ত্রিধারা -13
উপমা আর আমি শান্তিনিকেতন থেকে ফিরছি,পথে ওর কাকা প্রতাপবাবুর সঙ্গে দেখা। কাকার পুষ্যি গোল্ডেন রিট্রিভারটির বিষয়ে তাদের কথা হচ্ছিল। তখনই জানতে পারি উপমা কুকুর ভালবাসে।প্রতাপবাবু বলেন, পরিচিত এক রিকশাওয়ালা রাস্তায় পাগ প্রজাতির কুকুর কুড়িয়ে পেয়ে তার কাছে নিয়ে আসে।কাকার বাড়িতে কুকুরটা দেখে উপমার খুব পছন্দ হয়।তখনই সে বাড়িতে কুকুরটাকে পালন করে।
প্রতাপবাবু নিউ টাউনে থাকেন। যুবকের হ্যান্ডব্যাগে সব সময় কিছু না কিছু বিস্কুট থাকে। তাই দিয়ে রোজ গুচ্ছের কুকুর, বেড়াল এদের সেবা করেন। অনাথ, অজ্ঞাতকুলশীল নানা প্রজাতির ডজনখানেক কুকুর বাড়িতেও রেখেছিলেন। তাদের নিয়ে প্রতাপবাবুর মা-বাবারও ভালো সময় কাটত।ওনারা বৃদ্ধ হলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন আর কুকুর বাড়িতে রাখতে ভরসা করেন নি।
এখনও বিভিন্ন এলাকায় কোনও অসহায় পশুর হদিস মিললে অনেকেই তাঁকে খবর দেন।
উপমার পুষ্যি বিউটির কথা জানতে চাইলাম।
বিউটি পাগ প্রজাতির ছোট কুকুর।
ও নাকি দেখতে মিষ্টি, কিন্তু মেজাজী। ডগফুড নয়, চিকেন চাই! দুধ দিয়ে ডিমের কুসুম খায়। সাদাটা ছুঁয়েও দেখে না। একই খাবার রোজ খায় না।নিত্য নতুন খাবার খেতে দিতে হয়।যে বছর সকালে সূর্য গ্রহণ হলে সন্ধ্যা মনে হয়েছিল সকাল সেবছরই রিকশা ওয়ালা ওকে রাস্তায় পেয়ে বাড়ি
নিয়ে আসে।খাচ্ছে না দেখেই প্রতাপবাবুকে দিয়ে
দেয়। তখন তো প্রতাপবাবু আর বাড়িতে কুকুর
রাখতেন না।সেদিন উপমা কাকার বাড়ি থেকে
ওকে নিয়ে আসে।প্রতাপবাবু আর মায়ায় জড়াতে
চাইলেন না।
প্রতাপবাবু ঠিকই বলছেন।এরা বড় মায়ার।
দুষ্টু হলেও আমাদের ড্যান্সি ছিল সকলের প্রিয়।
আমার বাবার প্রিয় ‘ড্যান্সি’ শ্রাবণ মাসে ১৯৯৫ সালে বেতের ঝুড়িতে করে প্লেনে চীন থেকে এসেছিল।
তখন ওর বয়স ছয় মাস ছিল। আমরা বললাম
ওকে ভোলা নামে ডাকব।কিন্তু সে নামে ডাকলে
সে সারা দিত না। সে তো চাইনিজ ভাষা ছাড়া
কিছুই বুঝতে পারতো না তখন।বাবাকে তখন
চীনা বন্ধুর থেকে কিছু চীনা ভাষা ওর জন্য শিখতে হয়েছিল।
মায়ার বাঁধনে বশ করে ফেলতে সময় নেয়নি দুষ্টুমিষ্টি হলুদ কালো বক্সার। কয়েক দিন ধরে
মন মরা হয়ে পড়েছিল সেই মূর্তিমান।সেখানকার
পরিবেশের সকলে তাকে হারিয়ে তাদের ঘর অন্ধকার। আর আমাদের ঘর তাকে পেয়েই আলো ঝলমল।
মা পড়ে রইল চীনে আর তার ছানা ভারতে।বাবা তাই খুব আগলে রাখত নিজের কাছে।
ড্যান্সিকে মোটা টাকার বিনিময়ে দিয়েছিলেন চীনা বন্ধু লি সাহেব। ফুটে উঠেছে শহরের বুকে এক মা হারা কুকুরছানাকে নিয়ে সংবেদনশীল স্বার্থহীন ভালবাসার চিত্রনাট্য।
ছ’দিন বাদে ড্যান্সিকে নিজে খেতে দেখে বাবা খুশি। তারপর ওকে যত্ন করে শ্যাম্পু করিয়ে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে ঘুরছিলেন।
ওর যাতে সর্দি না হয় তাই হালকা রোদের ছাওয়ায় গলায় বকলেশ দিয়ে বেল্ট হাতে ধরেছিলেন।