Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

ত্রিধারা -17

জানো রূপম তোমার দুর্ঘটনার কথা শুনতে শুনতে আমার ছোট ছেলের দুর্ঘটনা মনে পড়ে গেল।
সে কি গো বৌদি ওর আবার কি রকম এক্সিডেন্ট
হয়েছিল?
হ্যাঁ এক্সিডেন্টেই তো ওর ডান পায়ের উরুর হাড়
ভেঙে দুটুকরো হয়ে গেছিল।
সে কিগো! একটা পা ছোট বড়ো হয়ে গেল ওর?
না দুই পা সমান আছে।এখন মাঠে ফুটবলও খেলে।ভেবেছিলাম ডানপা-টা ছোট হয়ে যাবে,বা
বাঁকা হয়ে যাবে হাঁটতে অসুবিধা হবে।কিন্তু কোন
সমস্যাই নেই।দেখলে বুঝতেই পারবে না ওর ডান পা জখম হয়েছিল।
তখন ওর কত বয়স?
তখন ওর পাঁচ বছর বয়স।
আ হা হা।বড্ড কচি হাড়।কি করে ঘটল?
সে আর বল না।
দেওরের বিয়ের পরে এক রবিবার ছেলেটাই সকালে উঠে বলে আজ ঠাম্মার কাছে যাব।এতো
ওর যাওয়ার ইচ্ছা আমরাও তাই ওকে সঙ্গে করে
স্কুটারে চেপে চলে গেলাম। সারাদিন বাড়িতে নতুন বউ-এর সাথে হৈহৈ করে কেটে গেল। নতুন বউ-এর হাতে নতুন রান্না খেলাম।আর নতুন কত গল্প শুনলাম।
দুপুরে খাওয়া সেরে বিকেলে রোদ পড়তে পাঁচটা
নাগাদ বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ির পথে।আমাদের
দুজনের মাঝে দুপাশে পা ঝুলিয়ে বসেছিল ছোটপুত্র।বলতে গেলে আমার কোলেই ছিল। পা দুটো দুই পাশে ঝোলানো ছিল। তিনজনে স্কুটারে
চেপেই ফিরছিলাম। গতির সামঞ্জস্য রেখেই গাড়ি
ছুটে চলেছে। প্রায় অর্ধেক পথ এগিয়ে এসেছি
এমন সময় দেখলাম মেনরোডের উপরে
আমাদের উল্টো দিক থেকে উর্দ্ধশ্বাসে একটি খালি সাইকেল ভ্যান ছুটে আসেছে।রাস্তা ফাঁকাই
ছিল। কারোর সাথে ধাক্কা লাগার কথাই নয়।
কপালের দোষ ভ্যানের চাকায় ধাক্কা লাগল
ছেলের পায়ে।আমি দেখলাম ভ্যানটা আমাদের
গাড়ির দিকেই ছুটে আসছে।
ছেলেটার দুই বগলের নীচে হাত গলিয়ে তুলেও
নিয়েছিলাম।তবে কিভাবে যে আঘাত লাগল
বুঝতে পারিনি। গাড়ি ব্রেক কষে থেমে যায়।এলাকার লোকজন ছুটে আসে।
কেস ফাইল করেছিলে?
ধুর তখন কি আর এসব মাথায় আছে।
আমি সামনের কাপড়ের দোকানে ঢুকে ছেলেটাকে টেবিলে শোয়াতে গিয়ে দেখলাম
ডান পায়ের উরু ব্যাঙের মতো ফুলে উঠেছে।
ডান পা বাম পায়ের থেকে ছোট হয়ে গেছে।
তখনই বুঝতে পারলাম পা ভেঙে দু টুকরো হয়ে
গেছে। স্টেশন বাজার এলাকা হওয়ায় ওখানকার
লোকেরা একটা প্রাইভেট কার ভাড়া করে দিল।
আমি ছেলেকে নিয়ে গাড়িতে উঠে সোজা
ওয়ালশ হাসপাতালের এমারজেন্সিতে। আর
ছেলের বাবা স্কুটার নিয়ে গাড়ির পেছনে আসছিল।
বাবা রে এই এতো কান্ড।বলো কিগো বৌদি। সঙ্গে
সঙ্গে প্লাস্টার করে দিল?
হাসপাতাল বলে কথা। তারপর তাদের কত নিয়ম।
ধাপে ধাপে তাদের কথা মানতে বাধ্য হলাম।
এমারজেন্সি ওয়ার্ডে ঘন্টাখানেক বসেই আছি,
এক্সরে করার জন্য। হঠাৎই পরিচিত এক শিশু
ডাক্তারের সঙ্গে সেখানে দেখা। তখনই উনি আমাদের ওই এক্স রে করার ব্যবস্থা করে দিলেন।
ওনার সাথে সেদিন না দেখা হলে কতক্ষণ যে
বসে থাকতে হতো কে জানে।
তারপর রিপোর্ট দেখে জানতে পারলে পা ভেঙেছে?
হ্যাঁ রিপোর্ট সে কথাই বলল।উরুর হাড় ভেঙে একটার উপরে একটা উঠে গেছে। ছবিতে আমরা
সেটাই দেখলাম। এরপর ছেলেকে ভর্তি করে নিল।
আমিও ছেলের সাথে রইলাম হাসপাতালে।
মানে তূমি ছেলের পাশে একই বিছানায়? তোমাকে থাকতে দিল? হ্যাঁ ওই পরিচিত ডাক্তার
ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। পরের দিন ডাক্তার পা
টেনে সেট করে ট্রাকশন দিয়ে ছয় সপ্তাহ বিশ্রামে
থাকতে বলেছিলেন।প্রথম এক সপ্তাহ হাসপাতালে
দুজনেই ছিলাম। তারপর ছেলেকে নিয়ে বাড়ি
ফিরে সবসময় চোখে চোখে রেখেছিলাম।খুব
দুরন্ত স্বভাবের। তাকে বিছানায় রাখাই দায়।
ছয় সপ্তাহ পরে ট্রাকশন খুলে দেওয়া হয়। এবার
সে হাটতে সাহস পায় না।দুপা এগিয়ে পড়ে যায়।
ডাক্তার বলেই দিয়েছিলেন প্রথম প্রথম হাঁটতে পারবে না ভয় পাবে।কিন্তু এই পায়েই আবার ফুটবল খেলবে এখনই।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *