ত্রিধারা -14
জানো রূপম বাবা অন্যমনস্ক হতেই হাত থেকে বেল্ট ছাড়িয়ে ড্যান্সি পালিয়েছে।
বাবা ওর পেছনে ছুটে মার্কাস স্কোয়ারের দিকে গিয়েও ওকে আর খুঁজে পেল না। বাড়ির সকলের খুব মন খারাপ । সবাই ভাবছে যদি গাড়ি চাপা পড়ে। সেদিন রাতে ড্যান্সিকে ছাড়া বাবা নিজে খেতেও পারে নি ঘুমোতেই পারে নি।পাড়ার সবাইকে বলে রেখেছে দেখতে পেলেই যেন খবর
দেয়। এইভাবে তিন চারদিন কেটে গেল। খোঁজ না
পেয়ে থানায় ছবি দিয়ে মিসিং ডাইরি করে।
সল্টলেকের জিডি ব্লকের এক বাসিন্দা কুকুররের
ট্রেনার।সে রাজভবনের কুকুর দেখাশোনার কাজ করত।সে ড্যান্সিকে দেখতে পেয়ে ধরে নেয়। সে তখন রাজভবনের কুকুরদের অনুশীলন করিয়ে নিজের বাড়ি ফিরছিল।রাজভবন এলাকায় কোনদিন সে এতো দামি কুকুর দেখে নি।দিব্যি সে তাকে নিয়ে সাইকেলে রওনা দেবে এমন সময় ভবানীপুর থানার হাবলদার নিজের কুকুরকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি ওই ট্রেনারের হাতে ড্যান্সিকে দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ভবানীপুর থানায় নিয়ে যায়।সেখানেও দেওয়া হয়েছিল তার ছবি। তখন থানার সবাই আন্দাজ করে বাবার ঠিকানায় কুকুরটি সনাক্তকরনের জন্য লিখিত চিঠি পাঠায়।
বাবা তখন ভবানীপুর থানার ওসিকে সম্বোধন করে চিঠি লেখে। পাড়ার ছেলেদের হাতেই চিঠির উত্তর পাঠায়।তাদের বলে কুকুরটির খোঁজ খবর ঠিক করে জানতে। ছেলেরা দেখে এসে বলে হ্যাঁ ওটাই ড্যান্সি।থানাতেই কুকুরটি আছে।ওকে কেউ খাওয়াতে পারে নি।ওরা এসে বলে থানার ওসি
উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া কারোকেই কুকুর দেবে না।একমাত্র মালিকের হাতেই তারা কুকুরটিকে দিতে
চায়।
এইসব শুনে বাবা আর দেরি না করে থানা যায়।
থানায় গিয়েই বাবা ড্যান্সির নাম ধরে ডাকতেই
ড্যান্সি বাবার কাছে আসার জন্য ছটফট করতে থাকে। তালা খুলতেই সে বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কুঁই কুঁই করতে থাকে আর বাবার গাল চাটতে থাকে। বাবার সাথে বাড়িতে ফিরে এলো
ড্যান্সি।ওর ফিরে আসাতে একটি কেক আনা হয়।সবাই মিলে ড্যান্সির আসার আনন্দে একসাথে কিছুটা সময়।কেক পেয়ে ড্যান্সিও খুশিতে কেকটা চেটে নিমিষে শেষ করে ফেলল।
ঠিক তিন চারদিন পরে কোন এক বন্ধুর অস্ত্রপচারে বাবা ব্যস্ত ছিলেন।সারাদিন ড্যান্সির সাথে বাবার দেখা হয়নি। বাড়ি ফিরে দেখেন, ড্যান্সি নেই। কখন সে টুক করে পালিয়েছে কেউ
বুঝতেই পারিনি।
বাবা বলতেন ড্যান্সি বরাবরই ছটফটে। কিন্তু বেচারি রাস্তা চিনে ফিরতে পারে না!
বাড়ির ত্রিসীমানায় খুঁজে পেল না। সে বারও ঠনঠনিয়া কালিমন্দিরের সামনে ড্যান্সিকে দেখে বাবার এক বন্ধুপ্রতিবেশী ধরে আনে। এ যাত্রায়
বাবাকে বন্ধু বাঁচিয়ে দিল।বন্ধু ভাগ্যিস সেদিন ওই
পথ দিয়ে ফিরেছিল তাই তো কুকুরটাকে দেখতে
পেয়ে ফিরিয়ে দিল।তখন ফেসবুক থাকলে
হয়তো ছবি দিয়ে লিখে পোষ্ট করে ,খোঁজার
চেষ্টা করত।