Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

বাগানে বসে আছে ডরোথী । মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে নানা কথা । সেদিনের সেই বিপদের কথা ভুলতে পারে না ডরোথী । রেভারেন্ড এর কথা মনে হচ্ছে । রেভ্ এখন অনেক দূরে , সুদূর লন্ডন এ । এই বিপদের কথা ওকে জানাতে পারবে না ডরোথী । বহু দিন রেভ্ এর কোন খবর নেই । মাঝে মাঝেই সেই চোদ্দ বছরের বয়সটা মনে পড়ছে । দিনে দিনে সেই ভালো – বাসাটা আঁঠালো হয়েছে । রেভ্কে ভালো বেসেছে তাই বুঝি অন্য কারোকে মনে ধরেনি । নইলে গৌহাটী তে বি.ই পড়তে গিয়ে প্রোপোজালতো কম আসেনি । সেই একুশের যুবকের মুখখানা ওর মুখের উপর ঝুঁকে পড়াটা আবছা করে দিয়েছে অন্য মুখের মিছিল । মনে পড়ে রেভ্ এর বলা কথাটা , “এ ডে উইল কাম হোয়েন উই উইল এনজয় দিস থিংস ” বলে একটা ভঙ্গি করা । অল্প বয়সের সব কথা কি রেভ্ একেবারে ভুলে গেছে ? চোখটা ঝাপসা লাগে ডরোথীর । পুরুষ বুঝি এমনই হয় । কিন্তু হরিসাধন আঙ্কেলতো এমনটা নয় । সারা জীবনতো আন্টির কথা ভেবেই কাটিয়ে দিলেন । রেভ্ বুঝি আন্টির চরিত্রটা পেয়েছে ।

পামেলা আর ডেভিড মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে চিন্তা করেন না । এডিথ আর হরিসাধনের ছেলে রেভ্ এর সাথে ডরোথীর বিয়ে হলে বেশি খুশি হবেন তাঁরা । কারণ দুজনের পুরোনো হৃদ্যতাটা আরো বহু দিন টেনে নিয়ে যাওয়া যাবে । তাই ওদের বিয়ের ইচ্ছেটা মনে পোষন করে এসেছেন । তা ছাড়া রেভ্ ওদের সাথে খাপ খেয়ে যায় সবদিক থেকে । রেভ্ও এই জায়গাটা ভালোবাসে । পামেলা আর ডেভিড এর ভালোই হবে । মেয়েকে ছেড়ে থাকতে হবে না । মেয়ে সুখেই থাকবে রেভ্ এর কাছে । ডরোথীর প্রতি রেভ্ এর দুর্বলতার কথা ভেবেই এতো কথা তাঁরা ভেবেছেন ।

এফ. আর সি এস কমপ্লিট করার পর আর রেভ্ বঙ্গাইগাঁও আসেনি । ডরোথী রেভ্এর আশা ছেড়েই দিয়েছে । ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে রেভ্কে । মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে এই চা বাগানের কাজেই লিপ্ত রাখবে নিজেকে । সঙ্গে সঙ্গে মায়ের মতো সমাজ সেবা করবে । চা বাগানের গরীবদের জন্য বাকি জীবনটা উৎসর্গ করবে । পুরুষের ওর ওপর লোভাতুর দৃষ্টি গুলোই ওর চরিত্রের ভিত্টাকে আরো সুদৃঢ় করছে ।

ডরোথী ভাবতে পারে না সেই রাতের কথা । কি করে এটা মেনে নিলো ডরোথী! হয়তো ডরোথী অসুস্থ ছিল । কেউ ওর অসুস্থতার সুযোগ নিয়েছে । সেটা কখনো রেভ্ নয় । কারণ রেভ্ বহু বছর হলো এখানে আসেনি । ডরোথীর স্বপ্ন গুলো একেবারে কঠিন বাস্তব ছিল । যেই হোক সেই পুরুষ তার কোন দোষ নেই । জ্বরের ঘোরে ডরোথী আপন কারোকে চাইছিল । কিন্তু ডরোথী কাকে জড়িয়ে ধরেছিল একাকীত্ব দূর করতে ? এরপর আর রেভারেন্ড এর সাথে বিয়ের প্রশ্ন ওঠে না । রেভ্ যে ডরোথীর বক্ষোলগ্না হয়নি তাতে কোন ভুল নেই ।

পামেলা কয়েক দিন ধরে দেখছেন ডরোথীর মুখে একেবারে কথা নেই । কি হয়েছে তা বুঝতে পারছেন না । কিন্তু মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলেও উত্তর পাবেন না তা জানেন তিনি । তাই মেয়ের মন ভালো করতেই ডরোথীর পাশে বসে বললেন- জানিস রেভ্ এসেছে ক’দিন হলো । এখানে এসেছিল রেভ্ । এসে তোর শরীর খারাপের কথা বলে গেল । তুই আসতে পারবি না তাই বললো । আমরা যেন চিন্তা না করি ।

ডরোথী চমকে তাকালো মায়ের দিকে । এ কি শুনছে সে । তার মানে ওর শরীর খারাপের সময় রেভ্ ছিল । তাহলে কি রেভ্ – – না না তা হয় নি ।

মেয়ে কে আবার বলেন- কি একটা কাজ ছিল তাই পরের দিন রাতেই দিল্লি চলে গেছে । ডরোথী বলে- কবে এসেছে ? পামেলা- হরিসাধন দিল্লি যাওয়ার দিন রাতেই এসেছে । মায়ের মুখে রেভ্ এর কথা শুনে উচ্ছ্বসিত হতে গিয়ে ও থমকে গেল ডরোথী । কি বলবে ডরোথী রেভ্ কে ? আমি একজন পুরুষের বক্ষলগ্না হয়েছিলাম ? না না এ কথা সে রেভ্ কে বলতে পারবে না । একটা হিম স্রোত বহে গেল শিরদাঁড়ায় । সেই স্বপ্ন গুলো তাড়া করছে ডরোথীকে । ভয় দূর করতে পারে না । বুঝতে পারে ওর বিষন্ন ভাবটায় পামেলা কষ্ট পাচ্ছে । আসল ঘটনাটা কেউ জানে না । ডরোথী ভাবে” হু ইজ হি” ? ওর অসুস্থতার সুযোগ কে নিতে পারে ? চিন্তাটা ছুটে গেল বাগানের গেট্ এর কাছে মলিকে দেখে ।

গেট্ খুলে মলি ভেতরে ঢুকলো । বাগানে বসেই কথা হচ্ছে দুজনের । – কি ব্যাপার , আজ ঘরে বসে ? – কোথায় যাবো ? একা ভালো লাগছে না । – চার্চে চল । অনেক দিন যাওয়া হয়নি । যাবি ? – চল ।

চা বাগানের গেট্ থেকে বেরিয়ে কিছুটা ডানে গেলে রেলওয়ে ওভার ব্রিজ পার হয়ে সোজা চলেছে ওরা । হাঁটতে হাঁটতে বাঁয়ে এগলো । সুছন্দারা যে বাঙলো তে থাকতো সেখানে পৌঁছালো । বিরাট বাগানে ঘেরা বাঙলোটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে । সুছন্দারা নেই বলেই বুঝি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে । কিছুটা যাবার পর পাদ্রির বাঙলো পড়লো । তখন ওটাকে পাদ্রির বাঙলোই বলত ওরা । ওটা ই চার্চ ।

লোকালয় থেকে দুরে সবুজে ঘেরা বনভূমি । অনেক বড়ো বড়ো দেবদারু , পাইন গাছের সারি ওখানে । এছাড়া নানারকম ফলের গাছ ও আছে । গাছের তলে কোন রকম ময়লা নেই । একেবারে ঝকঝকে সবজে ঘাস জাজিম । মাঠে যেন সবুজ গালিচা পাতা । মন স্নিগ্ধ হয়ে গেল ডরোথীর । সব ভয় চিন্তা দূর হল । মলম পড়লো মনে ।

কাঠের বাঙলো বাড়ি । ওপরে লাল টিনের ছাউনি । নিচ তলায় উপাসনা গৃহ । পাদ্রি সাহেব ডরোথী আর মলিকে ডাকলেন । বসে পড়লো ওরা । সবাই গলা মিলিয়ে গান গাইছে । “লঙ টাইম অ্যাগো ইন বেথেলহেন , সো দা হোলী বাইবেল সেজ- মেরি বয় চাইল্ড জেসাস খ্রাইস্ট বর্ন অন ক্রিসমাস ডে । “

গান শেষ হতে সকলে উপাসনা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো । ডরোথী মলিকে ছাড়লো না । বললো- চল আমাদের বাড়িতে ।

বাড়িতে এসে দেখলো রেভ্ বসে আছে বাইরের ঘরে । ডরোথীর মুখে রক্তোচ্ছাস । মলির জন্য বেঁচে গেল । মলি না থাকলে কি হত তা বলা যায় না । রেভ্এর চোখে চোখ ফেলতে পারে না । এক্সকিউজ মি’ বলে ভেতরে ঢুকে গেল । যাওয়ার সময় নজরে পড়লো রেভ্ মলিকে একটা চাপড় মারলো । অবশ্য মলির কথার উত্তরেই । মলি বলেছিল- আমি আর থাকবো না বাবা শেষে রেভ্ বলবে “কাবাব মে হাড্ডি মৎ বনো । ” রেভ্ বললো- তুই আবার হাড্ডি কবে হলি ? এমন পেলব শরীর হাড্ডি হয় ?

কথাটা শেষ হবার আগেই ডরোথী ভেতরে ঢুকে গেছে । কিন্তু “পেলব শরীর” কথা টা কানে ভোঁ ভোঁ করছে । পামেলা খুশি নন মেয়ের ব্যবহারে । মলির রকম সকম পামেলার সুবিধের মনে হয় না । একটু বেশি গায়ে পড়া ভাব । তবুও কিছু প্রকাশ করা চলবে না বদনাম হয়ে যাবে । ছোট বেলার বন্ধু মলি । তায় রেভ্ও মলিকে পছন্দ করে । পামেলা মলি কে বলেন- – মলি খেয়ে যেও ।

মলি বলে- না আন্টি মা চিন্তা করবে । আর একদিন আসবো । মলি চলে গেলে পামেলা মেয়ের কাছে গেলেন ।

কি হলো ডরোথী , রেভ্কে একা রেখে চলে এলি ? – একা কেন মলি আছে তো । – সেই জন্যই তো তোমার আরো থাকা উচিত । – মা , জোর করে কিছু হয় না । মলিকে ওর ভালো লাগতেই পারে । – ডরোথী বলে । – যাক্ গে খেতে দিচ্ছি । রেভ্ একা বসে আছে । মাত্রা ছাড়িয়ে যাস না । টক উইথ রেভ্ ।

পামেলার মনটা ভার হয়ে গেল ডরোথীর হাবভাব দেখে । নিশ্চয়ই মেয়ের কিছু হয়েছে । হরিসাধনের বাড়ি থেকে ফেরার পর থেকে মেয়ের মনে একটা কিছু বাসা বেঁধেছে । অনেক দিনপর ডরোথীর সাথে দেখা রেভ্ এর । রেভ্ ডরোথীর দিকে দৃষ্টি দিয়ে ও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলো মলির দিকে । মায়ের কথায় যদি রেভ্ এর সাথে কথা বলতে হয় , তবে কি বলবে ? ডরোথীর চরম সত্য টা কি রেভ্ সহ্য করতে পারবে ? ডরোথীকে কি ঘেন্না করবে না ? তাহলে ? ডরোথী কি একা ঝুঁকি নিতে পারবে ? অসম্ভব!”হাউ কুড সি বিহেভড সো শেমলেস লি ? ” এর ফল তো ডরোথীকে পেতেই হবে । এতো দিন পর রেভ্ কে দেখে ডরোথী বুঝতে পারছে যে সে গভীরভাবে ভালোবাসে রেভ্কে ।

খাবার টেবিলে দু একটা কথা ছাড়া কোন কথা হয় নি রেভ্ এর সাথে ডরোথীর । পামেলা চেষ্টা করেছেন রেভ্ যাতে ডরোথীর ঘরে যায় । কিন্তু ডরোথীর আঁধার করা মুখ দেখেই হয়তো রেভ্ বিদায় নিয়েছে তখন কার মতো ।

রেভ্ চলে যাওয়ার পর পামেলা ফেটে পড়েছেন । – হোয়াট ইজ বিটিং ইউ মা ই ডিয়ার ? রেভ্এর উসাথে এমন ব্যাবহার করলে কেন ?

মায়ের কথার উত্তর দিতে হলে সব কথা মাকে বলতে হবে । কিন্তু এতো নির্লজ্জতার কথা সে বলবে ? পারবে না । তাই চুপ করে থাকে । রাগ করেই পামেলা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো ।

পামেলার হয়েছে মহা জ্বালা । ডেভিড এই বিয়ের ব্যাপারটা পুরোপুরি পামেলার ওপরে ছেড়ে দিয়েছেন । হরিসাধনের একই অবস্থা । কি ব্যাপার তা বুঝতে পারছেন না । শেষ বেলায় মেয়েটা কেন বেঁকে বসেছে ? বুঝতে পারছেন না কেউ ।

হরিসাধন গৌহাটী থেকে ফিরে বলেছে- ডরোথীর একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে । কেমন অন্য রকম হয়ে গেছে । চার্চে যাবার আগে মলি বলছিল- রেভারেন্ড এর কি খবর , তোর সঙ্গে কি এখনও চালিয়ে যাচ্ছে ?

মলির কথায় ডরোথীর মুখের রং পাল্টে গেছে । তা দেখে মলি বলে- বুঝেছি । তুই একদমই ডুবেছিস । একাই ডুবেছিস নাকি সেও ডুবেছে ?

মলির কথা গুলো নাড়া দিচ্ছে ডরোথীকে । মলির যে রেভ্কে পছন্দ তা ডরোথী টের পেয়েছে ডরোথী । শুধু ডরোথীর মুখ থেকে রেভ্ এর বলা “আই লাভ ইউ ” কথাটা বলে নি মলিকে । কিন্তু আজ রেভ্ এর মলির সঙ্গে যে কথা হচ্ছিল তাতে মনে হচ্ছে শুধু মলি রেভ্ এর প্রতি অনুরক্ত তা নয় । রেভ্ ও মলির সঙ্গে কথা বলার সময় ভালো করে ডরোথীকে দেখেনি । মলিকে নিয়েই ব্যস্ত ছিল রেভ্ । এ ব্যাপারে মলিকে দোষ দেয়া যায়না কারণ ডরোথী মলিকে বলেছিল- রেভ্ এখন লন্ডনে তাই চালাবার প্রশ্ন নেই । আর বঙ্গাইগাঁও এসে গেলে ও চালাবার ব্যাপারটা তোর ওপরেই ছেড়ে দিলাম । মলি তখন বলেছিল- সে কি রে , এতো উদার হয়ে গেলি ?

আজ ডরোথীর মনে হলো , মলির তো কোনো দোষ নেই । ডরোথীই রেভারেন্ডকে মলির হাতে দিয়ে দিয়েছে । ডরোথী কি ভাবতে পেরেছিল যে আজই রেভ্ চলে আসবে । দেয়ালের ঘড়িতে চারটা বাজলো । বিছানা থেকে উঠে পড়লো ডরোথী । বাগেশ্বরী পাহাড়ে যাওয়ার সময় হয়ে গেল । মনে হলো পূজার সময় আঙ্কেলের দেয়া শাড়িটা পড়ে । তাই করলো । প্রতি বছর আঙ্কেলের দেওয়া দুটো উপহার বাঁধা । একটা খ্রিস্টমাসএ আর একটা পুজোতে । শাড়ি সামলাতে কষ্ট হলে ও ডরোথী পিন দিয়ে এঁটে নেয় আঁচলটা । আজও তাই করলো । আগে এমনটা দেখলে রেভ্ বলতো- তোমাকে দারুণ দেখাচ্ছে । কিন্তু আজকের কথা মনে পড়ে মনটা ভার হয়ে গেল । এখন রেভ্ এর চাবুকের মতো স্লিম চেহারায় একটু মাংসের পরত পড়েছে । অনেক বেশি সুন্দর লাগছে ওকে । এক লহমায় বুঝেছে ডরোথী । সকালে ভালো করে দেখেনি যতো টুকু চোখে পড়েছে অচেনাই লেগেছে । সেই রেভ্ এর সাথে এই রেভ্ কে মেলাতে পারেনি । বাইরে বেরিয়ে পা চালালো ডরোথী । সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে । মনটা ছুটে চলেছে রেভ্ এর সাথে । সুছন্দা আর ডরোথী সাগরিকা নৃত্য নাট্য করে ছিল । সাগরিকার রাজকুমারের মতো রেভ্ কি বলবে – দেখতো চেয়ে আমারে তুমি চিনিতে পারো কিনা ? সত্যি কি ডরোথী তার রেভ্ কে চিনতে পারবে ? 1 মনে পড়ে যায় স্কুল জীবনের সুছন্দার কথা । রাজকুমারীর প্রেমিক রাজকুমারকে দেখে যে প্রেমের হাসি হাসতে হবে সেই রকম হাসি সুছন্দা হাসতে পারছিলনা । ডরোথী সেই প্রেমের হাসি হেসে দেখিয়ে দিয়েছিল । ডরোথী রপ্ত করে ছিল আয়নায় নিজেকে রেভ্ মনে করে । হঠাৎ খেয়াল হলো সূর্য প্রায় ডুবু ডুবু । ডরোথী তখন পাহাড়ে উঠে গেছে । কে যেন ওপরে উঠে আসছে । এ সময়ে কেউ পাহাড়ে তো ওঠে না । আঁচল টা কষে নিলো কোমরে । যাঁরা উঠেছে তাঁদের নেমে যাওয়ার সময় এখন । ভয় করলে চলবে না । কিন্তু নামতে হলে ঐ মানুষটার পাশ দিয়ে নামতে হবে । নির্জন জায়গা । এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় দৌড়ানো যাবে না । ভাবলো অচেনা লোকটার মুখোমুখি হবে না । এই ভেবে একটা বড়ো পাথরে বসে পড়লো ডরোথী । যাকে বলে আড় চোখে চাওয়া সেই ভাবেই নজর চালালো । নজরে পড়ার মতো হাইট প্রায় ছ’ ফিট । দূর থেকেই ওর সৌন্দর্য অনুভব করতে পারে ডরোথী । অন্য কোন পুরুষের দিকে নজর দেয়নি কখনো । পার্থক্য শুধু এটুকুই এই মানুষ টার হাঁটাটা ভারি চেনা । মন ছুঁয়ে আসছে সেই পুরুষ । ভয়ে উঠে দাঁড়ালো ডরোথী । না পাশ কাটিয়ে যেতেই হবে । যাতায়াতের একটাই পথ । মুখোমুখি হতেই হলো ডরোথীকে । পথ আগলে দাঁড়িয়েছে সে । ডরোথীর কঠিন দৃষ্টি ওকে ভস্ম করে দিতে চায় । এবার পরিস্কার হলো । ঠোঁটের একপাশের দাঁত চেপে হাসছে সে । সেই দুষ্ট হাসি টা , হেসে বলেছিল- “এ ডে উইল কাম হোয়েন উই উইল এনজয় দিস থিংস । “

আগের ভয় চলে গেছে । আঁকড়ে ধরেছে নতুন ভয় । সেটা হল ওর স্বপ্নের দেখা রেভ্ এর সাথে রাত্রি বাস । আরো ভয় যা কেউ জানেনা । জীবনের প্রথম পুরুষ কে হারাবার ভয় । রেভ্ প্রশ্ন করলো- কি হল , চিনতে পারছো না ? উত্তর না দিয়ে অন্য কথা বলেছে । – কবে এসেছ লন্ডন থেকে ? -‘- তুমি জানো না ? – আবার ও হেসে বলেছে- সে কি তুমি জানো না ? -ডরোথী- আমি কি করে জানবো ? – তুমি জানবে না কে জানবে ? ডোন্ট টেল মি আ লাই । ডরোথীর হাত ধরতে যায় রেভ্ । ডরোথী বলে- প্লিজ লেট মি গো । পথ ছাড়ো । -রেভ্ বলে – ওকে লেট আস প্রসিড ।

রেভারেন্ড এর গলায় গাম্ভীর্য । সুঠাম দেহ ওর পুরুষত্বের পরিচয় দিচ্ছে । ছোট্ট এক গোছা চুল কপালে হাওয়ায় দোল খাচ্ছে । ঐ চুল গুলো ডরোথীর শরীরে কি রকম ভালো লাগা ছড়িয়ে দিচ্ছে । মনকে শাসন করে ডরোথী- স্টপ টু ব্লাশ । লালিমা ছড়িয়ে পড়ে ডরোথীর গালে । ছুটে পালাতে চায় রেভ্ এর কাছ থেকে । ছোটা সম্ভব নয় তবু ও ছুটতে শুরু করে ডরোথী । ছোট বড়ো ঢেউ খেলানো পাথরের উপর দিয়ে নামতে থাকে । কানে এলো- ডরোথী প্লিজ স্টপ । আস্তে নামো । ঠিক পেছন থেকেই আসছে কথা গুলো । তার মানে একেবারে ছুঁই ছুঁই । হঠাৎ ত্রাসে যে পাথরে পা দিয়েছে সেটাই টাল খেয়ে গেল । হড়কে যাওয়ার আগ মূহুর্তেই ডরোথীর শরীরটা রেভ্ এর দুই বাহুর দখলে চলে গেল । শুধুই অনুভব করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না । – ডোন্ট ইউ নো , দ্যাট ইয়র লাইফ ইজ প্রেসিয়াস টু মি ? সো ডোন্ট ট্রাই টু ডু ইট আগেইন । রাগত স্বরেই বলে ওঠে রেভারেন্ড । ডরোথীর মুখ খানা একেবারে রেভ্ এর মুখের কাছে । ধরা পড়ার ভয়ে চোখ বুজে ফেলেছে । কিসের আগ্রহে ডরোথীর ঠোঁট কেঁপে চলেছে । কিন্তু যা ভেবেছে ডরোথী তা হলোনা । চোখ মেলতেই নজর কাড়ে মুগ্ধ দুটি চোখ । টি গার্ডেন এর আলোয় ডরোথীর মুখের রংয়ের খেলা দেখতে মত্ত সেই চোখ জোড়া । চোখে চোখ পড়তেই ডরোথীর ঠোঁটে নেমে আসে ঠোঁট জোড়া । তার মাঝেই বলে- পালিয়ে বেড়াচ্ছ কেন ? রেভ্ এর চোখে বিদ্যুত্ এর ঝিলিক ।

উত্তর দেবার উপায় নেই । তার মাঝেই বলে – – তুমি জানো না আমি কবে এসেছি ? স্বপ্ন টপ্ন দেখতো ? না তাও দেখো না ? ডরোথীর মনে হলো রেভ্ কিছু বলতে চাইছে । ডরোথীর মুখে অপরাধের ছাপ । তবু ও বলে- – কেন ? স্বপ্ন দেখা কি অন্যায় ? ডরোথীর কষ্ট পাওয়া মুখ দেখে রেভ্ বলে- ওকে বাবা । আই ওয়াজ রিয়েলি জোকিং । বাট আই হ্যভ এ নাইস ড্রিম । ড্রিম কথাটা চোখ নাচিয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে । ডরোথীর রেভ্ এর বলা ড্রিম কথাটা অর্থ বহ মনে হলো । ডরোথী কি স্বপ্ন দেখেছিল ? হ্যাঁ দেখেছে । ওর পরম পুরুষের কাছে কোন রাখঢাক রাখেনি । সব উজার করে দিয়েছিল । স্বপ্ন হলে ও উজার করাটা চরম বাস্তব হয়ে গেছে । স্বপ্নের ফল ও ধরেছে । তার কোন বর্ণ নেই । বর্ণহীন সে ফল ।

টি গার্ডেন এর বাংলোর কাছা কাছি এসেছে দুজনে । কথায় কথায় রাস্তা পার হয়েছে । এক মুখে রেভ্ কথা বলে গেছে । ডরোথী শুধু হু না করে গেছে । দুজনকে একসাথে পৌঁছতে দেখে পামেলা খুশি । পামেলা অনেকক্ষন বাগানে বসে আছেন গার্ডেন চেয়ারে । ওদের বসতে বললেন পামেলা । এক্সকিউজ মি বলে ডরোথী ভেতরে ঢুকে গেছে । মেয়ের এই গা ছাড়া ভাবটা ভালো লাগেনি পামেলার । সাধা লক্ষীর উপমাটা ইন্ডিয়ানরা দেয় সেটা মনে পড়ছে । ছেলেটা সেধে আসছে ডরোথীকে বিয়ে করতে । অথচ ডরোথী ওকে অবহেলা করছে । রেভ্ এর সাথে কথা বলতে হবে তা ভেবেই রেভ্ কে বসতে বলেন । – বসো তোমার সাথে কথা আছে । রেভ্ বসতেই বলেন- ডরোথীর কি হয়েছে বলো তো ? আমি কিছু ই বুঝতে পারছিনা । হরিসাধন গৌহাটী যাবার দিন ডরোথী ওখানে গিয়েছিল । অসুস্থ ছিল । ফিরে এসে অবধি একেবারে অন্য ডরোথী হয়ে গেছে । চুপ করে শুনলো রেভ্ । বললো- আপনি কিছু ভাববেন না সব ঠিক হয়ে যাবে । অনেক ক্ষন হয়ে গেল রেভ্ চলে গেছে । ডরোথীর এখন ও দেখা নেই । মেয়ের ওপর রাগ হলো । অমন এলেমদার ছেলেকে হেলা করছে । কি এমন আছে ঐ মেয়ের ? এরপর তো পাত্র জুটবে না ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *