দিদিমাসির জিন (Didimasir Jin) : 03
এই সময়টায় কাজল খুব নিশ্চিন্তে চান-টান সেরে তার নাতিসরু সিঁথির ওপর যত্ন করে সিঁদুর পরছিল। বাব্বা। ছেলেমেয়ে এবং তাদের বাবা না থাকলেই সময়টা কত বিশাল, কত ঘনিষ্ঠ কত আদরের হয়ে যায়। শীতের দিন। শীতটা পড়ব না-পড়ব না করেও ভালোই পড়েছে। তবে একটু জলো। কাজলের ছেলেবেলার শীতটা এতো জলো হত না। ঠিক ভোর চারটেয় জ্যাঠামশাইয়ের হুড়মুড় করে বালতি বালতি জল মাথায় ঢেলে চান করার শব্দ আসত। মগ-টগ নয়, বালতি। এবং টাটকা জল নয় চৌবাচ্চার বাসি জল। শব্দটা শুনে লেপের ভেতর মায়ের কাছে আরও ঘনিয়ে যেত কাজল। ঘুমচোখেই মা তাকে আচ্ছা করে ঠেসে নিতেন নিজের পেটের সঙ্গে। পাঁচ ছটি ছেলেমেয়েদের যিনি জন্ম দিয়েছেন তাঁর পেট তো একটু থলথলে হবেই। থলথলে সেই মাতৃ-পেট কাজলদের কাছে স্বয়ং ধরিত্রীর সমান ছিল। সে আর তার পরের ভাই বিলু মার পেটটাকে নিয়ে খেলা করত, এই দ্যাখ এইখানটায় আফ্রিকা— ভীষণ জঙ্গল, কঙ্গো নদীর অববাহিকায় ডেভিড লিভিংস্টোন হারিয়ে গেছেন। এইখানটা হচ্ছে উত্তমাশা অন্তরীপ। কত যে নাবিক প্রাণ হারিয়েছে … সেটা হল আসলে মায়ের নাভি। নাভিতে সুড়সুড়ি লাগলেই মা ‘এই কী হচ্ছে, কী করছিস?’ বলে পাশ ফিরে শুতো। তখন বিলু বলত—যাঃ গ্লোবটা উল্টে গেল। কাজল কিন্তু দমত না। বলত—ভালোই তো আমাদের এখনও অস্ট্রেলিয়া দেখা হয়নি। অবহেলিত মহাদেশ। মায়ের ডান পাশটাতে অস্ট্রেলিয়া এবং সেখানে এমু পাখিরা চরছে ওরা দেখতে পেত,— ‘কিউয়ি, কিউয়ি’ বিলু বিস্ফারিত চোখে চেয়ে চেয়ে হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে। বুমেরাং দিয়ে কিউয়িগুলোকে মারছে অস্ট্রেলিয়ার মাওরি উপজাতি, কিউয়ির ঝোল খেতে ওরা খুব ভালোবাসে। কাজল ফিসফিস করে বলে অস্ট্রিচ-অস্ট্রিচ। ঠাস করে এক চড় পড়ে কাজলের গালে। —তোরা কি আমাকে ঘুমোতে দিবি না? উঃ সারাদিন খেটেখুটে … বললুম একটু হাত বুলিয়ে দে—তা না…’ চোখ বুজিয়েও মার চড়টা যে কীভাবে অব্যর্থ— কাজলের বাঁ গালে পড়ত! বিলু অত কিউয়ি কিউয়ি করে চিৎকার করল তাতে ঘুম ভাঙল না, অথচ কাজল ফিসফিস করতেই … বেশ!
বিলুর রিফ্লেক্স খুব ভালো। সে ততক্ষণে সাত হাত সরে গেছে, এবং গ্লোব পর্যবেক্ষণের সাময়িক অসুবিধেটাকে উড়িয়ে দিয়ে কাজলের সঙ্গে তর্ক জুড়েছে। অস্ট্রিচ অস্ট্রেলিয়ার নয়, অস্ট্রিচ আফ্রিকার। অস্ট্রেলিয়ায় যা পাওয়া যায়, তার নাম হল রিয়া। এ তর্কের মীমাংসা তক্ষুনি হওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং সেটা মুলতুবি রেখে দুজনে আলুপোড়া খেতে যায়। এটা কাজলের এলাকা। বিলুর কাজ শুধু লুব্ধ চোখে চেয়ে থাকা। ঝুড়ি খুঁজে কয়েকটি সুগোল খুব-বড়-নয় আবার খুব ছোটও নয় ননিতাল আলু বার করতে হবে। চিমটে দিয়ে নিভে যাওয়া ঝিম ধরা উনুনের হৃদয় খুঁজে বেদনার মতো একটু ধিকি ধিকি আগুন আবিষ্কার করতে হবে, তারপর আলুগুলি তার মধ্যে নিক্ষেপ করতে হবে এবং চিমটে দিয়ে তার ওপর সাদাটে হয়ে যাওয়া পোড়া কয়লার আবরণ টেনে দিতে হবে।
যতক্ষণ আলুপোড়া হতে থাকে বিলুর ভীষণ টেনশন হতে থাকে। সে থেকে থেকেই বলবে— এই কাজলা, আলুগুলো যে পুড়ে গেল! এই টেনশন থেকে বিলেটাকে মুক্তি দিতেই কাজলকে ছাদের চিলেকুঠুরিতে উঠতে হয়, সেখানে সারি সারি আচারের বোয়াম। নলিদির অত সাধের ছড়া-তেঁতুল, বা কুলের আচার সে তার অপবিত্র শরীরের অপবিত্র ডান হাত ঢুকিয়ে টেনে বার করে এবং বিলুকে একবার মাত্র ওয়ার্নিং দিয়েই ভাগ দেয়— এই, কাজলা বললে দোব না কিন্তু।
বিলু তখনকার মতো নিঃশেষে এ নির্দেশ মেনে নেয়। কিন্তু এবংবিধ ঘটনার পরবর্তী সংস্করণে আবার কাজলা— আবার তর্জন-গর্জন এবং আবার আচার।
কয়েক ফোঁটা সিঁদুর কাজলের নাকের ডগায় ঝরে পড়ল। চিরুনির ডগা কিংবা সিঁদুর পরার কাঠি দিয়ে পরতে গেলে একটু আধটু ও রকম ঝরে পড়বেই আর তাই নিয়েই মেয়েরা বানিয়েছে তাদের বিশ্বাস। নাকের ডগায় সিঁদুর পড়লেই নাকি স্বামীসোহাগী হয়। বেচারিরা! নিজেকে কীভাবে ভোলানো! সিঁদুরের গুঁড়োগুলো নাকের ডগাটাকেই সব চেয়ে সম-উচ্চতায় পায়! কে বোঝাবে!
শীতের দিনে চান করতে কাজল বারোটা পার করে দেয়। তখন ছাতের ট্যাংকের জল এমনিতেই গরম হয়ে যায়। সেই গরম জলে প্রাণ ভরে চান করে, হলুদের ওপর নীল খড়কে ডুরে পরে হাতে পায়ে মুখে ক্রিম ঘষে, খাবারগুলো গ্যাস জ্বেলে প্রেশার কুকারের মধ্যে গরম করতে দেওয়া। তারপর … কাজের কী আর শেষ আছে? কাচা কাপড় মেলো, ছাড়া কাপড় তোলো, ছাড়া পাঞ্জাবির বা শার্টের পকেট থেকে একটা কুড়ি টাকার কি পঞ্চাশ টাকার নোট আরও কিছু খুচরো পেয়ে যাও, মহানন্দে তাদের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে ঢোকাও। তারপর শপাং শপাং করে ঝাঁটার বাড়ি দিয়ে বিছানাগুলো ঝেড়ে সব পাটসাট করে প্রেশার কুকারটা নিয়ে এসে টেবিলের মধ্যিখানে বসাও। গরম ভাত, তাতে কাসুন্দি, মৌরলা মাছ ভাজা, বাটি চচ্চড়ি, পালং শাকের ঘণ্ট, আর কী চাই? পোনা মাছের ঝালটাকে কাজল বিরস বদনে তুলে রেখে দেয়। কী করেই যে তার ছেলেমেয়ে দিনের পর দিন এই ডাবডেবে মাছগুলো খায়! আর কী করেই যে তার বর এগুলো এভরি ডে আনে! এভরি ডে! অবশ্য যার নাম গঙ্গাপ্রসাদ তার থেকে এর চেয়ে বেশি আশা করা ঠিক নয়। কিন্তু কাজলের অসহ্য লাগে। তার বাবাও প্রোফেসর ছিলেন। কিন্তু মাছ খেতে জানতেন। খয়রা, দিশি ট্যাংরা, পুঁটি, কুঁজো ভেটকি, চিংড়ি মাছ তো তাদের বাড়িতে হবেই। চিংড়ি মাছ ছাড়া আবার পেঁয়াজকলি খাওয়া যায় তা কাজল শ্বশুরবাড়ি এসে শুনল। মোচা-চিংড়ি নামক একরকম চিংড়ি আছে। আরেক চিংড়ির নাম কড়ানে চিংড়ি, ঘেসো চিংড়ি, কাদা চিংড়ি, এসবের নাম শুনে এরা ভুরু কুঁচকে চেয়ে থাকে।
তার বর বলে থাকে—চিংড়ি কিন্তু মাছ নয়, কাজল। চিংড়ি হল একরকম জলজ পোকা। ঠিক যেমন আরশুলা স্থলজ পোকা! … ওয়াক ওয়াক … আরশুলায় কাজলের ভয়ানক ঘেন্না। অনীক যখন তার হাওয়াই চটি তুলে হঠাৎ চটাস শব্দ করে আরশুলা মারে, তখন কাজল সে দৃশ্যে থাকে না, তবে পরক্ষণেই দৃশ্যমান হয়ে বলে— যা যা চটিটাকে ফেলে দিয়ে আয়। যা!
—কেন? হতভম্ব অনীক জিজ্ঞেস করে।
—কী করলি ওটা দিয়ে? এক্ষুনি!
—ওহ্, জাস্ট একটা স্ট্রে আরশুলা মেরেছি বলে চটিটাকেই ফেলে দিতে হবে?
—তো কী করবি? কী করতে চাস?
—জাস্ট পেছনটা স্ক্রেপ করে নিয়ে, সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলব …
—কী দিয়ে স্ক্রেপ করবি?
—কী দিয়ে? ধরো তোমার চুলের কাঁটা দিয়ে …
—খবর্দার অনীক—কাজল ভীষণ গলায় বলে
—তবে মাখন লাগানোর ছুরিটা দিয়ে … আইডিয়্যাল হবে!
—শুনছো! দেখছো?—কাঁদো কাঁদো গলায় এতক্ষণে সে স্বামীর কোর্টে আপিল করে।
গঙ্গাপ্রসাদ একটা পেপার-কাটার তুলে ধরে বলেন— এতে হবে।
—হবে না মানে? চমৎকার হবে। আইডিয়্যাল হবে, দি টুল ফর দ্য জব।
বিজয়গর্বে পেতলের পেপার কাটারটা নিয়ে অনীক চলে যায়।
পরে অবশ্য গঙ্গাপ্রসাদ সেটা বহুদিন খুঁজে পাননি। এবং অনীক জিনিসটা সাবান দিয়ে ধুয়ে যথাস্থানে রেখে দিয়েছিল এ কথা তামা- তুলসী-গঙ্গাজল হাতে নিয়ে শপথ করে কবুল করা সত্ত্বেও দোষটা তারই ওপরে পড়ে। গঙ্গাপ্রসাদ বিরক্ত মুখে বলেন— আমি কি বলেছি তুমি ওটা চুরি করেছ, পেতলটা বিক্রি করে সিগ্রেট খাবে বলে? ইটস নট দ্যাট। মিসপ্লেসড অ্যাজ ইউসুয়াল, বাই ইউ। পেপার-কাটার কি আরেকটা পাওয়া যায় না! যায়? তবে ওটা বাবা আমায় দিয়েছিলেন। বাবাকে দিয়েছিলেন, অনীক বলে তাঁর বাবা, তাঁকে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা তাঁকে…এ এক ধরনের রেকারিং-এর অঙ্ক, আমি জানি বাবা। তবে কথাটা হল তোমার ওই এয়ারলুম অনীক মিত্তির মিসপ্লেস করেনি।
প্রায় সমস্ত তর্কাতর্কিটাই কাজল আড়াল থেকে আলনা গোছাতে গোছাতে শোনে। এবং বিকেলবেলা ছায়া বাসন মাজতে এলে চুপিচুপি বলে— হ্যাঁ রে কাগজে মুড়ে তোকে সেই একটা পেতলের জিনিস দিয়েছিলুম না, কী করেছিস রে?
—তেঁতুল দিয়ে ছাই দিয়ে মেজে একেবারে সোনার মতো করে ফেলেছি মা। তারপর— তারপর আমাকে দিয়ে যাস, বাবার শখের জিনিস আমি বুঝতে পারিনি। তোমাকে অন্য একটা কিছু দিয়ে দেবো!
জিনিসটা ছায়া এনে দেয় ঠিকই। তবে তার পেছনে দরজা বন্ধ হয়ে গেলে বলে— ‘নিজেই কালীঘাটের কুকুর হবে, আমার আর কী?’
গঙ্গাপ্রসাদের খুঁজে না পাওয়ার অনেক জিনিস আছে। সেই জন্যে আজকাল কোন কিছু হারালে তিনি যথেষ্ট জোরের সঙ্গে তাঁর নালিশ পেশ করতে পারেন। না। পেতলের পেপার কাটারটা যখন পেয়ে যান তিনি তাই টুঁ শব্দ করেন না। জানা কথাই কিছু সরু কিছু মোটা গলার হি হি হো হো উঠবে। আমি তো আগেই বুঝেছিলুম, বলেছিলুম … কিংবা বাবা তুমি না, একটা
—কী? গাধা? গঙ্গাপ্রসাদ চমশার ফাঁক দিয়ে চেয়ে বলবেন।
—এ মা। আমি তাই বলেছি?
—বলোনি। বলতে যাচ্ছিলে। দুটোর মধ্যে তফাত আর কী!
—আমি আসলে বলতে যাচ্ছিলুম তুমি একটা ইমপসিবল, ইনকরিজিবল
—একই হল। একটা বাংলা, আরেকটা ইংরেজি। …
বাবা তাদের এভাবে কোণঠাসা করলে ছেলেমেয়ে রণে ভঙ্গ দিয়ে থাকে। কিন্তু হারটা গঙ্গপ্রসাদেরই হয়।
পেপার-কাটারটা যে হঠাৎ তার কলঙ্ক বিমোচন করে স্বর্ণসম প্রতিভাত হচ্ছে, এই পরিবর্তনটা থেকেও তিনি কিছু বুঝতে পারেন না।
গঙ্গাপ্রসাদ যে সব জিনিস হারান, তার তালিকা দীর্ঘ। বইপত্র তো আছেই। আমার ডায়েরিটা? আমার ডায়েরি-ই-ই।
কাজল ছুটে এসে টেবিলের ওপর থেকে ডায়েরি তুলে চোখের সামনে নাচায় —এটা কী?
—আঃ, ওটা না। ওটা না। সবুজ রঙের রেক্সিনের মলাট।
পুরো ডিটেল বলতে পেরে গঙ্গাপ্রসাদ খুব গর্বিত। কিন্তু তাঁর গর্বে জল ঢেলে কাজল বলে—ও সেই নীলটা? যেটা বিকাশবাবু দিয়েছিলেন।
—নীল নয়, সবুজ, সবুজ।
—ছেলেরা সব সময়েই নীলকে সবুজ বলে, রঙ কানা। ওই নাও তোমার —‘সবুজ রঙের ডায়েরি, বইয়ের থাকে গুঁজে রেখেছিলে।
—অল রাইট। তো এটা কী রঙ?
নীল না সবুজ?
—ন্যাচারালি সবুজ।
—উঃ তুমি চোখের মাথা তো খেয়েইছো, বুদ্ধির মাথাও কি খেয়েছো?
বুদ্ধির প্রতি নিত্যদিন কোনও না কোনও কার্যকারণে এই কটাক্ষ গঙ্গাপ্রসাদের আর সহ্য হয় না। তিনি সে তল্লাট ত্যাগ করেন।
ডায়েরি ছাড়াও গঙ্গাপ্রসাদ হারান চশমা, যা তাঁর পাঞ্জাবি বা প্যান্টের পাশ-পকেট থেকে পাওয়া যায়, হারিয়ে থাকেন পেন যা তাঁর শার্টে গোঁজা থাকে, আর হারান টাকা, যা অবশ্যই তাঁর স্ত্রী কাজলরেখা পেয়ে যায় এবং নিজস্ব গোপন ব্যাঙ্কে জমা করে। এই একটিমাত্র হারানো জিনিস গঙ্গাপ্রসাদ কখনওই ফেরত পান না। ফলে কাজলরেখার ব্যাঙ্ক ব্যালান্স ক্রমশই স্ফীত হতে থাকে। এবং সে অদ্ভুত অদ্ভুত বদান্যতা দেখাতে থাকে। যেমন ননদের মেয়ের বিয়েতে দু ভরির সোনার হার দেওয়া হবে, গলদঘর্ম হয়ে ঠিক হয়।
গঙ্গাপ্রসাদ অনেক কষ্ট করে মানে যুক্তি-তর্ক খরচ করে বোঝাতে চান— সোনা দিতে নেই। সোনা দেওয়া ঠিক নয়।
—কেন? কেন?
—সোনা আটকে রাখা মানে দেশের টাকা আটকে রাখা। আটকে রাখলে টাকায় ছাতা ধরে।
—আর ছত্তর খুলে দিলে মিনিস্টারদের পেটে যায়!
—পেটে নয়, পকেটে— তীর্ণা সংশোধন করে।
কাজলরেখা উত্তেজিত হয়ে বলে— সোনা মেয়েদের একমাত্র স্ত্রীধন, একমাত্র সম্বল— সোনা কেড়ে নেওয়া মানে মেয়েদের একেবারে অসহায়, নিঃসহায়, নিঃসম্বল করে ছেড়ে দেওয়া— যে কাজটা ওই ভূতপূর্ব মোরারজী করেন। মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তদের সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দিয়ে বালাটা চুড়িটা সব বার করে নিলেন, ওঁকে আমি কোনওদিন ক্ষমা করব না। কোনও মেয়েই করবে না। কই, তিরুপতির সোনা বার করতে পেরেছিল? বিজনেসম্যানদের?
—আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে, মা, অন্য কোনও দেশে তো মেয়েরা সোনা পরে না! মোরারজীর ওপর তোমার এত রাগ কেন?
—রাগ কেন? গোল্ড কন্ট্রোল করে তো আমার দফা সেরে দিলে। পিসিমা বেচারি নিজের গয়না মার গয়না সব বার করে আমাকে দিয়ে দিলেন। একটা গিনি সোনা উপহার পেলুম না। সব ওই চোদ্দ ক্যারাট। ছিঃ।
—টাকা সার্কুলেট করতে হয় মা, না হলে বাড়ে না।
—সোনাও সার্কুলেট করে আজ্ঞে, যেমন গিনি সোনার কিছু ছুটকো ছাটকা উপহার পেলে আজ আর রানীর বিয়ের উপহারের জন্যে ভাবতে হত না। আর অন্য দেশের লোক সোনা পরে না? চিনেরা সোনার দাঁত পরে, বুঝলে? সলিড সোনা। আর অন্য দেশের সুন্দরীরা যে সব হিরে-টিরে পরেন, তার কাছে আমাদের এই সামান্য ফাঁস হার, মটরমালা নস্যি।
গঙ্গাপ্রসাদ এই সময়ে ইন নিতে চেষ্টা করেন। —কিন্তু কাজল, সোনা দেওয়া মানে মেয়েটাকে বিপদের মধ্যে ফেলা।
—কেন? তোমার ওই দু ভরি দেখে শ্বশুরবাড়ির লোকের লোভ বেড়ে যাবে? বধূহত্যা?
—ছি ছি! রীণার শ্বশুরবাড়ি অতি ভদ্রলোক, সে কথা বলছি না, চোর-ডাকাত ছিঁচকে চোরের কথা বলছি।
—ও, দিদি নিজে এই বাজারে কুড়ি ভরি সোনা দিচ্ছে, সবই অবশ্য ওল্ড স্টক, তা তাতে চোর-ডাকাতের লোভ হবে না, হবে তোমার ওই দু ভরিতে?
বারবার হতচ্ছেদ্দার মতো করে দু ভরি উচ্চারিত হওয়ায় গঙ্গাপ্রসাদ ভারি ক্ষুন্ন হন, বলেন— আমি সামান্য মাস্টার, দু ভরি দেবার ক্ষমতাই বা আমার কই? আর দিতে পারছি না, অথচ লোক দেখানোর জন্যে গলায় গামছা দিয়ে …
তাঁকে কথা শেষ করার সুযোগ কাজল কোনদিনই দেয় না, এই সময়ে সে তীব্র সুরে বলে— গামছার কথা তুমি উচ্চারণ করবে না। বহু কষ্টে আমি তোমায়। গামছা ছাড়িয়েছি।
—ভেতরে কিছু পরা ছিল তো?— অনীক প্রশ্ন করে,
—ভেতরে কিছু পরা, মানে?
—মানে যখন গামছাটা ছাড়ালে, লোকে সাধারণত বাথরুমেই গামছাটা পরে …
—জন্মদিনের সাজের ওপর …
—উঃ— কাজল ছেলের পিঠে গুম গুম করে কিল মারতে থাকে।
—সার্ভিক্যাল স্পন্ডিলাইটিস হলে তোমারই কষ্ট— অনীক নির্বিকারভাবে বলে, তার মায়ের কিল থেমে যায়। তবে কাজলের স্মৃতিশক্তি প্রখর, কোনও পয়েন্টই সে ভোলে না। এবার সে একটা ভিন্ন পয়েন্ট ধরে খপ করে।
—আর লোক-দেখানো বললে যে? কোন লোক-দেখানো গো? একমাত্র মামার বাড়ি থেকে একটা হার দেওয়া মানে লোক-দেখানো? ঠিক আছে ওইটুকু লোক আমি দেখাবো। গরিবি দেখাতে পারব না।
—হাজার দশেক তো অন্তত লাগবে।
—ঠিক আছে আমি হাফ দেবো। কাজলরেখার এই ঘোষণায় শুধু গঙ্গাপ্রসাদ কেন, তার ছেলেমেয়েও স্তম্ভিত, বিমূঢ় হয়ে যায়।
—তুমি! তুমি কোথা থেকে দেবে? তুমি কি রোজগার করো?
—কেন? কেন রোজগার করি না? কেন করব না? আমি যে সংসারের গুচ্ছের কাজ করি সে সবের জন্যে আমার অ্যালাউয়েন্স পাওয়া উচিত নয়? এই তো সেদিন টিভিতে বলছিল …
তীর্ণা বলল— অবশ্যই পাওয়া উচিত মা। একশ বার। গৃহবধুদের সম্মান-দক্ষিণার যে প্রশ্নটা তুমি তুললে—সেটা এখন মোস্ট কারেন্ট ফেমিনিস্ট ইস্যু। কিন্তু কথাটা হচ্ছে, তুমি তো সেটা পাও না, অথচ দশ হাজারের হাফ পাঁচ হাজার … তুমি এক কথায় …
—আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ-ট্রদীপ কিছু পেয়েছো না কি? … অনীকের বিস্মিত প্রশ্ন।
আশ্চর্য প্রদীপ পেলে মাত্র পাঁচ হাজার চাইবো? আমি কি পাগল না …
—ঠিক আছে বাকিটা নাই বললে— তীর্ণা বলল, কিন্তু মা …
—উত্তরটা খুব সোজা, সংসার খরচ থেকে বহু আয়াসে বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে সম্মান-দক্ষিণাহীন গৃহবধূরাও কিছু জমা করে থাকেন সময়-অসময়ের জন্যে।
—কী অসম্ভব তোমার সঞ্চয়-প্রতিভা মা। তুমি যে ব্যাঙ্ককে অনায়াসে হার মানিয়ে দিলে!
—ব্যাঙ্ককেও—গঙ্গাপ্রসাদ কী রকম বোকার মতন বলেন— সেখানেও সিম্পল হোক কম্পাউন্ড হোক, ইন্টারেস্টের একটা অঙ্ক আছে! বলতে বলতে তাঁর মাথার মধ্যে ছোট বড় নানা নোট ঘুরতে থাকে। পাশ পকেটে সেই পঞ্চাশ টাকার নোট দুটো! থাকের শেষের পিন গাঁথা ছিল.. কোথায় যে গেল, কমলা রঙের বিশ টাকার নোট আজকাল রেয়ার হয়ে এসেছে। কিন্তু কিছুকাল আগে ছিল না। একশো ভাঙিয়ে বিশ তিনি প্রায়ই ঘরে আনতেন। এইসব বোধহয় হারিয়ে-যাওয়া নোটেরা তাঁর মাথার মধ্যে একটা খুব শক্ত প্রব্যাবিলিটির অঙ্ক সাজাতে থাকে। কিন্তু বাংলার মাস্টারমশাই তিনি, অত শক্ত অঙ্কের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবেন কেন? এর চেয়ে এম.ফিলের পাঁচখানা ডিসার্টেশন লিখিয়ে ফেলা অনেক সোজা ছিল। তিনি ক্রমশই বোকা বনতে বনতে একটা ভীষণ আনপার্লামেন্টারি উক্তি করে ফেলেন।
—কী করে বাঁচালে কাজল! আমরা তো দিব্যি খাচ্ছি-দাচ্ছি। তুমিও যে খাচ্ছো না তা কই চেহারা দেখে … শাড়িটাড়িও প্রায়ই কিনছ …
কাজলরেখা এবার অভিমানিনীর মতো ফুঁসে ওঠে— তুমি আমার খাওয়ার খোঁটা দিলে? পরার খোঁটা দিলে? জানো একটা রাতদিনের কাজের লোকেরও মাস গেলে শ তিনেক টাকা পাওনা হচ্ছে আজকাল, চারটে ছটা শাড়ি? খাওয়া ছাড়া এবং সে খাওয়া আমার চার গুণ অন্তত। জানো, কুচো মাছের বাটি-চচ্চড়ি দিয়ে লাঞ্চ সারি … জানো রাত্তিরে তোমাদের মাছ দিয়ে নিজে রুটি গুড় … ক্রমশই কাজলরেখার সুর সান্ত্বনাহীন কান্নার দিকে যেতে থাকে।
মাঝখান থেকে তীর্ণা বলতে থাকে— খাওয়ার খোঁটা … পরার খোঁটা … খাওয়ার খোঁটা .. পরার খোঁটা .. এসব তো ঠাকুমাদের আমলের কথা, মায়ের মুখে। কেমন আঁশটে মানে ফিশি লাগছে …
রেগেমেগে কাজলরেখা স্থানত্যাগ করে।
তীর্ণা চেঁচিয়ে বলে— পেটে কী শত্রুরই না ধরেছি-টা বললে না মা!
—মনে মনে বলছি— কাজলের অপস্রিয়মাণ মূর্তির দিক থেকে ভেসে আসে।
যাক গে মৌরলা মাছের বাটি-চচ্চড়ি দিয়ে দুপুরের লাঞ্চ তৃপ্তি সহকারে শেষ করে কাজল কিছুক্ষণ মৌরি চিবোতে চিবোতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের পাড়ার কিছু গৃহবধূ এমন কি কর্মরতা মহিলাদের মধ্যেও কিছুদিন হল খুব পানের ফ্যাশন হয়েছে। তরল নয় সলিড। অনেকেই বেশ ভালো জর্দা খেতে শিখে গেছে। কাছে এলেই নানা কিসিমের জর্দার ঠাকুমা-ঠাকুমা কিংবা উত্তর ভারত-উত্তর ভারত গন্ধ ছাড়তে থাকে। এই ধরনের পান-বিলাসী বন্ধুরা পান চিবোতে চিবোতে তাদের বাড়িতে এলেই কাজল তাঁদের চৌকি চেয়ার মোড়া ইত্যাদিতে সাদরে বসিয়ে, নিজে খুব ঘনিষ্ঠভাবে বসে হাসি-হাসি মুখে চোখ বুজিয়ে থাকে।
—ও কি রে কাজল? কথা বল! —চোখ বুজিয়ে আছিস কেন? আমাদের কি বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে!
দু-একবার চোখের পাতা পটপট করে তারপর কাজল চোখ খুলে ফেলে, মন। ভোলানো একটা হাসি দিয়ে বলে— তোমাদের কী রকম দেখাচ্ছে, এখনও দেখিইনি! আসলে একটু বেনারস ঘুরে এলুম। সেই কবে গিয়েছিলুম! দশাশ্বমেধের ঘাট! মণিকর্ণিকার গলি, লকসার রোড, বাঙালিটোলা, পানিফলের জিলিপি, মালাই …
—আমাদের দেখেই অমনি তোর স্মৃতিচারণের সাধ গেল! এই শিবানী, লিলি, চল তো চল।
—মৎ যা মৎ যা শিবানী— কাজল ডুকরে ওঠে। তোরা আসতেই ভুরভুর করে বেনারসের গলির গন্ধ পেলুম— মাইনাস ষাঁড়ের নাদ। তাই একটু …
—ওঃ জর্দার কথা বলছিস? এ রসে তো তুই বঞ্চিত। কিছুতেই কিছু করতে পারলুম না।
—আর করতে পেরে কাজ নেই ভাই। আমি মৌরিতেই মজে আছি। দাঁতগুলোকে আর মজাতে চাই না।
দু পাটি ঝকঝকে দাঁত কাজলের একটা বড় ঐশ্বর্য। কাজলরেখা এ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। দাঁত সম্পর্কে পত্র-পত্রিকার যে সব টিপস বেরোয় সেগুলো সে খুঁটিয়ে পড়ে। যথা সম্ভব পালন করবার চেষ্টাও করে। অম্বল দাঁতের যম। সুতরাং সে অম্লরোগ থেকে বাঙালির পক্ষে যতটা সম্ভব দূরে থাকে। কোনদিন খাওয়া-দাওয়া করে অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা মনে হলেই অ্যান্টাসিড খেয়ে নেয়। দাঁত সুন্দর হলেই হাসি সুন্দর, কথা সুন্দর। সুতরাং কাজল তার দাঁতকে পারিবারিক সামাজিক সমস্যায় বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগাতে পারে।
যেমন এই বড় ননদের মেয়ে রীণার বিয়েতেই। কাজল বিয়ে বাড়িতে সকালে যেতে পছন্দ করে না। বড্ড খাটতে হয়। বড্ড অব্যবস্থা হয়। সব যেন ছত্রাকার। তার ওপর গিন্নিবান্নি জাতীয় মানুষদের যেন খাওয়া-দাওয়া বা বিশ্রামের প্রয়োজন নেই। একাধিক বিয়ে-বাড়ির ঘরযোগে শুধু ছ্যাঁচড়া আর মুগের ডাল দিয়ে সাড়ে চারটের সময়ে ভাত খেতে বাধ্য হয়েছে। প্রত্যেকবারই তাতে তার পেটে শূলবেদনা হয়েছিল। সেই থেকে কাজল বিয়ে বাড়িতে সকালে যায় না। বেলা দুটো নাগাদ চারটি ঝোলভাত খেয়ে, এক টিপ ঘুমিয়ে নিয়ে, ঢাকাই জামদানিটি পরে, পিঠে রুপোর চাবিগাছটি ফেলে, কপালে বড় একটা কুমকুমের টিপ পরে, গলায় পাটিহার, কানে কানপাশা, ঠোঁটে লিপস্টিক, হাতে একগোছা করে চুড়ি পরে যখন গিয়ে উপস্থিত হয়, তখন হয়তো কেউ বলল— বা্বাঃ রাত্তিরের সাজটা যে এখনই দিয়েছ গো!
কাজল ঝকঝকে হাসে।
—শেষ পর্যন্ত এলি? আসতে পারলি?
—কী করব বলো বড়দি! তোমার ভাইটিকে তো জানো। আজ তাঁর দেরিতে ক্লাস। এদিকে কী এক তাড়া কমপিটিটিভ পরীক্ষার খাতা নিয়ে এসেছে, দেখতে দেখতে তার ঝোল ডাল জ্ঞান থাকছে না। বড়া ভাজা ভেবে, গোটা মাছটাকে মুখে পুরে দিল। চিন্তা করো তার অবস্থাখানা, বিষম খেয়ে, কাঁটা লেগে, নাকের জলে, চোখের জলে হয়ে …
—কাঁটা বেরিয়েছে তো?
—বেরোবে না মানে?— কাজল ঝকঝকে হাসে— তারপরে তোমাদের এদিকে কী করতে হবে বলো।
—এদিকের কাজ কি পড়ে আছে না কি? বরণ ডালা সাজানো, গায়ে হলুদ, তত্ত্ব গোছানো, স-ব শেষ। বরং খেতে বসে যা।
ননদের এই ঠেস গায়েই মাখে না কাজল।
—খাওয়ার তদারকি করতে হবে? তাই বলো!
একবার ছাদ থেকে ঘুরে এলো সে। বিদঘুটে গরম। তার ওপর অভয়বাবু আছেন। অভয়বাবু নামে রীণাদের এই প্রতিবেশী একাই দুশো। অ্যাটলাসের মতন সমস্ত যজ্ঞি বাড়িটাকে মাথার করে রেখেছেন। কাজেই ফার্স্ট ব্যাচকে তার হাসি এবং কিছু সরস কথা উপহার দিয়ে কাজল নিচে নেমে আসে। কনের কাছে। এই স্থানটিই সবচেয়ে নিরাপদ। ‘তুমি আমাকে সাজাবে তো মামী?’ নিশ্চয়— কাজল সান্ত্বনা দেয় এবং সাজবার জন্যে কনের সঙ্গে কনে-সাজানে মামীরও যে একটু শীতল বিশ্রামের প্রয়োজন সেটা যে-সব মহিলা তাকে গোলমেলে কাজে শামিল করতে চেষ্টা করেন, তাঁদের বুঝিয়ে দেয়।
এবার চারটের সময়ে খেতে দিল তো বয়ে গেল। সে ভাত ছ্যাঁচড়া ডাল ঠেলে সরিয়ে রাখে, মুড়িঘণ্ট চাখে, মাছ ধুয়ে খেয়ে নেয়, গোটা চারেক সন্দেশ রসগোল্লা উদরে চালান করে সঙ্গে গায়ে হলুদের তত্ত্বের বোম্বাই সিঙাড়া এবং বালিশের মতো চিত্রকূটের আধখানা। বিকেলের টিফিন তো? একরকম টিফিডিনার হয়ে গেল। কারণ, রাতে অত অতিথি-আপ্যায়নের হাসি হাসবার পর এবং নানাবিধ খাবারের গন্ধ সহ্য করবার পর আবার প্রবৃত্তি থাকবে কি না বলা শক্ত। দুটো অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট তো নিশ্চয় খেতে হবে কিন্তু তারপর নিশ্চিন্ত। একরকম দাঁতের কল্যাণেই ননদের মেয়ের বিয়ের নান্দনিক দিকটা সে-ই নাকি উদ্ধার করেছে এবংবিধ প্রশংসা তার প্রাপ্য হয়।
মেয়েরাই মেয়েদের ভালো বোঝে। বিশেষ করে আজকালকার মেয়েরা মায়েদের। তীর্ণা বাড়ি এসে মুচকি হেসে বলে— একটার সময়ে কলেজে গেছি, তখনও তুমি পৃথু আর রুষাকে নিয়ে বিছানায় মগ্ন। কখনই বা গেলে, আর কখনই বা বড়পিসিদের উদ্ধার করলে? কাজের মধ্যে তো দেখলুম রীণাদির বন্ধুদের ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দিয়ে সাজালে, আর দারুণ একখানা পাটোলা পরে কুটুমবাড়ির লোকদের সঙ্গে গল্প করলে।
এসব সমালোচনাকে পাত্তা দেয় না কাজল। বলে কনসালট্যান্ট ডাক্তার যেমন আছে, আর্টিস্টও তেমন আছে। বুঝলি তীর্ণা। আর কুটুমবাড়ির লোকেরা ওই এক রাত্তিরের নবাব। তাদের মিষ্টি কথা দিয়ে খুশি করা একটা পুণ্যকর্ম, বুঝলি?
—কেন? এক রাত্তিরের কেন?— অনীকও যোগ দেয়।
—বাঃ এর মাস দু-তিনের মধ্যেই তো মেয়ের কল্যাণে জানা যাবে কে কতটা হাড়-হাভাতে পাজি। তখন দেঁতো হাসি ছাড়া ওদের আর কী জুটবে রে?