Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » দাসবংশ ধ্বংস (২০১১) || Samaresh Majumdar » Page 4

দাসবংশ ধ্বংস (২০১১) || Samaresh Majumdar

ঠিক পঁয়ত্রিশ মিনিট পর দুটো গাড়ি রওনা হল। প্রথমটায় অরূপ দত্ত, অর্জুন এবং হরিরাম। দ্বিতীয় গাড়িটি সুমো, তাতে সত্যেনবাবু, গুণধর, জগন্নাথবাবু এবং চারজন সেপাই। তাদের হাতে বন্দুক। অর্জুন জগন্নাথবাবুকে পরামর্শ দিয়েছিল, কোথায় যাওয়া হচ্ছে তা যেন সঙ্গীদের না জানান।

জগন্নাথ বললেন, পাগল নাকি। স্যার, আমার সঙ্গে তো একটা রিভলভারও নেই, কিন্তু অ্যাকশনে না নামলে তো প্রমোশন হবে না!

খালি হাতেই বিক্রম দেখাবেন। তা হলে মি. দত্ত নিশ্চয়ই তার রিপোর্টে ভাল লিখবেন।

দুটো গাড়ি হাইওয়ে দিয়ে ছুটছিল। ক্রমশ সন্ধের অন্ধকার নেমে এল চরাচরে। অরূপ দত্ত হরিরামকে বললেন, আপনাদের গ্রাম পাঁচ কিলোমিটার দূরে, তখন বলবেন। এখনও তিরিশ কিলোমিটার বাকি। মুশকিল হল মাঝে মাঝেই মাইলস্টোন উধাও হয়ে গিয়েছে।

হরিরাম বলল, একটা ছোট ব্রিজ পড়বে। সেখান থেকে গ্রামে বাস যায় আধঘণ্টায়। গাড়িতে কম সময় লাগবে।

গাড়ির গ্রামে ঢোকার পথ থেকে স্টেশন কত দূরে? মাইলখানেক রাস্তা। তবে তার আগে রাস্তাটা দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে। একটা ভাগ গ্রামের দিকে চলে গিয়েছে, অন্যটা রেল লাইনের পাশ দিয়ে প্রায় স্টেশনের কাছাকাছি গিয়ে আবার গ্রামে ঢুকে গিয়েছে।

বলবেন।

পিছনের গাড়ির ড্রাইভারের পাশে বসে সত্যেনবাবু বললেন, গুণধর?

পিছন থেকে গুণধর সাড়া দিল, স্যার।

তোমার আর কত বছর চাকরি আছে?

বাইশ বছর তিন মাস সতেরো দিন।

উঃ! ভাবাই যায় না। তবে তোমার-আমার ভাগ্যের লিখন একই।

বুঝলাম না স্যার।

ভূতের হাতে মৃত্যু, যেটা আজ রাতে হবে। সত্যেনবাবু শ্বাস ফেললেন।

.

মাঝে মাঝে ট্রাক যাচ্ছিল রাস্তাটা দিয়ে। তা নইলে দু’পাশ অন্ধকারে মোড়া। ওঁরা একটা বাঁক নিতেই হরিরাম বলল, আমরা ব্রিজটার কাছে এসে গিয়েছি।

অরূপ দত্তের নির্দেশে গাড়ি দুটো দাঁড়াল। অর্জুন বলল, এখনও প্রায় একঘণ্টা বাকি আছে ন’টা বাজতে। অন্তত আধঘণ্টা আমাদের এখানে অপেক্ষা করতে হবে। এই অন্ধকারে আলো নিভিয়ে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকলে যে-কোনও গাড়ির ড্রাইভার সন্দেহ করবে।

কারেক্ট। অরূপ দত্ত তার জিপ থেকে নেমে টর্চ জ্বেলে রাস্তার দুপাশ দেখে বললেন, বাঃ! গাড়ি দুটোকে ওখানে নামিয়ে দিলে রাস্তা থেকে চট করে কারও নজরে পড়বে না। বেশি ঢালু নয়, গাছগুলোর আড়াল পাওয়া যাবে।

সেই ব্যবস্থাই হল। সত্যেনবাবু নামতে যাচ্ছিলেন সুমো থেকে, জগন্নাথ বললেন, একসঙ্গে বসে থাকলেই তো হত।

কিন্তু আমার ইয়ে পেয়েছে যে।

অন্ধকারে যাবেন? এই অন্ধকারটা ভাল নয়। জগন্নাথ বললেন।

কেন?

অঞ্জলির তেনারা তো এখনই বের হবেন। অন্ধকার বেয়ে এখানে চলে আসা তেনাদের পক্ষে খুব সহজ।

অ! সত্যেনবাবু ফাঁপরে পড়লেন।

তবে একটা উপায় আছে। তেনারা সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে পারেন না। ইনজুরিয়াস টু হেন্থ। সিগারেট ধরিয়ে যান, ধারেকাছে আসবে না। পকেট থেকে একটা সিগারেট আর দেশলাইয়ের বাক্স বের করে অন্ধকারেই এগিয়ে দিলেন জগন্নাথ।

একটু দ্বিধা সত্ত্বেও ও দুটো নিয়ে নীচে নামলেন সত্যেনবাবু। বললেন, বিপদে পড়লে মানুষকে কত কী করতে হয়। স্মোকিং আফটার থার্টি ইয়ার্স।

দেশলাই জ্বেলে সিগারেট ধরিয়ে জোরে জোরে ধোঁয়া ছাড়তে-ছাড়তে তিনি অন্ধকারের দিকে পা বাড়ালেন।

খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে মুখ ঘোরাতেই অরূপ দত্ত সিগারেটের আগুনের– বাড়া-কমা দেখতে পেলেন। চাপা গলায় ধমকালেন তিনি, কে? হু ইজ দেয়ার?

ততক্ষণে প্রাণপণে ধোঁয়া ছাড়ছেন সত্যেনবাবু। সেই অবস্থায় কথা বলতে পারছেন না। গুণধরের গলা শোনা গেল, স্যার, উনি বড়বাবু।

মাই গড! অরূপ দত্ত গর্জন করলেন, ফেলে দিন, সিগারেট ফেলে। দিন।

সিগারেট মাটিতে ফেলে জুতোর চাপে নিভিয়ে দিলেন তিনি।

অরূপ দত্ত বললেন, এদিকে আসুন। আমরা এখানে কেন অপেক্ষা করছি তা বুঝতে পারেননি? এত সিগারেটের নেশা আপনার?

না স্যার, নেশা নয়। আমি সিগারেট খাই না। জগন্নাথবাবু বললেন সিগারেটের ধোঁয়া তেনারা সহ্য করতে পারেন না। তাই…।

তেনারা মানে? অরূপ দত্ত প্রশ্ন করামাত্র তার মোবাইল বেজে উঠল। তিনি সেটা অন করে কথা বলতে লাগলেন। বলতে বলতে ইশারা করতে লাগলেন, যাতে সত্যেনবাবু গাড়িতে ফিরে যান।

সত্যেনবাবু অন্ধকারে সেটা বুঝতে পারছিলেন না। অর্জুন বলল, বড়বাবু, আপনি গাড়িতে গিয়ে বসুন। সত্যেনবাবু দ্রুত ফিরে গেলেন। .. কথা শেষ করে অরূপ দত্ত বললেন, সব ঠিক আছে। ওরা ট্রেনে উঠেছে।

ট্রেন ছেড়েও দিয়েছে। এখন একটাই প্রার্থনা, ওদের এই ট্রেনে ওঠাটা যেন কারও মনে সন্দেহজনক বলে না মনে হয়।

আশা করি। অৰ্জন বলল, তা হলে যাওয়া যাক। মেল ট্রেন স্টেশনের কাছাকাছি এসে যাবে চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে।

দুটো গাড়ি আবার রাস্তায় উঠল। হঠাৎ খেয়াল হতে অরূপ দত্ত অর্জুনকে জিজ্ঞেস করলেন, সত্যেনবাবু কাদের কথা বলছিলেন বুঝতে পেরেছেন। তেনারা কারা?

অনেক রকমের ভূতের কথা শোনা যায়। তাদের একত্র করলে তেনারা হয়ে যান।

অ্যাঁ! ভাবুন। পুলিশের একজন ও সি ভূতের ভয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছে। কাদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়।

কিছুক্ষণ যাওয়ার পর হরিরামের গলা শোনা গেল, ডান দিকের রাস্তাটা ধরবেন, ওটা স্টেশনের কাছাকাছি গিয়েছে।

নামেই রাস্তা, বড় বড় গর্ত সামলে নৌকোর মতো দুলতে দুলতে ওঁরা যখন ট্রেন লাইনের পাশাপাশি একটা বাঁকের মুখে এলেন, তখন নটা বাজতে মাত্র সাত মিনিট বাকি। হরিরাম বলল, আর রাস্তা ধরে যাবেন না। তা হলে…।

বুঝতে পেরেছি। গাড়ি থামান। অরূপ দত্ত বললেন।

গাড়ি থেকে নামার পর দেখা গেল বহু দূরে একটা আলো জ্বলছে। দ্বিতীয় রাস্তায় ঢোকার পর অর্জুনের কথায় গাড়ির হেডলাইট নিভিয়ে দিয়েছিল দুই ড্রাইভার। অন্ধকার তাই এখন চোখে সয়ে গিয়েছে। ট্রেন লাইনটা সামান্য উঁচুতে। অর্জুন সেখানে উঠে স্টেশনের দিকে তাকাতেই বুঝল প্ল্যাটফর্মের উপর আলো রাখা হয়েছে। অর্থাৎ স্টেশনমাস্টার নির্দেশমতো কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। সে রেললাইনে হাত রাখতেই খুব মিহি কাঁপুনি টের পেল, অর্থাৎ মেল ট্রেন আসছে।

নীচে নেমে আসতেই অরূপ দত্ত বললেন, কিছু দেখতে পাওয়া গেল?

হ্যাঁ। স্টেশনমাস্টার আলোর ইশারা দিতে বাধ্য হয়েছেন। ওই ইশারা হল, মেল ট্রেন আসছে। এখান থেকে স্টেশন অন্তত দুশো গজ দূরে। ওরা নিশ্চয়ই স্টেশনের কাছেই মেল ট্রেনটাকে থামাবে। আমাদের আর-একটু এগিয়ে যাওয়া উচিত।

আপনার সঙ্গে রিভলভার আছে?

না। আমি এবার সঙ্গে আনিনি।

অরূপ দত্ত রাইফেলধারীদের সামনে ডেকে নিয়ে বললেন, আমরা ধীরে ধীরে খানিকটা পিছন দিক দিয়ে স্টেশনের দিকে যাব। ট্রেনটা যদি থামে তা হলে তোমরা অপেক্ষা করবে। ওই ট্রেনেও ফোর্স আসছে। ট্রেন থেকে বেআইনি জিনিস নামাবে এখানকার কিছু লোক। তাদের সঙ্গে ট্রেনে আসা আমাদের ফোর্সের লড়াই শুরু হলে ওরা যদি পালাতে চায়, তা হলে আমাদের দিক দিয়ে পালাতে হবে। তখন ওদের পা লক্ষ্য করে গুলি চালাবে তোমরা। আমি ‘ফায়ার’ বললেই ফায়ারিং শুরু করবে। লেটস গো। অর্জুনবাবু, আপনি, নিশ্চয়ই আমাদের সঙ্গে আসবেন?

না। আমাকে একটা লাঠি দিন। যদি এদিক দিয়ে কেউ পালাতে চায়…।

সঙ্গে সঙ্গে হরিরাম এবং জগন্নাথ বললেন, আমরাও এদিকে থাকব।

অরূপ দত্ত তার লোকজন নিয়ে চলে যাওয়ামাত্র দুটো আলো ট্রেনলাইনের উপর উঠে এসে দুলতে লাগল। বোঝা গেল, ওরা আলোর সংকেত দিয়ে ট্রেনের ড্রাইভারকে থামবার জন্যে অনুরোধ করছে। একটু পরেই দূরে ছুটন্ত ট্রেনের আওয়াজ পাওয়া গেল। প্রচণ্ড গতিতে ট্রেনটা ছুটে আসতে আসতে আচমকা গতি কমাতে লাগল। অর্জুন লক্ষ করল, যারা আলোর সংকেত পাঠাচ্ছিল তারা একটুও ভয় না পেয়ে ট্রেনলাইন দুটোর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আলো নাড়তে লাগল। ধীরে ধীরে গতি কমে গেল মেল ট্রেনের। প্ল্যাটফর্মের কাছাকাছি গিয়ে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে পড়ল। তার আগেই অবশ্য লোক দুটো নেমে গিয়েছে ট্রেনলাইন থেকে। ট্রেন থেকে কেউ একজন দরজা খুলে চেঁচিয়ে জিজ্ঞো করল, কী হয়েছে?

সামনে ফিশপ্লেট উড়ে গিয়েছে।

সর্বনাশ! লোকটি সজোরে দরজা বন্ধ করে দিল।

অর্জুন গুঁড়ি মেরে এগিয়ে গেল খানিকটা। পিছনে হরিরাম এবং জগন্নাথবাবু। এবং তখনই কিছু লোক চলে এল ট্রেনের গায়ে, দরজা খুলে গেল। কামরার আলোয় বোঝা গেল বাক্স নেমে আসছে ট্রেন থেকে। এক, দুই করে আটটা বাক্স নামতে দেখল অর্জুন। ঠিক সেই সময় গুলির আওয়াজে কেঁপে উঠল চরাচর। জিনিসগুলো যারা নামিয়েছিল তারা অবাক হয়ে দেখল, তাদের দু’ দিক থেকে সশস্ত্র কিছু মানুষ ট্রেন থেকে লাফিয়ে নেমে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে গুলি ছুঁড়তে লাগল তারা। ট্রেন থেকে যারা নামছিল তাদের কেউ কেউ যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল। হঠাৎ হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা শোনা গেল, আত্মসমর্পণ করো, না হলে সবাই প্রাণ হারাবে। ওড়িশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করো।

কিন্তু এর জবাবে ঝাঁকে ঝাকে গুলি ছুটে এল। অর্জুনের আশঙ্কা হচ্ছিল, নীচ থেকে যারা গুলি ছুড়ছে তাদের রাইফেলের মুখ সামান্য ঘুরলেই তাদের গায়ে গুলি লাগবে। সে সঙ্গী দু’জনকে ইশারা করল মাটিতে বসে পড়তে।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গুলির শব্দ থেমে গেল। প্রায় কুড়ি সেকেন্ড ভয়ংকর নীরবতার পর আবার গুলির আওয়াজ শোনা গেল। এবার আওয়াজটা আসছে ওপাশ থেকে। অর্জুন বুঝতে পারল গুলি ছুড়ছেন অরূপ দত্ত এবং তার সঙ্গীরা। ট্রেন থেকে নামা পুলিশরা সেদিকে এগিয়ে যেতে অর্জুন দেখতে পেল, তাদের খুব কাছ দিয়ে একটা ছায়াশরীর নিচু হয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে অর্জুন তাকে অনুসরণ করতে চাইল। লোকটি ক্রমশ ট্রেনলাইন ছেড়ে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করছে তাকে কেউ অনুসরণ করছে কি না। সন্দেহমুক্ত হওয়ামাত্র আবার এগিয়ে যাচ্ছে সে। ওদিকে গোলাগুলির আওয়াজ থেমে গিয়েছে। দুই পুলিশ বাহিনীর মাঝখানে পড়ায় লোকগুলোর এখন আত্মসমর্পণ না করে কোনও উপায় নেই।

বেশ কয়েক হাত দূরত্ব রেখে অর্জুন অনুসরণ করছিল। অন্ধকারের একরকম নিজস্ব আলো থাকে। চোখ অন্ধকারে অভ্যস্ত না হলে সেই আলো দেখতে পায় না। এতক্ষণ গাছগাছালির মধ্যে দিয়ে আসছিল বলে নিজেকে আড়ালে রাখার সুবিধে পাচ্ছিল অর্জুন। এক-এক সময় ইচ্ছে হচ্ছিল পিছন থেকে লোকটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে। কিন্তু ওর কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকা খুব স্বাভাবিক। ঝাপালে হয়তো আত্মহত্যা করা হবে।

লোকটা রাস্তার কাছে এসে দাঁড়াল। এটা সেই রাস্তা যেটা স্টেশন থেকে গ্রামের ভিতরে চলে গিয়েছে। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষার পর মাথা নিচু করে খরগোশের মতো দ্রুত রাস্তাটা পেরিয়ে ওপাশে চলে গেল লোকটা। অর্জুন। মুশকিলে পড়ল। লোকটা যদি ওপাশের কোনও গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে এদিকে লক্ষ রাখে, তা হলে সে রাস্তা পার হবে যখন, তখন দেখতে পেয়ে যাবে। একবার ট্রিগার টিপলেই তার শরীর মাটিতে লুটিয়ে পড়বে। কিন্তু এর উলটোটাও হতে পারে। লোকটা গাছপালা ছেড়ে মাঠের মধ্যে নেমে গেলে সে শতচেষ্টা করলেও ওর দেখা পাবে না। এসময় গাড়ির আওয়াজ কানে এল। যে গাড়ি দুটোয় ওরা এসেছিল তারা ওপাশের কঁচা পথ ধরে এগোচ্ছে এই রাস্তায় পড়ার জন্যে। অর্জুন বুঝল এটাই সুযোগ। ওই গাড়ি দুটো নিশ্চয়ই স্টেশনের দিকে আসবে। সে আড়ালে-আড়ালে খানিকটা গ্রামের দিকে এগিয়ে গেল। এবার হেডলাইট জ্বালিয়ে জিপটাকে আসতে দেখল। অন্ধকারে জিপের হেডলাইটের আলো চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে গেল। তারপরেই সুমো গাড়িটা সামনে দিয়ে চলে যেতেই সে দৌড়ে রাস্তা পার হল। যাকে অনুসরণ করছিল সে যদি গাড়ির আওয়াজ শুনে দেখার জন্যে দাঁড়িয়ে থাকে, তা হলে হেডলাইটের আলো নিশ্চয়ই কয়েক মুহূর্তের জন্যে তাকে অন্ধ করে দেবে। এই রাস্তা পার হওয়াটা সে বুঝতেই পারবে না।

মিনিটখানেক অপেক্ষা করার পর অর্জুন বুঝতে পারল, তার অনুমান ভুল হয়নি। নইলে পায়ের চাপে শুকনো পাতা ভাঙার শব্দ শোনা যাবে কেন? অর্জুন কয়েক পা হাঁটতেই দেখতে পেল, ছায়ামূর্তি মাঠের মধ্যে নেমে দাঁড়িয়ে আছে। তার বাঁ হাত কানের গায়ে চেপে ধরা। লোকটা ঘনঘন মাথা নাড়ছে। নিশ্চয়ই মোবাইল ফোনে কাউকে নির্দেশ দিচ্ছে। অর্জুন সন্তর্পণে লোকটার একেবারে পিছনে চলে এসে ডান হাতের পাশ দিয়ে লোকটার মাথায় আঘাত করল। সঙ্গে সঙ্গে লোকটা ছিটকে পড়ল মাটিতে। মোবাইল চলে গেল খানিকটা দূরে। তার আলো জ্বলছিল এবং অস্পষ্ট গলা শোনা যাচ্ছিল।

অর্জুন লোকটার পাশে গিয়ে দেখল, চোখ বন্ধ করে পড়ে আছে। কানের নীচে আঙুল রেখে বুঝল, আঘাতটা বেশি হলেও ও জীবিত আছে। দ্রুত ওর শার্ট টেনে-হিঁচড়ে ছিঁড়ে শরীর থেকে বের করে দুটো হাত পিছনে নিয়ে গিয়ে বেঁধে ফেলল সে। তারপরেই কোমরে গোঁজা রিভলভারটা দেখতে পেল। সেটা টেনে নিয়ে লোকটার পকেট থেকে রুমাল বের করে দুটো পা শক্ত করে বেঁধে ফেলল। এখন জ্ঞান ফিরলেও লোকটার পক্ষে পালানো সম্ভব হবে না।

মোবাইলটা তুলে নিতেই মনে হল, কেউ যেন এদিকে আসছে। সেদিকে রিভলভার তাক করতে চিৎকার শুনল, আমরা, আমরা স্যার।

মাথার উপর হাত তুলে হরিরামকে সঙ্গে নিয়ে জগন্নাথ এসে দাঁড়ালেন, স্যার, ফাটাফাটি। কী কায়দায় ব্যাটাকে জব্দ করলেন। আহা!

আপনারা কোত্থেকে এলেন?

আপনাকে ফলো করছিলাম। দেখুন, কী ভাল ফলো করেছি, আপনি একটুও টের পাননি। শুধু এই কাজটা যদি আমি করতে পারতাম! লোকটার মুখ দেখার চেষ্টা করলেন জগন্নাথবাবু, ফেস নট নোন।

আপনারা এখনই অরূপবাবুকে খবরটা দিন।

ওখানে যেতে পারব? ফায়ারিং চলছে।

ওটা থেমে গিয়েছে।

ওকে স্যার। জগন্নাথ চলে গেলেন।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, হরিরামবাবু, একে চিনতে পারছেন?

অন্ধকারে ঠিক বুঝতে পারছি না।

মোবাইলের আলো লোকটার মুখের উপর ফেলল, অর্জুন। সঙ্গে সঙ্গে হরিরাম বলল, দেখেছি স্যার। ডাক্তারবাবুর কাছে ওষুধ নিতে এসেছিল।

ডাক্তারবাবু ওষুধ বিক্রি করেন নাকি? বলুন প্রেসক্রিপশন নিতে এসেছিল।

নাঃ। দরোয়ান রামঅবতারজিকে বলেছিল, ওষুধ দরকার, তাই দেখা করবে?

দেখা হয়েছিল?

হ্যাঁ। ওঁরা বাগানে বসে কথা বলছিলেন। আমি উপরের জানলা দিয়ে দেখেছি।

আপনার ছোটমামা সেখানে ছিলেন?

হ্যাঁ।

একে তার আগে দেখেননি? এই গ্রামের লোক নয়?

হতে পারে। আমি তো কারও সঙ্গে মিশি না, আর বেশিদিন এখানে আসিওনি।

অর্জুন মোবাইল ফোনটার শেষ ডায়াল করা নাম্বার দেখল। তখনই একটা গোঙানি বেরিয়ে এল বন্দি লোকটার গলা থেকে। লোকটাকে উঠিয়ে বসিয়ে দিতে মাথাটা বুকের উপর একবার ঝুঁকে পড়ল। তারপর ধীরে ধীরে সেটা সোজা হল। অর্জুন জিজ্ঞেস করল, তোমার নাম কী?

লোকটা অন্ধকারে তাকাবার চেষ্টা করতে মোবাইলের আলো ওর মুখে ফেলল অর্জুন। একটু-একটু করে চেতনা স্পষ্ট হচ্ছে লোকটার। যখন সে বুঝল তার হাত-পা শক্ত করে বাঁধা রয়েছে, তখন শব্দ করে পাশের ঘাসের উপর থুতু ফেলল।

নাম কী?

প্রশ্ন করে কোনও লাভ হবে না। উত্তর দেব না। গলার স্বর মেয়েলি।

সঙ্গীদের পুলিশের গুলির মুখে ফেলে তুমি একা পালাচ্ছিলে? এতক্ষণে সঙ্গীরা উপরে চলে গিয়েছে। রিভলভারটা সামনে ধরল অর্জুন, এই বস্তুটা তোমার সম্পত্তি। এটা দিয়েই তোমাকে ওদের কাছে পাঠাতে পারি। এখন তো এখানে ভূত নামার কথা। তাই ভূতের ভয়ে কেউ সাক্ষী হতে চাইবে না। কী নাম?

লোকটা মাথা নামাল। সঙ্গে সঙ্গে অর্জুন লোকটার নাকের উপর রিভলভারের নল ঠেকাল, পাঁচ গুনব। তার মধ্যে কথা না বললে ট্রিগার টিপব।

নাম জেনে কী করবে? যা বলব তাই তো মেনে নিতে হবে।

দাঁড়াও, দাঁড়াও। এই গলা তো আজই শুনেছি, স্টেশনে। স্টেশনমাস্টারকে যখন ধমকি দিচ্ছিলে…! তাই তো?

ওর নাম খবরের খাতায় লেখা হয়ে গেল। বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ও।

না। স্টেশনমাস্টার কিছু করেননি। তোমাদের সাহস এত বেড়ে গিয়েছে যে, স্টেশনমাস্টারের ঘরে আর কেউ ছিল কি না তা দেখার প্রয়োজন বোধ করোনি।

এই সময় দূরের রাস্তায় জিপটা এসে দাঁড়াল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জগন্নাথ, মি. দত্ত আর মি. সৎপতিকে নিয়ে হাজির হয়ে গেলেন।

অর্জুন বলল, এই লোকটি ওয়ান অফ দ্য রিং লিডার। নাম বলছে না। ওখানে বিপদ বুঝতে পেরে পালাবার চেষ্টা করছিল।

অরূপ দত্ত লোকটার মুখে টর্চ ফেলতেই সৎপতি চেঁচিয়ে উঠলেন, মাই গড! এ তো গজেন! কুখ্যাত টেররিস্ট। পঞ্চাশ হাজার টাকা রিওয়ার্ড ডিক্লেয়ার করা আছে ওর নামে। একবার ধরা পড়েছিল কিন্তু কোর্টে নিয়ে যাওয়ার সময় পালিয়েছিল।

আপনাদের আর-একটা কাজ আছে। এই গ্রামটাকে ভূতমুক্ত করতে হলে মাঠের ওপাশে যে জঙ্গলটা আছে, সেখানে যেতে হবে। এখনও কিছু লোক ওখানে থাকতে পারে। আমার অনুমান ওখানেই ক্যাম্প আছে। অর্জুন বলল।

আপনার অনুমান ঠিক স্যার। লোকটা আমাকে বসের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল ওদিকেই। জগন্নাথ বললেন।

মি. সৎপতি তার বাহিনীকে সুমো গাড়িতে চেপে দ্রুত আসতে বললেন। অরূপ দত্ত বললেন, ওখানে মোট এগারোজন ছিল। ছ’জন মারা গিয়েছে, বাকি পাঁচজনকে অ্যারেস্ট করে স্টেশনের একটা ঘরে বেঁধে রাখা হয়েছে।

ওরা ট্রেন থেকে কী নামাচ্ছিল?

চোখ কপালে উঠেছে মশাই। বাক্সের উপর লেখা সেতার উইথ কেয়ার। বাদ্যযন্ত্র। ভিতরে এ কে ফর্টি সেভেন। একটা ভয়ংকর কিছু করবার পরিকল্পনা ছিল নিশ্চয়ই। কিন্তু ভুবনেশ্বরে কী করে বাক্সগুলো এল, কী করে এরা ট্রেনে তুলল, তাও মেল ট্রেনে, বুঝতে পারছি না। অরূপ দত্ত বললেন।

চোখে ধুলো দিতে গিয়েছিল। আর মেল ট্রেনে আনার কারণ, রেলপুলিশের সন্দেহ কম হবে। ট্রেনটাকে থামালে যে সময়ে থামবে তা এদের পক্ষে অত্যন্ত উপযুক্ত সময়। এই সময় কেউ বাইরে আসে না। আমি যদি স্টেশনমাস্টারের ঘরে তখন না থাকতাম, আর স্টেশনমাস্টার যদি ওদের ভয়ে সহযোগিতা করতেন, তা হলে এতক্ষণ অস্ত্রগুলো নিঃশব্দে ওদের ক্যাম্পে চলে যেত। অর্জুন বলল।

.

কয়েক রাউন্ড গুলি চললেও শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পের আটজন আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হল। বন্দিদের খুরদায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে গেলেন মি. সৎপতি। অর্জুন অরূপ দত্তকে বলল, আর-একটা কাজ বাকি আছে। আমরা এখন হরিরামের মামার বাড়িতে যাব।

গজেনকে জিপে তুলে আনা হল। অর্জুন জিজ্ঞেস করল, মি. দত্ত, ওদের ছ’জন মারা গিয়েছে বললেন, আমাদের কারও কিছু হয়নি তো?

একজন ছাড়া লাকিলি সবাই সুস্থ।

যার কথা বলছেন তার তো এখনই চিকিৎসা দরকার?

কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে। তার পা ভেঙেছে মনে হচ্ছে। লোকটি কে জানেন। স্বনামধন্য সত্যেনবাবু, বড়বাবুর এসব অভ্যেসে নেই তো।

যাচ্চলে! বড়বাবুর মুখ মনে পড়ে গেল অর্জুনের, বেচারা!

রামঅবতার দরজা খুলে দিল। অর্জুন তাকে জিজ্ঞেস করল, ডাক্তারবাবু কোথায়? তাকে খবর দাও।

ডাক্তারসাব ঘরমে নেহি হ্যায়।

কোথায় গিয়েছেন?

নেহি জানতা সাব!

বিষ্ণুদাসজি?

আভি লোটকে আয়া। রামঅবতার চিৎকার করল, বংশী, এ বংশী।

সিঁড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এল বংশী। অর্জুন তাকে বলল, বিষ্ণুদাসজিকে একটু এখানে আসতে বলো, এস পি সাহেব এসেছেন।

উনি তো উপরে ওঠেননি।

রামঅবতার বলছে উনি একটু আগে বাড়িতে ফিরেছেন।

হঠাৎ অন্ধকার থেকে গলা ভেসে এল, কী ব্যাপার অর্জুনবাবু?

বিষ্ণুদাসজি ওদের সামনে এসে অরূপ দত্তকে নমস্কার করলেন।

আপনি ওই অন্ধকারে কী করছিলেন? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।

আর বলবেন না। ক’দিন থেকে শিয়ালের উপদ্রব হয়েছে খুব। বাড়িতে ঢুকেই একটাকে দেখতে পেলাম ওদিকে ছুটে যেতো ব্যারাকবাড়িতে কেউ তো থাকে না। ওখানেই বোধহয় আস্তানা গেড়েছে।

তা কী করে সম্ভব? শিয়াল তো তালা খুলতে পারে না। যাকগে, আপনি কি জানেন ডাক্তারবাবু কোথায় গিয়েছেন? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।

ডাক্তার? আর বলবেন না, ওঁর মোবাইলটা হঠাৎ কাজ করছে না। এই গ্রামে তো মোবাইল সারাবার কোনও দোকান নেই। বিকেলবেলায় সাইকেল নিয়ে পাশের গ্রামে গিয়েছেন সারিয়ে আনতে। অনেক রিকোয়েস্ট করেছিলাম, কাল সকালে আমি গিয়ে সারিয়ে আনব, কিন্তু উনি কিছুতেই শুনলেন না। আসলে ওখানে কিছু পেশেন্ট ওঁর উপর খুব নির্ভর করেন, তাঁদের খবর না নিতে পারলে স্বস্তি পান না। কিন্তু আপনারা এখানে দাঁড়িয়ে কেন? এই বংশী, নীচের ঘরে নিয়ে গিয়ে ওঁদের বসাতে পারিসনি? বোকা কোথাকার! আসুন, আসুন। বিষ্ণুদাসজি এগিয়ে গেলেন।

এই বাড়িতে আসার পর এই ঘরে অর্জুনের ঢোকার প্রয়োজন হয়নি। বিষ্ণুদাসজি আলো জ্বালতেই সে বলল, যাক, এখনও ইলেকট্রিকের আলো আছে। লাইন কাটেনি।

বিষ্ণুদাসজি ওঁদের বসার জন্যে সোফা দেখিয়ে দিয়ে বললেন, স্বয়ং এস পি সাহেব গ্রামে এসেছেন, সবকিছু তো ঠিকঠাক থাকবে।

অরূপ দত্ত সোফায় বসে বললেন, তা হলে ভূতেরা পুলিশকেও ভয় পায়?

স্যার, আমার সন্দেহ আছে এটা ভুতের কাজ কি না! কিছু দুষ্টু ছেলেও করতে পারে। বিষ্ণুদাসজি বংশীর দিকে তাকালেন, আরে, দাঁড়িয়ে দেখছিস কী? চা নিয়ে আয়।

না বিষ্ণুদাসজি, চা খাব না। কথা হচ্ছে, এখানে নাকি খুব ভূতের ভয়, সন্ধে হলে কেউ বাড়ির বাইরে যায় না। তা হলে ডাক্তারবাবু সাইকেল নিয়ে পাশের গ্রামে যেতে সাহস পেলেন কী করে? ওঁর মোবাইল নাম্বারটা বলুন তো! অরূপ দত্ত বললেন।

স্যার, প্রয়োজন হয়নি বলে নাম্বার নিইনি।

গজেনকে তো আপনি চেনেন! কী করে আলাপ হল? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।

কোন গজেন?

আরে হাফ টাকমাথা, আপনার সঙ্গে এ বাড়িতে এসে দেখাও করেছে।

ও, গজেন। আমি যখন ভুবনেশ্বরে পড়তাম, তখন সহপাঠী ছিল।

তারপর?

আর যোগাযোগ ছিল না, কিছুদিন আগে হঠাৎ এল।

কোত্থেকে এল?

তা বলতে পারব না। ডাক্তারবাবু এখানে এসেছেন তা ভুবনেশ্বর থেকে জেনেই বোধহয় চলে এসেছে। পুরনো দিনের কথা নিয়ে সময় কাটল।

গজেনকে পুলিশ খুঁজছে, তা আপনি জানেন না?

না স্যার! সে কী! খুঁজছে কেন?

আপনাদের গ্রামের পাশে জঙ্গলে ও যে ক্যাম্প করেছে তা নিশ্চয়ই আপনি জানতেন না? অরূপ দত্ত জিজ্ঞেস করলেন।

বিশ্বাস করুন, এসব আমার অজানা।

আপনার দাদা আপনাকে এখানে ফিরিয়ে আনার কয়েক মাস পরেই কিন্তু ভূতের উপদ্রব শুরু হল। সেই ভূত আপনি প্রথম দেখেন এবং তার পরে গ্রামের মানুষের মনে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভূতের গল্প ফেঁদে রাতটাকে কবজা করার কী কারণ? কেন ওরা অত অস্ত্রশস্ত্র এনে কীসের জন্যে তৈরি হচ্ছিল?

এসব আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন? বিষ্ণুদাসজি বিরক্ত।

ডাক্তারবাবুর নাম কী? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।

ড. দাস। কাশীনাথ দাস।

এই দেখুন। পকেট থেকে প্রেসক্রিপশনটা বের করল অর্জুন, যেটা ডাক্তার হরিরামকে ওষুধ আনতে দিয়েছিলেন, এখানে ছাপা আছে ‘কে এন জানা’। ‘কে এন’ যদি ‘কাশীনাথ’ হয়, তা হলে ‘দাস’ ‘জানা হয়ে গেল কী করে? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।

অরূপ দত্ত জানতে চাইলেন, এই ডাক্তারের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ কী করে হল?

ভুবনেশ্বরে আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক ওঁর কথা বলেছিলেন।

আপনি ওঁকে গিয়ে বললেন যে, এই গ্রামে থেকে আপনার দাদার চিকিৎসা করতে হবে আর উনি রাজি হয়ে গেলেন?

না। প্রথমে রাজি হননি। অনেক অনুরোধ করার পর মোটা টাকার বিনিময়ে উনি রাজি হয়েছেন। এখানে এসে চিকিৎসা শুরু করার পর দাদা ভাল ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ওঁর শরীরের অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় ডাক্তার চলে যেতে পারেননি।

এই যে উনি এতদিন এখানে আছেন তার জন্যে যা প্রাপ্য তা ওঁকে দেওয়া হয়েছে?

হ্যাঁ, প্রথম পনেরো দিনের চেক উনি নিয়েছেন?

চেকে কি ‘ড. কে এন দাস’ লেখা হয়েছিল?

না। উনি বেয়ারার চেক দিতে অনুরোধ করেছিলেন।

অর্জুন অরূপবাবুকে নিচু গলায় কিছু বলে জগন্নাথবাবুকে অনুরোধ করল, জিপ থেকে আমাদের নতুন অতিথিকে নামিয়ে আনুন। আপনি একা পারবেন না। অন্যদের সাহায্য নেবেন, সাবধান! মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেলেন জগন্নাথবাবু।

আপনার দাদার মৃত্যুর পর এই সম্পত্তি তো আপনি পাবেন? অরূপ দত্ত বললেন।

বোধহয় না স্যার। বাবা আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করেছিলেন। তারপরেও দাদা আমাকে ফিরিয়ে এনে লিখিয়ে নিয়েছিলেন, আমি কোনওদিন সম্পত্তি দাবি করব না।

অরূপ দত্ত বললেন, কিন্তু আইন ওই ত্যাজ্যপুত্র করা ব্যাপারটাকে মেনে নেবে না তা আপনার জানা আছে।

না। আমি জানি না। বিষ্ণুদাসজি যেন অস্বস্তিতে পড়লেন।

আপনার বাবা কি ওটা আদালতে নিয়ে গিয়েছেন?

জানি না।

দ্বিতীয়ত, কাগজে দাদাকে কী লিখে দিয়েছেন তা অস্বীকার করলে আদালতে ধোপে টিকবে না। বিষ্ণুদাসজি, তুলসীদাসজির একমাত্র ভাই হিসেবে আপনি সম্পত্তির দখল পাবেন, তবে তার জন্যে তুলসীদাসজিকে মারা যেতে হবে?

আপনি কী বলছেন? আমি এসব ভাবিইনি।

এসময় জগন্নাথ এবং একজন সেপাই ধরে ধরে নিয়ে এলেন গজেনকে। তাকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন বিষ্ণুদাসজি। অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনার সহপাঠী। জেল পালানো আসামি। ওকে ধরে দিতে পারলে সরকার পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার দেবে। বিষ্ণুদাসজি, টাকাটা নেবেন নাকি?

হঠাৎ গজেন চেঁচিয়ে উঠল, বিষ্ণু!

বিষ্ণুদাসজি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, আমি কিছু বলিনি, বিশ্বাস করো।

অরূপ দত্ত গজেনকে জিজ্ঞেস করলেন, বিষ্ণুদাসের সঙ্গে কলেজের পর শেষ কবে দেখা হয়েছিল? সত্যি কথা বললে কিছুটা লাভ হবে।

বছর আড়াই আগে।

কোথায়?

হায়দরাবাদের জেলে। ওর ছমাস জেল হয়েছিল, আমার ন’মাস।

কেন?

খুব সামান্য ব্যাপার। মনে করতে ভাল লাগছে না।

এখানে এলে কী করে?

কয়েক বছর আগে ওর সঙ্গে এখানে এসে কিছুদিন থেকে গিয়েছিলাম। তখনই এই জায়গাটা খুব পছন্দ হয়েছিল।

অর্জুন বলল, মনে হচ্ছে তুমি মিথ্যে বলছ না। এবার বলো, কোন কারণে এই গ্রামটাকে পছন্দ হয়েছিল?

গজেন জবাব দিল না। অরূপ দত্ত ধমক দিলেও চুপ করে থাকল।

ড. কে এন দাস অথবা কে এন জানার খবর বিষ্ণুদাসজিকে দিয়েছিলে?

হ্যাঁ।

কেন?

বিষ্ণু ওইরকম একজনকে চাইছিল। কোনও ভাল ডাক্তার তার প্র্যাকটিস ফেলে এখানে পড়ে থাকবে না। কাশীনাথ থার্ড ইয়ার পর্যন্ত পড়ার পর পড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু যে-কোনও ডাক্তারের মতো চিকিৎসা মোটামুটি করতে পারত।

অরূপ দত্ত বিষ্ণুসজিকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি জানতেন উনি ডাক্তারি পাশ করেননি?

বিষ্ণুদাসজি মাথা নিচু করলেন।

গজেন, তোমার সঙ্গীরা কেন জঙ্গলে লুকিয়ে থাকত? কেন রাতের বেলায় ভূতের ভয় দেখিয়ে গ্রাম জনশূন্য করে তোমরা বের হতে?

ওদের অধিকাংশই ওড়িয়া বা বাংলা বলতে পারে না। তেলুগু এই গ্রামের কেউ বুঝবে না, উলটে সন্দেহ করবে। তাই!

অর্জুন হাসল, আমার সন্দেহ হচ্ছিল। এখন বুঝতে পারছি, সন্দেহটা ভুল হয়নি। এখান থেকে বর্ডার কত দূরে?

জগন্নাথ এতক্ষণ চুপচাপ ছিলেন, এবার মুখ খুললেন, এই গ্রামের পরেই ওই যে নদীতে আমাকে মাছ ধরতে দেখেছিলেন, তার ওপারেই অন্ধ্রপ্রদেশ শুরু। কাকুলাম বেশি দূর নয়।

অর্জুন অরূপ দত্তকে জিজ্ঞেস করল, অন্ধ্রপ্রদেশের পুলিশ ওড়িশায় আসতে পারে?

অনুমতি নিতে হয়, আর এই সুযোগটাই অপরাধীরা নিয়ে থাকে।

গত কয়েক মাসে অন্ধ্রপ্রদেশের এই দিকটায় যেসব ডাকাতি বা অপহরণের ঘটনা ঘটেছে তার খোঁজ নিলে গজেনরা কেন এখানে ক্যাম্প করেছে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। গজেন যেসব অস্ত্র আজ মেল ট্রেনে এখানে আনতে চেয়েছিল সেগুলো রাখার জন্যে একটা ডবল জায়গা দরকার। তাই না? অর্জুন জিজ্ঞেস করতে গজেন বিষ্ণুদাসজির দিকে তাকাল। বিষ্ণুদাসজি মাথা নাড়লেন। অর্জুন বলল, অস্ত্রগুলো যখন হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে, তখন বলতে আপত্তি নেই। আপনি শিয়াল খুঁজতে যেখানে গিয়েছিলেন তার চেয়ে ভাল জায়গা আর কোথায় পাওয়া যাবে বিষ্ণুদাসজি? তুলসীদাসজি থাকলে আপনার অনেক অসুবিধে হচ্ছিল। অথচ ওঁর বোনরা যেভাবে পাহারা দিচ্ছেন তাতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে খুন করাও আপনার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। তাই ডাক্তার হিসেবে একজনকে আনিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছিলেন। অর্জুন কথা শেষ করল।

অরূপ দত্ত বললেন, তা হলে বিষ্ণুদাসজি, আপনার বন্ধুর সঙ্গে আপনাকেও আমার সঙ্গে যেতে হবে। তিনি ইশারা করতে একজন সেপাই এগিয়ে গিয়ে বিষ্ণুদাসজির জামার কলার চেপে ধরল।

অর্জুনের দিকে তাকিয়ে অরূপ দত্ত বললেন, চলুন, আজ আপনি আমার অতিথি।

অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু এখনও একটা কাজ বাকি আছে। অর্জুন বলল।

সেটা কী?

ছোটভাই পড়তে গিয়ে দুষ্কর্ম করছে জেনে বাবা অপমানিত হয়েছেন। তাকে পুলিশ খুঁজছে জেনে তিনি ত্যাজ্যপুত্র করেছেন। তা সত্ত্বেও বাবার জীবিতকালে বড়ভাইয়ের মনে স্নেহ এতটাই প্রবল হল যে, তিনি ছোটভাইকে লুকিয়ে এই বাড়ির বাগানের কোণে ব্যারাকবাড়িতে আশ্রয় দিলেন। শুধু সে একা নয়, তার দুই অপরাধী বন্ধুও এখানে এসে থাকল, যার একজন গজেন। শুধু তাই নয়, ছোটভাইকে আবার পড়াশুনোর জন্যে কলকাতায় পাঠালেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পরেও ছোট ভাইয়ের খরচ মিটিয়েছেন। সেই ছোটভাই বিয়ে করে বস্তিতে বাস করছে জেনেও তাঁর স্নেহ কমল না। যখন তিনি জানলেন ছোটভাই হায়দরাবাদের জেলে ঘানি টানছে তখন ছুটে গেলেন তার কাছে। সাজা শেষ হওয়ার পর পরম আদরে আবার এই বাড়িতে নিয়ে এলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এসব করলেন? এত স্নেহ বোধহয় রামচন্দ্রেরও ভাইদের প্রতি ছিল না। অর্জুন হাসল।

অরূপ দত্ত বললেন, সত্যি, বিশ্বাস করা খুব শক্ত।

এর পিছনে, আমার অনুমানের কারণ একটাই। ছোটভাই একটার পর-একটা অন্যায় করে যাচ্ছে, আর বড়ভাই তাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। বড়ভাই জানতেন, বাবা যতই ত্যাজ্যপুত্র করুন না কেন, আদালতে সেটা টিকবে না। সম্পত্তি নেব না বলে যে ডিক্লেয়ারেশন স্ট্যাম্প পেপারে ছোটভাই দিয়েছেন, তা খারিজ করা একজন উকিলের পক্ষে সম্ভব। কিন্তু বড়ভাই চাননি সম্পত্তি ছোটভাই পাক। তাই তিনি বোন এবং ভাগনেকে এখানে এনে রেখেছেন। আর তাঁর জানা ছিল, আগুনের দিকে পতঙ্গকে ঠেলে দিতে হয় না, তার সামনে আগুন জ্বেলে দিলেই কাজ হয়ে যায়। আমার সন্দেহ, ছোটভাইকে তিনি অর্থ সাহায্য দিয়েছেন। সে গজেনকে নিয়ে যে ভয়ংকর অপরাধচক্র তৈরি করেছে, তাও তার জানা ছিল। তিনি অভিনয় করছিলেন, তাঁর স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে। আর এই অভিনয় ছোটভাই বিশ্বাস করেছিল। এসময় তিনি আমার শরণাপন্ন হন। আমি এসে ছোটভাইকে ওই অপরাধচক্রের একজন হিসেবে প্রমাণ করে দিলে কয়েক বছর জেলে বাস করতে হবেই। বড়ভাই এই কাঁটা দূর করতে ভাড়াটে খুনিকে ব্যবহার করতে পারতেন। কিন্তু তিনি কোনও সাক্ষী রাখতে চাননি। আমি জানি না এই ধরনের অপরাধকে আইনের চোখে দোষী সাব্যস্ত করা যায় কি না! অর্জুন বলল।

অরূপ দত্ত জিজ্ঞেস করলেন, তা হলে স্লো-পয়জনের ব্যাপারটা ওঁর জানা ছিল না?

এটা রহস্যময়। স্লো-পয়জন্ড পেশেন্টের চেহারা ওঁর নয়। এমন হতে পারে উনি ডাক্তারকে কিনে নিয়েছেন। ডাক্তার ডবল রোলে অভিনয় করছেন। ওঁর খাটের পাশে যেসব ওষুধ দেখেছি, তা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যে রাখা হয়েছে, এটাও হতে পারে। অর্জুন বলল, ব্যাপারটা ডাক্তারকে পেলে স্পষ্ট হবে।

এই সময় বাড়ির বাইরে গাড়ির শব্দ হল। হরিরাম বাইরে বেরিয়ে গেল। কিন্তু ফিরে এল মি. সৎপতিকে নিয়ে। অরূপ দত্ত জিজ্ঞেস করলেন, সব ব্যবস্থা হল?

মি. সৎপতি বললেন, ভোরের ট্রেনে ওদের নিয়ে যাওয়া হবে। আশ্চর্য ব্যাপার, আপনারা এই বাড়িতে আছেন তা আমি জানতাম না। আমার ফোনের ব্যাটারি ডাউন হয়ে গিয়েছে। কী করে যোগাযোগ করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।

তা হলে এখানে এলেন কী করে? অরূপ দত্ত হাসলেন।

আরে স্টেশনমাস্টারের ভিতরের ঘরে একজন লুকিয়ে বসে ছিল। বলল, ট্রেনের খবর নিতে এসেছিল, গোলাগুলি চলছে দেখে ভয়ে লুকিয়ে পড়েছে। ও কোথায় থাকে জিজ্ঞেস করতে বলল, এই গ্রামের অতিথি। সত্যি কি

যাচাই করতে যেতে এই বাড়িতে নিয়ে এল। বলল, এই বাড়ির মালিক বিষ্ণুদাসজির অতিথি হয়ে আছেন। বিষ্ণুদাসজি কে?

অরূপ দত্ত দেখিয়ে দিলেন। বিষ্ণুদাসজির জামার কলার তখনও সেপাইয়ের মুঠোয়। মি. সৎপতি চমকে উঠলেন, এ কী!

অরূপ দত্ত বললেন, গজেনের সহকর্মী। অন্যতম মদত এই লোকটি দিয়েছেন।

মি. সৎপতি বেরিয়ে গেলেন বাইরে। মিনিটখানেকের মধ্যে ফিরে এলেন যাকে নিয়ে তাকে দেখে হরিরাম চেঁচিয়ে উঠল, ডাক্তারবাবু!

তা হলে একে চেনেন আপনি? মি. সৎপতি হরিরামের দিকে তাকালেন।

অর্জুন বলল, উনি ডাক্তারি পাশ না করেও ডাক্তার সেজে ছিলেন এই বাড়িতে। এই চক্রের একজন। বুঝতেই পারছেন কাশীনাথ দাস বা জানা, আপনি ধরা পড়ে গিয়েছেন। তুলসীদাসজির যে স্মৃতিবিভ্রম হয়নি তা আপনি জানতেন?

খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে ডাক্তার মাথা নাড়লেন, হ্যাঁ।

তাঁকে এমন কোনও ইঞ্জেকশন দেননি যা তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে? তাই তো? কত টাকা পেয়েছেন সে জন্যে?

ডাক্তার একবার বিষ্ণুদাসজির দিকে তাকিয়েই মাথা নামালেন। সঙ্গে সঙ্গে বিষ্ণুদাসজি চিৎকার করলেন, ডাক্তার, তুমি বিশ্বাসঘাতক। খুন করে ফেলব!

ডাক্তার নড়লেন না।

তিনজনকে গ্রেফতার করে বাইরে নিয়ে যাওয়ামাত্র উপর থেকে কান্না ভেসে এল। দুই মহিলা চিৎকার করে কাঁদছেন। অর্জুন, অরূপ দত্ত এবং হরিরামের সঙ্গে মি. সৎপতিও ছুটলেন উপরে।

এক বোন ধরে রেখেছেন তুলসীদাসজিকে। তাঁর মুখ বেঁকে যাচ্ছে। দ্বিতীয় বোন চিৎকার থামিয়ে উত্তেজিত গলায় বললেন, দাদা বিষ খেয়েছে। বাঁচান, বাঁচান ওকে।

দ্রুত নীচে নামানো হল তুলসীদাসজিকে। অরূপ দত্তের জিপে তুলে পাঠানো হল খুরদার হাসপাতালে। অরূপ দত্ত বললেন, কপাল খুব ভাল বলে ভদ্রলোক হাসপাতালে জীবিত অবস্থায় পৌঁছোতে পারলেন।

.

সেই রাতে ওঁরা অঞ্জলি গ্রামেই থেকে যাবেন বলে স্থির করলেন। হরিরাম ব্যবস্থা করল। মি. সৎপতি বললেন, অর্জুনবাবু, আপনি নিশ্চয়ই আপসেট?

কেন? অর্জুন তাকাল।

আপনাকে সম্মানদক্ষিণা দেওয়ার অবস্থায় তুলসীদাসজি থাকলেন না। তবে অন্যভাবে সেটা মিটে যাবে।

কীভাবে?

গজেনকে ধরার জন্যে পঞ্চাশ হাজারের রিওয়ার্ড আপনি পাবেন।

না। মাথা নাড়ল অর্জুন, গজেনকে তো আমি ধরিনি।

সে কী? কে ধরেছে?

জগন্নাথবাবু। খালি হাতে ওকে ধরেছেন তিনি। ওঁর নাম দেবেন।

ওকে! ঠিক আছে।

হঠাৎ একটা কান্নার আওয়াজ কানে এল। সবাই অবাক হয়ে দেখলেন, জগন্নাথ দু হাতে মুখ ঢেকে কান্না থামাতে চাইছেন।

Pages: 1 2 3 4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress