Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » তাল কুড়ানোর মজা || Pradip Acharyya

তাল কুড়ানোর মজা || Pradip Acharyya

ষাটের দশকে গ্রামবাংলায় আমরা যারা বড় হয়েছি তাদের শৈশবকাল ছিল আনন্দময় । গ্রামের প্রায় সকলের বাড়িতেই দু একটা করে আম জাম জামরুল কাঁঠাল নারকেল পেয়ারা বাতাবি লেবু বিলেতি আমড়া করমচার গাছ থাকতো; আমাদের কাজ ছিল দুপুর বেলা সবার খাওয়া দাওয়া হলে ঘরের কাজ সেরে মা কাকিমা জ্যেঠিমারা বিশ্রাম নিতে মেঝেয় শুয়ে গল্পগাছা করার ফাঁকে দল বেধে এগাছ সেগাছ থেকে ফল পাকুড় চুরি করে খাওয়া। ধরা পড়লে অবশ্য অন্য রকম খাওয়ার ব্যবস্থাও হতো।
ভাদ্র আশ্বিন মাসে আমাদের আর একটা নেশা ছিল ভোরবেলা উঠে তাল কুড়াতে যাওয়া। আমাদের গ্রামের পশ্চিম দিকে বিশাল চাষ আবাদের মাঠ মাঝে মাঝে ছোট ছোট ডোবা এই ডোবাগুলির চারদিকে বেশ বড় বড় তালগাছ ছিল এর ভেতরে তিন চারটে গাছের তাল যেমন মিশমিশে কালো বড়সড় তেমনি মিষ্টি। ‌আমাদের লক্ষ্য ছিল ভোরবেলা কে আগে ওইসব গাছের তাল কে কুড়াতে পারে ।তালক্ষীর বা তালের বড়া আমাদের কাছে এক চরম উপাদেয় খাবার ছিল।
এরকমই এক ভাদ্র মাসে রাতে বেশ বৃষ্টি হয়েছে ভোরবেলা প্রায় তিনটে নাগাদ আমার এক বন্ধু সুনীল ( দুজনের‌ই বয়স তখন বছর দশেক) এসে আমাকে ডেকে তুলে বললো চল টুলু ঘোষের ডোবার ধারের তালগাছের তাল কুড়াতে। আমিও লাফিয়ে উঠে একটা ব্যাগ নিয়ে দুজনে মাঠের পথ ধরলাম; গোটা পাড়া নিস্তব্ধ রাতজাগা পাখি এমন কি শেয়াল কুকুরের আওয়াজ‌ও কোথাও নেই । দুই বন্ধু আলপথে বারবার পিছলে পড়তে পড়তে টুলু ঘোষের তাল তলায় আসতেই বেশ জোরে হাওয়া দিল আর সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকটা তাল গাছ থেকে পড়ে ডোবার দিকে গড়িয়ে গেল। আমরা দুজনে দুদিকে ছুটলাম বেশ বড়সড় গোটা পাঁচ ছয় তালেই আমার ব্যাগ ভর্তি হয়ে গেল আর যা ওজন আমার পক্ষে টানা অসম্ভব। আমি সুনীলকে বললাম চল এবার বাড়ি যাই আর নিতে পারবো না। সুনীলের‌ও ব্যাগ ভর্তি ও আমার পিছনে পিছনে বাড়ির দিকে রওনা দিল পাড়ায় ঢুকে বাঁ দিকে সুনীলদের বাড়ি ডান দিকে আমাদের যে যার বাড়ির দিকে চলে গেলাম।
আমার মনে আজ খুব আনন্দ এ পর্যন্ত টুলু ঘোষের ডোবার ধার থেকে দু একটার বেশি তাল কখনোই পাইনি আজ পাঁচ ছয়টা পেয়েছি বাড়ি এসে দেখি মা উঠোন ঝাঁট দিচ্ছে আমাকে ব্যাগ কাঁধে ঢুকতে দেখে ঝাঁঝিয়ে উঠলো এত ভোরে ঘুম থেকে উঠে কোথায় গেছি পড়ার কথা বললে তো সাতটার আগে ঘুম ভাঙ্গে না ইত্যাদি আমি কাঁচুমাচু মুখে বললাম সুনীলের সাথে গেছিলাম এই দ্যাখ টুলু ঘোষের ডোবার ধার থেকে কতগুলি তাল পেয়েছি বলতে বলতে ব্যাগ উপুড় করতেই বেশ বড় বড় কয়েকটা মাটির ঢিল গড়িয়ে পড়লো আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি এ কি করে সম্ভব আমি নিজে বড় বড় তাল কুড়িয়ে ব্যাগে রেখেছি সেই তাল কি করে মাটির ঢেলা হয়? মা কি বুঝলো জানিনা আমার হাত ধরে সুনীলদের বাড়ি এসে সুনীলের মাকে কি সব যেন জিজ্ঞেস করল তারপর গম্ভীর ভাবে আমার হাত ধরে বাড়ি ফিরে এলো। তবে সুনীলের মার একটা কথায় আমার কানে খুব খটকা লাগলো ” সুনীল তো কাল সন্ধ্যেবেলা ওর মামার সাথে দেবগ্রাম গেছে”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress