নতুন বউ
সোহানিকা নতুন বউ হয়ে মেদিনীপুরের সেই ঝেঁতলা যেগ্রামে পৌঁছাল। লাল মোড়ামের রাস্তার দু পাশে সবুজ ধানক্ষেত। নিজের বাড়িতে যাচ্ছে দুপাশে হাওয়ায় দুলছে ধানের শীষ। একটা বড় মাঠের সামনে মা শীতলার মন্দির, ট্যাক্সিটা থামতে শাঁখ উলু ধ্বনিতে মুখরিত, দূরে দূরে বাড়ি হলেও অনেকে এসেছে নতুন বউকে দেখতে। তারপর হাঁটাপথে মাটির দোতলা ঘরে। এই প্রথম খড় দেওয়া বাড়ি নিজের হলো। উপরের ঘরটা খুব সুন্দর।পুব দিকের জানালাটা খুললেই পুকুরের ওপারে মা শীতলা মন্দির, ভোরের প্রথম সূর্যের রোদ এসে পড়ত বিছানায়। তারপর নিচে নামলে ই গোলাভরা ধান, উঠানে গরু, পাশের জমিগুলোতে সবজি চাষ রয়েছে।সোহানিকা র খুব ভালো লাগতো গ্রামের ওই বাড়ি। নীচের ঘরে শুয়ে আছে দাদু ঠাকুমা। দাদুর সাথে নাত বউয়ের খুনসুটি চলত। বড় বড় বাটিতে দুধ মুড়ি খাওয়া হতো। মাঝে মাঝে ছোট ননদটিকে নিয়ে বাদাম ক্ষেতে ছুটত। পাশে অন্য লোকের জমিতে বাদাম তুলে খাওয়া দারুণ আনন্দ। আবার কখনো পারাং নদীর তীরে লাল মোরাম রাস্তায় বসে থাকা। সামনে চক। মাথায় ঘোমটা টেনে সোহানিকা যেত চৌধুরী দের পুরনো জমিদার বাড়িতে। তখনো জমিদারবাড়ির ধ্বংসাবশেষ অবশিষ্ট। বিরাট ঝাড়লন্ঠন, নাচঘর, বাগান পুকুর রয়েছে, নেই সেই জমিদারি। দাদু ঠাকুমা জমিদারবাড়ির অত বড় জায়গা থেকে আজ মাটির ঘরে। স্বাধীনতা সংগ্রামী দাদু, তাই কোন দুঃখই তাকে স্পর্শ করতে পারে না। সন্ধ্যে হলে কত গল্প , মেদিনীপুরের বিপ্লবীদের গল্প, অনেক বিপ্লবীর নাম ইতিহাসের পৃষ্ঠায় নেই। কিন্তু তারা বহুবার জেল খেটেছেন, ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচার সহ্য করেছেন। সোহানিকার দাদুও তাই। সকাল থেকে ছিপ নিয়ে পুকুরে মাছ ধরা, গরুর বাছুর গুলোকে আদর করা, কখনোবা তেঁতুল শিমুল গাছের নিচে আড্ডা দেওয়া। অপূর্ব ছিল সেই গ্রামের বাড়ি।