দেখা
কোন কথাই শুনতে চায়নি অনুপম। বলেছে দেখা করতেই হবে! সম্পর্কটা বুঝি শেষই হয়ে যাবে এবার! এমন সমস্যা হবে কে জানতো! জানা উচিত ছিল বৈকি রাধিকার , একদিন না একদিন তো সামনা সামনি আসতেই হবে। তবে আজ কেন এই হা-হুতাশ! অণুপম শনিবার বিকেল সাড়ে-চারটেয় লেকের পাড়ে অপেক্ষা করবে। বলেছে “আমার পছন্দের রঙ গোলাপী। ওই রঙের শাড়ী পরেই এসো না হয়!”
শাড়ীপরা রাধিকাকে দেখবে অণুপম! তা রাধিকারই কী ইচ্ছে করছে না! সুন্দর গোলাপী রঙের শাড়ী আর ম্যাচিং ব্লাউজ সেদিনই কিনে নিয়েছে। অবস্থাখানা শাঁখের করাতের মতো! জেনেবুঝেই এগিয়েছে রাধিকা কিন্তু অনুপম! তার তো কোন দোষ নেই। সবকিছু অসম্ভব জেনেও অনুপমের যন্ত্রণার কারণ হলো! এই চিন্তাই কুরে কুরে খাচ্ছে তাকে। অস্থির আবেগের বশে কী করে বসলো!
দিদি মাধুরী মারা যেতে ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা রাধিকাই চালাচ্ছিল। মাস ছয়েক আগে অণুপমের ফ্রেন্ড-রিকোয়েস্ট পেয়ে সাড়া দিতে দেরী করেনি একটুও। শেষমেশ এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেল, রোম্যাণ্টিক চ্যাট করতে করতে কখন যে রাত শেষ হয়ে যেত দুজনেরই হুঁশ থাকতো না।
খুব ভালো লাগতো রাধিকার। একটি যুবকের আবেগমথিত, প্রেম নিবেদনের আর্তিটুকু রোম্যাণ্টিক আবেশে প্রাণ-মন ভরিয়ে তুলতো। রাধিকার ছবি দেখতে চাইলো। মাধুরীর ছবি পাঠিয়ে দিল। ভিডিও কল করতে চেয়েছে কতবার! রাধিকার এক কথা,”রোম্যান্সটুকু নষ্ট হয়ে যাবে! “
এখন সবটাই নষ্ট হতে বসেছে! ভেবে কূল পায় না।
…এসেছে রাধিকা, দূর থেকে অনুপমকে দেখেই চলে যাবে । প্রাণ ভরে দেখছে ,কাছে যাবার জন্য মনটা উতলা। দুমড়ে-মুচড়ে একাকার হচ্ছে বুকের ভেতরটা। বুকে জড়িয়ে আদরে আদরে পাগল করে দিতে ইচ্ছে করছে ।
না, গোলাপী শাড়ীটা পরেনি! চিনতে পারলে ঘেণ্ণায় মুখ ফিরিয়ে নেবে , নিশ্চিত। ভালবাসার মানুষটির দুর্জয় ঘৃণা সহ্য করতে পারবে না !
মনে-প্রাণে যতই নারী হয়ে উঠুক, কোন পুরুষই পৌঁছাতে পারবে না তার মধ্যে ।তার নারীত্ব রুদ্ধদ্বার কক্ষে বন্দিনী হয়ে কাঁদছে। খেয়ালী বিধাতার অসম্পূর্ণ সৃষ্টি! কী করবে,ফিরে যাবে! যার জন্য সযতনে সুখ শ্যামলিমা ছড়িয়েছে এতগুলো দিন তা বৃথা হবে! এতটাই আত্মমগ্ন হয়েছিল, অনুপম কখন উঠে এসেছে খেয়ালই করেনি, কাঁধে হাত পড়তেই চমকে মুখ ফিরিয়ে অনুপমকে দেখে মুখ নামিয়ে নেয় লজ্জায় । স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রাধিকা। অনুপম তার হাতে হাত রেখে বলে ‘আমার মনে ঠিক সন্দেহ হয়েছিল , কিন্তু এতে লজ্জার কী আছে! ছোট্ট একটা অপারেশন, ব্যস! চলো আর কোন চিন্তা নেই। ‘