Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ডাউ হিলের রহস্যময় সুরঙ্গ || Pallav Sanyal

ডাউ হিলের রহস্যময় সুরঙ্গ || Pallav Sanyal

ডাউ হিলের রহস্যময় সুরঙ্গ

পাহাড়ের কোলে ঘন কুয়াশা। চারদিকে নিস্তব্ধতা, যেন প্রকৃতি নিজেও নিঃশ্বাস ফেলতে ভয় পাচ্ছে। শীতল বাতাসে অদ্ভুত এক গন্ধ, যেন জমে থাকা ইতিহাসের কোনো অজানা অধ্যায় ফিসফিস করে কানে বলে যাচ্ছে। এই পথটি কার্সিয়ংয়ের ডাউ হিলের দিকে যায়। স্থানীয় লোকজন একে বলে “মৃত্যুর রাস্তা”। অন্ধকারের গভীরে ডুব দেওয়ার আগে এই পথ যেন প্রত্যেক যাত্রীকে সাবধান করে দেয়—”সতর্ক হও!”

অর্জুন, পেশায় একজন লেখক, যিনি রহস্য আর অলৌকিক ঘটনাকে নিয়ে লেখার জন্য বেশ নাম করেছেন। কিন্তু বাস্তবিক অভিজ্ঞতা তার তেমন নেই। এই প্রথম তিনি একা বেরিয়েছেন ডাউ হিলের অন্ধকার গল্পের সত্যতা যাচাই করতে।

ডাউ হিলে পৌঁছানোর পর, অর্জুন স্থানীয় এক পথ প্রদর্শক সুনীলকে সঙ্গে নিল। সুনীল হেসে বলল, “আপনি যদি সত্যি সত্যি সেই গল্পগুলো বিশ্বাস করতে চান, তবে ডাউ হিলের গভীর জঙ্গলে একবার ঘুরে আসুন। কিন্তু সাবধান, আপনি একা যাবেন না। সেই জায়গায় কেউ ফিরে আসেনি।”

সুনীলের কথাগুলো অর্জুনকে উত্তেজিত করল। কিন্তু লেখক হিসেবে তার আত্মবিশ্বাস তাকে ভয় পেতে দিল না। সেদিন সন্ধ্যায় তারা গিয়ে পৌঁছাল সেই কুখ্যাত সুরঙ্গের সামনে, যেখানে মাথাবিহীন ছায়া দেখা যায় বলে কথিত। সুনীল বলল, “আমি এখানে অপেক্ষা করব। আপনি যদি সাহস করেন, একাই যান।”

অর্জুন সাহস জোগাল। টর্চ জ্বালিয়ে তিনি ঢুকলেন সুরঙ্গে। সুরঙ্গের দেওয়াল জুড়ে অদ্ভুত নকশা—কখনো মূর্তি, কখনো আঁকা মৃতদেহ। হঠাৎ এক ঝড়ো হাওয়া। টর্চ নিভে গেল।

“কে?”—অর্জুন চিৎকার করে উঠল। চারপাশ নীরব। কেবল তার নিঃশ্বাসের শব্দ। আর তখনই সে শুনল পায়ের হালকা শব্দ, যেন কেউ ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছে।

সামনে একটি ছায়া। কুয়াশার আড়ালে অদ্ভুত আকৃতি, যেন কারো মাথা নেই। অর্জুন দৌড়ে বেরিয়ে আসতে চাইল, কিন্তু পথ হারিয়ে ফেলল। চারপাশে একই দেওয়াল, একই নকশা।

“তুমি এখানে কেন এসেছ?”—একটি মেয়েলি কণ্ঠ। সুরঙ্গের ভেতর প্রতিধ্বনিত হলো। কণ্ঠটি যেন তার মাথার ভেতর সরাসরি কথা বলছে।

“আমি কেবল জানতে চাই এখানে কী সত্যি ঘটনা ঘটেছে,” অর্জুন সাহস করে বলল।

“তাহলে শোনো।”

মেয়েলি কণ্ঠটি তার চারপাশে গল্প শুরু করল। গল্পটি ছিল একটি স্কুলের ছাত্রী দীপালির, যাকে তার শিক্ষক জঙ্গলে হত্যা করেছিল। সেই দিন থেকে তার আত্মা এই সুরঙ্গে বন্দি।

গল্প শেষ হওয়ার সাথে সাথে অর্জুন অনুভব করল, যেন তার চারপাশে কেউ তাকে ছুঁয়ে দেখছে। তার কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ। সে ঘুরে দাঁড়াল। পেছনে সেই মেয়েটি, মাথা নেই।

সে দৌড়ে বাইরে এলো। সুনীল সেখানে দাঁড়িয়ে, যেন কিছুই হয়নি।

“আপনি কি দেখেছেন?” সুনীলের মুখে এক অদ্ভুত হাসি।

অর্জুন কিছু বলল না। কিন্তু সে বুঝতে পারল, ডাউ হিল শুধু এক গল্প নয়। এটি জীবনের আর মৃত্যুর সীমারেখা, যেখানে সত্য আর কল্পনার মিলন।

এই অভিজ্ঞতার পর অর্জুন আর কখনো ডাউ হিলের নাম উচ্চারণ করেনি। তবে তার লেখা “ডাউ হিলের রহস্যময় সুরঙ্গ” বইটি সারা দেশে সাড়া ফেলে। অনেকে বিশ্বাস করল, আবার অনেকে নস্যাৎ করল। কিন্তু যারা ডাউ হিলের অন্ধকারে পা দিয়েছে, তারাই জানে সত্যটি কতটা ভয়ংকর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *