ডরোথী -5
রসময়ী র মামার কাছাকাছি একটা ঠাঁই জুটেছে । তাতেই গড়ে উঠেছে রসময়ীর সংসার । একটু খানি জায়গা রেখেছেন চেরাই কাঠের ব্যবসার জন্য । ব্যবসা একটু দাঁড়াতে মোহিনী মাসীকে আসতে অনুরোধ করেছেন দুর্গা । কিন্তু দেশ ছেড়ে আসতে চান নি । কিছু দিন পর খবর এসেছে মোহিনী মাসী আর নেই । দেরি তে খবর আসায় “তে রাত্তির ” আর বাতি দেওয়া হয় নি । কিন্তু শুদ্ধাচারি ব্রাহ্মণ দিয়ে ভালো ভাবে শ্রাদ্ধ করা হয়েছে । রেল গাড়িটা একটা ঝাঁকি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে ই পুরোনো চিন্তায় ছেদ পড়ে গেল দুর্গাপদর । কোন কালের কথা এখন ও মনে হয় সেদিন দেশ থেকে এসেছেন । অথচ সাত বছর হয়ে গেল এসেছেন । রসময়ী কে বললেন,আমি চান টা সেরে আসি । বাথরুমের দিকে গিয়ে ও মাথা ধুয়ে ফিরে এলেন । স্ত্রী কে একা রেখে যেতে সাহস হলো না । রসময়ী বলেন- কি হলো ফিরে এলে? দুর্গা- মাথা ধুয়ে এলাম ।
কারণটা বুঝতে রসময়ীর অসুবিধা হয় না । তাই চোখে মুখে খুশির ঝিলিক । রসময়ীর হাত থেকে চিরুনিটা নিলেন দুর্গা । গামছাটা বাঙ্কের ওপরে শুকোতে দিলেন । তারপর চিরুনি বুলিয়ে নিলেন মাথায় । ঝাঁকড়া চুল কে বাগে আনতে চেষ্টা ও করলেন না । হঠাৎই স্ত্রীর চোখে চোখ পড়তেই নজর ফিরলো রসময়ীর । দুর্গা আবার নতুন উদ্দমে টেরি কেটে চুলের সৌন্দর্য ফেরাতে সচেষ্ট হলেন । আবার নজর ফিরলো রসময়ীর দিকে । সে চোখে খুশির ঝলক দেখলেন । হাসি মুখেই বললেন- কৈ গো কি এনেছো?খেতে দাও । খিদে পেয়েছে । রসময়ী গালের লালের ছটা ঢাকতে ঘোমটা টানলেন । দু খানা প্লাস্টিক এর রেকাবিতে লুচি আলুর দম বাড়লেন । দুগর একটু মুখ ঘুড়িয়ে বসলেন যাতে খেতে অসুবিধা না হয় । রসময়ী দুর্গাপদকে একখানা রেকাবি দিয়ে দুগরেরটা এগিয়ে দিলেন । – না না আপনারা খেয়ে নিন । আমার আছে ।
বলে দেখায় একটা লাল শালুতে মোরা ঝুড়ি । রসময়ী নাছোড় । বলেন- তা হবে না আপনার ছোট বোন বললে না বলতেন? – বোন যখন বলেছ,তখন আর না বলবো না । ছোট বোন কে দাদার কথাও শুনতে হবে । -দুর্গা পদ বললেন- কি ভাগ্য আমার ,গাড়িতে শালা বাবু জুটে গেল । দেখছি ভাগ্য টা মন্দ নয় । পুস্করনাথ আমাদের নিশ্চয়ই কৃপা করবেন । দুগর বললেন- বহন যখন হলে তখন এপাশে বসবো না । বলেই এ পাশে চলে এলেন ।
দূর থেকে মনিহারি ঘাট দেখা যাচ্ছে । যাত্রীদের মাল নিয়ে হুটোপুটি পড়ে গেছে । ট্রেন থেকে ধুপ ধাপ করে মাল পড়তে শুরু হয়ে গেছে । দরজার থেকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছে যাত্রীরা । দুঃখীরাম দুগর একটা কুলি কে ডেকে নিলেন । দুজনের মালের বোঝা নিয়ে কুলি চলল আগে আগে । দুগর বলেন- দুর্গা তুমি বহন জী কে নিয়ে এসো আস্তে আস্তে । বহন জী র পিছে এসো । রসময়ীকে বললেন,- বহন জী,তুমি আমার পিছু পিছু এসো ।
অনেকে স্টীমার এ জায়গা পাওয়ার জন্য দৌড়াচ্ছে । যেখানে স্টীমার দাঁড়িয়ে আছে সেটা মনিহারি ঘাট । আর স্টীমার যেখানে যাত্রীদের নিয়ে পৌঁছে দেবে সেটা শকড়িকলি ঘাট । সেখান থেকেই ট্রেন ছাড়বে কলকাতার দিকে । এবার ঘাট এসে গেছে বোঝা গেল । স্টীমার দাঁড়িয়ে আছে । পথে রকমারি দোকান শুরু হয়ে গেছে । যারা মাছ ভাত খেতে চায় সে ব্যবস্থা ওআছে । ফলের দোকান ও রয়েছে । দুর্গা ভাবে পূর্ব বাংলার কথা । সেখানকার স্টীমার আর এই স্টীমার আকাশ পাতাল তফাত । সেই স্টীমার এর কাছে এ যেন ছোট্ট খোকা ।
দেখতে দেখতে স্টীমার ঘাটায় পৌঁছে গেল । চওড়া পাটাতন পেতে দেওয়া হয়েছে যাত্রীদের স্টীমার এ চড়ার জন্য । দুপাশে মোটা দড়ি দিয়ে ঘেরা । যাতে যাত্রীরা ধরে ধরে স্টীমার এ উঠতে পারে । গঙ্গায় দু ‘একজন বিধবাকে স্নান করতে দেখা গেল । তাঁরা ভিজে কাপড়ে দাঁড়িয়ে গঙ্গায় গায়ে গামছা জড়ানো । রসময়ী দুর্গা পদকে জিজ্ঞেস করলেন- গঙ্গায় কি করছেন গো? – বিধবাদের রাস্তায় কিছু খেতে হয় না তো তাই গঙ্গায় ডুব দিয়ে খাচ্ছেন । ঐ দেখো আম খাচ্ছেন । বামুনের ঘরে বিধবাদের অনেক নিয়ম আছে । – বলেন দুর্গা ।
দুগর বলেন- আপনাদের বাঙ্গালী বিধবাদের খুব কষ্ট । দুর্গা ছাড়লেন না- আপনাদের দেশে তো এখনও স্বামী মারা গেলে জোর করে স্বামীর চিতায় জীবন্ত স্ত্রী কে জ্বালিয়ে দেয়া হয় । দুগর বলেন- সেই নিয়ম সব জায়গায় নেই । আসলে সমাজের কিছু দুষ্টু লোক এইসব নিয়ম করে । রসময়ী শুনে যায় ওদের কথা । ভাবে ভাগ্য ভালো রামমোহন রায় সহমরণ প্রথা বন্ধ করেছিলেন । নইলে নারীদের আজও দুঃসহ কষ্ট ভোগ করতে হতো । যদি বা সহমরণ বন্ধ হলো কিন্তু সেই নারীরা বাঁচবে কি করে? কামুক পুরুষ দের হাত থেকে তাদের বাঁচাবে কে?স্বামী পাশে থাকা সত্ত্বে ওএকটা কুলি ভীড়ের মধ্যে রসময়ীর পেছনে খোঁচা মেরে চলে গেল । ঘেন্নায় রসময়ীর ঐ অংশ টা কেটে ফেলে দিতে ইচ্ছে হয়েছে । কারো কে কি এসব কথা বলা যায়? শুধু সইতে হয় । দিদিমা একটা ছড়া কেটে বলতেন,”পুড়বে নারী উড়বে ছাই তবে সে নারীর কলঙ্ক নাই । ” আবার এও বলতেন,”পথে বিবর্জিতা নারী । “মেয়ে যেন কৌটোর খোঁপে লুকিয়ে রাখার জিনিস । কোন একটা বইয়ে পড়েছিলেন রসময়ী কোন দেশে তাঁরা মেয়ে জন্মাবার কয়েক বছর পর তার যোনিদ্বারে তালা পড়ে যেত । একজন পুরুষই সেই চাবির অধিকারী হতো ।
গাঁয়ের মেয়েরা ও কেউ অসীম সাহসী হতেন । তাঁদের গাঁয়ের এক বিধবা মহিলা ছিলেন । তাঁকে সবাই পিসি বলে ডাকতো । একটা কুলোক সেই মহিলাকে জ্বালাতন করছিল । ওকে শিক্ষা দিতেই পিসি তাকে ডেকেছিল কুকাজ করতে । লোকটা যখন পিসির শরীরের ওপরে চড়াও হয়েছে তখন লোকটার দৃষ্টি পিসির শরীরের ওপর নিবদ্ধ,পিসি ব্লেড দিয়ে এক টানে লোকটির পুরুষাংগ চিরে ফেলে । সে যাত্রায় রক্ষা পেলেও সারা জীবনের মতো তার ঐ কর্ম করার ক্ষমতা চলে গেছে । বছরের পর বছর লেগেছে তার কাটা ঘা সাড়াতে । ততোদিনে ঐ পিসি কেন আরও অনেকেরই যৌবন চলে গেছে । সে ঘটনার পর মেয়েরা শান্তি তে দিন কাটিয়েছে ।
স্টীমার দুলে উঠতেই রসময়ীর চিন্তাটা হোঁচট খেল মাঝ গঙ্গায় । এগিয়ে গেল বেন্চ এর দিকে । বেশ আরামেই বসা হলো । দুগরজীকে রসময়ীর বাপের বাড়ির কেউ মনে হচ্ছে । তবু ও রসময়ীর ঘোমটা খসেনি একটি বারের তরেও । বসা হয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে । কারণ বেশির ভাগ লোকই জাহাজ ভেড়ার অপেক্ষায় । একেবারে স্টীমার এর যে দিকটা জেটিতে লাগবে সেদিকে সতরন্চ বিছিয়ে বসে আছে অনেকে । যাতে সবার আগে ওরা রওনা দিতে পারে । দুগর জী একেবারে মিশে গেছে দুর্গা পদ র সাথে । কে বলবে ওরা দু প্রান্তের লোক দুজন । দুর্গা পূবের আর দুগর পশ্চিমের লোক । দুলকি চালে স্টীমার চলেছে । রসময়ীর নজর এদিকওদিক । মানুষের সাথে চলেছে নানা সামগ্রী । বড়ো বড়ো হাঁড়ি,টিন ভরা মাখন,কলাপাতায় ঢাকা টিন ওআছে । বড়ো বড়ো হাঁড়ি জালে ঢাকা দেওয়া,হয়তো ওতে জিওল মাছ আছে । তাই হাঁড়ির ঢাকা ঐ জালের থেকে লাফিয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে ।
রসময়ী ভাবে এতো কিছু যাচ্ছে ওপারে মনিহারি ঘাটে! ও পাড়ে কি কিছুই পাওয়া যায় না?দুর্গা না বলে দিলে রসময়ীর সাধ্যি ছিল না ঐ টিনের বস্তু কে মাখন বলে চিনতে । কারণ বাংলাদেশে রসময়ী ওর বাপের কালে ও দেখেনি অমন মাখন । মনে হয় দুধে জল মিশিয়ে রেখেছে । তাই দুর্গা কে জিজ্ঞাসা করল- হ্যাঁগো,ঐ জলা দুধ সত্যি কারের মাখন? দুর্গা কে চুপ করে থাকতে দেখে দুগর বলেন । – হ্যাঁ । ঐ জলীয় মাখন জ্বাল দিয়ে ই মাখন তৈরি হয় । একেবারে সোনার রংয়ের ঘি তৈরি হয় । তবে খুব নাড়া দিতে হবে । নইলে পোড়া লেগে যাবে । দেখবে ঘি এর সুঘ্রান এ ভরে যাবে চার দিকে । তখনই ছেঁকে চাছি পুঁটি গুলো আলাদা করতে হবে । দুর্গা বলেন- এসব ওদিকে পাওয়া যায় না? দুগর বলেন- হয়তো যায় না । ফেরার পথে এরা আবার ওদিকে যা পাওয়া যায় না তা নিয়ে আসে এপারে । রসময়ীর খুশির হাসি চলকে পড়ছে । স্বামী কে বলেন- ইস । এখানে থাকলে তোমায় কতো ঘি করে খাওয়াতাম । দুর্গা বলেন দুগর কে- শোনো দুগর,তোমার বহিনের কথা । এখানে থাকলে আমায় ঘি করে খাওয়াতো । ওখানে যে আমরা কতো সস্তায় ফল,সবজি,মাছ খাই?ভাগা হিসাবে মাছ,একটা পাকা কাঁঠাল এক পয়সায় পাই । কি বলবে দুগর? দুগর বলেন- হ্যাঁ । শিলং এর কমলা লেবু,আর মধু ও জুটছে ঐখানে । সেসব কি এখানে জুটতো?
হঠাৎ ই মনে হলো দুগর রসময়ী কে তুমি তুমি করছে । আর দুর্গা ও আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছেন । ভালোই লাগছে রসময়ীর । ভাষাতে এমন ই হয় । একেবারে কাছের লোক হয়ে গেছে দুগর জী । এই লোকই মাড়োয়ারি ভাষায় কথা কইলে কি রসময়ী কি তাঁর দিকে ফিরে চাইতো!এমনকি দুর্গা পদ ও তাঁর সাথে মিশতে পারতো না । একই বুলি হওয়ায় সবাই খোশ মেজাজে রয়েছে ।
রসময়ীর গালে একটা নরম হাতের ছোঁয়ায় পাশ ফিরলো সে । পাশের বৌটির কোলে একটা কচি ছেলে । বছর পেরিয়ে যায় নি মুখে লালার সাথে তুবড়ি ছুটছে । গালের কচি হাতখানা নিয়ে চুমো খেলো রসময়ী । বৌটিকে জিজ্ঞাসা করলেন- বয়স কতো হলো? – এই বছর পেরিয়ে তিন মাস । – বাব্বা । এতো ছটফটে?হামা দিচ্ছে? – সেতো কবে হয়েছে । এখন হাঁটতে চেষ্টা করছে । – ‘সে কি গো! – দেখছেন না । কোলে থাকবে না ।
রসময়ীর চোখ গেল সেই দুষ্টু মুখের দিকে । মুখে মামমাম বলার চেষ্টা । তাতেই তুবড়ি ছুটছে । রসময়ী হাত বাড়িয়ে দিতেই ঝাঁপিয়ে কোলে এলো । যেন এতক্ষণে পালাবার পথ পেয়েছে । রসময়ীর কতোদিনের সাধ এমন একটি শিশু বুকের মাঝে জাপটে ধরার । মনে ভাবে,”হে ঈশ্বর আমায় এমন একটা ছেলে দাও । ” দু গালে দুটো চুমো খেয়ে নজর গেল সেই ছেলের চোখে । কাজল কালো চোখ হাসছে । তবে কি রসময়ীকে ওর মা ভেবেছে! ওর মুখে মামমাম শব্দে ডুবে গেল রসময়ী । সন্তান কে বুকে জাপটে ধরলো । আবার দেখে সেই কাজল কালো চোখ হাসছে । আর তার লালা ভরা কচি দুধ মাখা ঠোঁট যেন রসময়ী কে বলছে- কি গো অমন চেয়ে আছ কেন?আমার মতো একটা, মুখে তুবড়ি ছেটানো ছেলে তোমার চাই?
হেসে ই প্রতি উত্তর দেয় রসময়ী । কিন্তু চোখে জল এসে যায় পুস্করনাথের কথা মনে করে । চোখ পড়ে স্বামীর দিকে । দুগর চোখ ফিরিয়ে নেয় । দুর্গা রসময়ীর হাতে হাত ছোঁয়ায় । রসময়ীর সব কষ্ট ধুয়ে মুছে দিলো ।
বৌটি কি বুঝলো কে জানে?রসময়ীর কোল থেকে ছেলে কে টেনে নিলো । রসময়ীর হৃদয় যেন শূন্য হয়ে গেল । আবারও দুর্গা পদর হাতের চাপ বাড়লো । মনটা উদাস হয়ে গেল । মন বলছে,”জয় বাবা পুস্কর নাথ ” । আর কতো দেরি?
দুর্গার গলার স্বরে সে দিকে নজর দিল রসময়ী । – কি গো শরীর ঠিক তো?দেখো কতো লোক চলেছে । রসময়ীর মনটা ফেরাতেই অহেতুক উক্তি দুর্গার । তাই হাসি দিয়েই দুর্গার চিন্তার দুর করে দেন । সত্যি ই কতো লোক চলেছে । এঁরা কোথায় থাকে! কোথা থেকে কোথায় চলেছে । সব মুখের মিছিল । এ মিছিল সব শেষ হয়ে যাবে জাহাজ থেকে নামলেই । এরপর আবার অন্য মুখের মিছিল তাও আবার ক্ষণকালের । আর কোন দিন দেখা হবে না । ,যাকে কোলে নিয়ে সন্তান হীনা তার অপুরনীয় ফাঁকটা ভরাট করেছিল যে,তাকে ও কি কোন দিন দেখতে পাবে?না কি শিশুটি জানবে যে রসময়ী নামের একজন তাকে কোলে নিয়ে নিজেকে মা ভেবে গর্ব বোধ করেছিলেন ?যেমন মোহিনী মাসী দুর্গা পদ র মায়ের জায়গাটা ভরাট করেছিল । মোহিনী মাসীর শেষ দিন অবধি ,কোলে কাঁখে নেওয়া মা হারা দুগ্গা কে মনে রেখেছে । এটা ও একটা ছোট্ট পৃথিবী । নেমে গেলে কেউ কাউকে চেনে না । জাহাজটা ও তাই । নেমে গেলে আর ভাব ভালোবাসা থাকে না । যেমন পৃথিবী থেকে চলে গেলেও সব ঠিক মতো চলতে থাকে । থেমে যায় না কিছু । আর মাঝে মাঝে আলোর রশ্মির মতো স্মৃতি ঠিকরে পড়ে মনে আর চোখে । জলে ভাসে চোখ । সে ও ক্ষণিকের নিয়ম ভঙ্গ । তাই চোখ মুছে পথ চলা যায় ।
দুগর হৈ হৈ করে উঠলো- এসে গেছে শকড়িকলি ঘাট । রসময়ীর চোখ গেল গঙ্গার জলে । সূর্য ডোবে ডোবে । তাই লালের ছোপ জলে । জাহাজের গতি কম তাই বুঝি তির তির করে সর কাটা ঢেউ ভেঙ্গে চলেছে স্টীমার । দূর থেকে ওপার দেখা যাচ্ছে । শহর বলে কিছু ই বোঝা যায় না । শুধু ই ধূ ধূ করা মাঠ । স্টীমার এর নামার পথে যারা সতরঞ্চ বিছিয়ে বসে আছে তারা ঝটাপট মোটঘাট বেঁধে নিলো । দেখতে দেখতে স্টীমারের সব বাতি জ্বলে উঠলো । গঙ্গার জলে হীরের চমক । এ চমকে সোনা বিছানো । মানে সূর্য গিয়ে ও এখনও যায় নি । তাই সোনা রং গঙ্গার । স্টীমার এর গতি কম তার ই মধ্যে দিয়ে গোঁত্তা খাচ্ছে শকড়িকলি ঘাটের জেঠি তে মেলার জন্য । দুটোর মধ্যে অনেক ফাঁক । তবে সে ফাঁকের তোয়াক্কা না করে মানুষ লাফিয়ে পড়ছে ও পাশের জেটি তে । কিসের লোভে লাফিয়ে পড়ছে জীবন তুচ্ছ করে?শুধু জায়গা দখল?নাকি পরিবারের কথা ভেবে?নাকি ট্রেন ছেড়ে চলে গেলে ঐ ধু ধু করা অন্ধকার মাঠে পড়ে থাকার কথা ভেবে ঝাঁপ? কারণ ট্রেন চলে গেলে লোকালয় বিহীন ঐ অন্ধকারে পড়ে থাকা ভয়াবহ । কিন্তু পা জেটিতে না পড়ে জলে পড়লে?স্টীমার এর তলদেশে সদগতি,সেটা ভেবে ভয়ে চোখ বুজে ফেলে রসময়ী । আর চোখ বুজে থাকতে পারে না রসময়ী । কারণ দুর্গা র গলা কানে এলো । – কই গো,কি ভাবছো । যেতে হবে তো । আগে আগে চলো । দুগর বলেন- বহন জী ,তুমি আমার পিছে এসো । দুর্গা তোমার পিছে আসবে । দুর্গা তুমি বহন জী কে মাঝখানে রেখে এসো । জলদ বাজি করবে না । বহন জী ধারে একদম যাবে না । দূরের ঘরবাড়ি দেখা যাচ্ছে । এখন ও বুঝি মনিহারি ঘাটের মতো হাঁটতে হবে । দুগর সমানে বলে চলেছে রসময়ী কে- ধাক্কা ধাক্কি তে নিচে জলে পড়ে গেলে ভয়ের কিন্তু । মাঝখানে হাঁটবে । নজর পড়লো সেই বৌটির দিকে । ঘুমিয়ে আছে ছেলে । পরম তৃপ্তির ছাপ তার মুখে । সে ভুলে ই গেছে রসময়ী কে । দুগর জিনিসপত্র নিয়ে এগুতে লাগল । রসময়ী দুগরের পেছনে চলেছে । পাশে চলেছে দুর্গা । মাঝে মাঝে সাবধান বাণী শোনাচ্ছে । আগে যেমন স্টীমার এ উঠেছিল । এখন তেমনি নেমে গেল । পার্থক্য শুধু একটা তখন দিনের আলো, আর এখন সাঁঝ বাতি জ্বলছে । গঙ্গার জলে সাঁঝের আলো চমক ফেলছে । দেশে দাদুর বাড়ি যেতে স্টীমার করে সাঁঝ হয়ে যেত । সেই জলে ও আলো খেলতো । সেই জলের সঙ্গে এ জলের তুলনা হয় না । ওখানে এপার ওপার হতে দিন কাবার হয়ে যেত । সেই ছোট্ট বেলায় একবার মামার সাথে মামার বাড়ি ঢাকায় গিয়েছিল । তিন তলা লঞ্চ এ ওরা উঠেছিল । স্টীমার এর থেকে লঞ্চ অনেক বড়ো । রসময়ীর মামার রসু জিজ্ঞাসা করেছিল স্টীমার আর লঞ্চ এর পার্থক্য কোথায়? মামা বলেছিলেন- সোজা কথা মনে রাখ । স্টীমার স্টীমএ চলে । লঞ্চ চলে তেলে । কয়লার স্টীম মানে বাষ্প । ঐ বাষ্প দিয়ে চলে স্টীমার । স্টীমার শিপ । আর লঞ্চ হলো এম .ভি । মানে মটোর ভেসেল । লঞ্চ এর নিচের তলায় পাঁচ শো যাত্রীর বসার ব্যবস্থা আছে । এমন চল্লিশ খানা জাহাজ প্রতিদিন বরিশাল থেকে ঢাকা যাতায়াত করে । রসময়ী র মনে পড়ে যায়,মামাকে কি নাকাল না করেছিল । সাত্তার খান নাম ছিল সেই জাহাজের । ঢাকা পৌঁছে খুব কান্না কাটি করেছিল রসময়ী । “আমি বাড়ি যাবো । ” সেই কান্না থামাতে মামাকে আবার ফিরতি জাহাজ ধরতে হয়ে ছিল । বরিশাল ফিরে মামা মা কে বলেছে- বলিহারি আহাম্মক বনেছি আমি তোর মেয়ে কে ঢাকা য় নিয়ে গিয়ে । মনে মনে হাসে রসময়ী । রসময়ী র হাসি ধরে দুর্গা পদ বলেন- কি গো, একা একা ই হাসবেে না আমাদের ও বলবে? লজ্জা পান রসময়ী । কে কি ভাববে!তাই বলেন – সাত্তার খানের কথা ভাবছিলাম ।
দুর্গা র গলায় আকাশ থেকে পড়া নিনাদ । – কার কথা?কে সে?কই এতো দিন তো তাঁর নাম শুনিনি ?কে সে?
দুগরের রণে ভঙ্গ দেবার ভাব । আমতা আমতা করে রসময়ী বলেন- মামা র কথা । কথা শেষ করতে দেয় না দুর্গা । বলেন- মামার কথা থাক । সাত্তার খান কে? দুগর বলেন- আহা,ওকে বলতে দাও না ।
ভয় পায় রসময়ী । দুর্গা পদ র হলো কি ?সাত্তার খান কে কোন মানুষ ভেবেছে নাকি!এবার রসময়ীর মুখের ধাঁচ টা একটু বদলে গেল । যেমন টা হয়েছিল বিয়ের পর বরিশালে কাকিমার মুখের কথাটা শুনে – “-ও বৌমা ভাতটা তুমি তুলে রাখো । ” জেদি ভাবটা ফুটে উঠেছিল মুখে । কারণ মোহিনী মাসী বলেছিল দুর্গা কে কেউ মানুষের মর্যাদা দেয়নি । রান্না ঘরে ই দুর্গা কে খেতে দিত । তাই নতুন বৌ এসে যদি তাঁর দুগ্গা কে কাকা জ্যাঠা র সাথে ভালো মন্দ খেতে দিয়ে জাতে তোলে । তবে আর দুগ্গা কে কথায় কথায় হেনস্থা করতে পারবে না । সেই সময় রসময়ী উত্তর দিয়েছেন । সেটা ও জেদ এর বশে এখন ও সেই জেদ টা এসে যাচ্ছে । জেদ এ বলেন- কেন তুমি সাত্তার খান এর নাম শোনোনি?তোমাদের দেশের জাহাজ? দুর্গা পদ র মগজ বিষম নাড়া খেল । তাঁর নমুনা দেখে দুগর মজার খোরাক পেল এবার । দুগর বলেন- – কি হলো খুব যে হম্বিতম্বি করছিলে?এখন হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃকরে হাসছো কেন? এই না হলে পুরুষ? দুর্গা বলেন- হাসবো না কি করবো?ঐ সাত্তার খান জাহাজে চেপে মামার বাড়ি ঢাকায় গিয়েছিল কান্না কাটি করে সেই জাহাজেই ফিরে এসেছে । বেচারা মামার কি নাকাল অবস্থা । কুড়ি ঘন্টা জাহাজে চড়া কি সোজা কথা? দুগরের স্নেহ পূর্ণ দৃষ্টি রসময়ী র দিকে । তারপর দুর্গা কে বললেন- আর তুমি ও তো ওকে নাকাল করেছো ঐ সাত্তার খান শুনে ।
কথা বলতে বলতে ই হেঁটে চলেছে । দুগরের কথা মতো রসময়ী চলেছে একেবারে মাঝখান দিয়ে । পিঁপড়ের মতো লাইন চলেছে মোটঘাট নিয়ে । তার মধ্যে ই হুড়োহুড়ি কে আগে ট্রেন এ উঠতে পারে । হঠাৎ হঠাৎ স্বজন কে খুঁজতে ডাকা ডাকি । একাদশীর চাঁদ মাঝে মাঝে মেঘের ফাঁকে আলো ছড়াচ্ছে । সেই আলো গঙ্গার তিরতিরে ঢেউয়ের ওপর চমক ফেলছে । পদ্মার জলে ও এমন চমক ফেলতো । চমক ভাঙলো দুর্গা র কথায় । – কি হলো পা চালাও ।
কখনো আলো কখনো আঁধার । একাদশীর চাঁদ তার ওপরে ভরসা করে চলা । মেঘের খেলা চলছে চাঁদের ওপরে । তাতে ই মাঝে মাঝে মেঘের ফাঁকে আলো ছড়াচ্ছে । মাঝ পথে দুগর একটা কুলি কে ডেকে নিলেন । বললেন- দুর্গা ব্যাগ আর বিছানা কুলি কে দাও । ধরে নাও বহন কে । তাড়াতাড়ি পা চালাও । নইলে রাতের জায়গা পাওয়া যাবে না । ট্রেন না পেলে মাঠে পড়ে থাকতে হবে । মনিহারি ঘাটের থেকে শকড়িকলি ঘাটের দুরত্ব বেশি । কিছু টা যাওয়ার পর আশার সঞ্চার হয় । দূরে আঁকাবাঁকা রেলের আলোর মালা দেখা গেল । ওখানে ই গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে । ওটাই ট্রেন । এদিকে দুগর এর দেখা নেই । ট্রেনের কাছে যেতে ই দুগর এর দেখা পাওয়া গেল । কামরার দরজা য় দাঁড়িয়ে আছে অপেক্ষায় । দুগর সব মোট ঘাট গুছিয়ে জায়গা করে রেখেছে । ট্রেনে উঠে ই নজরে পড়লো তিন টে বাঙ্ক এ চাদর পাতা হয়েছে । দুগর বলেন- দুর্গা,তুমি আর বহন শুয়ে পড়ো । নইলে চাদর সড়িয়ে বসে পড়বে । চোখ বুজে পড়ে থাকো । ট্রেন ছাড়ার আধ ঘন্টা পর চোখ খুলবে । দেখবে খাওয়ার রেডি । দুর্গা হেসে বললেন- সাত জন্মে পুণ্য করলে এমন শালা জোটে ।
দুজনে ই শুয়ে আছে । অনেক কথা ,বচসা,জায়গা দখলের,বাক্স রাখার অজস্র শব্দ,কথা ওদের চোখ খোলাতে পারেনি । গাড়ি ছেড়েছে অনেকক্ষণ । ভেতরের লোকেরা ধাতস্থ হয়ে গেছে । গাড়ি জোরে ছুটছে । মটকা মেরে পড়ে আছে রসময়ী । কে বলবে ঘুমোয়নি । হঠাৎ মনে হলো দুগর কি নিচে ঘুমিয়ে পড়েছে!হ্যাঁ । পা ভাঁজ করে তার জিনিস পত্র নিয়ে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে । আবার চোখ বুজে ফেলল রসময়ী । গাড়ি নিঝুম । সকলের শান্তি হয়েছে । মানুষের বেশী চাহিদা নেই । বসে ই ঘুমিয়ে নিচ্ছে । এরা এতে ই অভ্যস্ত । দুগর চোখ খুললো । সবাই চুপ চাপ । অতএব এবার ওঠা যায় । এবার খাওয়ার কথা ভাবতে হবে । ঝুড়ি খুলে খাবার বার করলেন । বৌ অনেক খাবার করে দিয়েছে । সব সময় বেশি করেই খাবার দেয় । পথে সঙ্গী জুটে যায় । তিন টে শাল পাতায় বেড়ে নিলেন । এবার সবার মাথার পাশে খাবার দিয়ে দিলেন । সবই নিঃশব্দে করলেন । বেশি কিছু না মুলি কা পরাঠা । আর কাজু সন্দেশ । টের পেয়ে যায় রসময়ী । বলেন- আমাদের তো আছে । দুগর বলেন- এখন এটা খাও । দেখো ভাবীর রান্না কেমন?
তিন জনের খাওয়া হলো । দুর্গা বললেন- ভাবীর হাতের রান্না খুব ভালো । এমন মূলী র পরোটা কখনো খাইনি । দিল্লি পৌঁছতে গাড়ি ফাঁকা হয়ে গেল । যে যার শুয়ে পড়লো । রসময়ী খুশি । যাক্ এবার সত্যি সত্যিই পুস্করে যাওয়া হচ্ছে । বিকেল নাগাদ আজমেঢ় এ গাড়ি পৌঁছবেই । তার পর পুস্করধামে যাওয়া হবে । দৃশ্য দেখতে দেখতে চলেছে রসময়ী । বাড়িতে বাড়িতে উঠোনে ময়ূর দেখে রসময়ী খুশি । – দেখো!ময়ূরের নাচ । ঐ দেখো পেখমে তুলে নাচ করছে । ঠিক যেমন আমাদের বাড়িতে বাড়িতে গরু ছাগল থাকে,ওদের ও ময়ূর রয়েছে । আবার ও চিৎকার করে উঠলো রসময়ী- ঐ দেখো শ্বেত পাথরের পাহাড় । আমায় একটা শ্বেত পাথরের থালা দেবে? দুর্গা বলেন- তোমার ঐ এক বদ অভ্যাস । যা দেখবে তাই চাই । সবকিছু চাইলে হয়? টাকায় কুলোবে না । শেষে না,”ঢাকির দায়ে মনসা বিকায় । “
শুকনো মুখে শ্বেত পাথরের পাহাড়ের দিকে চেয়ে থাকে রসময়ী । আবার ও ময়ূরের নাচ দেখে মুখে হাসি ফুটেছে রসময়ীর । দুগর বলেন- কি বললে ঢাকির কথা? দুর্গা বলেন- ঢাকির পয়সা দিতে গিয়ে যেন পূজোর খরচার পয়সা ও চলে না যায় । এটা ও তেমনি পাথরের থালা কিনতে গিয়ে পয়সার অভাবে যেন পুস্কর নাথকে না দেখে ই ফিরতে না হয় ।
দুগর অন্য কথায় চলে গেল । বলে ওদের সুখ দুঃখের কথা । – জানো,আগে এখানে খুব জলের কষ্ট ছিল । চার পাঁচ দিন পর স্নান করতে হতো । কতগুলো জায়গায় কুঁয়ো করা হয় । সেখানে বৃষ্টির জল জমে । সেই জল রান্না খাওয়ায় কাজে লাগে । এমন ভাবে করা হয় যাতে ঘরের ছাউনির জল গিয়ে পড়ে কুঁয়োর মধ্যে । সেই জলই কাজে লাগিয়ে দেয়া হয় ।
ট্রেন অনেক দেরি তে আজমেঢ় পৌঁছালো । রাতে বিশ্রাম কক্ষে ই থাকা হলো । ভেতরে ঢুকে আশ্চর্য রসময়ী । ভেতরে এতো লোক বসে আছে! রসময়ী সতরঞ্চ বিছিয়ে নিলো । সবাই বসে অপেক্ষা ভোরের আলো ফোটার । দুগর বাড়ি র সবার কথা বলছে । দুর্গা ও কথা বলে চলেছে । রসময়ীর কানে কিছুই ঢুকছে না । একটা কথা ই মনে চলেছে- “হে বাবা পুস্করনাথ আমায় একটা সন্তান দাও । ” বাড়িতে ঘরের ঠাকুরের সাথে তাঁর ঠাঁই হয়েছে । ঘরে তাঁর পুজো হয় । দুগরের কথায় সম্বিত ফিরল । – সকাল হয়ে গেছে । এবার রওনা দেয়া যাক উঠে পড়ো ।
সত্যি তো ভোরের আলো ফুটে উঠেছে । মাল গোছ করে তৈরি হলো সবাই । দুগর বলেন- এখন টাঙা পাওয়া যাবে ।
রসময়ী শাড়ি টা ভালো করে গোছ করে নিয়ে ঘোমটা টেনে দিলো মাথায় । দুর্গার পলকহারা চোখ আটকে গেল রসময়ীর ঐ ঘোমটা টানার ভঙ্গিতে । দুর্গার মনে পড়ে যায় ছোট বেলার কথা । বরিশালে দুর্গা পুজো হতো । সব ঠাকুরের মধ্যে মা লক্ষীর মুখখানা দেখে ছোট্ট দুর্গা পদ র বুকটা ভরে যেত । বার বার ছুটে যেত মন্ডপে মা লক্ষী কে দেখার নেশায় । আজ রসময়ীকে সেই লক্ষী ঠাকুর বলে বোধ হচ্ছে । মোহিনী মাসী রসময়ীকে বলতো লক্ষী পিরতিমে বৌ । ঠিক ই বলতো মোহিনী মাসী । দুর্গা জোড় হাতে প্রণাম করে বলেন”,জয় বাবা পুস্কর নাথ রসময়ীকে একটা কোল আলো করা সন্তান দাও । “
স্টেশনের বাইরে এসে দেখেছে বেশ কয়েক টা টাঙ্গা দাঁড়িয়ে আছে স্টেশন চত্বরে । টুনটুন করে কোনো কোনো টাঙ্গা ছুটে চলেছে । সাথে ঘোড়ার খুরের আওয়াজ খটাখট খটাখট । দারুণ লাগছে রসময়ীর । সম্পূর্ণ নতুন একটা জায়গা । এখানকার আকাশ,বাতাস,মাটি সব অন্য কথা বলছে । বঙাইগাওএর আকাশে যদি ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ থাকে তবে আজমেঢ় এর আকাশে শুকনো মাটি র প্রাণবন্ত বাতাস রয়েছে ।
শেষ অবধি একটা টাঙ্গার সাথে রফা হলো । উঠে বসলো সবাই । রসময়ী বলেন- আমরা কোথায় যাচ্ছি? দুগর বলেন- আমাদের বাড়িতে যাচ্ছি । রসময়ী বলেন- আমরা তো পুস্করধামে যাবো । দুগর বলেন- তা যাবে । আমাদের বাড়িতে সব জিনিস পত্র রেখে তার পর যাবে । এগুলো নিয়ে ই ঘুরবে নাকি?
চুপ করে গেল রসময়ী । ঠিক ই বলেছেন দুগর জী । মালপত্র নিয়ে গেলে মাল দেখবেন না পুস্কর নাথের পুজো করবেন!এই বেশ হয়েছে । টাঙ্গা ছুটছে জোর কদমে । ঘোরার খটখট শব্দে রসময়ী তার স্কুল জীবনে র ইতিহাসের পাতায় চলে গেছেন । বড়ো রাস্তা থেকে একটু ডানে টাঙ্গা ঢুকলো । এ দিকটা একটু ঘিঞ্জি । কিছু টা যেতে ই দুগর বলেন- “এটা হলো , আড়হাই দিন কা ঝোপড়ি” । ” আড়াই দিনে এটা হওয়ার কথা ছিল । তাই আড়াই দিন পর কাজ বন্ধ হয়ে গেছে । মঞ্জিল টা অসমাপ্ত ই রয়ে গেছে ।
রসময়ী ভাবেন আড়াই দিনের ঝোপড়ি র কথা ইতিহাসের পাতায় আছে কিনা?নাম ঝোপড়ি হলে ও এটা প্রাসাদ সমান চভস্থাপত্যের একটা পাকা ধাঁচের । কিছু টা যাওয়ার পর টাঙ্গা থামলো অপেক্ষাকৃত একটা ফাঁকা জায়গায় । একটা বাড়ির সামনে । রং পড়েনি বহু কাল । বাড়ির নিকোনো উঠোনে দুটো ময়ূর ঘুরে বেড়াচ্ছে । রসময়ী র খুশি কে দেখে! ওরা ঢুকতে ই ছুটে বেড়াতে লাগল ময়ূরেরা । পেখম তুলে নাচতে লাগল ময়ূরেরা । আর রসময়ী লাফা লাফি শুরু করেছে ।
নতুন জায়গায় এসেছে কোথায় তাদের সাথে আলাপ করবে তা না শুধু ময়ূরের পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছে রসময়ী । এতক্ষণে নজরে পড়লো বাড়ির সকলের দিকে । দুগর ওর বাবা মা কে কি সব বোঝাচ্ছে । রসময়ী বলেন- আমরা এই টাঙ্গা করে ই মন্দিরে যাবো । দুগর বলেন- টাঙ্গা নিয়ে কি করে যাবে?অনেক দুর এখান থেকে । বাস এ করে যেতে হবে । তাছাড়া আমার ও মন্দিরে যাবার ইচ্ছা আছে । ব্যাগ এখানে থাক । পুস্করে স্নান করে পড়ার জামা কাপড় কিছু নিয়ে নাও । দুগরের বাবা মা অযাচিত অতিথি দেখে অখুশি হলেন না । বরং খুব খুশি হলেন । তিন ভাই আর দু’বোন ওরা ।