ত্রিধারা -11
কি গো বৌদি! গত কয়েকদিন যে তোমার দেখা নেই, শরীর ঠিক আছে তো?
– ও, রূপম যে, কেমন আছো?
তোমার বাড়ির সকলে ঠিক আছে?
-সবাই মোটামুটি আছি।
– আমার কথা কি আর বলব।
কেন বৌদি কি হয়েছে?
-ওই একটু আলসেমি করে সকালে ওঠা হয়না; নতুন করে হাঁটুতে ব্যথা কোমরের ব্যথাও বেড়েছে, তাই আর সকালে বেরতে পারি না।
– না না বৌদি, মর্নিং ওয়াক ইস মাস্ট, শরীর মন দুটোই ভালো রাখে।
– আচ্ছা রূপম তোমাদের পাড়ার চৌধুরী বৌদির মেয়ের কি খবর, কিছু জানো?
– ওমা তুমি ওকে চিনলে কি করে?
– তোমার দাদার কাছে পড়তে আসত।কয়েকদিন হল আর আসছে না।জানো কিছু?
– ওমা তুমি জানোনা! চৌধুরী বৌদির মেয়ে, মানে রমলার কথা বলছো?
– হ্যাঁ খুব সুন্দর দেখতে।
– সে তো একজনের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল। দশ দিন বাদে আবার ফিরে এসেছে।আমাদের কাজের
দিদি মাকে বলছিল।
– বল কি? ছিঃ! ছিঃ! আজকালকার মেয়েগুলো কেন যে এইরকম ! লাজ-লজ্জা নেই ।কোন আগুপিছু না ভেবে হুট করে কারো সাথে চলে যায়, চরিত্র খুইয়ে আবার ফিরে আসে।
– শুনলাম তো তার নাকি আবার বিয়ের জন্য পাত্র খোঁজ করছে।
– তাই নাকি?দেখ ঠিক খুঁজে পেয়ে যাবে।
– একজনের সাথে থেকে এলো আবার অন্যজনের সাথে সংসার।এ ঘোর কলি সমাজটা উচ্ছন্নে গেল
বৌদি।
তুমি এখানেই ভুল করছো।তুমি একজনকে দিয়ে
সমাজের বিচার করছো কেন? বিচার করছো কিভাবে?সমাজের কজন মেয়ে এরকম করছে বল?
তা ঠিক এইসব মেয়েদের জন্যই তো সমাজের
বদনাম হয়।
অথচ দেখ রূপম যে ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটি ঘ র ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে দুদিন পর বাড়ি ফিরে এলো সে যদি সমাজের চোখে অপরাধী হয় তবে ছেলেটি অপরাধী হবে না কেন?
এটাই তো আমাদের সমাজের চরমতম দুর্বলতা।
পুরুষশাসিত সমাজের স্বার্থপর নিষ্ঠুরতা।
এর বিচার কে করবে বল?
সব টাকায় ঢাকা পড়ে যাবে বৌদি,সব টাকায় ঢেকে যাবে।
জানো বৌদি মেয়েটির ঠাকুমার মামারবাড়ি খুব বড়োলোক। ও মেয়ের দোষ টাকায় ঢেকে যাবে।
মামার বাড়ির সঙ্গে ওদের খুব ভাল সম্পর্ক।
বল কি? ওর ঠাকুমার মামার বাড়ি কোথায়?
কলকাতায় ।আমরা তো ওদের কাছে নস্যি। ওরা প্রতি বছর ভিখারী খাইয়ে সুনাম অর্জন করে।
তা সে যাই হোক। চরিত্রের দাগ তো আর মুছবে না।