পর্ব – ১৩
মেয়েটার চুলগুলো ছোট, খাড়া-খাড়া। চোখে সবুজ রঙের ফ্লুওরেসেন্ট কাজল। নাকে আর গলায় দুটো সোনার রিং। কপালে চকচকে কী একটা গুঁড়ো মাখা। তার কণাগুলো জোনাকির মতো ঝিকমিক করছে।
মেয়েটার গায়ে স্লিভলেস শর্ট জ্যাকেট। পায়ে লেদার স্ল্যাক্স, তার ওপরে মেটাল বাটন। ডানহাতে একটা ফানি চকোলেট স্টিক। সেটা মাঝে-মাঝে চুষছে।
ফানি চকোলেট স্টিকটা ঠিক নেশার জিনিস নয়। তবে এটার একটা বিশেষ গুণ আছে। অন্য কোনও কিছু থেকে একবার নেশা হলে ফানি চকোলেট স্টিক সেই নেশার ঝোঁককে বহুক্ষণ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
মেয়েটা সিমানকে একটা ধাক্কা মেরে জড়ানো গলায় বলল, ‘য়ু স্কাম! ওই কন্ট্রোল প্যানেলের বাটনগুলো তোমার পার্সোনাল প্রপার্টি নয়। লেট মি প্রেস সাম…।’
সিমান রুখে দাঁড়াল কিন্তু মেয়েটার গায়ে হাত তুলল না। নেশা জড়ানো গলায় বলল, ‘বোতাম টেপাটাও একটা কম্পিটিশান, সিসি। লড়াই করে জায়গা করে নিয়ে তোমাকে বোতাম টিপতে হবে…।’
‘থ্যাংকস ফর দ্য অ্যাডভাইস। আমি ব্লু-র ওপরে এক লক্ষ টাকা বেট করেছি অ্যান্ড আই ওয়ান্ট ব্লু টু উইন। সো আই ওয়ান্ট দ্য উইনিং মুভস, ও.কে.? উড য়ু প্লিজ গেট লস্ট, ডিউড?’
‘হু দ্য হেল আর য়ু?’ মেয়েটার মুখের কাছে হিংস্র মুখ নিয়ে এল সিমান। ওর থুতনিতে একচিলতে দাড়ি। গালে একটা ছোট্ট লাল ফুল—লেসার ট্যুাটু।
তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হাত নাড়ল সিমান : ‘এখানে তোমাকে নতুন মনে হচ্ছে। য়ু ডোন্ট নো দ্য রুলস। কাম ব্যাক হোয়েন য়ু গ্রো আপ, বিচ!’
সিমান কথাগুলো উচ্চারণ করার সঙ্গে-সঙ্গে মেয়েটা নোংরা গালিগালাজ করে উঠল এবং সিমানের গালে সপাটে এক চড় কষাল।
সিমান প্রথমটা হকচকিয়ে গেলেও পরমুহূর্তেই একটা পালটা থাপ্পড় কষিয়ে দিল মেয়েটার গালে। মেয়েটার হাত থেকে ফানি চকোলেট স্টিকটা পড়ে গেল।
তারপর যেটা শুরু হল সেটা কিল-চড়-লাথি-ঘুসির বিচিত্র লড়াই। কোনও পুরুষ এবং মহিলার এরকম অসভ্য লড়াই কল্পনা করাও কঠিন।
হলোগ্রাম ফাইটারদের অক্লান্ত লড়াই চলছিল। তাদের ঘিরে দর্শকদের হইহুল্লোড়ও চলছিল। কিন্তু তারই মধ্যে দশ-বারোজন সিমান এবং মেয়েটিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে পড়ল। এবং বিনাপয়সার মজা দেখতে লাগল।
হঠাৎই ওদের কেউ বাজি ধরার ব্যাপারটা শুরু করল। সঙ্গে-সঙ্গে ওরা নিজেদের মধ্যে বাজি ধরতে লাগল। কেউ সিমানকে জেতার জন্য চিয়ার আপ করতে লাগল। আর কেউ মেয়েটাকে।
কিন্তু কেউই ওদের লড়াইটা থামাতে এগিয়ে এল না। বিশৃংখল উল্লাসে ‘জয় রুম’ তখন কাঁপছে।
সিমান আর মেয়েটির শরীর অক্ষত ছিল না। আঁচড়-কামড়ের চিহ্ন থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল। কিন্তু সেদিকে ওদের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। ওরা তুচ্ছ কারণে অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে লড়াই করছিল।
হঠাৎই একটি ছেলে ‘স্টপ দ্য ফাইট! স্টপ ইট!’ বলে চিৎকার করে উঠল। আরও একটি মেয়ে ছেলেটির সঙ্গে গলা মেলাল। ওরা দুজনে ভিড়ের বৃত্ত ঠেলে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করতে লাগল, আর একইসঙ্গে ‘ওদের থামাও! ওদের থামাও!’ বলে চিৎকার করে চলল।
ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ একজন ছেলেটাকে লক্ষ্য করে গালাগাল ছুড়ে দিল। এবং তার প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই একটা ঘুসি।
ছেলেটা ছিটকে পড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসা একটা অভদ্র ধাক্কা ওর পড়ে যাওয়াটা রুখে দিল। আর তারপরই অন্য এক অ্যাঙ্গেল থেকে কেউ ওকে লক্ষ্য করে আর-একটা ঘুসি চালাল।
তারপর ব্যাপারটা চলতেই থাকল। এবং শেষ পর্যন্ত ছেলেটা পড়ে গেল।
ছেলেটির প্রতিবাদী সঙ্গী মেয়েটিও রেহাই পায়নি। ওর কপালেও একইসঙ্গে কিছু খুচরো চড়-থাপ্পড় জুটেছে। ওর একটা চোখ ফুলে গেছে. নাকের পাশে কেটে গিয়ে রক্ত পড়ছে। ও কোনওরকমে ভিড়ের বৃত্তের বাইরে পালিয়ে আরও হেনস্থা থেকে বেঁচেছে।
সব মিলিয়ে ব্যাপারটা এই দাঁড়াল যে, সিমান আর ওই মেয়েটির মারপিট যেন একটা মজাদার সাসপেন্স সিনেমা। দু-একজন ‘পাগল’ ছাড়া কেউই চায় না সিনেমাটা মাঝপথে বন্ধ হোক।
কিন্তু সিনেমাটা একটু পরেই শেষ হল। শেষ করল মেয়েটাই। ও কখন যেন একটা মেটাল কি-রিং বের করে সিমানের গালে বসিয়ে টেনে দিয়েছে।
সিমানের গাল ফাঁক না হয়ে গেলেও ক্ষতটা যে মোটামুটি গভীর সেটা রক্তের ধারা এবং সিমানের যন্ত্রণার চিৎকার শুনে বোঝা গেল।
সিমান ভয়ে ছিটকে পিছিয়ে গেল। একটা হাত আহত গালে চেপে ধরল। চোখে খানিকটা বিস্ময়, খানিকটা অপমান। আর তার সঙ্গে যন্ত্রণার অশ্রুজল।
সিমানের মুখটা দেখে মায়া হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু জনতার আচরণ দেখে মায়া ব্যাপারটা ওদের মধ্যে আদৌ আছে বলে মনে হল না।
হলোগ্রাম ফাইটার ব্লু এবং রেড তখনও লড়ছিল। হলোগ্রাম স্কোরবোর্ডের হিসেবে ব্লু তখন অনেক এগিয়ে আছে। কিন্তু স্কোর ওলটপালট হয়ে যেতে পারে যে-কোনও মুহূর্তে।
সিমানকে স্রেফ ভুলে গিয়ে ছেলেমেয়ের দল আবার হলোগ্রাম ফাইটের উত্তেজনায় ডুবে গেল।
সিমানের সঙ্গে লড়াইয়ে জিতে যাওয়া মেয়েটা অন্য সকলের সঙ্গে মিলেমিশে হাসাহাসি করছিল। আর পকেট থেকে একটা হিলিং স্প্রে বের করে নিজের শরীরের ক্ষতের ওপরে স্প্রে করছিল। তখন একটা ছেলে একটা সবুজ রঙের ফানি চকোলেট স্টিক মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিল। মেয়েটা ওকে হেসে ‘থ্যাংকস’ জানাল, চকোলেট স্টিকটা চুষতে লাগল।
হলোগ্রাম ফাইট যতই শেষের দিকে এগোতে লাগল চিৎকার আর উত্তেজনার মিটার ততই চড়তে লাগল। সিমান ভিড়ের চক্র থেকে বেশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আহত নজরে লড়াই দেখছিল আর শরীরের কেটে-ছড়ে যাওয়া জায়গাগুলো মেরামত করার চেষ্টা করছিল। ওর বুকের ভেতরে ঢিপঢিপ করে শব্দ হচ্ছিল। কে জিতবে? রেড, না ব্লু? ওর বাজি ধরা আট হাজার টাকা শেষ পর্যন্ত…।
হলোগ্রাম ফাইট শেষ হতেই চিৎকারের ফোয়ারা ছুটল। তার সঙ্গে তীব্র শিসের আওয়াজ, পশু-পাখির নকল ডাক।
যারা বাজিতে জিতেছে তারা পাগলের মতো হাত তুলে লাফাতে লাগল। আর যারা হেরেছে তাদের চিৎকার, লম্ভঝম্প সব স্তিমিত হয়ে গেল।
রেড ফাইটার শুয়ে পড়েছে মেঝেতে। তাকে আর দেখা যাচ্ছে না। ব্লু ফাইটার বিজয়ীর ভঙ্গিতে হাত তুলে নাড়ছে, এরিনায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সেদিকে তাকিয়েই সিমান ভেঙে পড়ল। কাঁদতে শুরু করল। তারপর ওই অবস্থাতেই বসে পড়ল নকল ঘাসের মেঝেতে।
আট হাজার টাকা গেল! এখন তো সম্বল বলতে কিছুই প্রায় নেই! কাল যখন নেশার টানে মনটা আকুলিবিকুলি করবে তখন কী করবে ও? ‘জয় রুম’-এর এন্ট্রি ফি কোথা থেকে পাবে? টাকা চেয়ে বাবার কাছ থেকে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। আর মা? মা তো ওর সঙ্গে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনও কথাই বলে না!
তা হলে?
আগামীকালের নেশার তেষ্টার কষ্টটা সিমান যেন এখন থেকেই টের পেতে শুরু করল। ওর গলা শুকিয়ে এল। বুকের মধ্যে কেমন একটা চাপ তৈরি হল। আর একইসঙ্গে দু-চোখে জলের ধারা বইতে লাগল।
কিছুক্ষণ একইভাবে বসে থাকার পর সিমান চোখ মুছল। নাক টানল কয়েকবার। তারপর ধীরে-ধীরে উঠে দাঁড়াল।
না, হাল ছাড়লে চলবে না। ওর কাছে সামান্য যা কিছু টাকা আছে সেটাকেই পুঁজি করে আগামীকালের সন্ধেটা শুরু করতে হবে। যদি ও কয়েকটা ছোট-ছোট বাজি জিততে পারে তা হলেই আর চিন্তা নেই।
কিন্তু ভাগ্য ওকে সাহায্য করবে তো? ও পারবে তো জিততে?
এসব কথা ভাবতে-ভাবতে ভাঙাচোরা সিমান ‘জয় রুম’ থেকে বেরিয়ে এল।
•
গেম পার্টিসিপ্যান্টস ক্যাম্পাসের জীবন জিশানের অসহ্যরকম একঘেয়ে লাগছিল। সারাটা দিন ধরে শুধু অ্যানালগ জিম, ডিজিটাল জিমের ট্রেনিং, নানান আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ট্রেনিং, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, অ্যাথলেটিক অপারেশানস, কিল গেম সিমুলেটর-এ ট্রেনিং আর সাইকোলজিক্যাল সেশান। এরই ফাঁকে বিকেলে দেড় ঘণ্টার ব্রেক। তখন জিশান আর অন্য পার্টিসিপ্যান্টসরা নানান খেলাধুলো আর আড্ডা-গল্পে মেতে ওঠে।
আড্ডা মারার সময় বা গল্প করার সময় জিশান অবাক হয়ে খেয়াল করে ও হাসছে, আর অন্যান্য প্রতিযোগীও তার ব্যতিক্রম নয়। ওদের কেউ-কেউ বেশ জোরে-জোরে হেসে উঠছে। কয়েক মুহূর্তের জন্য ভুলে যাচ্ছে, কোন পরিস্থিতির মধ্যে ওরা দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওদের মাথার ওপরে ঠিক কী ধরনের এবং কতটা ধারালো খাঁড়া ঝুলছে।
পিট ফাইটের পর একমাস সাতদিন পার হয়ে গেছে। জিশান আরও একমাস সাতদিন এগিয়ে গেছে কিল গেমের দিকে। ওর এটা ভালো লাগছিল। কারণ, মিনি আর শানুর সঙ্গে ওর দেখা হবে কি হবে না তার একটা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে চলেছে। এবং তার পরই ওর জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে শান্তিপূর্ণ জীবন। মিনি-শানুর কাছে ফিরে যেতে পারলে যেমন ওর শান্তি, তেমনই ফিরে যেতে না পারলেও যেখানে ও যাবে সেখানে চিরপ্রশান্তি।
ঘুমের ঘোরে এসব কথা ভাবছিল জিশান। তখনই অটোমেটিক প্লেট টিভি থেকে মিষ্টি মেয়েটার মিষ্টি গলা শুনতে পেল ও।
‘জিশান! জিশান—ওঠো। ভোর হয়েছে…।’
জিশান চোখ খুলল। একটা হাই তুলে উঠে বসল বিছানায়।
প্লেট টিভি ‘অন’ হয়ে গেছে। তার রঙিন ‘পরদানশিন’ মেয়েটি মুখে সুন্দর হাসি ফুটিয়ে জিশানকে ডাকছে।
আশ্চর্য! জিশানের সঙ্গে চোখাচোখি হতেই মেয়ে বলল, ‘গুড মর্নিং। তাড়াতাড়ি হাত-মুখ ধুয়ে রেডি হয়ে নাও। মার্শাল স্যার ঠিক সাতটায় তোমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। ওই ইমার্জেন্সি স্পেশাল মিটিং-এর পর তোমার অ্যানালগ জিমের শিডিউল শুরু হবে…।’
জিশান বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। দেওয়ালের ঘড়ির দিকে তাকাল। ছ’টা বেজে পাঁচ মিনিট।
মেয়েটা মনে হল সরাসরি জিশানের দিকে তাকিয়ে আছে। এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন জিশানের ভিডিয়ো ইমেজ ও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।
অসম্ভব কিছু নয়। লুকোনো ক্যামেরা আর আধুনিক প্রযুক্তি যদি হাতে হাত মেলায় তা হলে ব্যাপারটা জলের মতো সহজ।
জিশান মেয়েটির চোখে চোখ রেখে সামান্য জড়ানো গলায় বলল, ‘ও.কে.—থ্যাংক য়ু। আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি…।’
টিভির পরদার আলো দপ করে নিভে গিয়ে অন্ধকার হয়ে গেল। স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্লেট টিভি অফ হয়ে গেছে।
জিশান তৈরি হতে শুরু করল। আর একইসঙ্গে ভাবতে লাগল, শ্রীধর পাট্টা আবার কেন ডেকে পাঠিয়েছেন।
জিপিসির বাইরে বেরোনোর জন্য ওকে শাস্তি দিতে ডেকেছিলেন শ্রীধর। চুলকুনি অস্ত্র দিয়ে অভিনব শাস্তি। কিন্তু তারপর তো চার দিন পার হয়ে গেছে! এর মধ্যে তো জিশান কোনওরকম গোলমাল করেনি! বরং ভালো ছেলের মতো নিয়ম করে রোজকার রুটিন মেনে চলেছে।
তা হলে?
প্রশ্নটার উত্তর পাওয়া গেল শ্রীধর পাট্টার অফিসে গিয়ে।
সিন্ডিকেট বিল্ডিং-এর একুশতলায় শ্রীধরের অফিস। এই ভোর সাতটাতেও অফিসটার চরিত্র সকাল এগারোটার মতন।
অফিসঘরে জিশানকে ঢুকিয়ে দিয়ে পিস ফোর্সের ‘বোবা’ গার্ডরা চলে গেল। আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে পা দিয়েই জিশান বিমূর্ত সৌন্দর্যের ধাক্কা খেল।
এত সুন্দর করেও একটা অফিসঘর সাজানো যেতে পারে!
ও হতবাক হয়ে ঐশ্বর্যময় অফিসঘরটাকে দেখছিল। ঘরের ডানপাশে একটা ফুলের বাগান। ফুটপাঁচেক চওড়া—গোল রিং-এর মতো। একটা স্বচ্ছ স্ফটিকের স্তম্ভকে ঘিরে খুব ধীরে ধীরে চক্রের মতো ঘুরছে।
বাগানে ছোট-ছোট ফুলের গাছ—তাতে রঙিন ফুল। এরকম সুন্দর প্রজাপতির মতো ফুল জিশান জীবনে দেখেনি।
বাগানের ঠিক ওপরে উড়ে বেড়াচ্ছে কয়েকটা ফ্যান টেইলড লাভ-বার্ড। অন্তত জিশানের দেখে তাই মনে হল।
পাখিগুলো কিচকিচ করে ডাকাডাকি করছে, বাগানের ওপরে একটা নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে উড়ছে—এখানে-ওখানে বসছে, কিন্তু কোনও অদৃশ্য মন্ত্রবলে যেদিকে-সেদিকে উড়ে চলে যাচ্ছে না।
এমনটা ভাবার কারণ, কোনও জাল কিংবা খাঁচাজাতীয় বস্তু জিশানের চোখে পড়ছে না।
বাগানের উলটোদিকের দেওয়ালে ঝরনার জল গড়িয়ে-গড়িয়ে পড়ছে। আলো পড়ে চিকচিক করছে। তার সঙ্গে জলের মৃদু কলকল শব্দ। এই ঝরনাকে পটভূমিতে রেখে অদ্ভুত স্টাইলে সাজানো রয়েছে আটটা বড় মাপের টিভির পরদা। তাতে নিউ সিটির কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দেখা যাচ্ছে।
ঘরের সিলিংটা অনেকটা ওলটানো কড়াইয়ের মতো। তাতে নীল আর সাদা ধোঁয়ার ছায়া আকাশের আভাস তৈরি করেছে। তার মধ্যে ছোট-ছোট হলদে আলোর ফুটকি জ্বলজ্বল করছে। যেন অসংখ্য তারা ঘরের আলোর জোগান দিচ্ছে।
ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র স্বচ্ছ পলিমারের তৈরি। তার মধ্যে হালকা নীলরঙের আভা জ্যান্ত সাপের মতো নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে।
এরকমই একটা বিশাল টেবিলের ওপারে পাথরের মূর্তির মতো বসে রয়েছেন শ্রীধর পাট্টা। ওঁর উলটোদিকে ছ’টা চেয়ার। তার মধ্যে চারটে চেয়ার খালি—ডান-দিকের শেষ দুটো চেয়ারে বসে রয়েছেন দুজন হোমরাচোমরা বয়স্ক মানুষ। ওঁদের ফিটফাট পোশাক আর বয়স্ক চেহারা দেখেই জিশান ওদের হোমরাচোমরা বলে আন্দাজ করেছে।