ধর্মের মেলবন্ধন
উত্তরবঙ্গের পশ্চিম দিনাজপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রাম খোরসানে মাত্র কয়েক ঘর হিন্দুর বসবাস।সেখানে মুসলিমদের প্রাধান্য লক্ষিত হয়।তেমন এক পাড়াতে বাবা অমিত এবং ছেলে সুমিতের একঘর হিন্দুর বাস।ওদের চারপাশ ঘিরে হাফিজ-নজরুল-আবদুল-নিজামুদ্দিন-মহসিন ইত্যাদি বাসিন্দার অবস্থান।আমিত-সুমিতের থেকে বেশ কিছু দূরে অন্যান্য হিন্দুর ঘর।
একদিন হঠাৎ আবদুল বলে,ভাইসাব, আপনার বাড়ির সামনে অনেক নোংরা! একটু হাত লাগিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন তো।এতে পরিবেশ দূষিত হয়।
অমিত ভিরমি খেলো।বলে,এসব কি বলছেন ? আমার বাড়ির সামনেটা সবসময় সাফসুতরো থাকে।ঐসব আবর্জনা অন্য কেউ ফেলেছে।
সুমিতও বাবার সাথে সহমত করে।
–এসব শুনতে ভালো লাগে না।আপনার বাড়ির সামনে অন্য কেউ কেন নোংরা করতে যাবে ?
আবদুলের রাগান্বিত উচ্চারণে হাফিজ,নজরুলও সেখানে হাজির।তারাও সমস্বরে বলে ,আবদুল ভাই একদম ঠিক বলেছে। আমাদের বাড়ির সামনেটা দেখুন।আপনি আর ছেলে মিলে হাত লাগান।অগত্যা মানতে বাধ্য পিতা-পুত্র ।
এভাবে আরো কয়েকবার অমিতের সঙ্গে ওদের ঝগড়া-বাদানুবাদের ঝড় উঠেছে।অশান্তিও পাশে এসে ছড়ি ঘোরায়।কিন্তু বারবার সে অপমানিত হয়েছে।সংখ্যাধিক্য হওয়ায় আবদুলেরা হম্বিতম্বি করে প্রত্যেকবার তাদের ক্ষমতা দেখিয়েছে।
তবে একদিন রাস্তার কলে জল নিয়ে নিজামুদ্দিনের সাথে অমিতের তুলকালাম কলহের উৎপাত।সে বলে, আমি-ই পানিটা আগে নেব।অমিতের বালতিটা সরিয়ে নিজেরটা বসায়।অমিত যার পর নাই বিস্মিত হয়ে নত মস্তকে সরে যায়।আজকে তার শরীরটা ভালো নেই।হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে রাস্তায়।সুমিত তৎক্ষণাৎ ছুটে এসে বাবাকে ধরে বাড়িতে নিয়ে আসে।কিন্তু অমিতের রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যাধিক। ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে ওষুধ দিলো।কিন্তু কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে সেই রাত্রেই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে না ফেরার দেশে অমিত রওনা হলো।সুমিত ভাবে, কাছেপিঠে তার কোনো আত্মীয় নেই ।বাবার সৎকার হবে কি ভাবে? সে আতান্তরে পড়েছে।তবে কান্না থামিয়ে সে পেছন ফিরে দেখে, নজরুল-আবদুল-মহসিন-হাফিজ এবং আরো কিছু মুসলিম ভাই দুয়ারে দাঁড়িয়ে।মনে বল এলো এবার সুমিতের মনে। ওরাই শবদেহের খাট,ফুল-মালা,এমন-কি গীতাও জোগাড় করে আনে।তারাই অমিতের মৃতদেহ সাজিয়ে কাঁধ দিয়ে শ্মশানে নিয়ে গেল।হিন্দুর সৎকার যেভাবে প্রয়োজন, ঠিক সেভাবেই সম্পন্ন করে।সুমিতও স্তম্ভিত হয়ে বোঝে,হিন্দু-মুসলিমের সম্প্রীতি একেই বলে।