বলল – হাউ সুইট, প্রেম করছিস ? জিও পাগলা । বলেই হাত মেলে দিলো আমাদের ঘোঁতনার দিকে – হাই হ্যান্ডসাম, আমি মৌ, ওর কলেজ ফ্রেন্ড । তুমি ? বাই দ্য ওয়ে ডাকনাম বলবে , আমরা কাগুজে নাম পছন্দ করি না । হাতটা ধরে স্মার্ট ছেলে বলে উঠলো – ও সিওর । আমিও কাগুজে নাম পছন্দ করি না । তোমার নামটা খুব সুন্দর। আমার নাম — ইষ্টমন্ত্র জপ শুরু করলো তিতলি। পরবর্তী ঘটনা যে কি হতে পারে – না ভাবতে পারছে না — আমি ঘোঁতনা। – হোয়াট ? সুনামি আছড়ে পড়লো মৌ-এর গলায় । বেয়ারা কফি আনছিল তিতলিদের জন্য । আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে মৌ আর্তনাদ করে উঠলো – তোমার নাম ঘোঁতনা । সমবেত হাসির হ্যারিকেনে বেয়ারার হাত থেকে ট্রে পপাত ধরণীতলে । ঘাড় ঘুরিয়ে তিতলি দেখলো সে ব্যাটাও হাসছে । কান লাল , চোখে জল, নাক টানতে টানতে তিতলি বলল – চলি রে মৌ, আমরা একটা জায়গায় যাবো । উঠে দাঁড়ালো , ঘোঁতনাও। যখন বেরিয়ে আসছে দোকান থেকে পেছন থেকে কোরাস ভেসে এলো — বাই ঘোঁতনা । আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে তিতলি । বড় ময়দানে এসে অত্যন্ত উত্তেজিত গলায় সে পরিস্কার জানিয়ে দিল এফিডেবিট করে নাম বদল করতেই হবে । ফুটনোট – এইরকম নাম তোমাদের বাড়িতে কারুর ছিল ? তিতলিকে চমকে দিয়ে স্মার্ট বয় বলে উঠলো – তার নামটা খারাপ কেন ? ওর বাবার নাম নেড়ি , ঠাকুরদার নাম কাঙালি। বলেই প্রশ্ন -নামগুলো কি খারাপ ? এইবার তিতলি সত্যি করেই অজ্ঞান হয়ে গেল । ওর জ্ঞান এখনও ফেরেনি ।ঘোঁতনা খাবি খাচ্ছে । আমি ডাক্তার ডাকতে চললাম । তোমরা কি করবে জানিও ! বেচারা ঘোঁতনা।