Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » তেইশ ঘণ্টা ষাট মিনিট || Anish Deb » Page 2

তেইশ ঘণ্টা ষাট মিনিট || Anish Deb

ওষুধের দোকানের কাছে পৌঁছে পকেটে হাত ঢোকাল জিশান। এবং সঙ্গে-সঙ্গে আঁতকে উঠল। পকেটে টাকা নেই! অথচ একটু আগেই তো ছিল! একটা একশো টাকার নোট, একটা পঞ্চাশ টাকার নোট, একটা কুড়ি টাকার নোট, আর কিছু খুচরো পয়সা। এখন শুধু খুচরো পয়সাগুলো পড়ে আছে।

কী হবে এখন! বহু কষ্টে গতকাল দুশো টাকা রোজগার করেছে। তখনই ঠিক করেছে প্রথমেই শানুর জন্য একটা দুধের কৌটো কিনবে। ছ’মাসের বাচ্চাটা এ পর্যন্ত ছ’সপ্তাহের দুধ পেয়েছে কি না বলা মুশকিল। ওর খিদের কান্না জিশানকে পাগল করে দেয়। আর তার সঙ্গে জুড়ে যায় মিনির কান্না। বাচ্চার কষ্ট কোন মা-ই বা সইতে পারে!

কিন্তু তাই বলে মিনি কখনও জিশানকে দোষ দেয় না। কারণ, সাংঘাতিক অভাব-অনটনের কথা জেনেশুনেই তো ও জিশানকে বিয়ে করেছে। তখন জিশান একটা লোহালক্কড়ের কারখানায় কাজ করত—বিয়ের কয়েকমাস পরেই ওটা লকআউট হয়ে যায়। তারপর…তারপর থেকে জিশান রোজই কাজের খোঁজে বেরোয়। যা কাজ পায় তাই করে—শুধু কোনওরকমে কিছুটা টাকা জোগাড় করতে পারলেই হল।

বারকয়েক পকেট হাতড়ে দোকানের কাছ থেকে সরে এল জিশান। ওর নাকে একটা পোড়া গন্ধ এল। ও চোখ ঘুরিয়ে তাকাল সেদিকে। কয়েকটা লোক রাস্তার পাশে একটা আবর্জনার ভ্যাটের কাছে তার পোড়াচ্ছে। লোকগুলোর পোশাক ছেঁড়া-খোঁড়া নোংরা। তার ওপর মাথার যা অবস্থা! কতদিন স্নান করেনি কে জানে!

লোকগুলো ক্ষুধার্ত দৃষ্টি নিয়ে আগুনের কুণ্ডলী ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারের প্লাস্টিকটা পুড়ে গেলে ভেতরের তামা কিংবা অ্যালুমিনিয়ামটা ওরা ওজনদরে বেচে দেবে।

প্লাস্টিক পোড়া ধোঁয়া পাক খেয়ে-খেয়ে ওপরদিকে উঠছিল। মাথা তুলে ওপরে তাকাল জিশান। ধোঁয়ায়-ধোঁয়ায় রাতের আকাশের সুন্দর কালো রংটাই আর নেই—কেমন যেন লাল আর হলুদের আভা মেশানো ঘোলাটে হয়ে গেছে।

না, শুধু এই তার পোড়ানো ধোঁয়ার জন্য নয়। এই শহরের নানান জায়গায় শুধু কলকারখানা, গাড়ি আর উনুনের ধোঁয়া। প্রায় ষোলো বছর ধরে জিশান এই ব্যাপারটা দেখছে। এ ছাড়া রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা, খানাখন্দে ভরা, যেখানে-সেখানে নোংরার স্তূপ, বাড়িগুলো জীর্ণ মলিন, রাস্তার বেশিরভাগ আলোই খারাপ—সারানোর কেউ নেই, পুলিশ-প্রশাসন বলেও কিছু নেই। সরু ঘিঞ্জি রাস্তায় যে-গাড়িগুলো চলে তাদের মডেল এত পুরোনো যে, ভিনটেজ কার বলা যায় অনায়াসে। আর তাদের যেরকম দোমড়ানো মোচড়ানো চেহারা তাতে সেগুলো যে এখনও চলছে সেটাই বড় কথা।

এককথায় শহরটা আর বেঁচে নেই। আর বেঁচে আছে বলে যদি ধরে নেওয়া যায় তা হলে বলতে হয় শহরটার যক্ষ্মা, পক্ষাঘাত এবং ক্যান্সার হয়েছে। সবাই এটাকে বলে ‘ওল্ড সিটি’, কিন্তু জিশান বলে ‘ডেড সিটি’। এই শহরটা কেউ চালায় না—নিজে থেকে চলছে।

জিশান বাবার কাছে শুনেছে, নব্বই কি একশো বছর আগেও এই শহরের নাম ছিল কলকাতা। তারপর নতুন একটা শহর তৈরি হল তার পাশে। নাম হল ‘নিউ সিটি’। নিউ সিটির গড়ে ওঠার কাজ চলতে লাগল, আর একইসঙ্গে অনাদরে অবহেলায় ভাঙতে লাগল ওল্ড সিটি।

এখন, প্রায় পঞ্চাশ-ষাট বছরের ভাঙা-গড়ার খেলার পরে, ওল্ড সিটি যখন ধুঁকছে, নিউ সিটি তখন টগবগ করছে—সেখানে সবকিছুই নতুন, ঝাঁ-চকচকে, ব্যাপক।

মাথা তুলে আকাশে তাকাল জিশান। ধোঁয়াশা পেরিয়ে অদ্ভুত দৃশ্যটা দেখতে পেল। গত কুড়ি-বাইশদিন ধরেই দৃশ্যটা সবার চোখে পড়ছে। দুটো প্রকাণ্ড ধূমকেতু পাখনা মেলে ছড়িয়ে রয়েছে আকাশে। একটার রং লালচে, আর অন্যটার আভা নীল। ওদের লেজদুটো ক্রমশ চওড়া হয়ে দিগন্তে গিয়ে মিশেছে। ওদের পাশে চাঁদের কুমড়োর ফালিটা কেমন ক্ষয়াটে অসুস্থ মনে হচ্ছে।

আনমনাভাবে পথ হাঁটতে শুরু করল জিশান। বাড়িতে ফিরে কী বলবে মিনিকে? এরকম বোকার মতো টাকা হারানোর কোনও মানে হয়! শানুর কথা ভেবে ওর বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল।

আর ঠিক তখনই একটা লোক ছুটে এসে জিশানকে ধাক্কা মারল।

জিশান পড়ে যেতে-যেতে কোনওরকমে নিজেকে সামলে নিল। তারই মধ্যে টের পেল, লোকটা ধাক্কা মারার সময় ওর পকেটে হাতটা ঢুকিয়েই আবার বের করে নিয়েছে। এবং একইসঙ্গে প্রাণপণ দৌড় লাগিয়ে ঢুকে গেছে একটা অন্ধকার গলিতে।

পকেটে হাত দিয়ে দেখল জিশান। খুচরো পয়সা খানিকটা কমে গেছে। মনে-মনে ভীষণ রাগ হল ওর। পকেটমারি-চুরি-ছিনতাই এ-শহরে রোজকার ঘটনা। জিশান সবসময় সাবধান থাকে বটে, অথচ একটু আগে একশো সত্তর টাকা উধাও হওয়ার ব্যাপারটা ও একেবারেই টের পায়নি।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *