Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

তখন রাত এগারোটা , দিল্লি থেকে ট্রেন ছাড়লো । এবার ঘরে ফেরার তাগিদ । দেখতে দেখতে সময় এগিয়ে গেল । হাওড়া পৌঁছে আবার আসাম মেল ধরার তাগিদ । যাওয়ার সময় মনে হয়েছিল কতো সময় লাগছে । এখন তা মনে হচ্ছে না । তাড়াতাড়ি স্টেশনগুলো চলে আসছে । খাবার তো দুগরের মা করে দিয়েছেন । মাখন দিয়ে বাজরার রুটি সঙ্গে আচার । আবার ও সেই ঘাট তবে এবার উল্টো দিকে । তাই আগে সকড়িকলি পরে মনিহারি ঘাট । আবার ও ছোটাছুটি । পার্থক্য শুধু এখন ভকৎ রাম আছে । তাই চিন্তা করার অবসর নেই । কারণ কথা বলতে ভকৎ রাম আছে । ট্রেন ধরতে বা স্টীমার ধরতে যাওয়ার সময় বলে- ভাবী ইঁহা চারো তরফ মে পানি ই পানি । সবুজ ধানের ক্ষেত দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছে যে ওর বন্ধুরা জানেই না যে ইন্ডিয়ায় এতো সুন্দর একটা জায়গা আছে । দুর্গা ওর কথা শুনে বলে- এ আর কি দেখলে , আসামে পৌঁছে দেখবে চার দিকে সবুজের ঢেউ । এটা রুক্ষ ওটা প্রানবন্ত । মেটেলির সৌন্দর্য দেখার মতো । । একটা মালভূমির মতো । কথা বলতে বলতে শিলিগুড়ি চলে আসছে । এবার দুগর নেমে যাবে । দুর্গা আগেই দুগরকে ফোন নং ঠিকানা দিয়ে দিয়েছিলেন । খাবারের ঝুড়িটা রসময়ীকে দিলেন । দুর্গা বলেন দুগরকে- ব্ঙ্গাইগাঁও এসো কিন্তু । কাঠ চেরাইয়ের কল বললে সবাই দেখিয়ে দেবে । দুগর ভাই কে জড়িয়ে ওদের ভাষায় কি বললেন । তারপর নেমে গেলেন ।

একে একে পেরোলো তিস্তা , তোরসা , জলঢাকা ও কালজানি । নদী দেখে উচ্ছ্বসিত ভকৎ রাম । আর ওর ভাষায় কি সব বলছে । একটা কথা ও কানে যাচ্ছে না রসময়ীর । কারণ রেল গাড়ি আর ব্রিজ এর শব্দ । দুর্গা ভাঙ্গা হিন্দি তে বলেন- এবার রাজা ভাত খাওয়া স্টেশন আসছে । রসময়ী বলেন- কি অদ্ভুত নাম ! দুর্গা তাঁর ভাঙ্গা হিন্দি তে বলেন- এখানে কোচ রাজা আর ভুটিয়া রাজার ভীষণ যুদ্ধ হয়েছিল । তারপর অবশ্য শান্তি স্থাপন হয়েছে । ভকৎ বলে- রাজা ভি ইহাঁ রহতে থে ?

আবার দুর্গা বলেন- এখানে কোচ রাজের আমন্ত্রণে ভুটিয়া রাজা এখানে খেতে এসেছিলেন । তাই এ জায়গার নাম “রাজা ভাত খাওয়া । ” আর একটা মত ও আছে । এখানে নাকি রাজা পথ হারিয়ে ফেলেছিল । তাই নাম হলো , ‘রাজা বাট খোয়া’ ।

বাঙ্গলা দেশের সাথে অনেক মিল দেখতে পাচ্ছে রসময়ী । শাল , শিশু , খয়ের সব গাছই এখানে আছে । দুর্গা বলেন- শুনেছি এই জঙ্গল ভেদ করেই জয়ন্তী পাহাড়ে যাওয়া যায় । রসময়ী বলেন- এখানে তো চা বাগান ও থাকবে ? দুর্গা উত্তর দেন- আছে তো । কালচিনি , হাসিমারা , হ্যামিল্টন গঞ্জ নামকরা চা বাগান । হাসিমারায় মিষ্টি কমলা ও হয় । ওখানে কাঠের কারবার ও নামকরা । ভকৎ রাম তার পাশের একটা প্যাকেট রসময়ীকে দিলো । রসময়ী জিজ্ঞাসা করলেন- এটা কি ? ভকৎ রাম- ভাইয়া নে আপকো দিয়া । আপ মানা করেঙ্গে ইস লিয়ে হমে আপকো দেনে কে লিয়ে বোলা ।

মোরকটা খুলে রসময়ী লজ্জা পেল । নিজের দাদার কথা মনে পড়লো । বিদেশে এতো ভালোবাসা ! কে পায় ! দুর্গা বলেন- কি ওটা ? কুন্ঠিত স্বরে রসময়ী বলেন- শ্বেত পাথরের থালা । যেটা যাওয়ার সময় তোমার কাছে চেয়েছিলাম ।

দুর্গার ও কুন্ঠা চোখে মুখে । রসময়ী কে মুখে না বললে ও ভেবেছিলেন ঠিক ই কিনে দেবেন । কিন্তু মনেই পড়েনি । অবশ্য চোখে ও পড়েনি । অথচ দুগর মনে রেখেছে । হেরে গেছেন দুগরের কাছে ।

অনেকক্ষন কেউ কথা বলে নি । দুগরের জায়গাটা ফাঁকা ই রয়ে গেছে । বেশ কয়েক দিন একসাথে কেটেছে । পুস্কর যাওয়াটা ভালো হয়েছে ওঁর জন্যই । নইলে অচেনা-অজানা জায়গায় কি করতেন রসময়ী কে নিয়ে ! এখন কষ্ট হচ্ছে ওর জন্য ।

পরের স্টেশন এ এক ভদ্রলোক তাঁর স্ত্রী কে নিয়ে উঠলেন । দেখে মনে হয় সদ্য বিবাহিত । অনভ্যস্ত সিঁদূরের সারা সিঁথি জুড়ে । কপালে ফোঁটার আকার টা বেশ বড়ো । মনে হয় বেশি গোল করতে করতে অনেক টা বড়ো হয়ে গেছে । বৌ নিয়ে শ্বশুর বাড়ি গৌহাটী চলেছে । ওখান কার কটন কলেজে পড়া মেয়ে । ডানা ছাটা না হলে ও সুন্দরী বলা যায় । বয়সটা রসময়ীর ধারে কাছের । শিক্ষার ছাপের সাথে মিশেল হয়েছে আধুনিকতার । স্বামী টি কোচ রাজের বংশধর । অনেক কথাই হলো । বলেন- জানেন , বাংলায় দুটো করদ রাজ্য । একটা কোচ বিহার । আর একটা ত্রিপুরা । ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কোচবিহারের মহারাজা তেরো টি তোপের সম্মানের অধিকারী ছিলেন । তন্ত্র গ্রন্থ কোচ বিহারের নাম- “কোচ বধূ পুর”রুপে উল্লিখিত হয়েছে । – তা আমরা কোচ বিহার বলি কেন ? – দুর্গাপদ বলেন । – ‘কোচ বিহার শিবের প্রিয় বিহার ক্ষেত্র । তাই নাম কোচ বিহার । দুর্গা বলেন- ‘- বাব্বা । এই প্রথম মহারাজার বংশধর দেখলাম । রসময়ী লজ্জা ভুলে চেয়ে থাকে যুবক মহারাজার বংশধর এর দিকে । মনে মনে ঐতিহাসিক ধরা চূড়ায় সাজায় তাঁকে । হো হো হাসি তে রসময়ীর সাজানো বন্ধ হয়ে গেল । – আরে এখন আর মহারাজা – টাজা নেই । আমি তামাকের ব্যবসা করি । কটন কলেজে পড়ার সময় প্রেম করি শর্বরীর সাথে । শর্বরী রা কামাক্ষার রাজা রুদ্র সিংহের আদি কুলগুরু কৃষ্ণ রাম ভট্টাচার্যের বংশধর । ওরা আসামে পার্বতীয়া গোঁসাই নামে পরিচিত ।

রসময়ী বলেন- শুনেছি কামাক্ষার তান্ত্রিকরা সব অলৌকিক কাজ করেন । কামাক্ষায় গেলে নাকি সুন্দরীরা পুরুষ কে ভেড়া বানিয়ে রাখে ।

সে কথা শুনে মহারাজার বংশধর হাঃ হাঃ হাঃ করে হেসে উঠলেন । বললেন- যা বলেছেন , একদম খাঁটি কথা । সুন্দরীরা মায়া জালে ভেড়াতো করেই । আমাকে দেখুন । আপনার সামনেই বসে আছে একটা ভেড়া । মায়া জালেই তো আটকে পড়েছি ।

শর্বরীর সরম রাঙা মুখ । লজ্জা ঢাকার চেষ্টায় বলে- কিছু মনে করবেন না । খালি তামাশা করে । ওটা নারীর সৌন্দর্য এর কথা বলা হয়নি । কথা টা প্রকৃতির সৌন্দর্য এর কথা বলা হয়েছে ।

রসময়ী বলেন- মা কামাক্ষার কথা কিছু বলো না । শর্বরী বলে-‘- কথিত ছিল কামাক্ষার আদি মন্দির করেছিলেন কামদেব । হরকোপানলে ভস্মীভূত কামদেব পুনঃ শরীর লাভ করলেন এই জায়গায় । তাই এই জায়গার নাম কামরূপ । কেউ বলেন , রাজা নরকাসুর । শাস্ত্রে আছে নরকাসুর ষোলো হাজার কুমারী কন্যা কে নিজ অন্তঃপুরে রেখেছিলেন । পরে শ্রীকৃষ্ণ এই ষোলো হাজার কুমারী কন্যা কে উদ্ধার করে বিবাহ করেন । রসময়ী ভাবেন এই এটা কি করে সম্ভব ? রসময়ী বলেন- সে কি । ষোল হাজার বৌ ?

রসময়ীর স্বামী এক চাঁটি মারেন দুর্গা র পিঠে । সামনে ঝুঁকে পড়েন দুর্গা । প্রথমে না বুঝলেও পরে বুঝেছেন কি বলতে চেয়েছেন শর্বরী র স্বামী । – দেখেছেন মশাই কেমন করিৎকর্মা পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ । আহা কি আনন্দ ! ষোল হাজার বৌ ! অর্থাৎ আট হাজার দিন লাগবে , এ বেলা ও বেলা দু টো করে বৌ কে ছুঁতে । ওর কথায় রসময়ী ঘোমটা টানেন মুখ আড়াল করতে । তার আগেই বোঝেন স্বামীর গভীর দৃষ্টি তাঁর ই দিকে । আরো ঘেমে নেয়ে ওঠেন তাঁর দৃষ্টিতে । ভাবেন খুব শিক্ষা হয়েছে কামাক্ষার কথা শুনতে চেয়ে । কানে আসে শবরীর চাঁপা ধমক । – আহ্ , চুপ করো তো । দেখছো না ভদ্রমহিলা লজ্জা পাচ্ছেন ।

দুর্গা র মুখে মিষ্টি হাসি । স্ত্রীকে যেন নতুন করে দেখছেন । এদের আলাপের মাধ্যমে । আবার স্ত্রী র চোখে চোখ পড়তে বোঝেন , এবারের অনুভূতি একটু অন্য রকম । একটু ঝলসানো দৃষ্টি । দুর্গা র হাসিটা আরো ছড়িয়ে পড়েছে । মনে পড়ছে বরিশালের নতুন বৌ এর ঘোমটা দেওয়া মুখের খানা । দুর্গা র হাসিটা আরো ছড়িয়ে পড়েছে । চিন্তাটা বাধা পায় একটা কনুই এর গুতোয় । মহারাজার বংশধর বলেন- কি মশাই । নতুন বিয়ে নাকি ? -লজ্জা পেয়ে বলেন দুর্গা- না না । সাত বছর । – এতো দিন ? অথচ এমন আঠালো প্রেম । আপনি তো দারুণ । দেখি একটু পায়ের ধুলো দিন । মুখে ই বলছে পায়ের ধুলো । দুর্গা বলেন- কেন ? কি হলো ? বলতে বলতে হেসে ফেলেন দুর্গা । বেশ খোশ মেজাজি ছেলে ।

  • কেন ? সাত বছর ধরে জিওল মাছের মতো জিইয়ে রেখেছেন এমন আঠালো প্রেম । প্রেমের একেবারে বুঁদ হয়ে ছিলেন । কনুই দিয়ে গুঁতো না মারলে এরপর যে কি হতো ?

এদের কথার মাঝে ই শর্বরী র কামাক্ষা র মাহাত্ম্য বলা শুরু হয়েছে । একমনে শুনছেন রসময়ী । – কথিত আছে নীলাচল পর্বতের উপরে কামপীঠের রক্ষক ছিলেন নরকাসুর । তিনি কামাক্ষা দেবীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে দেবীকে বিয়ে করতে চান । কামাক্ষা দেবী নরকাসুর কে বলেন , এক রাতের মধ্যে যদি তাঁর জন্য একটা মন্দির , পুকুর , ও পাহাড়ের চূড়ো অবধি রাস্তা তৈরি করতে পারেন তবে ই তিনি তাঁকে বিয়ে করবেন । এক রাতের মধ্যে মন্দির , পুকুর ও রাস্তা প্রায় হয় হয় । সে সময় মুরগি ডেকে উঠল । দেবী বলেন , মুরগি ডাকা মানে ই সকাল হয়ে গেছে । অতএব তিনি নরকাসুর কে বিয়ে করবেন না । তখন নরকাসুর রাগে মুরগি টা কেটে ফেললেন ।

রসময়ী গল্পে ডুবে গিয়েছিলেন । বললেন- মন্দির টা দেখতে কেমন ? – ঠিক উল্টো ধামার মতো । নাট মন্দিরে পাঁচ টা চূঁড়ো । ভোগ মন্ডপের ছাদ দেখতে চালাঘরের মতো । – তাই নাকি ? – মন্দিরে র গায়ে অষ্টাদশ ভৈরব ও চৌষট্টি যোগীনির মূর্তি উৎকীর্ন আছে । আবার কয়েক টা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে কামপীঠের দর্শন হয় । শুনেছি খুব অন্ধকার জায়গা । – রসময়ী বলেন । – হ্যাঁ । অল্প আলোয় দেবী দর্শন , স্পর্শনও পূজা করেন । দেবীর কোন প্রতিমূর্তি নেই । একখণ্ড দ্বিধা বিভক্ত পাথর ই কামপীঠের প্রতিক । রসময়ী বলেন- চান করার কোন পুকুর নেই ? – হ্যাঁ , মন্দিরের পাশে ই সৌভাগ্য কুন্ড । লোকের ধারণা ঐ জলে স্নান করলে হতভাগ্যেরও সৌভাগ্য ফেরে । – তাই নাকি ? – হ্যাঁ । কালিকা পুরানে ও তন্ত্রে লেখা আছে সব তীর্থের মধ্যে কামপীঠের মাহাত্ম্য বেশী । অন্য তীর্থে কোটি গো দান করলে যে ফল লাভ হয় । কামপীঠে এক রাত বাস করলে সেই ফল পাওয়া যায় । রসময়ী র কন্ঠ কেঁপে ওঠে । – আমার কি । এমন ভাগ্য হবে যে এক রাত কামাক্ষায় কাটাবো । দুর্গা বলেন- দেখো না এরপর আমরা কামাক্ষায়
যাবো ।

কতো দিন পর যাওয়া হবে তা ভালো করে ই জানা আছে রসময়ীর । তবু ও সে বলে- আমরা এক রাত কাটাতে পারবো তো ? – কেন পারবে না ? পুরো পাহাড় টাই পীঠস্থান । সেখানে অনেক পান্ডা দের বাস । তাই এক রাত কাটালেই তোমার পুণ্য বাঁধা । – দুর্গা বলেন । রসময়ী বলেন- হেঁটে ই উঠতে হবে তাই না ?

শর্বরী বলে- হ্যাঁ । সবাই হেঁটে ই ওঠে । কামাক্ষা স্টেশন থেকে যাওয়া যায় । মাঝে মাঝে খুব খাড়া পথ । শর্বরী বলে ই চলেছে । পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা দুটি মূর্তি আছে । একটা তাল আর একটা বেতাল । তাঁরাই দ্বার পাল । নীলাচলে সব চেয়ে উপরে ভুবনেশর্বরী দেবীর মন্দির । সে এক দারুণ দৃশ্য । নিচে ব্রহ্মপুত্র নদ বয়ে চলেছে । তার ওপরে কামাক্ষামন্দির । তারও এক মাইল উঁচুতে ভুবনেশ্বরীদেবীর মন্দির একেবারে শিখরে । শর্বরী বলে- আসুন একবার । ভালো লাগবে । মহারাজার বংশধর টি বললেন- আসুন না । কেমন নির্জন সব জায়গা । প্রেম করার উপযুক্ত ।

দুর্গা কে হাসতে দেখে বলেন- ওকে ই জিজ্ঞাসা করুন । স্ত্রী র দিকে ফিরে বলেন- কি । গো বলো না । আমরা কোথায় কোথায় গোঁত্তা খেয়ে খেয়ে প্রেম করতাম । সদ্য বিয়ে হলে ও ওরকম প্রেম করা হয়নি । শর্বরী বলে- কি আরম্ভ করেছো ? – সত্যি বলছি । নিঝুম দুপুরে দুজনে কথা কইতে কইতে হাঁটা । সাঁঝের বেলা যেখানে আলো আঁধারিতে খেলা সেখানটা বেছে নিতাম । মাঝে মাঝে একটু ছোঁওয়া লেগে গা গরম হচ্ছে । ও ! ভেবে ই রোমাঞ্চ ।

ওর ভঙ্গিতে হেসে ফেলে দুর্গা । চোখ পড়ে সেই বিধুমুখীর কটাক্ষপাতে । এ সব শুনে কি । দুর্গার গা গরম হচ্ছে ? আবার একটা কনুই এর গুঁতো । – ‘আরে মশাই কি হলো ? আপনি দেখি মাঝে মাঝে ই মহিলা কে বড়শি গেঁথে ঘায়েল করেছেন । আহা কেন ওকে কষ্ট দেওয়া । তা ছাড়া ট্রেন এ তো গা গরম টুকু ই সার । চলুন কামাক্ষা পাহাড়ের আলো আঁধারিতে আনাচে কানাচে । শর্বরী বলে- তখন থেকে কি করছো বলোতো ? মুখের কোন রাখঢাক নেই । আমার বাবার কার্ড টা দিয়ে দাও তো । কামাক্ষা গেলে কোন অসুবিধা হবে না । মহারাজ এর বংশধর বলেন- দেখছেন তো মশাই ঐ ভেড়া বনে যাওয়া টা কতো টা সত্য ? এবার বিয়ের মন্ত্রে জুড়তে হবে আর একটা কথা । শুধু তোমার মন নয় । তোমার সব কাজ আমার । তোমাকে জুতো পড়ানো ও আমার কাজ । প্রশ্ন করবো না তোমার কি কাজ । – ‘- এক নম্বর ফক্কড় । একটুও সিরিয়াস হয় না । – ‘- এই যে কার্ড টা ও আমায় দিতে হবে । আপনারা বলুন যদি চুপ করে থাকতাম ভালো লাগতো ? তাছাড়া মনটা ভালো নেই । গুদামে তামাক পড়ে রইল । গৌহাটী চললাম আমি । মন্দিরের আলো আঁধারিতে আমার শরীরে ওম্ দিতে পারবে না । – বলতে বলতে কার্ড খানা বার করে দিলেন । দুর্গা বলেন- কামাক্ষার কথা শুনলাম কিন্তু মহারাজ এর কথা শোনা হলো না । – সে তো ইতিহাস । বলছেন যখন তখন বলি । – মহারাজার বংশধর বলেন । সতেরো শো বাহাত্তরের কথা , কোচবিহারের রাজা ইস্টইন্ডিয়া কম্পানির সাথে সন্ধি করে নিলেন । কুচবিহার তখন প্রাচীন কামরূপ খন্ডের অন্তর্ভুক্ত । । কামতা রাজ্যের শেষ রাজা নীলাম্বরের পতনের পর বিশ্ব সিংহ পার্বত্য জাতীগুলোকে সঙ্ঘবদ্ধ করে সেনা বাহিনী গঠন করেন । রাজধানী ছিল গোসানিমারি গ্রামে । গোসানিমারি নাম শুনে রসময়ী বলে ওঠে- ওমা । তাই নাকি ? ওখানে জাগ্রত কালি বাড়ি আছে ? শর্বরীর স্বামী বলেন- ঠিক বলেছেন ।

আবার শুরু করলেন । বিশ্ব সিংহ গৌড়েশ্বর , হুসেন শাহের জয় করা কিছু অংশ অধিকার করে কোচবিহার নামে স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন । কথিত আছে বিশ্ব সিংহ কামাক্ষার সুপ্রসিদ্ধ কামপীঠের আবিষ্কার করেন । পুন প্রকাশ করেন । পুন কথা টা । এই জন্য যে পৌরানিক যুগের পর কামাক্ষা মহাপীঠ বহু দিন অবলুপ্ত ছিল । আরো অনেক পরের কথা রাজা বিশ্ব সিংহের প্রথম পুত্র নরনারায়ণ নতুন মন্দির স্থাপন করেন । আরো একটা মজার কথা শোনালেন তিনি , একদিন রাজা বিশ্ব সিংহ তার ভাইয়ের সাথে নীলাচলে যান । প্রতিপক্ষ পার্বত্য জাতী কে দমন করতে । কিন্তু কারোর সাথে দেখা না হওয়ায় ফিরে আসছিলেন দুজনে । বট বৃক্ষতলে এক বৃদ্ধাকে দেখেন , । মাটির ঢিবির মধ্য হতে যে জলধারা নির্গত হচ্ছিল , সেই জল দিয়ে তৃষ্ণার্ত দুই ভাইয়ের তৃষ্ণা নিবারণ করান । বৃদ্ধা বলেন- এই ঢিবিটা একটা শক্তি পীঠ ।

সেখানে তিনি মানত করে আসেন যে তিনি যদি দেবীর দয়ায় তাঁর রাজ্য নিষ্কণ্টক করতে পারেন তবে তিনি সোনার মন্দির করে দেবেন । প্রতিটি ইটের মধ্যে একরত্তি সোনা ভরে দিয়েছেন ।

প্রবাদ আছে যে কামাক্ষা পীঠের সামনে একজন ঢাকী ঢাক বাজাতো । আর দেবী ঢাক শুনে বিবস্ত্রা হ হয়ে ঢাকের বাদ্যের তালে তালে নাচতেন । ঢাকী র মুখে সে কথা শুনে মহারাজ বিশ্ব সিংহ দেবীর নৃত্য দেখে ফেলেন । দেবী ক্রোধ ভরে ঢাকী র মাথা কেটে ফেলন এবং বিশ্ব সিংহ কে অভি সম্পাত করেন , যে তাঁর বংশধর কেউ কামপীঠ দর্শন করতে করলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে । এই জন্য কোচবিহারের রাজবংশীয়রা কামাক্ষা দ্শন করেন না । শুনে স্তব্ধ রসময়ী আর দুর্গা পদ । রসময়ী বলেন- কিন্তু আপনি তো কামাক্ষায় যান । – পাহাড়ে যে হেতু শর্বরী দের বাড়ি তাই যাই তবে কাম পীঠে যাই না । মন্দিরের দিকে ও দৃষ্টি দেই না । তবে আমার অন্য কামপীঠ আছে । – বলেই হাসতে থাকেন । দৃষ্টি ওঁর স্ত্রী র দিকে । – আবার তোমার শুরু হলো ? – বলেন ওর স্ত্রী । দুর্গা বলেন- তবে যে এতক্ষণ কামাক্ষা পাহাড়ের আলো আঁধারিতে প্রেম করার গল্প করছিলেন ? – ‘- আরে আপনি সত্যি ভেবেছেন নাকি ? ওসব তো মনের কল্পনা । – বলেই হাসতে লাগলেন । চা ওয়ালা এসে যেতে দুর্গা সবার জন্য চা নিলেন । ভকৎ রাম কে ঘুম থেকে জাগিয়ে চা দেওয়া হলো । পয়সা দিতে যাচ্ছিলো শর্বরীর স্বামী । কিন্তু আপত্তি জানালেন দুর্গা । – আরে , মহারাজার বংশধর কে একটুখানি চা খাওয়াবার সুযোগ টা দিন । বলা কি যায় আপনার দয়ায় কোন ছোট্ট রাজ্য পেয়ে যাই কি না । সবাই হেঁসে উঠলো । মহারাজার বংশধর টি বললেন- বেড়ে বলেছেন মশাই । – কি বলো শর্বরী ছাত্র টি তবে আমি ভালো ই তৈরি করেছি । পরের কথা টি স্ত্রী কেই বলেছেন ।

ভকৎ রাম বললো- ভাবী জি ইয়ে কৌন সা স্টেশন ? উত্তর দিলেন দুর্গা- সাপোটগ্রাম । আর কিছু পর ই বঙ্গাইগাঁও এসে যাবে । – ওখানে থাকেন বুঝি ? – শর্বরীর প্রশ্ন রসময়ী কে । – হ্যাঁ । – রসময়ী র উত্তর । – সঙ্গে ‘ছেলে টি বুঝি আপনাদের সাথে যাচ্ছে ? – হ্যাঁ । ওর একটা বড়ো গুন ও ভালো পুজো করতে পারে । পুস্কর থেকে আসছে । কথায় কথায় বঙ্গাইগাঁও ট্রেন চলে এলো । দুর্গা হাত চেপে ধরলেন মহারাজার বংশধরের । বলেন- মহারাজ , এবার তাহলে আজ্ঞা করুন । – দেখবেন আঠাটা যেন নষ্ট করবেন না । জিওল মাছের মতো জিইয়ে রাখবেন । তবেই সংসারে সুখ ।

রসময়ী ও শর্বরির হাত ধরে বিদায় নিলেন । ভকৎ আর দুর্গা ভাগ যোগ করে মোটঘাট নিয়ে নিচে নামলো । স্টেশন এর ঘড়ি তে তখন রাত নয়টা ।

মাস চারেক হলো বঙ্গাইগাও এসেছে । এরই মধ্যে দুগর এর দু খানা চিঠি এসেছে । ভাইকে লেখা চিঠি । দুর্গা কে আলাদা চিঠি লিখেছে । যাতে পড়তে অসুবিধা না হয় তাই গোট হিন্দি অক্ষরে চিঠি লিখেছে । যদিও দুর্গা হিন্দি পড়তে জানেনা তবু ও অসুবিধা নেই । ওর কাঠের ব্যবসায় অনেক হিন্দি পড়তে জানা লোক আসে । তাদের দিয়েই পড়িয়ে নিয়েছে । দুগর এর মূল বক্তব্য হলো ব্যবসা কেমন চলছে ? ভকৎ রাম ভাবীজির । কথা শুনে চলে কি না ইত্যাদি ।

দুর্গা ও উত্তরে লিখেছে , ব্যবসা একটু ভালোই চলছে । কারণ ভকৎ এর দুখানা হাত ওর সঙ্গে জুড়েছে । এ মাস থেকে বাবুজীকে টাকা পাঠিয়ে দেবো । ইত্যাদি লিখে চিঠি দিয়েছে দুগর কে ।

রসময়ী ভকৎ রামের দিকে নজর রাখতে ঠিক মতো চেষ্টা করছে । কারণ ভকৎ ওর মা কে ছেড়ে এখানে এসেছে । ওর মন যাতে খারাপ না হয় সে দিকে নজর রাখে । রান্না ঘরের পাশে একটা বড়ো ঘরে ওর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে । এতে রসময়ীর ঠাকুর থাকে । এদিকটা এখন ও বাঁধানো হয় নি । নিকোনো ঠাকুর ঘর । ভকৎ খুব খুশি ঠাকুর ঘরে পেতলের শনি মহারাজকে দেখে । সকাল আর সন্ধ্যা – য় শনি মহারাজ কে সে পুজো করে । সকালে পুজো হলে কাঠের গুদামে চলে যায় । দুর্গার মাথায় রয়েছে কাঠ চেরাইয়ের একটা কল আনতে হবে । একটু টাকা পয়সার আমদানি হলেই কাঠ চেরাইয়ের কল টা আনবে । তাহলে আর বেশি লোক কাজে লাগাতে হবে না । কম লোকেই কাঠ চেরাই হয়ে যাবে । ক’দিন ধরেই রসময়ীর শরীরটা সকালের দিকে ভালো যাচ্ছে না । ঠিক বুঝতে পারে না রসময়ী কেন এমন টা হচ্ছে । খাবারের হেরফের হয় নি তো ? রোজ ভোরে ওঠা অভ্যাস । আজকাল কেমন যেন গা গুলানো ভাব । দুর্গা ঘর থেকে কাজে বের হবে । চা খাবার দিতে হবে তাঁকে । তাই জোর করেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন । রান্নাঘরে গেলেন কিন্তু আর পারলেন না মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন । শব্দ শুনে ভকৎ রাম ছুটে এলো । এ কী ভাবীজি মাটিতে পড়ে আছে ! চিৎকার করে ডাকলো দুর্গাপদ কে । – ভাইয়া , ভাবীজি গির গয়ি । দেখিয়ে ভাবীজি কো । দুর্গাপদ ভয় পেয়ে গেলেন । যএমনই দেরী হয়ে গেছে । অনেক খদ্দের ফিরে যাবে । যায় যাক্ । রসময়ী মাথা উঁচু করে একটা গামলা আনতে বলেন ভকৎ কে । রসময়ী কে এমন কখনো দেখেন নি দুর্গা । ভকৎরামকে বলেন- ভাবীজি কে দেখিস । বলেই ডাক্তার ডাকতে ছুটলেন দুর্গা । কাছেই থাকেন ডাক্তার মল্লিক । তাঁকে ডাকতে ছুটলেন ।

ভকৎ রাম জল দিয়ে রসময়ীর চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলো । রসময়ী ভকৎ রাম কে ধরে উঠে গেলেন বিছানায় । শরীর খুব ই দুর্বল লাগছে । একটু বিশ্রামের পরই ডাক্তার মল্লিক এসে গেলেন । ভালো করে পরীক্ষা করলেন রসময়ীকে । তারপর দুর্গা পদ কে বললেন- আপনি বাবা হতে চলেছেন ।

এইকথ শুনে দুর্গা হাসবে না কাঁদবে । কাউকে সু- খবর টা দিতে না পারলে শান্তি নেই । কাকে দেবেন ?

ডাক্তার বাবু কে দরজা অবধি পৌঁছে দিয়ে ভকৎ কে বললেন- ভকৎ তোর ভাই পো হবে । প্রথমে অর্থ না বুঝে ফেল্ ফেল্ করে চেয়ে রইল দুর্গা পদ র দিকে । তারপর ই চোখ চকচকে হয়ে উঠলো । তাড়াতাড়ি ছুটে গেল ওর ঐ ঠাকুর ঘরে , শনি মহারাজার কাছে । সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলো শনি মহারাজ কে । উচ্চ স্বরে বোলতে লাগল , “বোলো বোলো শনি মহারাজ কি জয় হো । ” চোখে জল এসে গেল দুর্গা র , তিনি ও বললেন- বোলো বোলো শনি মহারাজ কি জয় হো । আর একটা দুর্বল স্বর ভেসে এলো শোবার ঘর থেকে – বোলো বোলো শনি মহারাজ কি জয় হো ।

দুর্গা অভিভূতের মতো জড়িয়ে ধরেন ভকৎ রাম কে । তিনি ভকৎ কে বললেন- হ্যাঁ রে তুই শনি মহারাজার পূজো করবি রোজ ? তাহলে একটা মন্দির করে দেই । – জী হাঁ , কর দিজিয়ে গা । মৈঁ রোজ পুজা করুঙ্গা । রসময়ী উঠে এসেছেন শনি মহারাজাকে প্রনাম করতে । দুর্গা বলেন- এ কি তুমি উঠে এসেছ কেন ?

ডাক্তারের কথা কানে গেলে ও তখন আচ্ছন্ন ভাবটা ছিল । ঠিক যে শুনেছেন তা স্বামীর গদ গদ ভাব আর আনন্দ দেখে ই বুঝতে পারলেন । তাও এই সক্কাল বেলায় যখন কাজে যাবার তাড়ায় কোন দিকে তাকাতে পারেন না তিনি ।

রসময়ী কে দুর্গা বলেন- শরীর ঠিক আছে তো ? ডাক্তার তোমার শরীরের যত্ন নিতে বলেছেন । তোমার ছেলের কথা ভেবেই যত্ন নেবে ।

রসময়ী লজ্জায় আনত হয়ে বলেছে- ঠিক আছে ।

দুর্গা বলেন- না না কাল থেকে আমি ই রান্না করবো । রসময়ী বসে শনি মহারাজ কে প্রণাম করলেন । স্বামীর কথায় প্রথমে আনন্দ পড়ে লজ্জা পান । কি যে বলেন ! রসময়ী থাকতে দুর্গাপদ রান্না করবে ? রসময়ী স্বামী কে বললেন- কেন আমি কি বিছানায় পড়ে আছি ? দুর্গা বলেন- বালাই ষাট । বিছানায় পড়ে থাকবে কেন ? কটা দিন আমি রান্না করতে পারি না ? সেই সুযোগে ভকৎ রাম স্টোভ জালিয়ে চা বসিয়ে দিয়েছে । তা দেখে রসময়ী চিৎকার করে উঠলেন । – তুই ওখানে কি করছিস ? শেষে আগুন লাগিয়ে একটা কান্ড ঘটাবি । ভকৎ হাসতে হাসতে বলে- তুম ব্যয়ঠো । হামি চায়ে বানাবে । তুম ব্যয়ঠকে দেখবে ।

রসময়ীর হাসি পায় ভকৎ এর মুখে বাংলা শুনে । জোর করে রান্না ঘরের দাওয়ায় একটা মাদুর বিছিয়ে দিল । তারপর রসময়ী কে বসিয়ে দিয়েছে ।

চা এনে দুর্গার হাতে এক কাপ চা আর একটা কুকিস ধরিয়ে দেয় । এরপর রসময়ীর পাশে চায়ের কাপ রেখে একখানা কুকিস হাতে ধরিয়ে দেয় ।

রসময়ী বলেন- এবার তোর টা নিয়ে আয় । ভকৎ রামের গিন্নি পনায় হাসি পায় রসময়ীর । কষ্ট হয় , মা ছাড়া ছেলে টার জন্য । মায়ের স্পর্শ না পেয়ে মনটা শুকিয়ে না যায় ভকৎ রামের । তাই দুর্গা কে বলে ভকৎ এর জন্য চিঠি লেখার ব্যবস্থা করে ছিলেন । যাতে ভকৎ ইচ্ছে মতো ঘরে চিঠি পাঠাতে পারে । ভকৎ নিজের চা নিয়ে রসময়ীর পাশ ঘেঁষে বসে । – কি রে চা তো ভালো ই করেছিস । আগে কি কখনো করেছিস ? – হ্যাঁ । মাজীর তবিয়ত খারাপ থাকলে কখনও বহন কখনো হামি চা বানাতাম ।

জ্বলেজ্বলে চোখে মিষ্টি হাসি । মাপতে চেষ্টা করে রসময়ী । এখানে এসে ভকৎ রামের চেহারা টা ভালো হয়েছে ? না আগে ই ভালো ছিল ? মনে হয় একটু মাংসের পরত পড়েছে । নিরামিষ ভোজী ভকৎ রাম । ডাল একটা তরকারি হলে ই ভকৎ রামের হয়ে যায় । ওর জন্য দুর্গা আর রসময়ীর ও মাছ মাংস খাওয়া কমে গেছে । যাক্ ভালো হলে ই ভালো । নইলে ভকৎ বাড়ি গেলে ওদের বদনাম হবে । রসময়ী ভকৎ রাম কে বলেন- কি রে চুল আঁচড়াসনি কেন ? এই কথার অছিলায় ভকৎ রামের মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিলেন রসময়ী । মায়ের অভাব টা এই ভাবে মিটিয়ে দিতে চান রসময়ী । ভকৎ বললো- ভাবী হামি চাওল অর দাল বানাতে জানি । দাল মে সবজি ডাল দেবে , হোবে না ? তুম রসোই ঘরে আজ যাবে না । রসময়ী বলেন- ‘ঠিক আছে তাই হবে ।

দাওয়ায় বসে ই রসময়ী ভকৎকে বলে দিয়েছেন কি কি করতে হবে । দুপুরে দুর্গা ফিরে এসে বলেন- কি কি রাঁধতে হবে বলো । কিন্তু রান্না ঘরে ঢুকে দেখলেন রান্না করা আছে । দুর্গা বলেন- একি সব তো হয়ে গেছে কে করলো ? রসময়ী বলেন- ভকৎ ডাল ভাত রেঁধেছে । একটু কষ্ট করে খাও । দুর্গা খুশি হয়ে বলেছেন- যথেষ্ট আর কি চাই ?

মনে ভাবেন এতো দেরীতে এসে রাঁধলে সবারই খাওয়ার দেরী হয়ে যেত । তাছাড়া রসময়ীর সময়ে খাওয়া উচিত । আজকাল দুর্গা পদ রসময়ীর কাছে থাকার জন্য ভকৎ কে কাঠের মিল এ সকালে পাঠান না । ভকৎ রসময়ীকে চোখে চোখে রাখে । আর সকালে ও সন্ধ্যায় শনি মহারাজার পূজো করে । শনি মহারাজার জন্য ঠাকুর ঘর পাথরে বাঁধানো হয়েছে । একটু বড়ো ও করা হয়েছে । পাশেই ভকৎ এর ঘর । আজকাল মন্দিরে অনেকেই পুজো দিতে আসে । অনেকেই সিরনী নিয়ে আসেন শনি মহারাজার জন্য । মানত করে যায় । আবার সুফল পেয়ে পুজো দিতে আসে ।

ভকৎ রাম আসন সাজিয়ে মনের মত পুজো করে । ভক্ত সংখ্যা বাড়ছে । ভকৎ দুর্গা কে বলেছে , একখানা জমকালো পোশাক তার চাই পুজো করার জন্ । দুর্গা সে কথায় সায় দেয় । ভকৎ এর পছন্দ মতো পোশাক এসেছে । হলুদ সিল্কের ধুতি আর অর্গ্যান্ডির পাগড়ি । তার সাথে সবুজ সিল্কের ফতুয়া । ঐ সাজে যখন ভকৎ পুজো করে ভক্তরা মুগ্ধ হয়ে পুজ্য ও পুজারি কে দেখে । একাত্মতায় ভক্ত রা শনি মহারাজার কাছে পৌঁছে যান । থালা ভরে যেতে লাগল খুচরো পয়সায় । দুর্গা সে টাকা নেবে না বলায় ভকৎ দুর্গা কে বলেছে । – ঠিক হায় হামি ভি চলে যাবে আজমেঢ় । ওর কথায় দুর্গা ঐ পয়সা নিয়েছেন ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *