দুখী বুড়ি
গ্ৰামের সীমান্তে, শুকনো মজা খালের পোলের ভিতর বাস দুখী বুড়ির। তিন কুলে কেউ নেই।স্বামী অনেক আগেই গত হয়েছে। একটাই ছেলে, সেও কলেরায় মারা যায়। বুড়ির তিন কুলে কেউ নেই বলে সবাই দুখী বুড়ি নামে ডাকে।রোজাগার না থাকায় ভিক্ষা করে খায়।
একসময় দূরে ভিক্ষা করতে গিয়ে হারিয়ে যায়। আর বাড়ি ফেরা হয়নি।ভিন রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্ৰামের জনশূন্য বন প্রান্তেই জীবন যাপন। রাত্রিরে শেয়াল, হায়না, সাপ হানা দেয়। বুড়ি অত্যন্ত সাহসে মোকাবিলা করে।
একবার এক হায়না পায়ে ঘা নিয়ে বুড়ির কাছে আসে। বুড়ি সবে শুয়েছে। হঠাৎ কিছু আসার শব্দ পেয়ে ধড়মড়িয়ে উঠে দেখে হায়না। তক্ষুনি জ্বলন্ত কাঠ ছুঁড়ে মারে হায়নার দিকে।
বুড়ি জন্তুর ভয়ে রাতে পোলের মুখে কাঠ জ্বালিয়ে রাখতো।
জলন্ত কাঠ গায়ে লাগা সত্বেও হায়নাটা না যাওয়ায় বুড়ি অবাক হলো। মনে ভাবলো, হায়নারা দল বেঁধে ঘুরে। এ একা কেন! বুড়ি লন্ঠন জ্বালিয়ে এগিয়ে দেখে, পায়ে ঘা নিয়ে হায়নাটা কাত হয়ে পড়ে আছে। বুড়ি সাহস করে পান ছেঁচে রস গরম করে লাগিয়ে দিল।হায়না কিন্তু আক্রমণ করলো না। তিন চারদিন বুড়ির থেকে সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে হায়নাটা বনে চলে গেল।
এরপর থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর হায়নাটা বুড়ির কাছে চলে আসতো। বুড়ি আদর করে পাউরুটি খেতে দিত।
বেশ কিছুদিন পর আরও দশ -বারোটা হায়না আসে। তারা বুড়িকে কোনোরকম আক্রমণ না করে বসে থাকে। আর বুড়ি পাউরুটির টুকরো ছুড়ে দিলে সবাই মিলে খায়।
ক্রমে বুড়ির সাথে তাদের ঘনিষ্ঠতা হয়।বুড়ি তাদের গায়ে হাত দিয়ে আদর করে। প্রত্যেকের আলাদা নাম রাখে। নাম ধরে ডাকলে নির্দিষ্ট হায়না কাছে আসে। সকাল হলেই সব বনে চলে যায়। বুড়িও ভিক্ষা করতে বেরিয়ে পড়ে।
এভাবেই দিন চলছে। বুড়ি যে দোকান থেকে পাউরুটি কেনে সেখানে কিছু নেশাখোর আড্ডা মারতো। তারা বুড়ির বেশি বেশি পাউরুটি কেনা দেখে, ভাবলো বুড়ির অনেক টাকাপয়সা আছে। তারা সবাই বুড়ির বাড়ি লুট করবে ঠিক করলো।
রাতে বুড়ির বাসার কাছে যেতেই হায়নারা তেড়ে এলো।
চোরেরা লাঠি, ইট -পাথর সামনে যা পেলো ছুড়তে লাগলো।
এদিকে বুড়ি জেগে হায়নাদের নাম ধরে ডাকতেই সব হায়না চুপ করে বুড়ির কাছে চলে এলো। চোররা দূর থেকে দেখলো, বুড়ি তাদের গায়ে হাত দিয়ে আদর করছে।
এই অভিজ্ঞতার কথা তারা সবাইকে জানালো।শুনে সবাই অবাক। রাতে গ্ৰামের মানুষ এসে দেখে সত্যিই হায়নারা বুড়িকে পাহাড়া দেয়।
একদিন এক সাংবাদিক খবর পেয়ে কাগজে প্রকাশ করবার জন্য বুড়ির কাছে এলো। রাতে থেকে দেখে হায়না এসে পাউরুটি খাচ্ছে। বুড়ি গায়ে হাত দিয়ে আদর করছে।
ঘটনা দেখে বলে, দারুণ অভিজ্ঞতা হলো। ভালোবাসায় যে হিংস্র বন্য জন্তুরাও বশীভূত হয় তা চাক্ষুষ দেখলাম।
খবরের কাগজে বুড়ি ও হায়নার প্রীতির ছবি বের হলে গ্ৰামের মানুষের কাছে দুখি বুড়ির কদর বেড়ে যায়।