আয় দুঃখ , আয় তুই , তোর তরে পেতেছি আসন , হৃদয়ের প্রতি শিরা টানি টানি উপাড়িয়া বিচ্ছিন্ন শিরার মুখে তৃষিত অধর দিয়া বিন্দু বিন্দু রক্ত তুই করিস শোষণ ; জননীর স্নেহে তোরে করিব পোষণ । হৃদয়ে আয় রে তুই হৃদয়ের ধন । নিভৃতে ঘুমাবি তুই হৃদয়ের নীড়ে ; অতি গুরু তোর ভার -- দু - একটি শিরা তাহে যাবে বুঝি ছিঁড়ে , যাক ছিঁড়ে । জননীর স্নেহে তোরে করিব বহন দুর্বল বুকের ' পরে করিব ধারণ , একেলা বসিয়া ঘরে অবিরল একস্বরে গাব তোর কানে কানে ঘুম পাড়াবার গান । মুদিয়া আসিবে তোর শ্রান্ত দু - নয়ান । প্রাণের ভিতর হতে উঠিয়া নিশ্বাস , শ্রান্ত কপালেতে তোর করিবে বাতাস , তুই নীরবে ঘুমাস । আয় , দুঃখ , আয় তুই , ব্যাকুল এ হিয়া । দুই হাতে মুখ চাপি হৃদয়ের ভূমি - ' পরে পড়্ আছাড়িয়া । সমস্ত হৃদয় ব্যাপি একবার উচ্চস্বরে অনাথ শিশুর মতো ওঠ্ রে কাঁদিয়া প্রাণের মর্মের কাছে একটি যে ভাঙা বাদ্য আছে দুই হাতে তুলে নে রে , সবলে বাজায়ে দে রে নিতান্ত উন্মাদ - সম ঝন্ ঝন্ ঝন্ ঝন্ । ভাঙ্গে তো ভাঙ্গিবে বাদ্য , ছেঁড়ে তো ছিঁড়িবে তন্ত্রী -- নে রে তবে তুলে নে রে , সবলে বাজায়ে দে রে নিতান্ত উন্মাদ - সম ঝন্ ঝন্ ঝন্ ঝন্ । দারুণ আহত হয়ে দারুণ শব্দের ঘায় , যত আছে প্রতিধ্বনি বিষম প্রমাদ গনি একেবারে সমস্বরে কাঁদিয়া উঠিবে যন্ত্রণায় - দুঃখ , তুই আয় তুই আয় । নিতান্ত একেলা এ হৃদয় । আর কিছু নয় , কাছে আয় একবার , তুলে ধর্ মুখ তার , মুখে তার আঁখি দুটি রাখ্ একদৃষ্টে চেয়ে শুধু থাক্ । আর কিছু নয় , নিরালয় এ হৃদয় শুধু এক সহচর চায় । তুই দুঃখ তুই কাছে আয় । কথা না কহিস যদি বসে থাক্ নিরবধি হৃদয়ের পাশে দিনরাতি । যখনি খেলাতে চাস হৃদয়ের কাছে যাস , হৃদয় আমার চায় খেলাবার সাথি । আয় দুঃখ হৃদয়ের ধন , এই হেথা পেতেছি আসন । প্রাণের মর্মের কাছে এখনো যা রক্ত আছে তাই তুই করিস শোষণ ।