গাঁয়ের লোকজন এসে রাজবাড়িতে হাজির
একটু বাদে যখন গাঁয়ের লোকজন এসে রাজবাড়িতে হাজির হয়ে রামুয়া আর হরুয়ার অবস্থা দেখল তখন সকলেই ‘হায়! হায়! করতে লাগল। রসময় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গগনবাবুকে বললেন, “নির্দোষ পাগলটা খুনের দায়ে এবার না ফাঁসিতে ঝোলে!”
গগনবাবু টর্চের আলোয় ভাল করে হয়া আর রামুয়াকে দেখে বললেন, “ভয় নেই, এদের কারও গায়ে স্টেনগানের গুলি লাগেনি, মরেওনি। মনে হচ্ছে আনাড়ি হাতে এলোপাথাড়ি গুলির ঘায়ে দেউড়ির বাতিদানটা খসে হয়ার ঘাড়ে পড়েছিল। আর দেওয়ালের মস্ত চাবড়া খসে রামুয়ার মাথায় চোট হয়েছে। তবে চোট সাঙ্ঘাতিক কিছু নয়। দুজনেই শক্ত ধাতের লেক। কিছু হবে না।”
গগনবাবুর পিছু পিছু গাঁয়ের লোকেরা রাজবাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখল, প্রতাপরাজার শূল হাওয়া।
গগনবাবু গম্ভীর গলায় মদন হাজরাকে বললেন, “মদনবাবু, এখনই একটা নৌকোর ব্যবস্থা করুন, আমাদের বাতাসা দ্বীপে যেতে হবে।”
“তার আর কথা কী? ওরে গুলবাগ সিং, শিগগির গিয়ে ছেলেদের ঠেলে তোল।”
গগনবাবু বললেন, “বেশি লোক যাওয়া চলবে না। শব্দ সাড়া হলে মুশকিল হবে। শুধু আপনি, আমি আর রসময়বাবু যাব, আর গুলবাগ সিং।”
একটু বিবর্ণ মুখে মদন হাজরা বললেন, “ইয়ে, তা বেশ কথা। কিন্তু গগনবাবু, ওদের কাছে যে স্টেনগান আছে।”
“তা থাক। আমাদের একটু ঝুঁকি নিতেই হবে। আপনার আর আমার দুজনের পিস্তল আছে। তেমন হলে পালটা গুলি চালানো যাবে। চলুন।”
ঘণ্টাখানেক বাদে একটি ডিঙি নৌকো অন্ধকারে নিঃশব্দে এসে বাতাসা দ্বীপের একটা আগাছায় ভরা পাড়ে লাগল। চারজন নিঃশব্দে নামলেন। টর্চ না জ্বেলে ধীরে ধীরে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এগোতে লাগলেন তাঁরা।
দেখা গেল, বাতাসা দ্বীপটা গগনবাবুর একেবারে মুখস্থ। প্রকাণ্ড বাড়িটার সামনের দিক দিয়ে গেলেন না গগনবাবু। চাপা গলায় বললেন, “উত্তরদিকে একটা জমাদার যাওয়ার দরজা আছে। সেটার খবর অনেকে জানে না।”
গগনবাবু টর্চ না জ্বেলেই ভাঙাচোরা রাস্তায় খোয়া, পাথর আর জঙ্গল ভেদ করে দরজাটার কাছে পৌঁছলেন। খুব সন্তর্পণে দরজাটা টানতেই ক্যাচ করে সামান্য ফাঁক হল।
গগনবাবু একটু অপেক্ষা করলেন। তারপর ফের খুব সন্তর্পণে দরজাটা আবার টানলেন। আবার কাঁচ করে শব্দ। তবে মানুষ গলে যাওয়ার মতো পরিসর সৃষ্টি হল। প্রথমে মাথা নিচু করে গগনবাবু এবং পেছনে তিনজন ধীরপায়ে ভেতরে ঢুকলেন। সামনে জমাট অন্ধকার।
গগনবাবু ফিসফিস করে বললেন, “আলো জ্বালাবেন না। আমার পিছু পিছু আসুন। সামনে তিন ধাপ সিঁড়ি আছে। তারপর হলঘর। হলঘর পেরিয়ে দোতলার সিঁড়ি।
হলঘর পেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে অনেক সময় লাগল। সব কাজই করতে হচ্ছিল সন্তর্পণে। তা ছাড়া পুরনো ভাঙা বাড়িতে ইট-কাঠ-আবর্জনা এত জমে আছে যে, পা রাখাই দায়!
দোতলার চাতালে বুকসমান ইট-বালি-সুরকি জমে আছে। ভাঙা ছাদের একটা অংশ খসে পড়েছে এখানে। কোথায় যেন একটা তক্ষক ডেকে উঠল।
চাপা গলায় গগনবাবু বললেন, “ডাইনে। সাবধান, এখানে একটা জায়গা ভেঙে পড়ায় ফাঁক হয়ে আছে।”
এগোতে বাস্তবিকই কষ্ট হচ্ছিল। গগনবাবুর মিলিটারি ট্রেনিং আছে, আর কারও তা নেই।
অন্তত বিশ কদম গিয়ে ডানধারে একটা দরজার কাছে দাঁড়ালেন গগনবাবু। ঘরের ভেতরে ঘটাং-ঘটাং করে দুটো শব্দ হল। লোহার গায়ে লোহার শব্দ।
গগনবাবু সন্তর্পণে মুখটা বের করে দেখলেন, মস্ত শুলটা দেওয়ালের এক জায়গায় ঢোকানোর চেষ্ট করছে দুটো লোক। তাদের একজন খুব, খুবই লম্বা। অন্তত সাড়ে সাত ফুট হবে।
হঠাৎ জলদগম্ভীর স্বরে গগনবাবু বলে উঠলেন, “ক্ষেত্ৰী, আমি তোমাকে গ্রেফতার করতে এসেছি।”
সঙ্গে-সঙ্গে ভেতরে ঠঙাত করে বিকট শব্দ হল। শুলটা ফেলে দিল হয়তো। আর তারপরেই ট্যারারারা… ট্যারা রারা… ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসতে লাগল খোলা দরজা দিয়ে।
রসময় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। মদন হাজরা বাপরে বলে চিৎকার দিয়ে, সিঁড়ির দিকে দৌড়তে গিয়ে ইট-বালির স্তূপে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। গুলবাগ দেওয়ালে সেঁটে দাঁড়িয়ে জোরে-জোরে দুগা দুর্গতিনাশিনী’ জপ করতে লাগল।
শুধু অচঞ্চল গগনবাবু ঘাবড়ালেন না। পায়ের কাছ থেকে একটা আধলা ইট তুলে নিয়ে গুলির মুখেই আচমকা দরজা দিয়ে ভেতরে সজোরে ছুঁড়ে মারলেন।
গুলির শব্দ থামল। ভেতরে কে যেন একটা কাতর আর্তনাদ করে ধপাস করে পড়ে গেল।
গগনবাবু ঘরে ঢুকে টর্চ জ্বাললেন।
দেখা গেল লম্বা লোকটা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আঙুলের ফাঁক দিয়ে রক্ত গড়িয়ে নামছে। দ্বিতীয় লোকটা হাতে পিস্তল নিয়ে বিবর্ণ মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
গগনবাবু স্টেনগানটা তুলে গুলির ম্যাগাজিনটা খুলে নিলেন। তারপর দ্বিতীয় লোকটার দিকে চেয়ে একটু হেসে বললেন, “কী ক্ষেত্ৰী, গুলি করবে নাকি? তা চালাও দেখি গুলি, কেমন পারো দেখি।”
ক্ষেত্ৰী পিস্তল তুলল, ট্রিগারে আঙুল রাখল, তারপর দাঁতে দাঁত চাপল, চোখ বুজল। কিন্তু গুলি করতে পারল না। তার হাত থরথর করে কাঁপতে লাগল। শেষে সে হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে বলল, “না, পারছি না! পারছি না।”
গগনবাবু এগিয়ে গিয়ে তার হাতের পিস্তলটা তুলে নিলেন। লোকটা বাধা দিল না।
দৃশ্যটা দেখে রসময় অবাক! হাতে পিস্তল থাকা সত্ত্বেও ক্ষেত্রী কেন গগনবাবুকে গুলি করল না সেটা বুঝতে পারলেন না তিনি।
গগনবাবু হাঁক দিলেন, “গুলবাগ সিং!”
গুলবাগ এবার বুক চিতিয়ে সামনে এসে দাঁড়াল, “বলুন সার।”
“এই ঢ্যাঙা লোকটার হাতে হাতকড়া পরাও।”
“বহুত আচ্ছা সার।” বলে গুলবাগ পটাং করে লোকটার হাতে হাতকড়া পরিয়ে বলল, “আর উনি?”
গগনবাবু মাথা নেড়ে বললেন, “একে পরাতে হবে না।” তারপর ক্ষেত্রীর দিকে ফিরে গগনবাবু শুধু বললেন, “বিশ্বাসঘাতক! কাপুরুষ!”
মাঝবয়সী, গাঁটাগোট্টা চেহারার ক্ষেত্ৰী নামের লোকটা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
বন্দুক-পিস্তলের মাঝখানে রসময় বড়ই অস্বস্তি বোধ করছেন। তবু কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “গগনবাবু, আপনার বড় দুঃসাহস। ওভাবে পিস্তলের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা আপনার উচিত হয়নি। লোকটা গুলি করলে কী যে হত।”
গগনবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “রামলাল ক্ষেত্রীকে আপনি যদি চিনতেন তা হলে ওর পিস্তলের সামনে দাঁড়াতে আপনারও ভয় করত না।”
মদন হাজরা গায়ের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে দরজায় এসে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা দেখছিলেন। বললেন, “লোকটা কে গগনবাবু?”
“মিলিটারিতে আমার ব্যাটালিয়নেই চাকরি করত। কিন্তু ও একটি অদ্ভুত সাইকোলজিক্যাল কেস। মিলিটারি হয়েও জীবনে কোনওদিন কাউকে মারতে পারেনি, এমনকী, যুদ্ধের সময়েও না, মানুষ মারা তো দূরে থাক, একবার ফাঁদে পড়া একটা ইঁদুরকে মেরে ফেলতে বলেছিলাম ওকে। তাও পারেনি। তা বলে ওকে খুব অহিংস ভাববেন না যেন। নিজে মারতে পারে না বটে, কিন্তু অন্যকে দিয়ে খুন করাতে ওর আপত্তি তো নেই-ই, বরং আগ্রহ আছে। খুনখারাপি বরং ও ভালইবাসে এবং তা ঘটানোর জন্য সব আয়োজন করে দেয়। শুধু নিজে হাতে কাজটা করে না। যদি তা পারত তবে অনেক আগেই আমাদের উড়িয়ে দিত। সেটা পারেনি বলেই ও জগাপাগলাকে কাজে লাগিয়েছিল।”
“কিন্তু ওই ঢ্যাঙা লোকটা তো ছিল।”
ঢ্যাঙা লোকটা থরথর করে কাঁপছে ভয়ে। গগনবাবু তার দিকে চেয়ে মাথা নেড়ে বললেন, “একেও আমার খুব বলবান বা সাহসী বলে মনে হচ্ছে না। বরং সন্দেহ হচ্ছে, পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের গণ্ডগোলে হঠাৎ ঢ্যাঙা হয়ে গিয়ে অসুবিধেয় পড়ে গেছে শরীরটা নিয়ে। কী হে ক্ষেত্ৰী, ঠিক বলছি?”
ক্ষেত্ৰী মৃদুস্বরে বলল, “হ্যাঁ, সার, ঠিকই বলছেন। ও আমার মাসতুতো ভাই ধরণী। হঠাৎ-হঠাৎ দু-একটা সাহসের কাজ করে ফেলে বটে, নইলে যেমন ভিতু তেমনই অপদার্থ। শরীরটাও বড় লগবগে, বছরের মধ্যে আট-ন মাসই অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকে।”
রসময়বাবু এবার হাতজোড় করে বললেন, “গগনবাবু, এবার ঘটনাটা ভেঙে বলবেন? মনে হচ্ছে আপনি এই ঘটনার আদ্যোপান্ত জানেন।”
গগনবাবু মাথা নেড়ে বললেন, “হ্যাঁ জানি। শুধু জানি বললে সবটা বলা হবে না। আমিই এই ঘটনার পালের গোদা।”
“তার মানে?”
গগনবাবু মৃদু হেসে বললেন, “সবটা না বললে কি বুঝবেন?”
“সবটাই বলুন।”
“আমি যখন ছোট ছিলুম তখন এই বাতাসা দ্বীপের রাজার বাড়ি আমাকে খুবই আকর্ষণ করত। অনেকের মতো আমারও মনে হত, বোধ হয় রাজবাড়িতে গুপ্তধন আছে। তাই প্রায়ই এসে আমি এখানে-ওখানে গর্ত করে দেখতাম। একদিন আমার হঠাৎ খেয়াল হল, রাজবাড়ির দেওয়ালগুলো খুব পুরু বটে, কিন্তু পশ্চিমদিকে দোতলার এই ঘরের দেওয়ালটা যেন আরও অনেকটা বেশি পুরু। টেপ দিয়ে মেপেও দেখলাম, আমার অনুমান সত্যি। তখন একদিন নিশুত রাতে একা এসে দেওয়ালের চাপড়া ভাঙতে লাগলাম। খুব শক্ত আস্তরণ ছিল, ভাঙতে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হয়েছিল আমায়। প্রায় ছ ইঞ্চি পুরু আস্তরণ সরিয়ে দেখি, ভেতরে একটা লোহার সিন্দুকমতো রয়েছে। চাবির ছিদ্রটা দেখে আমি অবাক! এত বড় ফুটোর চাবিও বিরাট বড় হওয়ার কথা। শুধু মুখটাই বড় নয়, ছিদ্রের মধ্যে একটা শলা ঢুকিয়ে দেখেছি খুব গভীরও বটে। সিন্দুক তো পাওয়া গেল, কিন্তু এর চাবি কোথায় পাওয়া যায়? চাবি না পেলে ‘গ্যাস কাটার’ দিয়ে কাটতে হয়। কিন্তু আপনাদের আগেই বলে রাখছি, আমার গুপ্তধন গাপ করার মতলব ছিল না। আমি চোর নই, কৌতূহলী মাত্র।”
রসময় বললেন, “সে আমরা জানি। নইলে অনেক আগেই আপনি গুপ্তধন সরিয়ে ফেলতে পারতেন।”
“ঠিক কথা। যাই হোক, আমি ভাঙা জায়গাটা সারারাত জেগে আবার মেরামত করি। পাছে লোকে বুঝতে পারে সেই ভয়ে পুরনো চুনবালি লাগিয়ে তার ওপর ঝুলকালি ভরিয়ে দিই। তারপর চাবিটার কথা চিন্তা করতে থাকি। এত বড় চাবি প্রতাপরাজা কোথায় রাখতে পারেন! হরুয়ার কাছে যেসব চাবি আছে সেগুলো বড় বটে, তবে এত বড় নয়। রাজবাড়ির ভেতরে ঢুকেও তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখেছি। রাজবাড়িতে জিনিসপত্র বলতে তো কিছুই এখন নেই। রাজা মহাতাবের আমলেই সব বিক্রি হয়ে গেছে। থাকার মধ্যে আছে শুধু অস্ত্রাগারটা। তা সেখানে খুঁজতে-খুঁজতে হঠাৎ শুলটার ওপর আমার চোখ পড়ে। আশ্চর্যের বিষয়। শুলটার চোখা দিকটায় কিছু অদ্ভুত ধরনের খাঁজ কাটা আছে। আমি চাবির ছিদ্রের মাপ এবং নকশা নিয়ে রেখেছিলাম। মিলিয়ে দেখলাম, হুবহু মিলে গেল।
মদন হাজরা অবাক হয়ে বললেন, “তাও কিছু করলেন না? এতদিনে তো রাজা হয়ে যেতে পারতেন মশাই।”
গগনবাবু মাথা নেড়ে বললেন, “না, পারতাম না। রাজা প্রতাপের বৈধ ওয়ারিশন আছেন। তিনি আমেরিকায় থাকেন, নাম মহেন্দ্র। আমি তাঁকে একটা চিঠি লিখে ব্যাপারটা জানাই। তিনি আমাকে জবাবে লিখলেন, তাঁর দেশে ফেরার আশু সম্ভাবনা নেই। যদি কখনও ফেরেন তখন এসব নিয়ে মাথা ঘামাবেন। আসলে মহেন্দ্র ওখানে ব্যবসা করে প্রচুর টাকা করেছেন। গুপ্তধন তাঁকে টানেনি। আর গুপ্তধন কিছু আছে কি না তাও তো অজানা।”
মদন হাজরা উত্তেজিত হয়ে বললেন, “খুলে দেখলেই তো হয়।”
গগনবাবু বাধা দিয়ে বললেন, “না, হয় না। ওটা আমাদের অনধিকার হস্তক্ষেপ হয়ে যাবে মদনবাবু।”
“তা বটে!”
“আমি একটাই ভুল করেছি। কাশ্মিরের উত্তরে একটা ভীষণ দুর্গম জায়গায় পোস্টিং-এর সময় এই রামলাল ক্ষেত্রীর সঙ্গে আমার চেনা হয়। আমার খুব দেখাশুনো করত। একদিন খুব দুর্যোগের রাতে ছাউনিতে বসে গল্প করতে করতে এই ঘটনাটা বলে ফেলি। তখন কল্পনাও করিনি যে, রামলাল ক্ষেত্ৰী এই অজপাড়াগাঁ খুঁজে বের করে গুপ্তধন বাগাবার চেষ্টা করবে। শুধু তাই নয়, সাক্ষী প্রমাণ লোপ করার জন্য আমাকেও ধরাধাম থেকে সরাতে চাইবে। লোভ যে মানুষকে কোথায় টেনে নামাতে পারে, ভেবে শিউরে উঠছি। এবার থেকে বাতাসা দ্বীপেও পাহারা বসাবার ব্যবস্থা করতে হরুয়াকে বলতে হবে। ব্যাপারটা যখন জানাজানি হয়ে গেল তখন আর ঝুঁকি নেওয়া উচিত হবে না।”
সবাই নির্বাক হয়ে রইল।
দুধসায়রের এক আঘাটায় খুব ভোরবেলা চোখ মেলে চাইল জগা। মাথাটা টনটন করছে বড্ড। চারদিকে ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে সে পড়ে আছে কেন, তা প্রথমে বুঝতে পারল না। তারপর ধীরে-ধীরে সে উঠে বসল এবং সব ঘটনাই তার মনে পড়ে গেল। সে হঠাৎ টের পেল, তার স্মৃতিশক্তি ঝকঝক করছে এবং পাগলামির চিহ্নমাত্র আর তার মাথায় নেই। ভারী স্বাভাবিক লাগছে তার। তবে মনটা অপরাধবোধে আচ্ছন্ন। সে ধীরে ধীরে উঠল। ভাবল, থানায় গিয়ে নিজের অপরাধ কবুল করে ধরা দেয়।
তা গিয়েছিল জগা। কিন্তু মদন হাজরা তাকে পাত্তাই দিলেন না। বললেন, “যাও, যাও, ওসব ছোটখাটো অপরাধের জন্য গ্রেফতারের দরকার নেই। আসল কালপ্রিট যে ধরা পড়েছে এই ঢের।”
বিকেলে গগনবাবুর বাড়িতে গাঁয়ের মেলা লোক জড়ো হয়েছে। ঘটনা নিয়ে তুমুল উত্তেজিত আলোচনা হচ্ছে। এমন সময়ে রামহরিবাবু শশব্যস্ত এসে ঢুকলেন। গলায় খুব উদ্বেগ। বললেন, “ও গগনবাবু, শুনছি নাকি আমাদের জগাপাগলার পাগলামি সেরে গেছে!”
সবাই সমস্বরে বলে উঠল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, একেবারে সেরে গেছে।”
রামহরিবাবু ডবল উদ্বেগের গলায় বললেন, “তা হলে তো চিন্তার কথা হল মশাই! গাঁয়ে মোটে ওই একটিই পাগল ছিল, সেও যদি ভাল হয়ে যায় তা হলে কী হবে? পাগল ছাড়া গাঁ যে ভারী অলক্ষুনে!”
সবাই হাসতে লাগল।