Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

মহাকাশযানের প্রধান

মহাকাশযানের প্রধান তাদের আলাদা আলাদা সেলে থাকতে বলেছেন কেন, লী ঠিক বুঝতে পারল না। এখনো কি মানুষরা তাদের ভয় করছে? তাদের গা থেকে মৃদু বিটা রেডিয়েশন হয় এ কথা ঠিক, কিন্তু মেডিকেল বোর্ড তো স্পষ্টই বলছে, এতে মানুষের ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নেই। ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেস করে সঠিক কারণ জেনে নিলে হত, কিন্তু ক্যাপ্টেনকে পাওয়া যাচ্ছে না। সে দারুণ ব্যস্ত। তাদের একটি অনুসন্ধানী দল নিখোঁজ হয়েছে। সে দলে এক জন প্রতিভাবান জীববিজ্ঞানী আছেন, যাকে বিজ্ঞান কাউন্সিল সর্বোচ্চ পদক দিয়েছে ছ বছর আগে।

অবশ্য সেলে গিয়ে বসে থাকতে লীর কোনো আপত্তি নেই। ক্যাপ্টেন তাকে মাইক্রোফিক্স লাইব্রেরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন এবং একটি রোবট দিয়েছেন, যে বইগুলি তাকে পড়ে শোনাবে। লোকটিকে শুরুতে যতটা খারাপ মনে হয়েছিল এখন আর ততটা খারাপ মনে হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কথা তিনি তাকে একটি সমস্যাও দিয়েছেন–

নিওলিথি সভ্যতা গড়ে উঠেছে দ্বৈত সূর্যের গ্রহে এবং কাছাকাছি আছে। একটি ব্ল্যাক হোল। এদের সঙ্গে নিওলিথি সভ্যতার কি কোনো সম্পর্ক আছে, না ব্যাপারটি কাকতালীয়?

ভালো সমস্যা। তবে সমাধানের জন্যে অনেক কিছু জানতে হবে। দ্বৈত সূর্য কখন হয়? কেন হয়? ব্ল্যাক হোল ব্যাপারটি কী? ভাসা ভাসা জ্ঞান চলবে না। নীম এবং অয়ুর সাহায্য পেলে অনেক সহজ হত। কিন্তু তা সম্ভব নয়। অয়ু অসুস্থ আর নীম নতুন একটি জিনিস নিয়ে মেতেছে। কম্পিউটার সিডিসি তাকে দাবা খেলা শিখিয়েছে এবং পরপর ছ বার তাকে হারিয়ে দিয়েছে। তার ধারণা, কোনো একটি জিনিস ইচ্ছা করে তাকে শেখানো হয় নি, যার জন্যে সে হেরে যাচ্ছে। সিডিসি তাকে বলেছে—

নিয়মকানুন সবই তোমাকে শিখিয়ে দিয়েছি, আর কিছুই শেখাবার নেই।

তাহলে জিততে পারছি না কেন?

পারছ না, কারণ আমি সম্ভাব্য সমস্ত বিকল্প চাল চিন্তা করি। তুমি তা কর না।

এটিও নীম মানতে রাজি নয়। সিডিসি তাকে অনেক বার বলেছে, আমার সঙ্গে তুমি হারলে কিছুই যায় আসে না। আমার সঙ্গে কায়োর জেতার কথা নয়। প্রতি বারই তুমি অন্য বারের চেয়ে ভালো খেলছ, কিন্তু তাতে লাভ নেই কিছু।

নীম মাথা দুলিয়ে বলেছে, তোমাকে হারতেই হবে।

প্রাণী তিনটিকে সেলে রাখার ব্যাপারে ক্যাপ্টেনের মোটেই বেগ পেতে হল না।

নীম খানিকটা আপত্তি করছিল। লী বলল, ছোট জায়গায় আবদ্ধ হয়ে থাকাই আমাদের জন্যে ভালো। চুপচাপ এক জায়গায় থাকতে হলে বাধ্য হয়েই ভাবতে হবে। তোমার জন্যে সেটা খুব প্রয়োজন। তুমি ইদানীং সমস্যা নিয়ে ভাবতে চাও না।

লী বুঝতে পারে নীমের মধ্যে বড় রকমের পরিবর্তন হয়েছে। সেদিন দেখা গেল, মানুষদের লেখা কবিতার বই পড়ছে। নিছক আনন্দের জন্যেই নাকি পড়ছে। আশ্চর্য, নিছক আন্লের জন্যেই কেউ কিছু করে? সমস্যা নিয়ে ভাবার মধ্যেই তো আনন্দ সিডিসি যখন লীকে দাবা খেলা শেখাতে চাইল, তখনো লী অবাক হয়ে বলেছিল,

ব্যাপারটিতে সমস্যা আছে, কিন্তু তাতে লাভ কি?

সিডিসি বলেছে, আনন্দটাই লাভ। জেতার আনন্দ।

কিন্তু কী শিখব আমরা? জ্ঞানের বিকাশ হবে কিভাবে?

তা বলা মুশকিল।

জবাব শুনে লী অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছিল। কিন্তু নীম লাফিয়ে উঠেছে, সিডিসি আমাকে শেখাও। আমি শিখব, আমি শিখব।

লীর মনে হল, কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে নীমের মধ্যে। কখন হয়েছে লী ভেবে বের করতে চেষ্টা করে। কখন হয়েছে পরিবর্তনটি? ঘরগুলির ভেতর নীম একা-একা গিয়েছিল। পরিবর্তন কি তখন হয়েছে, না তারও আগে? কী দেখেছে ঘরের মধ্যে সে?

লী কখনো জিজ্ঞেস করে নি। সব সময় ভেবেছে একদিন নীম বলবে নিজ থেকে। কিন্তু নীম বলে নি। আজ প্রথম বারের মতো লী জিজ্ঞেস করল, ঘরের ভেতর তুমি কী দেখেছিলে নীম?

নীম চোখ মিটমিট করে বলল, আজ হঠাৎ জিজ্ঞেস করছ কেন?

জানতে ইচ্ছে হচ্ছে।

এখন আমি কিছু বলছি না। যখন সময় আসবে, তখন জানবে।

সময় কখন আসবে?

খুব শিগগিরই আসবে। লী, ঘরের রহস্য আমি বের করে ফেলব।

তুমি কি এই সব নিয়ে ভাব?

হ্যাঁ ভাবি। সব সময়ই ভাবি।

নতুন যে তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলি কি তুমি জান?

দ্বৈত সূর্য এবং ব্ল্যাক হোল? আমি জানি।

লী চুপ করে গেল। নীম মৃদু স্বরে বলল, আমি রহস্যের খুব কাছাকাছি আছি।

কি রকম কাছাকাছি?

যেমন ধর, এখন আমি নিশ্চিত জানি, আমরা ভিন্ন গ্রহের জীব–আমাদের এখানে এনে রাখা হয়েছে। এমন একটি গ্রহে এনে রাখা হয়েছে, যেখানে বসে বসে চিন্তা করা ছাড়া আর আমাদের কিছুই করার নেই।

তা ঠিক। আমিও তাই মনে করি।

নীম হঠাৎ গম্ভীর স্বরে বলল, লী।

বল।

তোমাকে আরেকটি ব্যাপার বলি–মন দিয়ে শোন। যদি কখনো আমাদের কাছে মনে হয় নিওলিথি সভ্যতা আমাদের পূর্বপুরুষদের তৈরি, তাহলে অবাক হয়ো না।

কী বলছ পাগলের মতো!

ঠাট্টা করছিলাম।

ঠাট্টা আবার কি?

মানুষদের কাছে শিখেছি। কোনো অবাস্তব ব্যাপার বিশ্বাসযোগ্যভাবে বলার নাম হচ্ছে ঠাট্টা। নিছক আনন্দের জন্যে করা হয়।

নীম মহানন্দে তার লুখ নাচাতে লাগল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress