Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

ঘরে ঢুকে দুগর পরিবারের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল । দুগরের বাবা দুগরকে কি সব বলছে তা বুঝতে পারলেন না দুর্গাপদ । দুগর বাবার কথায় লজ্জা পেলেন দেখে দুর্গা পদ জিজ্ঞেস করলেন । – – কি বললেন তোমার বাবা? – তোমার ওখানে ভাই কে কাজে লাগাতে পারবে কি না ভাই কে?

দুর্গাপদ, দুগরের বাবা কে বলেন – কেন হবে না ? হবে । ভকৎ আমার কাছে থাকবে । আমার কাঠের ব্যবসা আছে । তাতেই কাজে লাগিয়ে দেবো । আমার ও তো একটা লোক থাকলে ভালো হয় । তাছাড়া শুনেছি ও নাকি ভালো পুজো করতে পারে । ওখানে ও করবে । আমার শনি মহারাজ আছে । – ঘরে তো করে তোমার ও ঘরে করবে । বাবা কে বুঝিয়ে বলে দুগর । ওর বাবা দুর্গার হাত চেপে ধরলেন । দুর্গা ওঁকে প্রণাম করেন । দুগরের বাবা দুর্গার মাথায় হাত রাখেন । চা খাওয়ার পর দুগরের মা একখানা পেতলের ঝাঁপিতে পুজোর জিনিস গুটিয়ে দেন । রসময়ীর প্রণাম নিলেন না তিনি । বলেন আগে পুস্করনাথকে প্রণাম করে এস । দুগরই বুঝিয়ে দেন ।

হাঁটতে হাঁটতে স্টেশন র দিকে রওনা হলো ওরা । ওখান থেকেই পুস্করের বাস ছাড়ে । সকালের মনোরম দৃশ্য চার দিকে । বেশ লাগছে রসময়ীর ।

বাস দাঁড়িয়েই ছিল । ঠেলে ঠুলে ঢুকতে হলো ভেতরে । কোনো রকমে একটা বসার জায়গা হলো , তাতে রসময়ী বসলেন এই সীট্ ও পাওয়া যেত না কারণ এই সিট্ এ একটা ছেলে বসে ছিল । তাঁর মা কে অনুরোধ করে বসেছেন রসময়ী । করার হয়েছে যে ঐ বাচ্চাটাকে তিনি কোলে নিয়ে বসবেন । রসময়ী ভাবেন,ঐ ছেলে তো রসময়ীর পেটের ছেলে ও হতে পারতো । এক একটা ঝাঁকিতে মনে হচ্ছে বাস বুঝি ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে । দুগর আর দুর্গা কোন রকমে ড্রাইভার এর সীট্ এর দিকে কোন রকমে ঠাঁই করে নিয়েছে । হঠাৎ ই একটা ঝুড়ি দুগর এর পিঠের উপর পড়ল । দুর্বোধ্য ভাষার কচকচানি শুরু হলো । তারই মধ্যে সুদূর রাজস্থানে তাড়স্বরে দুগর আর দুর্গা বাংলায় কথা বলে চলেছে । এতক্ষণে ফাঁকা রাস্তা শেষ । এবার বাস চলেছে পুরোনো শহরের মাঝখান দিয়ে । কিছু টা গিয়েই বাস থেমে গেল । যে যার বোঝা নিয়ে নেমে গেল । এতক্ষণ রসময়ী ভেবেছিল সবাই বুঝি পুস্কর ধামে চলেছে । কিন্তু মন্দিরের দিকে মাত্র কয়েক জনই এলো । মাঝখানে কুন্ড মানে পুকুর । তার চার কোনা বাঁধানো । চার দিকে বড়ো চাতাল । একটা বড়ো ঘরের আকারের হবে । । তার ই এক পাশে ব্রহ্মার মন্দির । এটা ই ব্রহ্মার আদি কুন্ড ।

অনেকেই স্নান করছে এই কুন্ডে । রসময়ী আর দুর্গা ও স্নান সেরে নিলেন । ভিজে কাপড়ে কুন্ডের চার দিকে প্রদক্ষিণ করলেন তাঁরা । রসময়ীর পুজো সারা হতে মেয়েদের ঘেরাটোপে শাড়ি বদলে নিলেন । আর ভিজে শাড়ি থলেতে ভরে নিলেন ।

রসময়ীর পড়নে এখন গোলাপী তাঁতের শাড়ি । এখন পড়েছেন আটপৌরে ঢংয়ে । সেই রসময়ী এখন কোথায়? এই রসময়ী তো এখন ভক্তিরসে টলমল করছে । দুর্গা ভাবে, পান্ডা নেই । । এ কেমন তীর্থ! কোলকাতা র কালিঘাটে পুজো দিতে তো গন্ডায় গন্ডায় পুরোহিত ছেঁকে ধরে সবাই কে । আবার দুর্গা র নজর গেল রসময়ীর সিঁথিতে । সিঁদূর পড়তে ভোলেননি । চুল আঁচড়ে মাথায় কাপড় তুলেছে । দেখে বোঝা যায় অপার শান্তি রসময়ীর মনে । কারো দিকে নজর নেই । ডুবে আছে সে পুস্করনাথ এ । রসময়ীর এই ভাব দেখে দুর্গা করজোড়ে আঁকুতি জানায় সেই অসীম শক্তিমান কে । দুগর বসে আছেন চাতালে । ওদের দেখে উঠে দাঁড়ালেন । বললেন – একটু চা খাবে তো? প্রশ্ন টা দুজনকেই । রসময়ী বলেন – আপনাদের বাড়ির ঠাকুর প্রণাম করে তবে জল খাবো । এখন বাড়িতে ফিরলেই ভালো হয় । ফিরতি পথে বাস একদম ফাঁকা । হুহু করে বাস ছুটছে । ভালো লাগায় রসময়ীর মনটা ছেয়ে আছে । বার বার মনে হচ্ছে তিনি বুঝি ব্রহ্মার পাদস্পর্শ পেয়ে গেছেন । কয়েকটি মেয়ে কে দেখা গেল পড়নে ঘাগরা । ওপরে ফতুয়ার মতো জামা । তার ওপরে উড়নি । এখানে এই পোশাকের চল । কারো কারোকে সিঁথির ওপরে ঝুমকোর মতোই টিকলী । দুগর এর বাড়ি পৌঁছে বাইরে পা ধুয়ে ভেতরে ঢোকা হলো । দুগর ওর । মা কে কি যেন বললেন । দুগর এর মা রসময়ী র হাত ধরে নিয়ে গেলেন ঠাকুর ঘরে । মুগ্ধ রসময়ী!কি সুন্দর ঠাকুর ঘর । জমকালো সাজ শনি মহারাজের । পেতলের ঠাকুর । তার ওপরে চাঁদোয়া টানানো । তাতে জরির ঝালোর দেওয়া । সার্টিন এর কাপড় দিয়ে দেয়াল মুড়ে দেওয়া হয়েছে । আসনে আসীন তেরো চোদ্দ বছরের একটি ছেলে । কথা না বলে রসময়ী মেঝেতে বসে পড়লো । যতোক্ষন পুজো না হয় বসে ই রইল সে । এবার পুজো শেষ । পুরোহিতের হাতের ছোট্ট ঘন্টা বাজতে শুরু হয়েছে । বাড়ির সকলে চলে এলো ঠাকুর ঘরে । পুরোহিত ঘন্টা বাজাতে বাজাতে বলছে – বোলো বোলো শনি মহারাজ কি জয় হো । সংগে সংগে বাড়ি র সকলে বলছে – ‘বোলো বোলো শনি মহারাজ কি জয় হো । রসময়ী কাঁদতে কাঁদতে বলছে – বোলো বোলো শনি মহারাজ কি জয় হো । বলতে বলতে লুটিয়ে পড়ে কান্নায় । সকলে স্তব্ধ । পূজারী ছেলে টি রসময়ীর কপালে ঘিয়ের প্রদীপের তাপ বুলিয়ে দেয় । বলে – ভাবী জি চরণামৃত লিজিয়ে । রসময়ী চোখ তুলে চায় তার দিকে । মুখে তার মিষ্টি হাসি । কোষাকুষি র থেকে চরণামৃত দিলো রসময়ীর গন্ডুসে গন্ডুসে । দুগরের মা রসময়ী কে নিয়ে গেলেন রান্না ঘরে । রসময়ী দুগরের বাবা আর মা কে প্রণাম করলেন । দুগর এর বোন সবার জন্য । সরবৎ নিয়ে এলো । দুর্গা দুগরের ভাই কে প্রশ্ন করে – হিন্দি কোথায় শিখলে?তোমার বাড়িতে কেউ তো হিন্দি বলে না । হাসলো সে । বললো,স্কুলে ই হিন্দি শিখেছে । এই ছেলে কে নিয়ে ওদের ভয় । ও নাকি বিপথে চলে গেছে । দুর্গা বলেছেন – আমাদের সাথে যাবে?বাড়ির জন্য কষ্ট হবে না তো?অনেক দূর । ইচ্ছে করলে ই আসতে পারবে না । তা ছাড়া তোমার দাদা ও অন্য জায়গায় থাকবে ।

উত্তরে ভকৎ রাম বলেছে – কিউ না রহ পাউংগা? আপ ঔর ভাবী জী তো রহেংগে । ভাবী জি ঔর আপ বহৎ আচ্ছে হো ।

দুর্গা পদ ভাবেন এই ভালো ভাব মূর্তি টা খসে না পড়ে । কি জানি রসময়ী আর দুর্গার এই হাসি যদি না থাকে!অমন অনেকেরই হয়ে থাকে দেখেছেন । লোকের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে একরকম মুখোশ পড়ে থাকে । হাসে গল্প করে আবার তারা বাড়ি এলে চেহারা পাল্টে যায় । রসময়ীকে নিয়ে কোন চিন্তা নেই । তাঁর নিজেকে নিয়েই চিন্তা ।

কিন্তু ফিরে গিয়ে তো ব্যবসা পাতিতে মন দিতে হবে । একটা লোক হলে তো ভালো ই হয় । যাই হোক ভকৎ রাম কে নিতেই হবে । দুগরের সাথে কথা বললেন – দুগর ভাই,আমি কিন্তু দু এক মাস ওকে মাইনে পত্র দিতে পারবো না । গিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে । যা পাবো তা দিয়ে তিন টা লোকের পেট চালাতেই বেড়িয়ে যাবে ।

দুগর বলেন – আরে!তোমার যা ইচ্ছে তাই করো । সেদিন ই ফেরা হলো না । কারণ ভকৎ রাম । হঠাৎ করে ছেলে কে ছেড়ে দিতে মায়ের মন চাইছে না । দুগর ও জোর করছে ক’দিন থেকে যাবার জন্য । ধারে কাছে বেড়াতে যাবার কথা বলছে । দুর্গা রাজী হয়নি খরচার কথা ভেবে ই । ভকৎ রামকে নিয়ে একটু খরচ আছে বটে । তবে সম্ভব হলে একবার বৃন্দাবন টা ঘুড়ে যাবেন । দুগরের জন্য কিছু খরচ করতে হয়নি এখানে । সে টাকা টায় বৃন্দাবনে খরচ করতে পারে । যাবার আগে দুগরের বোন কয়েকটা ময়ূরের পালক দিয়েছে রসময়ীকে । দুগরের মা একটা ময়ূর পুচ্ছের পাখা দিলেন । সন্ধ্যা সাতটায় গাড়ি ছাড়লো । তখন ও সূর্য অস্ত যায়নি । কারণ এটা পশ্চিমের দেশ । সূর্য অনেক দেরিতে অস্ত যায় । অজানা পরিবারের থেকে যে ভালোবাসা পেল রসময়ী তা কখনোই
ভুলবে না ।

কথা হলো এবার একসাথে বার হবে ওরা চার জন । পথে দিল্লি ঘুড়ে,মথুরা পথে বৃন্দাবন ও দেখে সোজা চলে যাবেন গন্তব্য স্থলে ।

রাতের গাড়িতে রওনা হলেন সবাই । এবার সংগে আছে ভকৎ রাম ।

দিল্লি পৌঁছতে সকাল সাতটা । নানা বর্ণের ছটা ঝিলিক দিচ্ছে পশমী রাজকীয়তা থেকে । অজানা পরিবারের থেকে যা পেল রসময়ী কোন দিন তা ভুলবে না ।

দিল্লির সকালে নতুন গন্ধ ভালো লাগছে রসময়ীর । স্টেশন থেকে বাস ধরে সোজা আগ্রা । পথে যমুনা নদীর পাশেই তাজমহল মন কেড়ে নিল । ইতিহাস বইয়ের পাতা এসে যাচ্ছে । তখন একটা স্বপ্নের দেশে ভাসছে রসময়ী । চোখে দেখা তো অন্য ছবি । এর সাথে তো বইয়ের কোন মিল নেই । দুগর বললো – বহন,তাজ মহল দেখে নাও ।

রসময়ী মনের সাথে ইতিহাস বইয়ের পাতায় চলে গেল । স্ত্রীর জন্য শাহজাহান এই মহল তৈরি করেছিলেন এই প্রেমের সৌধ ।

আবার আগ্রা থেকে বাসে রওনা দেয়া হলো মথুরার পথে । মথুরায় দুগরের একজন জানা শোনা ছিল । সেখানেই মালপত্রের বোঝা রেখে স্নান করে মথুরা ঘুড়ে বেড়ানো হলো । টাঙ্গা বুক করে নেওয়া হলো । সে ই বৃন্দাবনে ঘুরিয়ে দেখাবে । বড়ো মন্দির ছাড়া সব জায়গায় নামা হচ্ছে না । রসময়ীর হাত জোড়াই আছে । শুধু যেখানে দরকার সে কপালে ঠোকাচ্ছে । ভকৎ রাম পাশে বসে তাই রসময়ী কে অনুকরণ করে চলেছে । ভাবীজির দেখাদেখি কপালে হাত ঠুকছে ।

প্রথমে রাধা গোবিন্দ জী র মন্দিরে দাঁড়ালো ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *