Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » দাদুভাই || Satyajit Chowdhury

দাদুভাই || Satyajit Chowdhury

দাদুভাই

দাদু কেন ফিরে আসছে না? বাপন মাঝে মাঝে ভাবে l দাদুকে যে সেই নিয়ে গেলো, আর ফিরিয়ে আনলো না l ঠাম্মা আর মা খুব কাঁদছিলো l সেই সময় জেঠু জ্যেঠিমনি দাদাকে নিয়ে কোচবিহার গিয়েছিলো l বাবা, কাকু, সমরদাদু সুনীলজেঠু, আরও অনেকে দাদুকে মাচার উপর সাদা কাপড় জড়িয়ে ‘হরিবোল’, ‘হরিবোল’ করতে করতে নিয়ে গেলো l দাদুকে কোথায় নিয়ে গেলো জিজ্ঞেস করতে মা বললো, দাদু ভগবানের কাছে চলে গেছে l বাপন বুঝতে পারে না, জেঠু যখন দাদাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো, তখনও জ্যেঠিমনি খুব কাঁদছিলো l ঠাম্মা, মা জ্যেঠিমনিকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছিলো, এপেন্ডিক্স এমন কিছু নয় l অপারেশন করলেই সেরে যাবে l দাদাও ব্যথায় খুব কাঁদছিলো l দাদাতো কিছুদিন পরে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে এসেছিলো l কিন্তু দাদুতো কাঁদছিলো না, মুখ হাঁ করে ঘুমিয়ে আছে যেন l বাবা, কাকু দাদুকে ধরে মাটিতে শুইয়ে দিতেও অন্যদিনের মতো চিৎকার করছিলো না l তবে কি দাদু সত্যিই মরে গেছে, আর ফিরে আসবে না l তাকে আর ‘দাদুভাই’, ‘ও দাদুভাই’ করে কেউ আর ডাকবে না l ভাবতেই বাপনের বুকে একটা কষ্ট আছড়ে পড়লো l বাপন কান্না চাপিয়ে উদ্ধশ্বাসে দৌড় শুরু করলো l

বারান্দা পার হয়ে বড় ঘরের মাঝ দিয়ে দাদুর ছোট ঘরটায় আসতেই বাপন থমকে দাঁড়ালো l ঘরটাকে কেমন খালি খালি দেখাচ্ছে l খাটটার উপর কিছু নাই, যেখানে দাদু শুয়ে থাকতো l আলমারির উপর দাদুর সুটকেসটা অবহেলায় পড়ে আছে l দাদু যেটা কাউকে ছুঁতে দিতো না l দাদুর রাজ্যের সম্পদ বোধহয় ওখানে লুকানো আছে l ঘরের এক কোণে অলসভাবে দাঁড়িয়ে আছে দাদুর প্রিয় লাঠিটা l লাঠিটা বাপনের ছুঁয়ে দেখতে ভীষণ লোভ হচ্ছে l এই লাঠি নিয়েই বাপনের সাথে দাদুর ঝগড়া লেগে যেত l কিছু দুস্টুমি করলেই দাদু লাঠি নিয়ে বাপনকে তাড়া করতো l বাপনও কিছুটা দূরত্বে গিয়ে দাদুকে খেপিয়ে তুলতো – ধরো দাদু, ধরো দাদু l
বাপনের চোখে মুখে দুস্টুমি গড়িয়ে পড়তো l আবার কখনো দাদুর অন্যমনস্কতার সুযোগে লাঠি নিয়ে গুটি গুটি পায়ে মুহূর্তে ত্রিসীমানার বাইরে l দাদুর তখন পরিত্রাহি চিৎকার, ‘ও ছোটমা, ও বড়মা, আমার লাঠি নিয়ে গেলো গো, দাঁড়া, একবার ধরি, দেখাবো মজা l জ্যেঠিমনি, মা তখন বাপনকে বুঝিয়ে সুজিয়ে ফিরিয়ে আনতো লাঠিটা l

আচ্ছা দাদু কেন মা, জ্যেঠিমনিকে ছোটমা, বড়মা বলে ডাকে l তবে কি দাদু ওর আর দাদার মতো ছোট হয়ে গেছে l বাপন ভেবে পায় না l মা বলে, বুড়ো হলে মানুষ ছোট বাচ্চা হয়ে যায় l ও দাদার থেকেও অনেক বড় হয়ে গেছে l দাদু ওকে গুড বয় বলে ডাকে l দাদুর বাপনের নার্সারি বইয়ের সবগুলো রাইমস মুখস্ত l বাপন একটু ভুল করলে, দাদু ঠিক ধরে ফেলে l দাদুইতো প্রথম শিখিয়েছিলো, ‘টুইঙ্কল, টুইঙ্কল, লিটল ষ্টার, হাউ ই ওয়ান্ডার, হোয়াট ইউ আর ‘ l

ওদের ঘরে বাপন মা’র সাথেই ঘুমায় l বাবা না থাকায় বাপনের ঘুম আসতে চায় না l বিছানায় শুয়ে শুয়ে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকায় l আকাশের তারাগুলো গুনতে শুরু করে – এক, দুই, তিন, চার…. l গুনতে গুনতে কেমন যেনো খেই হারিয়ে ফেলে l তারাগুলো কোথা থেকে আসলো l মা বলে- মানুষ মরে নাকি তারা হয়ে যায় l তবে কি দাদুও তারা হয়ে গেছে? মা বাপনকে বুকে জড়িয়ে ধরে l হাঁ, বাবা, তোমার দাদু তারা হয়ে গেছে l তোমার দিকে কেমন মিট মিট করে তাকিয়ে আছে l তোমাকে বলছে, দাদুভাই, ভালো করে পড়াশুনা করো, তোমাকে অনেক বড় হতে হবে l মা’র কথা শুনবে, দাদার সাথে মারামারি করবে না l ঠাম্মাকে দেখে রাখবে l

বাপনের চোখে ঘুমের আবেশ ছড়িয়ে পড়ে l বাপন দাদুর কথা শুনতে পারছে – দাদুভাই, ও দাদুভাই ! সেই ছড়াটা একবার বলোতো – টুইঙ্কল, টুইঙ্কল, লিটল ষ্টার …. l

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress