নবরাত্রি, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য
আমাদের দেশে বার মাসে তেরো পার্বন। সারা উপ মহা দেশে যে উৎসব গুলি সাড় ম্বরে পালিত হয় ”নবরাত্রি”তাদের মধ্যে একটি।ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এর আরাধনা বিভিন্ন কিন্তু সবের মধ্যেই এক ই মাতৃআরাধনার সুর॥
হিন্দু ধর্মে নবরাত্রি কে মহিষাসুরের উপর মা দুর্গার বিজয় বা অধর্মের উপর ধর্মের বিজয় বলে মানা হয়।
”নবরাত্রি” ন দিন ব্যাপী মাতৃআরাধনার উৎসব॥ বিভিণ্ণ প্রদেশেএই উৎসব বিভিন্ন রূপে পালিত হয় ।
গুজরাটে এই ন দিন ”গরবা” নাচের মাধ্যমে মায়ের আরাধনা হয় ! সুন্দর,চিত্রিত মাটির পাত্রে প্রদীপ জ্বালিয়ে তাকে প্রদক্ষিণ করে মেয়েরা নাচতে থাকে! এই পাত্রটি ”গর্ভের” প্রতীক ।
”নবরাত্রি” বছরে চারবার পালিত হলেও,বর্ষাশেষের শারদীয়া নবরাত্রিই মা দুর্গার নামে নিষ্ঠ।ভরে পালিত হয়। পূর্ব ও উত্তরপূর্ব ভারতে এই উৎসব মা দুর্গার মহিষাসুরের উপর বিজয় উৎসব হিসাবে পালিত হয় ॥ এই রূপ ”মহিষাসুরমর্দিনীর”॥
নবরাত্রি উৎসবের ন দিনে মা দুর্গার নটি বিশেষ রূপের আরাধনা করা হয় ॥প্রত্যেক দিন একটি বিশেষ রঙ সূচিত করে!ভক্তরা ওই বিশেষ রঙের বেশভূষায় সজ্জিত হন॥উৎসব শুরু হয় মহালয়ার পরদিন থেকে!শেষ হয় মহানবমীতে॥
প্রথম দিনের মা য়ের রূপ …..”শৈলপুত্রী”…শিবসহ চরী মা, ত্রিদেবের মিলিত রূপ, ব্রমহা, বিষ্ণূ ও মহেশ্বরের তেজ সমন্বিতা। প্রথম দিনের রঙ, লাল … যা উদ্যমের প্রতীক ।
দ্বিতীয় দিনে মা , ”ব্রমহ চারিনী”। নিষ্ঠ।বতী তপ স্বিনী। ভক্তদের সুখ,শান্তি,সমৃদ্ধি প্রদানকারিনী! এই দিনের রঙ ঘননীল । যা শান্ত অথচ,শক্তিশালী কর্মশক্তির দ্যোতক ॥
তৃতীয় দিনে মা , ”চন্দ্রঘণ্টা”…শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রদান কারিনী॥সাহস ও মহান শক্তির প্রচারক ।এই দিনের রঙ হলুদ॥
চতুর্থ দিনে মা ”কুষ্মাণ্ডা”…মহাবিশ্বের সৃষ্টি কত্রী।এইদিনের রঙ সবুজ…. যা প্রাণশক্তির প্রতীক॥
পঞ্চম দিনে মা ”স্কন্দমাতা”…কার্তিকেয় জননী,,যিনি দেবকুলের সেনাপতি! এই দিনের রঙ ধূসর॥
ষষ্ঠ দিনে মা যোগীকাত্যায়নের কন্যা…”কাত্যায়নী”।বিপুল সাহসের প্রতীক মা কমলা সাজে সজ্জিতা॥
সপ্তম দিনে মা ”কাল রাত্রি”রূপে পূজিতা।অবিন্যস্ত বেশভূষা, নির্ভীক দেহ ভঙ্গী, ত্রিনয়নী মা , মা কালীর মতো নিকষ কালো বরণ॥দুধসাদা বসনে সজ্জিত!তাই সপ্তমীর রঙ সাদা॥মায়ের সব চেয়ে ভয়াল রূপ এটি॥
অষ্টমীতে মা ”মহাগৌরী”॥কথিত যে দী র্ঘ দিন জঙ্গলে তপস্যার কারণে মায়ের গাত্র বর্ণ কালো হয়ে যায় ॥মহেশ্বর গঙ্গাজলেস্নান করিয়ে মায়ের গাত্রবর্ণ আবার গৌর বর্ণ করেন॥ মা ”মহাগৌরী” রূপ ধারণ করেন॥মা শান্ত,সমাহিত ,গোলাপী বর্ণে সজ্জিত॥
নবমীর দিন মা ”সিদ্ধিদাত্রী”।চতুৃর্ভূজা,উজ্জ্বল আকাশের মতো সমাহিতা…..তাই মায়ের সাজ আকাশীনীল!মা সর্ব সিদ্ধিদাত্রী,সফলতাপ্রদান কারিনী॥
শিবের বিষাণের আহ্বাণে মর্ত্যে আগমনীর ঢাক বেজে ওঠে॥গিনি সোনা রোদে,কাশের দোলায়,শরতমেঘের আনা গোনায় আগমনীর সুর তোলে॥শাশ্বত সেই আত্মিক বন্ধনের চির চেনা সুর,মনে গুনগুনিয়ে ওঠে। চিণ্ময়ী মা আনন্দময়ী মৃণ্ময়ী রূপে মর্ত্যে আসছেন ….তাই মাকে আহবান জানি য়ে বলি….এসো শারদ প্রাতের পথিক
এসো শিউলি বিছানো পথে,
এসো ধুইয়ে চ রণ শিশিরে
এসো অরুন কিরণ র থে॥
বর্তেমান সময় খুব সুখের নয়!হিংসায় ,পরমতবিদ্বেষে, ঘৃনায় জরাজীর্ণ॥ তাই পূজা পরিক্রমার প্রারম্ভে কামনা করি…. এবার আশ্বিনে সম্প্রীতির সানাই বেজে উঠুক আমাদের ভালোবাসার শহরে, ভালোবাসার দেশে॥