তোমার প্রেমে
“চকচকে চেহারা তোমার , আমার মনকে লোভী করে—- আর পারছি না” ভজহরি সামন্ত বিড়বিড় করে বলে আবার পাশবালিশটিকে জড়িয়ে পাশ ফেরেন। স্বামীর ঘুমের ঘোরে কথা বলার অভ্যেস যে আছে তা ভালো জানেন ভজহরি সামন্তর স্ত্রী আন্নাকালী সামন্ত।
স্বামীর বহু গোপন কথার সন্ধান এভাবেই পেয়ে যান আন্নাকালী।
কিন্তু তাইবলে এমন কথা?—-সারারাত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে কোনরকমে রাত কাটান আন্নাকালী। রাত থেকেই মাথায় আগুন জ্বলছে— যতক্ষণ পর্যন্ত না এর শোধ নিচ্ছেন ততক্ষণ মাথা ঠান্ডা হবে না।
নিয়মমত সকালের প্রাত্যহিক কর্ম সেরে ভজহরিবাবুর হাঁক ” গিন্নী আমার চা ‘টা দাও দিকি। খেয়ে একটু বের হবো—“
কোন উত্তর না দিয়ে ঠকাস করে চায়ের কাপটা চৌকিতে রেখে মুড়ির বাটিটা দিয়ে হনহন করে বেড়িয়ে যায় আন্নাকালী।
ভজহরি সামন্ত মোবাইলটি খুলে ” আহা কি চকচকে, কি ছিপছিপে রূপ—” বলে চায়ে একটা চুমুক দিতেই অন্নপ্রাশনের ভাত বেড়িয়ে আসে—
“গিন্নী , এটা কি চা হয়েছে? এটা কি চা।–“
রান্নাঘরে দুমদাম বাসনের আওয়াজের সাথে উত্তর আসে —“স্পেশ্যাল চা।নিম চা।”
“নিম চা ? সে আবার কি ? বাপের জন্মে তো এমন চা খাই নি খাওয়া তো দূরের কথা নামও শুনি নি।”
“এখন থেকে এমন চা ই পাবে —“
কোন কারনে গিন্নীর মেজাজ যে সপ্তমে আছে তা বুঝতে অসুবিধে হয় না পঞ্চাশোর্ধ ভজহরি সামন্তর।
কথা না বাড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে টেরি কেটে সাধের গোঁফটা ঠিক করে আঁচড়ে বেড়িয়ে পড়েন।
পাড়ার দিনুর দোকানে জম্পেশ করে চা খেয়ে পকেট থেকে টাকা বের করে ” দিনু তাড়াতাড়ি পয়সাটা নে ভাই।তাড়াতাড়ি না গেলে তাকে আর পাবো না—আহা কি চকচকে তা রূপ—“
দিনু ভজহরি সামন্তর হাত থেকে টাকা নিতে নিতে ভ্রু কুঁচকে ” ভজাদা কার রূপের কথা বলছো গো ?”
ততক্ষণে ভজহরি সামন্ত রিক্সায় ছেপে বসে কোথায় যেতে হবে বলে দিয়েছে।
ওদিকে স্বামীকে ওমন টেরি কেটে বাড়ি থেকে বের হতে দেখে আন্নাকালী আজ এর একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে উদ্দ্যেশ্য নিয়ে পিছু নিয়েছে।
দিনুর দোকানে কোনরকম অস্বাভাবিক কিছু না দেখতে পেলেও স্বামীর যে কোন একটা তাড়া আছে সেটা লক্ষ্য করেন। ভজহরি সামন্ত রিক্সায় চেপে বসতেই আন্নাকালী সামন্তও বেশ গাট্টাগোট্টা একটা রিক্সাওয়ালার রিক্সায় চেপে বসে ” চল “
” কোথায় যাবেন কাকিমা ?”
” ঐ সামনের রিক্সাটার পেছন পেছন চলো।”
ফুরফুরে মেজাজে ভজহরি সামন্ত গুনগুন করে গান ধরেছেন– রিক্সাওয়ালাও বেশ তার রেশে এগিয়ে চলেছে–
পেছনে আন্নাকালী সামন্ত পাখির চোখের মতো নজর নিয়ে অণুসরণ করে চলেছে স্বামীর রিক্সাখানা।
বেশ কিছুক্ষণ পর চলার পর ভজহরি সামন্ত রিক্সা থেকে নেমে কোনরকমে পয়সা মিটিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে চলেন–
আন্নাকালী সামন্ত নিজের দশাসই চেহারা নিয়ে রিক্সা থেকে রিক্সা ভাড়া মিটাতে গিয়ে মানুষটাকে আর দেখতে পান না।
মহাবিপদ এবার তিনি করবেন এতকিছু করে এতদূর এসে শেষে বিফল মনোরথে ফিরতে হবে ভেবে মেজাজটা আরো খিঁচে গেল।
এমন সময় পাড়ার ন্যাপলা ” ওমা বৌদি , আপনি এখানে ? এইমাত্র ভজাদার সাথে দেখা হলো দেখলাম ভীষণব্যাস্ত হয়ে ঐদিকে ছুটছেন —“
আহা এমন সংবাদ দেবার জন্য ন্যাপলার সাথে একটু মিষ্টি হাসি না দিলে হয় —
” হ্যাঁ গো উনিই আমাকে বললেন আস্তে ধীরে এসো আমি এগিয়ে যাই—-” বলে আন্নাকালী ন্যাপলার দেখানো পথে এগোতে থাকে—
কোনদিকে নজর নেই— চোখ শুধু একজনকেই খুঁজে চলেছে —
চারদিকের ধাক্কাগুঁতোতেও কোন যায় আসে না আজ সামন্ত গিন্নীর —উদ্দ্যেশ্য শুধু একটাই যে রহস্য তার গতরাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে তার উদ্ঘাটন করা।
হ্যাঁ ঐ তো সবুজ পাঞ্জাবি তো দেখা যাচ্ছে —
কি ভীষণ ধাক্কাধাক্কি খেয়ে চলেছে —কিন্তু সে কোথায় ? যার খোঁজে এত হ্যাপা করে আন্নাকালীর এখানে আসা—
“ভজাদা , তোমার জন্য অনেক কষ্টে শেষ এটিকে বাঁচিয়ে রেখেছি —-হেব্বি ডিমান্ড “
ভজহরি সামন্ত তাকে হাতে পেয়ে “আহা তোমার চকচকে রূপ আমাকে লোভী করে তুলেছে —“
কড়কড়ে দু হাজারটাকার নোটটা হাতে ধরিয়ে দিতে মাছওয়ালা ” ভজাদা পিওর পদ্মার — সাতদিনেও হাতের গন্ধ যাবে না “—
আন্নাকালী সামন্ত ফানুসের মতো চুপসে গিয়ে বাড়ি এসেই ইলিশ ভাঁপা , দই ইলিশ সাথে ইলিশের লেজাটা কড়া করে ভেজে স্বামীর পাতে তুলে দিয়ে স্বস্ত্বির নিঃশ্বাস ফেলে।