Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নাজিমুদ্দিন || Satyajit Chowdhury

নাজিমুদ্দিন || Satyajit Chowdhury

নাজিমুদ্দিন

নাজিমুদ্দিন। বর্তমানের এক অশান্ত পরিবেশে সমাজে যখন ধর্মান্ধতার কালোছায়া সর্বত্র । তখন নাজিমুদ্দিনের মতো বর্ণময় চরিত্র আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়।

তখন আমি সবেমাত্র শহরতলির এক শাখা থেকে গুয়াহাটির মতো নগরে বড় শাখায় বদলি হয়ে এসেছি। মনে ভয় ছিল, এত বড় শহরের এত বড় ব্যাংকের শাখায় গুরুত্বপূর্ণ পদ কি ভাবে সামলাবো। প্রথমদিনেই নাজিমুদ্দিন ওরফে নাজিমের সাথে পরিচয় হয়ে গেলো।

দেখলাম, নাজিমই ব্রাঞ্চের সর্বময় কর্তা । কারো কোনো বিপদে নাজিমই সর্বপ্রথমে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গ্রাহকদের অধিকাংশের সাথে নাজিমের সম্পর্ক সুমধুর । শাখা প্রবন্ধক মহাশয়ও যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নাজিমের পরামর্শ প্রহণ করেন । যে কোনো সমস্যার সমাধানের সূত্র নাজিমের কাছে সহজেই উপলব্ধ । শাখার মহিলা কর্মচারীদের মধ্যে নাজিমের জনপ্রিয়তা দেখার মতো ।

আমার অফিসের যোগদান করার মাস দুয়েকের মধ্যে সরস্বতী পুজো এসে গেলো। শুনলাম. এই অফিসে প্রতিবার ধুমধাম করে সরস্বতী পূজা পালিত হয় । কিন্তু এই বছর তেমন কিছু উদ্যোগ দেখতে পেলাম না ।

পুজোর চারদিন বাকি আছে। নাজিমের গলার উচ্চস্বর শুনা গেলো। কি হলো? এবার সরস্বতী পূজা হবে না ? নাজিম মরে গেছে নাকি? তৎক্ষণাৎ কর্মচারীদের একখানা লিস্ট নিয়ে চাঁদা তুলতে বেরিয়ে পড়লো। নাজিমকে মানা করে, কার আছে হিম্মত । বিশেষ বিশেষ গ্রাহকও স্বতঃফুর্তভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল। চাঁদার পরিমান বেশ ভাল হলো ।
এবার নাজিম হরি শর্মাকে পাকড়াও করলো । তুই একজন ব্রাহ্মণ জোগাড় করবি । না পারলে তোকেই পুরোহিত বানিয়ে দেবো । রোজগার কিন্ত মন্দ হবে না!ক্যান্টিন ম্যানেজার বিশ্বজিতকে ভার দিল ভোগের খিচুড়ি লাবড়ার। ক্যান্টিনবয় রমাপদকে ডেকে বলল । বরুয়াদের বাড়ি থেকে চানা গোবর নিয়ে আসবি। দিপুকে বলবি, পুজোর দিন বেলপাতা ও আম পল্লব নিয়ে আসতে। অফিসের সবাইকে বলল। ছেলেরা পায়জামা পাঞ্জাবী ও মেয়েরা মেখেলা পড়ে আসতে হবে পুজোর দিনে । আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম. কি সহজে কাজগুলো হয়ে যাচ্ছে ।

পুজোর দিন সকাল আটটা নাগাদ মণ্ডপে চলে গেলাম । মণ্ডপ সুন্দর করে সাজিয়েছে । ইতিমধ্যে এক জন দুই জন করে আসতে শুরু করেছে। হঠাৎ নাজিমের গলার আওয়াজ পেলাম। রমা, বিপুল, হরেশ্বর সব ঠিক আছে তো? যজ্ঞের কাঠ এনেছিস? আরেক ব্রাহ্মণসন্তান পবিত্র পুরোহিতের সহকারীর কাজে লেগে গেছে । নাজিমের গায়ে আনকোরা সাদা ধবধবে পায়জামা ও পাঞ্জাবি। মনে হচ্ছে, এখুনি অঞ্জলি দিতে যাবে । ইতিমধ্যে মহিলা ব্রিগেড এসে গেছে । নিবেদিতা, তিস্তা, অজন্তা, পদুমি, প্রিয়াঙ্কা, রোসি, সিমিদের গল্প কথা হাসিতে চারিদিক মুখরিত হয়ে গেলো । মাঝে মাঝে নাজিম রান্নাঘরে উঁকি মারছে, রাঁধুনির খিচুড়ি রান্না কতদূর ।

পুজো ভালভাবেই সম্পন্ন হলো । রঞ্জিত হাজারিকা, অনন্ত স্বর্গেয়ারি, গোলক বড়ো, গৌতম পোদ্দার, প্রাণেশ দাস, প্রমিত রায় চৌধুরীদের আসর জমে উঠেছে । নাজিম আমাকে আড়ালে ডেকে বলল, স্যার আপনি এদিকটা একটু দেখবেন । খিচুড়ি লাবড়া হয়ে গেছে । পায়েস হচ্ছে । আমি একটু আসছি। জিজ্ঞাসু চোখে আমি বললাম, এখন আবার কোথায় যাবে? নাজিম স্বর নামিয়ে বলল, আজ শুক্রবার । চট করে জুম্মার নামাজটা সেরে আসি । এদিকে ব্রাহ্মণপুত্র হরি শর্মা স্কুটার স্টার্ট দিয়ে হাঁক দিচ্ছে, তাড়াতাড়ি কর, আযানের সময় হয়ে এলো । বাকরুদ্ধ আমার হৃদয়ে এক অজানা সুখানুভূতি ছড়িয়ে পড়লো। বিড় বিড় করে বললাম, এই আমাদের মহান ভারতবর্ষ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress