Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » তিমির বিদার || Bani Basu » Page 7

তিমির বিদার || Bani Basu

আর দু’-চার দিনের মধ্যেই গুহ প্যালেস-এর সাততলা ভাঙা হতে লাগল। কর্পোরেশন যে কনট্র্যাক্টরকে ঠিকে দিয়েছে সেই পালবাবু আবার চাকলাদারের খুব চেনা। হাত কচলে বললেন—কী বলব চাকলাদার আমার হাত পা বাঁধা। ইস্‌স্‌ অমন সুন্দর চারখানা ফ্ল্যাট। ভাঙতে বুক ফেটে যাচ্ছে। তুমি একটিবার পেছনের জমিটার মেজারমেন্টটা নিলে না!

চাকলাদার হতাশ মুখে বললে—আরে বাবা, আমি যখন এসেছি, তখন এদের ভিত গাঁথা সারা। আমি তো আর প্রথম নয়। এ বাড়ির পেছনে অনেক হুজুতির হিসট্রি আছে। তো আমি বিশ্বাস করেই এগিয়েছি। আমার মাথাতেই আসেনি ল্যান্ড মেজারমেন্ট নতুন করে করাতে হবে।

মাসখানেক ধরে সে কী হুজ্জোতি রে বাবা। সাততলার ডানদিকে অর্থাৎ পুব-দক্ষিণের ফ্ল্যাটটা সবচেয়ে আগে ঠ্যাঙঠেঙিয়ে ভাঙতে শুরু করেছে! সে কী আওয়াজ! সিমেন্টের কাজ সারা, প্লাস্টার অব প্যারিস প্রায় শেষ। ফ্লোরের জন্য চিপস এসে গেছে। গ্রিন, হলুদ, সাদা, মেরুন, চিকচিকে লজেন্সের মতো দানাগুলো, বস্তার মধ্যে হাত ঢুকোই আর মুঠো করে তুলে বাইরের আলোয় মেলে দেখি। আমারই বুকটা ভেঙে যাচ্ছে। তার চাকলাদার তার রমেন গুহ, দেবল গুহ!

দীপু কিন্তু নির্বিকার। স্রেফ পা নাচাতে নাচাতে সিগ্রেট খাচ্ছে। চোখ বোজা। থাকতে পারি না। দীপুর কেস ভাল নয় ডাক্তার স্বয়ং বলেছেন, চোখে চোখে রাখি, ওষুধ খাওয়াই, তা সত্ত্বেও একদিন ঝেঁঝে উঠি: কী রে? তোকে তো দেখে মনে হচ্ছে স্বগগে বসে আছিস, নন্দন কাননের ফুরফুরে হাওয়ায়, পারিজাতের গন্ধ পাচ্ছিস, না কি?

দীপু চুপচাপ একটা কাগজ বাড়িয়ে ধরল আমার দিকে। কাগজটা খুলে দেখি লেখা—১ নং ধীরু বাগদি লেন, ঠিকানা ৭/৩—৫ তলা, ২ নং-উত্তম ঘোষ লেন—১৫ নং—৫ তলা, ১৬ নং—৫ তলা, ৩ নং—সি আই টি রোড মুখোমুখি— ৪২/২ ২৩/১—দশতলা, ১৭ নং—৭ তলা ও আট তলা ৪নং পিলখানা সেকেন্ড বাই লেন—৮/এ, ৯/এ, ১০/এ— ৬ তলা… এই রকম ২০ নং পর্যন্ত গেছে।

আমি কিছুই বুঝি না। —এগুলো কী?

দীপু চুপচাপ ফুঁকে যাচ্ছে।

—কী রে?

—বোঝা গেল না?

—না।

—এই বাড়িগুলো সব নিয়ম না মেনে করা হয়েছে। শুধু পেছনের জমির নিয়ম নয়। আরও অনেক নিয়ম যেমন দমকলের পার্মিশন নেওয়া হয়নি, রাস্তার ফুটেজের নিয়ম মানা হয়নি। ইত্যাদি ইত্যাদি।

—এগুলো নিয়ে কী করবি?

—চাকলাদারকে এক কপি, রমেন গুহকে এক কপি দিয়েছিলাম। জগাকে একটা ফাইট দিক।

—দিল না?

—না কিন্তু আমি জানতুম।

—ইস্‌স্‌স্‌, আমাকে একবার বললি না!

—কী করতিস!

—কিছু না হোক ঝাড়তাম।

—ঝেড়ে কী হবে? বুঝিয়ে দিত।

—কী বোঝাত তুই-ই বল।

—নিয়ম না কি এই যে কেউ নালিশ করলে এ সব নিয়ম ভাঙা হচ্ছে কি না হচ্ছে দেখা হবে, নইলে কর্পোরেশন চোখ বুজে নিদ যাবে।

—এ তো চোরের নিয়ম! যদি সত্যি থেকে থাকেও। ফোতো নিয়ম। —তারপরে একটু ভেবে বললাম—আচ্ছা দীপু, গদার কাছে গেলে হয় না। জগাকে একটু চমকে দিত কিংবা বিশুদা, কিংবা নিতাই কাকার কাছে!

—কে যাবে? তুই?

—তুই—আমি।

—কেন? তোর কী স্বার্থ? আমার কী দায় পড়েছে?

—এটা অন্যায়! অন্যায্য! স্বার্থ আমাদের চাকরিটা হুশ করে বেরিয়ে চলে যাচ্ছে।

—তুই বলছিস, যাদের ইনভেস্ট করা টাকা-পয়সা চৌপাট হয়ে যাচ্ছে তারা কেউ যাবে না, আমরা দুই ফিঙে আর ফড়িং ফড়ফড় করব!

—ওরা যাচ্ছে না-ই বা কেন? আফট্রল বিশুদা নিতাইকাকা দু’জনেরই বিস্তর পলিটিক্যাল পাওয়ার আছে, ওরা জগাদাদের অপোজিশনও বটে!

—চুক্কর, চুক্কর, চুক্কর—হঠাৎ দীপু হাত তুলে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে। ফিসফিসিয়ে চিৎকার বলে যদি কিছু থাকে তো তাই। আমি চুপ করে যাই। ওকে লক্ষ করি। দীপু উঠে দাঁড়ায়, অফিসঘরের জানলার কাছে চলে যায় ঠিক যেন মোবাইলে একটা কল এসেছে। কথা বলতে আড়ালে গেল। ডান কানের কাছে হাত রেখে শুনল কিছুক্ষণ তারপর আবার আস্তে আস্তে পা টেনে এসে বসল।

আমি চুপ। কিছু বলি না।

একটু পরে ক্লান্ত বিধ্বস্ত গলায় বলল—ভয়েসটা কি তুইও শুনতে পেলি?

—না, ফোন ধরিনি।

—মানে তোর কাছেও আসে। তুই পাত্তা দিস না!

—আমার কাছে কোনও অলৌকিক অতিলৌকিক ফোন আসেনি, আসে না।

—ওঃ।

দীপু যেন খানিকটা রিল্যাক্সড্‌। কিছুক্ষণ পর বলল—ডেঞ্জার সিগন্যাল দিচ্ছে। আজকাল আরও স্পষ্ট।

আমার বিরক্ত লাগে, বলি—ঝেড়ে কাশ না। এই ইনফর্মেশনগুলো কোথায় পেলি?

আমি ভেবেছিলাম বলবে—ভয়েস।

কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে দীপু বলল—বিশুদা। —আর একটু চুপ করে থেকে দীপু বলল—আর জগাদাকে কেস লড়ার ক্লেম রাখার পরামর্শ কে দিয়েছিল জানিস?

—কে?

ভেবেছিলাম বলবে—অরবিন্দদা, কেন না, ওদের যত ঝগড়া তত ভাব। জগাদার মোটা বুদ্ধি, কিন্তু অরবিন্দ চলে পাতায়-পাতায়, তো আবার আমাকে অবাক করে দিয়ে দীপু বলল—চাকলাদার।

আমার হাঁ বোজে না। দীপু আমার দিকে স্ট্রেট তাকিয়ে আছে। জিজ্ঞেস করি—তুই কী করে জানলি?

এবার দীপু তৃতীয়বার আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল—ভয়েস।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress