দাদা আমি বাঁচতে চাই
মৌসুমীর বিয়ে হয়েছে বড় পরিবারে।
যদিও মৌ বড় পরিবার থেকে গেছে।
মৌয়ের বাবারা তিন ভাই…সবাই একসাথে থাকেন ।সব মিলে ওরা পাঁচ ভাইবোন।
যদিও মৌ বাবা ও মার একমাত্র সন্তান।বংশের বড় মেয়ে মৌ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিতেই বিবাহ।
ঠাকমার বক্তব্য মেয়েদের বিবাহের স্বীকৃতি আঠারো।তাই আঠারোতেই নাতনির বিয়ে দিতে হবে।
মৌয়ের বর মৌয়ের চেয়ে এগারো বছরের বড়…প্রাইভেট কোম্পানিতে উঁচু পোষ্টে কাজ করে…ভাল মাহিনা…।
ভাসুর ও ব্যাঙ্কে চাকরি করেন…ভাসুর বিপত্নীক…. বৌ বাচ্চা হতে গিয়ে..মা ও বাচ্চা একসাথে দুজনে….।
তাই দাদা একটু দুখী দুখী ভাব।
মৌ এর তিন ননদ বিবাহিতা।মৌ বিয়ের পর ছোট ননদ ও ননদাইকে ভাবত ঘরজামাই।তবে অবশ্য তা নয়।
ননদেরা সব কাছাকাছি থাকে।তাই ভালো মন্দ সব খাবারে পাঁচ ছেলে মেয়ের সমান ভাগ।
শ্বাশুড়ি রান্না করতেন।মৌকে রান্না করতে দিতেন না। মৌকে সারাক্ষণ ফায়ফরমাশ খাঁটতে হতো।মেয়েরা দুঃখে মরে যেত ,আহা তাঁদের মায়ের কি কষ্ট!রান্না করতে হয়।কিন্তু মৌ রান্না পারত।ওকে তো রান্না করতে দিলে সবাই সুনজরে দেখবে।ফায়ফরমাশ খাটা প্রচণ্ড চাপের।
শ্বাশুড়ির মেয়েদের দল এসে গেলে বৌ কে সারাক্ষণ টিপ্পনি।
ভাসুর ভায়ের বৌকে ভালোবাসত।মৌ ভাসুরের বিছানা করে দিত।ঘরে জল ভরে দিত।
মৌয়ের বর ছিল মা সোহাগী।বৌয়ের ভালো মন্দ কিছু বুঝত না।
ছটফটে হাসিখুশি মৌ ভয়ে ঝিমিয়ে থাকত।শ্বশুর মশায় মৌকে ভালো বাসতেন।মৌ সময় পেলে শ্বশুরের পা টিপে দিত।নানান গল্প শুনত শ্বশুরের ছোটবেলার কথা।ছেলে মেয়েরা মা ভক্ত।বাবার প্রতি সামান্য কর্তব্য করত..কিন্তু বাবা চাইতেন মেয়েরা তাঁর সাথে একটু গল্প করুক।
মৌ শ্বশুরের সাথে সময় কাটাতো।তাই বাবা ও মেয়ের দুজনের সান্নিধ্য ভালোই লাগত।একদিন তিনি চলে গেলেন।
মৌ এখন একদম একা।গল্প করার কেউ নেই।
শ্বাশুড়ি,ননদেরা গল্প করলে …মৌ গল্পে সামিল হবার চেষ্টা করত।তাদের গল্প আর কি …কাদের বাড়ির বৌ ভালো।শ্বশুর ও শ্বাশুড়ির কি সেবা করে।সামনের বাড়ির রেখার মা কি ভালো রান্না করে।ননদেরা আসলে কত যত্ন করে..ইত্যাদি ইত্যাদি…।
দিনের পর দিন ঐ আঠারো ঊনিশের মৌ কে সবার শেষে খেতে দিতো।ঘরের বৌ সবার শেষে খায়।ভাসুর লুকিয়ে লুকিয়ে মিষ্টি,বাদাম ,লজেন্স কিনে দিতেন।বলতেন কাউকে বলো না।তুমি আমার ছোট বোনের মতো।জানি তুমি ক্ষিদেতে কষ্ট পাও।একদিন তো বলেই ফেললেন আমার বৌ ও বাচ্চা মারা যেত না।যদি মা সময়মত খেতে দিতেন।ওজন বাড়ছিল না।একটু যত্ন করতে পারি নি। তোমার দিদি মিলেমিশে থাকবার চেষ্টা করে নি।শুধু ঝগড়া আর ঝগড়া।প্রতিবাদি ছিল খুব।তিন বিবাহিত বোন ও মা মিলে কত কটুকথা বলত।সব মিলেমিশে আমার সংসারটা ভেঙে গেল।
হঠাৎ একটা আওয়াজ শুনে মৌ চমকে ওঠে।
ছিঃ তুমি ভাসুরের সাথে গল্প করছ!!
প্রথম মৌ গলা তুলে কথা বলে কেন মা কি হয়েছে?
দাদা তো আমার চেয়ে ষোল বছরের বড়।কথা বললে কি হয়?
দাদা বললেন মৌ নিজের ঘরে যাও।মায়ের তো বয়স হয়েছে….।
কি বললি বড় খোকা ?
তোর মায়ের বয়স হয়েছে বলে মতিভ্রম হয়েছে!
মৌ চলে যাচ্ছিল।
তখন শ্বাশুড়ি বলে সর্বনাশী..মা ও ছেলের মধ্যে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিলি।
মৌ ঝগড়ার ভয়ে রান্নাঘরে ভাত উবুড় দিতে যায়।পিছন থেকে এমন চিৎকার করেন পুরো গরম ভাত গায়ে হাত পায়ে পড়ে।জ্বলতে থাকে।ভাসুর ও বর হাসপাতালে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে।
মৌ বলে দাদা আমি বাঁচতে চাই।দাদা আমার বাপি ও মা কে খবর দিন।দাদা আমি বাঁচব তো।
তারপর মৌ ধীরে ধীরে ভালো হয়।আধুনিক অনেক ক্রিম লাগিয়ে গায়ের সাদা পোড়া দাগ স্বাভাবিক হয়েছে।
মৌ এর বর দাদার সংস্পর্শে এসে বৌকে ভালোবাসতে শিখেছে।এখন বুঝতে পারে বৌ ছাড়া দাদার জীবন দুর্বিষহ।তাহলে মৌ এর অবর্তমানে দাদার মতো একা জীবন কাটাতে হবে।
বিশেষ করে মৌ পুড়ে যাবার পর শ্বাশুড়ির মনে অনুশোচনা বোধ এসেছে।যতই হোক তিনিও তো পাঁচ সন্তানের জননী।
বোনরা আর ঘন ঘন বাপের বাড়ি আসেনা।মৌ পুড়ে যাবার পর মৌয়ের বাড়ির লোক সদলবলে উপস্থিত ছিলেন।পুলিশের ও ভয় দেখিয়েছিলেন।
“সময়ের হাত ধরে” মৌ ঘর সংসারে মন দিয়ে অনেকটা জীবন পিছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে।।তার একমাত্র ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে….বর্তমানে চাকরি করছে।
বিশ বছরের মৌ ও সময়ের হাত ধরে পঞ্চাশ হবো হবো করছে।
সময়ের হাত ধরে মৌয়ের শ্বাশুড়ি ছিয়াশি বছর বয়স।এখন এমন অবস্থা..মৌ ছাড়া শ্বাশুড়ি চোখে সর্ষে ফুল দেখেন।
এইজন্য সবাই বলে বাপের বাড়ি মেয়েদের বেশি যেতে নেই…যদি বিবাহিত ভাই বা বিবাহিত দাদা থাকে।যারা এমনি যেতে চাই তারা তো যাবেন..কেননা বাপের বাড়ি মেয়েদের এখন সমান অধিকার।যারা নিজেরা শ্বশুর বাড়িতে আদর্শ বৌ না হয়ে বাপের বাড়ি গিয়ে মার সাথে বৌদের বিরুদ্ধে কলকাঠি নাড়ে।তাদেরকে সাবধান করা।তাইতো নারী গড়তেও জানে আবার ভাঙতেও জানে।।