খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে
বনের পাখি ছিল বনে ।
একদা কী করিয়া মিলন হল দোঁহে ,
কী ছিল বিধাতার মনে ।
বনের পাখি বলে , খাঁচার পাখি ভাই ,
বনেতে যাই দোঁহে মিলে ।
খাঁচার পাখি বলে — বনের পাখি , আয়
খাঁচায় থাকি নিরিবিলে । ‘
বনের পাখি বলে — ‘ না ,
আমি শিকলে ধরা নাহি দিব । ‘
খাঁচার পাখি বলে — ‘ হায় ,
আমি কেমনে বনে বাহিরিব! ‘
বনের পাখি গাহে বাহিরে বসি বসি
বনের গান ছিল যত ,
খাঁচার পাখি পড়ে শিখানো বুলি তার —
দোঁহার ভাষা দুইমতো ।
বনের পাখি বলে , খাঁচার পাখি ভাই ,
বনের গান গাও দিখি ।
খাঁচার পাখি বলে , বনের পাখি ভাই ,
খাঁচার গান লহো শিখি ।
বনের পাখি বলে — না ,
আমি শিখানো গান নাহি চাই । ‘
খাঁচার পাখি বলে — ‘ হায় ,
আমি কেমনে বন-গান গাই । ‘
বনের পাখি বলে , ‘ আকাশ ঘননীল ,
কোথাও বাধা নাহি তার । ‘
খাঁচার পাখি বলে , ‘ খাঁচাটি পরিপাটি
কেমন ঢাকা চারি ধার । ‘
বনের পাখি বলে , ‘ আপনা ছাড়ি দাও
মেঘের মাঝে একেবারে । ‘
খাঁচার পাখি বলে , নিরালা সুখকোণে
বাঁধিয়া রাখো আপনারে! ‘
বনের পাখি বলে — ‘ না ,
সেথা কোথায় উড়িবারে পাই! ‘
খাঁচার পাখি বলে — ‘ হায় ,
মেঘে কোথায় বসিবার ঠাঁই! ‘
এমনি দুই পাখি দোঁহারে ভালোবাসে
তবুও কাছে নাহি পায় ।
খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে পরশে মুখে মুখে ,
নীরবে চোখে চোখে চায় ।
দুজনে কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে ,
বুঝাতে নারে আপনায় ।
দুজনে একা একা ঝাপটি মরে পাখা ,
কাতরে কহে , ‘ কাছে আয়! ‘
বনের পাখি বলে — না ,
কবে খাঁচার রুধি দিবে দ্বার ।
খাঁচার পাখি বলে — হায় ,
মোর শকতি নাহি উড়িবার ।